ETV Bharat / international

যুদ্ধক্ষেত্রের অচেনা শত্রু - Internet

কুডানকুলাম নিউক্লিয়ার পাওয়ার বোর্ড (KNPB)-এর যোগাযোগ ব্যবস্থা হ্যাক হয়ে গেছে । এই খবর সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে ।

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Dec 1, 2019, 11:45 PM IST

ভারতের সাইবার বিশেষজ্ঞ পুখরাজ সিং টুইটারে জানিয়েছেন, কুডানকুলাম নিউক্লিয়ার পাওয়ার বোর্ড (KNPB)-এর যোগাযোগ ব্যবস্থা হ্যাক হয়ে গেছে । এই খবর সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে ।

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সমন্বয়কারী লেফটেনেন্ট জেনেরাল রাজেশ পন্থ জানিয়েছেন, এই সাইবার আক্রমণটি ঘটে সেপ্টেম্বর মাসে । 29 অক্টোবর এই খবরটি দাবানলের মতো খবরের চ্যানেলগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে । KNPB কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রাথমিকভাবে এই খবরের সত্যতা স্বীকার করতে চাননি । তবে, ওই একই সংস্থা 24 ঘণ্টা পরে মেনে নেয় সাইবার হানার কথা ৷ নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (NPCIL) 30 অক্টোবর জানায়, চলতি বছর সেপ্টেম্বরের গোড়ায় কুডানকুলাম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট (KKNPP)-এর প্রশাসনিক নেটওয়ার্কে ‘ডি-ট্র্যাক’ নামক একটি ম্যালওয়্যারের অস্তিত্ব মিলেছে । এই ম্যালওয়্যারটির সাহায্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার হ্যাক করা হয় । যদিও কেন্দ্রের প্রযুক্তি দপ্তর থেকে দাবি করা হয়, তাদের কম্পিউটারগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ কারণ এগুলি ‘এয়ার-গ্যাপড’ । তাই এই কম্পিউটারগুলি হ্যাক করা অসম্ভব । ‘এয়ার গ্যাপড’ সিস্টেমের অর্থ, এই সব কম্পিউটারগুলি কোনওরকমভাবেই কোনও নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত নয় । আর এই কারণে এগুলি হ্যাক করাও সম্ভব নয় । অন্যদিকে, ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (ISRO)-ও ডিট্র্যাক হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা পেয়েছিল । এই সতর্কবার্তা এসেছিল চন্দ্রযান-২-এর লঞ্চের সময় ।

এই ধরনের আক্রমণ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলিতে নিরাপত্তার ফাঁক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় । সাধারণত উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা এই ডিট্র্যাক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে । এরা তথ্য চুরি করে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় হামলার ছক কষে । এই ম্যালওয়্যার দিয়েই দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্কিং এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন নথি হ্যাক করা হয় । ভারতের ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার (BARC)-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এস এ ভরদ্বাজের দাবি, তিনি ই-মেইলের মাধ্যমে এই ধরনের ম্যালওয়্যার পেয়েছেন । ভাবার প্রাক্তন কর্তা হওয়ার পাশাপাশি তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাটমিক পাওয়ার কোম্পানির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এবং থোরিয়াম নির্ভর AHWR রিয়্যাকটরের বিজ্ঞানী । উত্তর কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ইউরেনিয়াম নির্ভর পরমাণু প্রযুক্তি থেকে সরে এসে থোরিয়াম নির্ভর পরমাণু প্রযুক্তিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে । আর তাই তারা ভারতের দিকে নজর দিয়েছে । ভারতে থোরিয়াম নির্ভর পরমাণু প্রযুক্তিতে যথেষ্ট শক্তিশালী । থোরিয়াম নির্ভর পরমাণু প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা দেশগুলির দিকে নজর রয়েছে চিনেরও । পরে জানা যায়, এই ধরনের ম্যালওয়্যারের ই-মেইল পেয়েছেন বিশিষ্ট ভারতীয় বিজ্ঞানী অনিল কাকোদকর ।

ভয়ঙ্কর উত্তর কোরিয়া

আধুনিক যুগে যুদ্ধক্ষেত্রের ব্যাপ্তি অনেকটাই বেড়েছে । জল, স্থল, আকাশ এবং মহাকাশ ছাড়িয়ে তা এখন সাইবার নিরাপত্তার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে । নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে বা তাতে বড়সড় সমস্যা তৈরি করতে সাইবার আক্রমণের জুড়ি নেই । সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা সিমেনটেকের সমীক্ষা অনুসারে, সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারা দেশের তালিকায় ভারতের স্থান একেবারে উপরের দিকে । সিমেনটেকের মতে, অ্যামেরিকা ও চিনের পরে ভারতেই সাইবার আক্রমণের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি । সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অ্যামেরিকা ও চিন কিন্তু ভারতের চেয়ে এখন অনেকটাই এগিয়ে । প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা । 2018 সালে 36টি রাজ্যে গভর্নর নির্বাচনের আগে সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সিকে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করে অ্যামেরিকার সাইবার কম্যান্ড । ইন্টারনেটের উপর অ্যামেরিকার একছত্র আধিপত্যের প্রমাণ মিলেছিল কখনওই । 2019 সালের 2 মে রাশিয়া সার্বভৌম ইন্টারনেট আইন পাশ করে । এর ফলে পুরোনো ব্যবস্থা থেকে আলাদা হয়ে রাশিয়া নিজেদের DNS সার্ভার দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে । খুব শীঘ্রই রাশিয়া তাদের নিজস্ব ইন্টারনেট RUNET-এর পরীক্ষা করবে ।

সাইবার আক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে রাশিয়ার এই উদ্যোগ থেকে মনে হয় ভারত কিছুই শেখেনি । সরকার বলছে, আমাদের কম্পিউটারে সাইবার হানা হওয়া অসম্ভব, কারণ এগু‌লি এয়ার গ্যাপ অবস্থায় রয়েছে । ইতিহাস কিন্তু সরকারের এই দাবি সমর্থন করে না ।

ইরানের পরমাণু প্রকল্প বানচাল করে দিয়েছিল অ্যামেরিকা। প্রথমে তারা ইরানের নানতেজ ইউরেনিয়াম শোধনাগারে যন্ত্রপাতির জোগান দেয়, এমন চারটি সংস্থাকে চিহ্নিত করে । পরে স্টাক্সনেট নামক ডিজিটাল অস্ত্র দিয়ে অ্যামেরিকা ওই চার সংস্থাকে নিশানা করে । এই চারটি সংস্থার কোনও একজন কর্মচারী নানতেজ পারমাণবিক কেন্দ্রের কম্পিউটারে একটি পেন ড্রাইভ লাগায় । শুধুমাত্র এই কাজ করার জন্য 984টি গ্যাস সেন্ট্রাল ফিউজ় অকেজো হয়ে যায় । এর ফলে এখনও পর্যন্ত ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি । অ্যান্টি-ভাইরাস প্রস্তুতকারক সংস্থা ক্যাসপারস্কাইয়ের মতে, মানুষের একটা ছোটো ভুলে কর্পোরেট জগতের 90 শতাংশ ক্ষেত্রে সাইবার হানা হতে পারে । খুব পোক্ত সাইবার নিরাপত্তা না থাকায় মার্কিন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সরঞ্জাম দেওয়া ছোটো ঠিকাদারদের নিশানা করে চিন । এর আগে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কম্পিউটারে হানা দিয়েছিল চিন । এমনকি, চিনে তৈরি হওয়া হার্ডওয়্যারও নিরাপদ নয় মোটেই ।

CIA পর্যন্ত চিনের সাইবার হানার হাত থেকে রক্ষা পায়নি । অ্যামেরিকারই সুপার মাইক্রো নেটওয়ার্কিং সার্ভারের পরিষেবা ব্যবহার করে এই হামলা চালায় তারা । এর ফলে ড্রোনের মাধ্যমে নেওয়া ছবির মান খারাপ হয়ে যায় । সুপারমাইক্রো বাবহারকারী কম্পিউটারের প্রধান অংশগুলি তৈরি হত চিনে । ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্টের দাবি, এই অংশগুলিতে ধান বা চালের আকারের ছোটো একটি ক্ষতিকর চিপ বসিয়ে এই কাজ করেছিল চিন । তবে, সরকারিভাবে অ্যামেরিকা কখনই এই ধরনের ঘটনার কথা স্বীকার করেনি । তবে এরপর থেকে চিন থেকে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার আমদানিতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেছে অ্যামেরিকা ।

ভারতের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় চিনা সরঞ্জামের ব্যবহার অত্যাধিক বেশি । নিয়মানুযায়ী চিনের সব সংস্থাকে সরকারের কাছে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য জানাতে হয় । ভারতে 5জি নেটওয়ার্কের বরাত পেতে দরপত্র দেওয়ার বিষয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে কয়েকটি চিনা সংস্থা । মানবহীন যুদ্ধের ক্ষেত্রে 5জি নেটওয়ার্কের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত । অর্থাৎ এই ভাবে যুদ্ধের সময় যুদ্ধাস্ত্র বিকল করে বিপদে ফেলাও অসম্ভব নয় ।

প্রস্তুত থাকাটাই আসল

সাধারণ মানুষ তো বটেই, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে বাহিনী, উচ্চপদস্থ কর্মী এবং বিজ্ঞানীদেরও শিক্ষিত করে তুলতে হবে । জাতীয় সাইবার নিরাপত্তাকে ভরসা দিতে এখন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে, যা খুবই জরুরি এবং সঠিক একটি পদক্ষেপ । গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটারগুলিকে এমনভাবে নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলতে হবে, যেন তা যে কোনও রকম সাইবার হানা ব্যর্থ করতে সক্ষম হয় । এর জন্য প্রয়োজন সঠিক কৌশল ও নীতির । আমাদের ঘরোয়া সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে হবে । চিনে সাইবার নিরাপত্তায় 10টি বাহিনী রয়েছে যাতে হাজার হাজার সাইবার রক্ষী সব সময় কাজ করে চলেছেন । সদ্য গঠিত ভারতীয় সাইবার ডিফেন্স এজেন্সিকে আরও মজবুদ করে গড়ে তুলতে হবে ।

সঠিক এবং নিখুঁত সাইবার নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের । শুধুমাত্র সাইবার নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারলে ভারত ইলেকট্রনিক্স বিশ্বের পাওয়ার হাউজ়ে পরিণত হবে । তবে, এর জন্য আরও একটু সময় এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন । সেই সময়ের মধ্যে ভারতকে বাইরে থেকে কেনা যে কোনও যন্ত্রাংশ ভাল করে পরখ করে নিতে হবে । তবে সরকার যে পদক্ষেপই করুক না কেন, দেশের নাগরিকদের তাদের দায়িত্ব ভালো করে বুঝতে হবে । আমাদের দেশে জাল সফটওয়্যারের ব্যবহার অত্যন্ত বেশি । সরকারকে দেশের প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত সব কর্মীদের এটা বোঝাতে হবে যে, অফিস তো বটেই, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও যেন জাল সফটওয়্যার ব্যবহার না করা হয় । বাকি দপ্তরগুলিকেও কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে, যাতে কোনওভাবেই সাইবার নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় ।

সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের এস্টোনিয়ার থেকে শেখা উচিত । এই দেশের সাইবার নিরাপত্তা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ । 2007 সালে এই দেশে রাশিয়ান সাইবার হানায় দেশের 58টি প্রধান ওয়েবসাইট কাজ করা বন্ধ করে দেয় । বিকল হয়ে পড়ে ATM এবং সংবাদ পরিবেশনের ওয়েবসাইটগুলিও । এই হামলা থেকে শিক্ষা নিয়ে এক দুর্দান্ত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছে এই দেশ । দেশের নাগরিকদের সচেতন করা হয়েছে । সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৈরি করেছে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা । সাইবার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সাইবার ডিফেন্স ডিভিশন সাইবার হানা হওয়ার অনেক আগেই তাকে প্রতিহত করে । এই অসাধারণ সুরক্ষা ব্যবস্থার স্বীকৃতিস্বরূপ এখানে রয়েছে ন্যাটো কোঅপারেটিভ সাইবার ডিফেন্স সেন্টার অফ এক্সেলেন্স । মাত্র 13 লাখ মানুষের একটা দেশ যদি এই কাজ করতে পারে, তা হলে আমরা করতে পারব না কেন ।

কৌশলগত আক্রমণ

সোশাল মিডিয়া থেকে প্রথমে চিহ্নিত করা হয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্তাদের । এরপর তাঁদের যে কোনওভাবে কবজা করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকা নেটওয়ার্কে বাগ ঢুকিয়ে দেওয়া হয় । কোনওভাবে এই প্রক্রিয়া কাজ না করলে সাহায্য নেওয়া হয় ওয়্যারলেস ব্যবস্থার । ঠিক এই ভাবেই এক ফরাসি সাব কন্ট্রাকটরের জন্য ভারতের সাবমেরিন ‘স্করপিয়ন’-এর সমস্ত তথ্য শত্রুদের হাতে চলে গিয়েছিল । ঠিক এই ভাবে বিমানবাহিনীর এক অফিসার একটি পেন ড্রাইভের মাধ্যমে সাত হাজার পাতার গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতিয়ে নিয়েছিল ।

এই সব ঘটনা থেকেই বারবার প্রমাণ হচ্ছে যে, আমাদের কম্পিউটারগুলো হ্যাক করা মোটেই অসম্ভব নয় । আগাম সতর্ক না থাকলে এর মোকাবিলা করা খুবই কঠিন ।

ভারতের সাইবার বিশেষজ্ঞ পুখরাজ সিং টুইটারে জানিয়েছেন, কুডানকুলাম নিউক্লিয়ার পাওয়ার বোর্ড (KNPB)-এর যোগাযোগ ব্যবস্থা হ্যাক হয়ে গেছে । এই খবর সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে ।

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সমন্বয়কারী লেফটেনেন্ট জেনেরাল রাজেশ পন্থ জানিয়েছেন, এই সাইবার আক্রমণটি ঘটে সেপ্টেম্বর মাসে । 29 অক্টোবর এই খবরটি দাবানলের মতো খবরের চ্যানেলগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে । KNPB কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রাথমিকভাবে এই খবরের সত্যতা স্বীকার করতে চাননি । তবে, ওই একই সংস্থা 24 ঘণ্টা পরে মেনে নেয় সাইবার হানার কথা ৷ নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (NPCIL) 30 অক্টোবর জানায়, চলতি বছর সেপ্টেম্বরের গোড়ায় কুডানকুলাম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট (KKNPP)-এর প্রশাসনিক নেটওয়ার্কে ‘ডি-ট্র্যাক’ নামক একটি ম্যালওয়্যারের অস্তিত্ব মিলেছে । এই ম্যালওয়্যারটির সাহায্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার হ্যাক করা হয় । যদিও কেন্দ্রের প্রযুক্তি দপ্তর থেকে দাবি করা হয়, তাদের কম্পিউটারগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ কারণ এগুলি ‘এয়ার-গ্যাপড’ । তাই এই কম্পিউটারগুলি হ্যাক করা অসম্ভব । ‘এয়ার গ্যাপড’ সিস্টেমের অর্থ, এই সব কম্পিউটারগুলি কোনওরকমভাবেই কোনও নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত নয় । আর এই কারণে এগুলি হ্যাক করাও সম্ভব নয় । অন্যদিকে, ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (ISRO)-ও ডিট্র্যাক হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা পেয়েছিল । এই সতর্কবার্তা এসেছিল চন্দ্রযান-২-এর লঞ্চের সময় ।

এই ধরনের আক্রমণ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলিতে নিরাপত্তার ফাঁক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় । সাধারণত উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা এই ডিট্র্যাক ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে । এরা তথ্য চুরি করে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় হামলার ছক কষে । এই ম্যালওয়্যার দিয়েই দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্কিং এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন নথি হ্যাক করা হয় । ভারতের ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার (BARC)-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এস এ ভরদ্বাজের দাবি, তিনি ই-মেইলের মাধ্যমে এই ধরনের ম্যালওয়্যার পেয়েছেন । ভাবার প্রাক্তন কর্তা হওয়ার পাশাপাশি তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাটমিক পাওয়ার কোম্পানির টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এবং থোরিয়াম নির্ভর AHWR রিয়্যাকটরের বিজ্ঞানী । উত্তর কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ইউরেনিয়াম নির্ভর পরমাণু প্রযুক্তি থেকে সরে এসে থোরিয়াম নির্ভর পরমাণু প্রযুক্তিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে । আর তাই তারা ভারতের দিকে নজর দিয়েছে । ভারতে থোরিয়াম নির্ভর পরমাণু প্রযুক্তিতে যথেষ্ট শক্তিশালী । থোরিয়াম নির্ভর পরমাণু প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা দেশগুলির দিকে নজর রয়েছে চিনেরও । পরে জানা যায়, এই ধরনের ম্যালওয়্যারের ই-মেইল পেয়েছেন বিশিষ্ট ভারতীয় বিজ্ঞানী অনিল কাকোদকর ।

ভয়ঙ্কর উত্তর কোরিয়া

আধুনিক যুগে যুদ্ধক্ষেত্রের ব্যাপ্তি অনেকটাই বেড়েছে । জল, স্থল, আকাশ এবং মহাকাশ ছাড়িয়ে তা এখন সাইবার নিরাপত্তার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে । নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে বা তাতে বড়সড় সমস্যা তৈরি করতে সাইবার আক্রমণের জুড়ি নেই । সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা সিমেনটেকের সমীক্ষা অনুসারে, সাইবার আক্রমণের শিকার হতে পারা দেশের তালিকায় ভারতের স্থান একেবারে উপরের দিকে । সিমেনটেকের মতে, অ্যামেরিকা ও চিনের পরে ভারতেই সাইবার আক্রমণের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি । সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অ্যামেরিকা ও চিন কিন্তু ভারতের চেয়ে এখন অনেকটাই এগিয়ে । প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা । 2018 সালে 36টি রাজ্যে গভর্নর নির্বাচনের আগে সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সিকে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করে অ্যামেরিকার সাইবার কম্যান্ড । ইন্টারনেটের উপর অ্যামেরিকার একছত্র আধিপত্যের প্রমাণ মিলেছিল কখনওই । 2019 সালের 2 মে রাশিয়া সার্বভৌম ইন্টারনেট আইন পাশ করে । এর ফলে পুরোনো ব্যবস্থা থেকে আলাদা হয়ে রাশিয়া নিজেদের DNS সার্ভার দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে । খুব শীঘ্রই রাশিয়া তাদের নিজস্ব ইন্টারনেট RUNET-এর পরীক্ষা করবে ।

সাইবার আক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে রাশিয়ার এই উদ্যোগ থেকে মনে হয় ভারত কিছুই শেখেনি । সরকার বলছে, আমাদের কম্পিউটারে সাইবার হানা হওয়া অসম্ভব, কারণ এগু‌লি এয়ার গ্যাপ অবস্থায় রয়েছে । ইতিহাস কিন্তু সরকারের এই দাবি সমর্থন করে না ।

ইরানের পরমাণু প্রকল্প বানচাল করে দিয়েছিল অ্যামেরিকা। প্রথমে তারা ইরানের নানতেজ ইউরেনিয়াম শোধনাগারে যন্ত্রপাতির জোগান দেয়, এমন চারটি সংস্থাকে চিহ্নিত করে । পরে স্টাক্সনেট নামক ডিজিটাল অস্ত্র দিয়ে অ্যামেরিকা ওই চার সংস্থাকে নিশানা করে । এই চারটি সংস্থার কোনও একজন কর্মচারী নানতেজ পারমাণবিক কেন্দ্রের কম্পিউটারে একটি পেন ড্রাইভ লাগায় । শুধুমাত্র এই কাজ করার জন্য 984টি গ্যাস সেন্ট্রাল ফিউজ় অকেজো হয়ে যায় । এর ফলে এখনও পর্যন্ত ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি । অ্যান্টি-ভাইরাস প্রস্তুতকারক সংস্থা ক্যাসপারস্কাইয়ের মতে, মানুষের একটা ছোটো ভুলে কর্পোরেট জগতের 90 শতাংশ ক্ষেত্রে সাইবার হানা হতে পারে । খুব পোক্ত সাইবার নিরাপত্তা না থাকায় মার্কিন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সরঞ্জাম দেওয়া ছোটো ঠিকাদারদের নিশানা করে চিন । এর আগে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কম্পিউটারে হানা দিয়েছিল চিন । এমনকি, চিনে তৈরি হওয়া হার্ডওয়্যারও নিরাপদ নয় মোটেই ।

CIA পর্যন্ত চিনের সাইবার হানার হাত থেকে রক্ষা পায়নি । অ্যামেরিকারই সুপার মাইক্রো নেটওয়ার্কিং সার্ভারের পরিষেবা ব্যবহার করে এই হামলা চালায় তারা । এর ফলে ড্রোনের মাধ্যমে নেওয়া ছবির মান খারাপ হয়ে যায় । সুপারমাইক্রো বাবহারকারী কম্পিউটারের প্রধান অংশগুলি তৈরি হত চিনে । ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্টের দাবি, এই অংশগুলিতে ধান বা চালের আকারের ছোটো একটি ক্ষতিকর চিপ বসিয়ে এই কাজ করেছিল চিন । তবে, সরকারিভাবে অ্যামেরিকা কখনই এই ধরনের ঘটনার কথা স্বীকার করেনি । তবে এরপর থেকে চিন থেকে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার আমদানিতে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেছে অ্যামেরিকা ।

ভারতের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় চিনা সরঞ্জামের ব্যবহার অত্যাধিক বেশি । নিয়মানুযায়ী চিনের সব সংস্থাকে সরকারের কাছে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য জানাতে হয় । ভারতে 5জি নেটওয়ার্কের বরাত পেতে দরপত্র দেওয়ার বিষয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে কয়েকটি চিনা সংস্থা । মানবহীন যুদ্ধের ক্ষেত্রে 5জি নেটওয়ার্কের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত । অর্থাৎ এই ভাবে যুদ্ধের সময় যুদ্ধাস্ত্র বিকল করে বিপদে ফেলাও অসম্ভব নয় ।

প্রস্তুত থাকাটাই আসল

সাধারণ মানুষ তো বটেই, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে বাহিনী, উচ্চপদস্থ কর্মী এবং বিজ্ঞানীদেরও শিক্ষিত করে তুলতে হবে । জাতীয় সাইবার নিরাপত্তাকে ভরসা দিতে এখন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে, যা খুবই জরুরি এবং সঠিক একটি পদক্ষেপ । গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটারগুলিকে এমনভাবে নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলতে হবে, যেন তা যে কোনও রকম সাইবার হানা ব্যর্থ করতে সক্ষম হয় । এর জন্য প্রয়োজন সঠিক কৌশল ও নীতির । আমাদের ঘরোয়া সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে হবে । চিনে সাইবার নিরাপত্তায় 10টি বাহিনী রয়েছে যাতে হাজার হাজার সাইবার রক্ষী সব সময় কাজ করে চলেছেন । সদ্য গঠিত ভারতীয় সাইবার ডিফেন্স এজেন্সিকে আরও মজবুদ করে গড়ে তুলতে হবে ।

সঠিক এবং নিখুঁত সাইবার নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সঠিক সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের । শুধুমাত্র সাইবার নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারলে ভারত ইলেকট্রনিক্স বিশ্বের পাওয়ার হাউজ়ে পরিণত হবে । তবে, এর জন্য আরও একটু সময় এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন । সেই সময়ের মধ্যে ভারতকে বাইরে থেকে কেনা যে কোনও যন্ত্রাংশ ভাল করে পরখ করে নিতে হবে । তবে সরকার যে পদক্ষেপই করুক না কেন, দেশের নাগরিকদের তাদের দায়িত্ব ভালো করে বুঝতে হবে । আমাদের দেশে জাল সফটওয়্যারের ব্যবহার অত্যন্ত বেশি । সরকারকে দেশের প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত সব কর্মীদের এটা বোঝাতে হবে যে, অফিস তো বটেই, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও যেন জাল সফটওয়্যার ব্যবহার না করা হয় । বাকি দপ্তরগুলিকেও কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে, যাতে কোনওভাবেই সাইবার নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় ।

সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের এস্টোনিয়ার থেকে শেখা উচিত । এই দেশের সাইবার নিরাপত্তা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ । 2007 সালে এই দেশে রাশিয়ান সাইবার হানায় দেশের 58টি প্রধান ওয়েবসাইট কাজ করা বন্ধ করে দেয় । বিকল হয়ে পড়ে ATM এবং সংবাদ পরিবেশনের ওয়েবসাইটগুলিও । এই হামলা থেকে শিক্ষা নিয়ে এক দুর্দান্ত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছে এই দেশ । দেশের নাগরিকদের সচেতন করা হয়েছে । সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৈরি করেছে সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা । সাইবার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সাইবার ডিফেন্স ডিভিশন সাইবার হানা হওয়ার অনেক আগেই তাকে প্রতিহত করে । এই অসাধারণ সুরক্ষা ব্যবস্থার স্বীকৃতিস্বরূপ এখানে রয়েছে ন্যাটো কোঅপারেটিভ সাইবার ডিফেন্স সেন্টার অফ এক্সেলেন্স । মাত্র 13 লাখ মানুষের একটা দেশ যদি এই কাজ করতে পারে, তা হলে আমরা করতে পারব না কেন ।

কৌশলগত আক্রমণ

সোশাল মিডিয়া থেকে প্রথমে চিহ্নিত করা হয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্তাদের । এরপর তাঁদের যে কোনওভাবে কবজা করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকা নেটওয়ার্কে বাগ ঢুকিয়ে দেওয়া হয় । কোনওভাবে এই প্রক্রিয়া কাজ না করলে সাহায্য নেওয়া হয় ওয়্যারলেস ব্যবস্থার । ঠিক এই ভাবেই এক ফরাসি সাব কন্ট্রাকটরের জন্য ভারতের সাবমেরিন ‘স্করপিয়ন’-এর সমস্ত তথ্য শত্রুদের হাতে চলে গিয়েছিল । ঠিক এই ভাবে বিমানবাহিনীর এক অফিসার একটি পেন ড্রাইভের মাধ্যমে সাত হাজার পাতার গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতিয়ে নিয়েছিল ।

এই সব ঘটনা থেকেই বারবার প্রমাণ হচ্ছে যে, আমাদের কম্পিউটারগুলো হ্যাক করা মোটেই অসম্ভব নয় । আগাম সতর্ক না থাকলে এর মোকাবিলা করা খুবই কঠিন ।

Mumbai, Dec 01 (ANI): Board of Control for Cricket in India (BCCI) President Sourav Ganguly after 88th Annual General Meeting in Mumbai said that Cricket Advisory Committee (CAC) doesn't have much work and there is no need of full-time CAC. "CAC doesn't have much work, its work is appointing selection committee and coach, once it appoints a selection committee it stays for four years and coach appointed stays for three years, so whats the point of having full-time CAC," said Ganguly while addressing media post meeting.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.