হায়দরাবাদ : রাত পোহালেই অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন । একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প । আর তাঁকে কড়া টক্কর দিতে তৈরি জো বিডেন । কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অ্যামেরিকা তার দু'শো বছরেরও বেশি পুরানো গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবথেকে বেশি বিতর্কিত প্রেসিডেন্টকে চাক্ষুষ করেছে 2017 সালে । একদিকে কট্টরবাদী মনোভাব এবং অন্যদিকে উগ্র অ্যামেরিকানপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর বিতর্কিত ভাবমূর্তিকে দিনে দিনে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ ।
চর্চায় ডোনাল্ড ট্রাম্প
অনেকেই মনে করেছিলেন, ট্রাম্পের অকপট, আগ্রাসী এবং ভিনদেশের নাগরিকদের প্রতি তথাকথিত 'বিরূপ' মনোভাব আখেরে বিপক্ষ শিবিরকেই সাহায্য করবে । কিন্তু শেষ চার বছরে ট্রাম্প তাঁর রাজনৈতিক সফরনামায় বার বার এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন ।
মূলধারার রাজনীতিতে ট্রাম্প খুব বেশিদিনের নয় । মেরে কেটে বছর চারেকের রাজনৈতিক জীবন । তবে তাঁর রাজনৈতিক সফরনামা কোনওদিনই চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী ছিল না । বরং তাঁর এই অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি অ্যামেরিকার আর পাঁচটা দুঁদে রাজনীতিবিদকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছিল । অ্যামেরিকার নির্বাচনের ছাঁচটাকেই পুরো বদলে দিয়েছিলেন তিনি ।
বিতর্কের শিরোনামে ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কে ট্রাম্পের নাম জড়িয়েছে । কিন্তু বিতর্কগুলিকে বিপক্ষের তুলনায় অনেক বেশি ভালো করে সামাল দিতে দেখা গেছে তাঁকে । নিজের সপক্ষে তাঁর যুক্তিগুলি কোনওদিনই মনে হয়নি, তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য বলছেন । বরং নিজের সপক্ষে প্রতিটি যুক্তি ছিল আরও বেশি আগ্রাসী । এমনই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ।
পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলের সঙ্গে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক হোক বা ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া ... কিংবা কোরোনার চিকিৎসা সংক্রান্ত তাঁর পরামর্শ... বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কে শিরোনামে এসেছিল অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্টের নাম । তবে কূটনীতিবিদরা বলছেন, প্রতিটি বিষয় দক্ষভাবে সামাল দিয়েছেন । কখনও নিজের ভাবমূর্তিতে কালি লাগতে দেননি ।
ট্রাম্পের বাজিমাত
কিছু কিছু প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলও ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু বাকি সবক্ষেত্রেই বাজিমাত করেছেন । ট্রাম্পকে ঘিরে যা যা বিতর্ক এতদিন উঠে এসেছিল, সেই সবকিছু থেকেই নিজেকে একেবারে নির্দোষ প্রমাণ করে বেরিয়ে এসেছেন তিনি । যে যে বিতর্কগুলি দানা বেঁধেছিল, তা থেকে বেরিয়ে এসে তিনি প্রতিবার অ্যামেরিকার রাজনীতিতে তাঁর অস্তিত্বকে আরও বেশি মজবুত করেছেন ।
পর্যবেক্ষকরা অনেকেই বলেন, চিনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ আদতে ট্রাম্পের জন্যই শুরু হয়েছে । আর এতে চিনের কমিউনিস্ট রাজের উপর অনেকটা বড় ধাক্কা নেমে এসেছে । উলটো দিক থেকে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আখেরে লাভ হয়েছে অ্যামেরিকারই । আর এর ফলে ট্রাম্পের 'অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতি আরও বেশি প্রকট হয়েছে । এমনই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা ।
এদিকে ডেমোক্র্যাট শিবিরের তরফে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের যে চেষ্টা করা হয়েছিল তাও ব্যর্থ হয় । ইমপিচমেন্ট বিফল হওয়ার পর থেকে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের ভূমিকা আরও বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে । ফেব্রুয়ারি মাসে স্টেট অফ দা ইউনিয়নে ট্রাম্পের দৃঢ় বক্তৃতা থেকেই তা স্পষ্ট ।
কূটনীতিবিদরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের 'অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতি বেশ সফল । তবে বেশ কিছু প্রত্যাশা রয়ে গেছে, যা এখনও পূরণ করা বাকি । এর মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার ইশুটি । পরমাণু শক্তি নিয়ে কাজ করা থেকে কিম জংকে বিরত করতে পারেননি ট্রাম্প ।
ট্রাম্পের আগ্রাসী ভঙ্গিমা
যে সমস্যাগুলি সামনে এসেছে, সেগুলিকে সবসময় সুযোগে পরিণত করার চেষ্টা করে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । বিপক্ষের চরম গোপন কোনও তথ্য ফাঁস করে বিরোধী শিবিরকে বিপাকে ফেলতেও তিনি সিদ্ধহস্ত । ঠিক যেমনটা করেছিলেন ওবামাগেট ইশু নিয়ে । ওবামাগেট ইশু আজও ডেমোক্রাটদের মাঝেমধ্যেই অস্বস্তিতে ফেলে ।
হিলারি ক্লিন্টন হোন বা বারাক ওবামা অথবা এবারের প্রতিদ্বন্দী জো বিডেন... বিরোধী দলের রথী-মহারথীদের আক্রমণ করতে কখনওই পিছপা হননি ট্রাম্প ।
ট্রাম্পের রাজনৈতিক সফরনামা
শুরু করা যাক অ্যামেরিকার 2016 সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকে । রিপাবলিক দলের মনোনয়ন পর্ব । ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনীত করার বিষয়ে দলের অনেকেই ভিন্নমত দিয়েছিলেন । তবে স্ত্রী মেলানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে দলের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত আওয়াজকে থামিয়ে দিতে পেরেছিলেন ট্রাম্প । মনোনয়নের দৌড়ে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন রিপাবলিক দলের অনেক বাঘা-বাঘা মুখকে ।
সেই বার ক্লিভল্যান্ডে রিপাবলিকানদের জাতীয় সম্মেলনে দলের হয়ে মনোনয়ন গ্রহণ করার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, "মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন ।" বার্তা দিয়েছিলেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও জোরদার করার । শুরু থেকেই নিজের 'অ্যামেরিকা ফার্স্ট' চিন্তাধারাকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ।
অ্যামেরিকার অর্থনীতি এবং অপরাধ দমন সংক্রান্ত বিষয়গুলির উপর জোর দিচ্ছিলেন ট্রাম্প । কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দুইয়ের উপর ভর করেই দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈতরণী পার করার চেষ্টায় ছিলেন তিনি ।
কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ও তাঁর প্রতিদ্বন্দী ডেমোক্র্যাট দলের জো বিডেন, দুজনেরই নির্বাচনী প্রচারের উপর প্রভাব ফেলেছে কোরোনা ভাইরাস । 2020 সালের নির্বাচনী প্রচারের জন্য যে যে চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল, সেই সবেই অনেক বদল করতে হয়েছে দুই শিবিরকেই । বর্তমানে কোরোনা পরিস্থিতি এবার অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বড় ফ্ল্যাশপয়েন্ট বলে মনে করেছেন অনেকে ।
গ্রীষ্মের সময়টা বিডেন প্রচারের কাজে ব্যস্ত থাকলেও কোরোনার কারণে অনেকটা সময় ডেলাওয়ারে নিজের বাড়িতেই ছিলেন । তবে এই কোরোনার মধ্যেও নির্বাচনী প্রচারে বেশ সক্রিয় ছিলেন বিডেন । সামাজিক দূরত্ব মেনে ছোটো ছোটো সভা করেছেন । যেখানেই যেতেন মাস্ক পরে যেতেন । এই নিয়েও ট্রাম্প তাঁকে ঠাট্টা করতে ছাড়তেনি ।
এদিকে ট্রাম্প অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে আসার পর থেকে, দেশে একের পর এক প্রতিবাদ । 2017-র জানুয়ারি । ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং তারপর দক্ষিণে মেক্সিকোর সীমান্ত বরাবর পাঁচিল তুলে দেওয়ার পরিকল্পনায় প্রতিবাদের আগুন আরও ব্যাপক আকার নেয় ।
তবে ঘরোয়া রাজনীতিতে বেশ কিছু সাফল্যও রয়েছে ট্রাম্পের । প্রেসিডেন্ট পদে আসার পর অ্যামেরিকার সুপ্রিম কোর্টে নিল গরসুচ ও ব্রেট কাভানাগ -- দুই রক্ষণশীল জাস্টিসকে নিয়োগের জন্য মনোনীত করেন তিনি । এরপর 2020 প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগেই অ্যামি কনি বারেটকে সুপ্রিম কোর্টের জাস্টিস হিসাবে মনোনয়ন করেন ।
শুধুমাত্র ঘরোয়া রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক আঙিনাতেও অনেকগুলি বড় বড় সাফল্য রয়েছে ট্রাম্পের আমলে । বিশ্বজুড়ে কোরোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার প্রথম দিকের দিনগুলিতে ট্রাম্প চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বেশ 'বন্ধুত্বপূর্ণ' এবং একটি ইতিবাচক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন । এখন অবশ্য চিনের সঙ্গে এই সম্পর্ক পুরো একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেছে ।
শুরুর দিকে কিম জংয়ের সঙ্গেও বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি করে নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও হয়েছিল । তবে সেই সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত আর বজায় রাখা সম্ভব হয়নি । উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র পরিত্যাগ করার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিতে শুরু করে অ্যামেরিকা । কিন্তু ওয়াশিংটনের এই চাপ মেনে নিতে চাননি কিম জং । কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ করার এই চাপ থেকেই অ্যামেরিকা-উত্তর কোরিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কে ইতি পড়ে ।
বিগত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে ট্রাম্পের প্রশাসন ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেছে । রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ঠিক কী উদ্দেশ্য রয়েছে, তা বরাবরই ট্রাম্পের প্রশাসনের মাথাব্যাথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেন, ট্রাম্প এবং রাশিয়ার এই সম্পর্কের শুরুটা হয়েছিল 2016 সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকে । বিপক্ষের ইমেলগুলি প্রকাশ্যে আনার জন্য মস্কোর কাছে তাঁর আবেদন, রাশিয়া এবং অ্যামেরিকাকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা উচিত বলে সোজা সাপটা পরামর্শ এবং তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীর সঙ্গে এবং রাশিয়ানদের মধ্যে দফায় দফায় যোগাযোগের খবর সামনে এসেছিল । বিভিন্ন মহলে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছিল । ঘটনার জেরে স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলার তদন্তও শুরু করেছিলেন ।
অ্যামেরিকার তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেন রবার্ট মুলার । তদন্তে উঠে আসে, 2016 সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ছিল । উদ্দেশ্য ছিল বিশৃঙ্খলা তৈরি করা এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে সাহায্য করা । তবে তদন্তে উঠে আসা এই তথ্যগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ট্রাম্প । বিশেষ করে 2018 সালে হেলসিঙ্কিতে পুতিনের সঙ্গে একমঞ্চে থাকার বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি ।
ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট কাঁটাছেড়া হয়েছিল ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়ার সময়েও । রাশিয়ার আগ্রাসন রুখতে ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি । বদলে ইউক্রেনের থেকে রাজনৈতিক সাহায্য নিয়েছিলেন । তবে এই নিয়ে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি ট্রাম্পকে । হাউজ়ে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে ইমপিচ করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন । অন্যদিকে সেনেটে রিপাবলিকানরা মত দিয়েছিলেন বেকসুর খালাস করার পক্ষে ।
তবে কোরোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ট্রাম্পকে হতে হয়েছে তা একেবারেই নতুন । ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দক্ষতার বার বার পরীক্ষা নিয়েছে এই পরিস্থিতি । স্পেশাল কাউন্সেলের তদন্তই হোক, অথবা ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার ধাক্কাই হোক... কোরোনার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি ট্রাম্পকে ।
কোরোনা ভাইরাসের প্রাথমিক ধাক্কা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি অ্যামেরিকা । এরই মধ্যে এসে গেছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন । 2020 সালের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের স্লোগান -- "কিপ অ্যামেরিকা গ্রেট" । তবে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অনেকেই বলছেন, অ্যামেরিকার বেশিরভাগ প্রদেশের আসল ছবিটা স্লোগানের থেকে পুরোপুরি উলটো । বেকারত্ব সমস্যায় ধুঁকছে প্রদেশগুলি । স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়েও যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে ।
কোরোনার মৃত্যুর তালিকায় বিশ্বে সবার উপরে রয়েছে অ্যামেরিকা । 2 লাখ 36 হাজারেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে । অ্যামেরিকায় মোট সংক্রমণ ছাড়িয়েছে 90 লাখের গণ্ডি । প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্তের খবর সামনে আসছে ।
কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে ঝিমিয়ে যাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারেও সেভাবে কোনও গতি দেখা যাচ্ছে না ।
অ্যামেরিকার রাজনীতিকে খুব কাছে থেকে যাঁরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাঁদের কথায় কোরোনা পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাব যে তাঁর রাজনৈতিক ভাগ্যের উপর পড়বে, তা বিলক্ষণ টের পেয়েছিলেন ট্রাম্প । আর সেই কারণেই কোরোনার সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্য চাপা দেওয়ার প্রয়াস শুরু করেছিল হোয়াইট হাউজ় । ফলস্বরূপ কয়েক মাস পরে দৈনিক তথ্যের ব্রিফিং দেওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যায় ।
এরপর 2 অক্টোবর কোরোনায় সংক্রমিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই । সংক্রমিত হন মেলানিয়াও । ম্যারিল্যান্ডের বেথেসডায় ওয়াল্টার রিড মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি । বেশ কয়েক রাত হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল তাঁকে । অনেকের মতে, অক্টোবরে কোরোনা আক্রান্ত হওয়াটা ছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনে একটা বড় ধাক্কা । এতদিন পর্যন্ত ট্রাম্প অ্যামেরিকার নাগরিকদের বোঝানোর মরিয়া চেষ্টা করে আসছিলেন যে, প্যানডেমিকের সবথেকে খারাপ সময়টা দেশ পিছনে ফেলে এসেছে ।
একদিকে যখন কোরোনার দাপট সামলাতে ব্যস্ত ট্রাম্পের প্রশাসন, ঠিক সেই সময় নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়ে মিনিয়াপোলিস পুলিশের এক আধিকারিকের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে । কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হাঁটু দিয়ে ঘাড়ে চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিলেন ওই পুলিশ আধিকারিক । অ্যামেরিকার একের পর এক শহরে হিংসাত্মক প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল ।
প্রায় কয়েক মাস ধরে পোর্টল্যান্ড, ওরেগনের রাজপথের দখল নিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা । বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নিমেষে রূপ নিয়েছিল ভাঙচুর ও সংঘর্ষের । অস্থিরতার এই পরিস্থিতি অ্যামেরিকার অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছিল । পোর্টল্যান্ডে একাধিক সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ ও গ্র্যাফিটি স্প্রে করার ছবি সামনে এসেছিল ।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে মুখোমুখি বিডেন এবং ট্রাম্প । 74 বছর বয়সি রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়াই করবেন তাঁর 77 বছর বয়সি প্রতিদ্বন্দী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বিডেনের সঙ্গে । দু'জন 'সাদা চামড়া'-র প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে থেকে অ্যামেরিকাবাসী বেছে নেবেন একজনকে । তবে নির্বাচনী লড়াইয়ে দু'জনেরই দাওয়াই আলাদা । বিশ্লেষকদের মতে এবারের নির্বাচনে স্বাস্থ্য পরিষেবা, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈদেশিক নীতি এবং নেতৃত্বদানের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে দাঁড়িপাল্লায় মাপা হবে ।
অ্যামেরিকার সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিডেন ডেমোক্র্যাট দলের সবথেকে প্রবীণ প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হয়েছেন । ওয়াশিংটনে একজন নির্বাচিত কর্মকর্তা হিসাবে জীবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছেন তিনি । সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনও মনোনীত প্রার্থীর সরকারে এতদিনে অভিজ্ঞতা নেই । কিন্তু এবার বিডেন মুখোমুখি হতে চলেছেন ট্রাম্পের । তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিডেন কখনও ভোটের লড়াইয়ে ট্রাম্পের মুখোমুখি হননি ।