ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন অ্যামেরিকান সরকার এবং তালিবানের মধ্যে সাক্ষরিত দোহা চু্ক্তি যে আফগানিস্তানে বিগত বহু বছর ধরে চলে আসা হিংসার ইতিহাসে দাড়ি টানতে পারেনি, তা বর্তমানে স্পষ্ট । বরং ওই চুক্তির ফলে সেখানে উপস্থিত এক অদৃশ্য শত্রু এবং অসামরিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে চলতে থাকা ঘৃণ্য বিবাদের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে, যা পক্ষান্তরে সেখানে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । কাবুলে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজরা নৃশংসভাবে যে সদ্যোজাত শিশুদের হত্যা করেছে, সেই ঘটনায় বোঝা গিয়েছে যে সেখানে অপরাধীরা কারও নিয়ন্ত্রণে নেই এবং এর জেরে সেই সব মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বহুলাংশে বাড়িয়ে তুলেছে, যারা হয় বর্তমান, নয় পূর্ব শাসনব্যবস্থার অংশ ।
৯/১১ কাণ্ডের পর আফগানিস্তানে অ্যামেরিকান সেনাবাহিনী এই আশায় প্রবেশ করেছিল যে, হিংসার ইতিহাস মুছে, শান্তিকে সুযোগ দিয়ে তারা তালিবানকে পরাস্ত করে সমগ্র আফগানিস্তানে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনবে । তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ মোটামুটি শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে, কিন্তু এখনও ওই অঞ্চলে সংঘর্ষ জারি রয়েছে । অ্যামেরিকা এবং তালিবানের মধ্যে প্রায় দু’দশকের যুদ্ধের পর হওয়া চুক্তিকে অনেক বিশ্লেষকই সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গীতে পর্যালোচনা করে যুদ্ধবিধস্ত আফগানিস্তান থেকে অ্যামেরিকান সেনার সম্মানীয় প্রস্থান এবং ওই অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করার প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছিলেন ।
এমনকী চুক্তি হয়ে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যামেরিকান সেনার আফগানিস্তানে থাকাকে ‘দীর্ঘ এবং কঠিন সফর’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন । তিনি বলেছিলেন, “এত বছর পর আমাদের লোকেদের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এসে গিয়েছে ।” পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে ভারতের আফগান নীতি নিয়ে বিলাল ভাটের সঙ্গে আলোচনায় সোসাইটি ফর পলিসি স্টাডিজের অধিকর্তা কমোডর (অবসরপ্রাপ্ত) উদয় ভাস্কর বলেন, আফগানিস্তানে রাস্তা তৈরি, স্কুল এবং পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণে অবদান রেখে ভারত যেভাবে এই বিষয়ে নিজের স্থায়ী, নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রেখে আফগানদের জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ বদল এনেছে, তা যেমন উল্লেখযোগ্য তেমনই আবার তালিবানের সঙ্গে অ্যামেরিকাকে আলোচনার টৈবিলে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ ।