কোভিড-19 নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা এবং জনমত সমীক্ষার রেটিং ক্রমশ পড়তে থাকায় এবছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পিছিয়ে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেষ্টা সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই । এমনকী রিপাবলিকান নেতারাও বলছেন যে এটা করা যাবে না। প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে মেল-ইন-ভোটিংয়ের সম্ভাবনা থাকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পিছনো হবে, বৃহস্পতিবার এই মর্মে ট্রাম্পের বক্তব্যে বৃহস্পতিবার ঝড় ওঠে । ট্রাম্প টুইটারে বলেন, “সার্বিকভাবে মেল-ইন-ভোটিং হলে (অ্যাবসেন্টি ভোটিং নয়, যেটা ভালো), 2020-র নির্বাচন ইতিহাসের সবথেকে বেশি ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রতারণাপূর্ণ নির্বাচন হবে । এটা আমেরিকার পক্ষে বিরাট অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে । যতদিন না মানুষ যথাযথ ও নিরাপদভাবে ভোট দিতে পারছে ততদিন ভোট পিছিয়ে দেওয়া যাক?” যদিও ট্রাম্প তাঁর দীর্ঘ পোস্টাল ব্যালট বিরোধিতার মাঝখানে এই প্রস্তাব রেখেছেন এই ভিত্তিতে যে এর ফলে প্রতারণাপূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল আসবে। কিন্তু তাঁর রিপাবলিকান পার্টির নেতারাই এই ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন । সেনেট মেজরিটি নেতা এবং কেনটাকির রিপাবলিকান সেনেটর মিচ ম্যাককনেল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এই দেশের ইতিহাসে, যুদ্ধ, মন্দা, গৃহযুদ্ধের মধ্যেও কখনও এমন হয়নি যে নির্ধারিত নির্বাচন সময়ে হয়নি । 3 নভেম্বরের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমরা কোনও একটা পদ্ধতি বের করে নেব।” হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভের মাইনরিটি নেতা কেভিন ম্যাকার্থিও একইরকম মতামত ব্যক্ত করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এমন কোনওদিন হয়নি যে আমরা ভোটের আয়োজন করিনি । আমাদের নির্বাচনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলা উচিত।”
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার । আর এবার সেই দিনটি হল 3 নভেম্বর । ট্রাম্পের এই পরামর্শ সামনে এসেছে সেই সময় যখন অ্যামেরিকায় দেড় লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া কোরোনা প্যানডেমিক মোকাবিলা এবং বর্ণবিদ্বেষ, অবৈধ অভিবাসন সহ ঘরোয়া ইশু নিয়ে তাঁর ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে । জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বিডেনের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প । উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্সের তথ্যের ভিত্তিতে ফিনানশিয়াল টাইমস পোল ট্র্যাকারের সর্বশেষ অনুমান, 538টি ইলোক্টোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে বিডেন জিততে পারেন 308টি, যেখানে ট্রাম্প মাত্র 128টি পেতে পারেন। কোনও প্রার্থীকে জিততে হলে 538টির মধ্যে 270টি ভোট পেতে হয়। প্রেসিডেন্ট পদপ্রত্যাশী ট্রাম্প যদিও দাবি করছেন যে এসব জনমত সমীক্ষায়, সেই সব নিঃশব্দ সংখ্যাগুরু মানুষের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হয়নি যাঁরা তাঁর সঙ্গে আছেন । কিন্তু ভোট পিছিয়ে দিতে তাঁর পরামর্শ সত্ত্বেও, যা তাঁকে আরও জনসমর্থন জোটানোর সুযোগ দিতে পারত, এটা হবে না কারণ তা অ্যামেরিকার সংবিধানের বিপক্ষে। US-ইন্ডিয়া পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রবিন্দর সচদেব ETV ভারতকে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ভোট পিছনোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ কারণ নির্বাচনের দিনক্ষণকে সবসময়ই মার্কিন কংগ্রেস সাংবিধানিক মান্যতা দিয়ে এসেছে আর একমাত্র কংগ্রেসই নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবারের সেই দিনটি পরিবর্তন করতে পারে।”
সচদেব বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বা অন্য কোনও প্রেসিডেন্টের ওই দিনটা পরিবর্তন করার ক্ষমতা নেই । একমাত্র সংস্থান হল যে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট তাঁর বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন, যার জেরে দিন পরিবর্তিত হতে বা পিছিয়ে যেতে পারে। যদিও এটাও মনে রাখতে হবে যে অ্যামেরিকার ইতিহাসে এই দিনটা কোনওদিন পরিবর্তন হয়নি...যদি কোনওভাবে দিন পরিবর্তন হয় তাহলে সেটা অ্যামেরিকান গণতন্ত্রের ধারণায় একটা জোরালো ধাক্কা দেবে।” প্রচারে ট্রাম্প ভোটারদের বোঝাতে চেষ্টা করছেন যে অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠেছে, শেয়ার মার্কেট ঊর্ধ্বমুখী, বেকারত্ব কমেছে আর মহামারী ক্রমশ পিছু হটছে। আসলে তিনি 2016-র ভোটে অ্যামেরিকাকে মহান করে তুলতে তাঁর প্রচার স্লোগানই ফের ব্যবহার করছেন । বিডেন এই ইশুগুলিকেই তুলছেন । পাশাপাশি বলছেন যে একমাত্র তাঁর মতো কেউই পারেন অ্যামেরিকার হাল ফেরাতে । তিনি বলেন, “অ্যামেরিকার মূল বিষয়টাই হচ্ছে যে প্রতিটা স্তরে মানুষ অসন্তুষ্ট তা তিনি রিপাবলিকান সমর্থকই হোন বা ডেমোক্র্যাট সমর্থক।” “এবার ট্রাম্প এই অসন্তোষকে ব্যবহার করে তাঁর সমর্থক এবং বৃহত্তর মার্কিন জনসাধারণকে বলছেন যে, আমি বলেছিলাম যে পালটা লড়াই হবে এবং আমাকে আমার কাজ করতে দেওয়া হবে না, যেখানে আমি আমার কাজ সর্বতোভাবে করছি। প্রমাণ হিসেবে আপনারা দেখছেন যে অর্থনীতি ভালোভাবে চলছে, বেকারত্ব খুবই কম । জনমত সমীক্ষাতেও কিছু এসে যায় না, কারণ তারা সেই নীরব সংখ্যাধিক্যকে মাপতে পারে না যা আমার সঙ্গে আছে । আর শেষে একটাই কথা বলব যে অ্যামেরিকাকে আবার মহান করুন।” সচদেবের মতে, বিডেন “ট্রাম্পকে আরও কথা বলে যেতে দিচ্ছেন কারণ তাঁর মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে, বৈপরীত্য উঠে আসছে এবং তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।” তিনি বলেন, “বিডেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যামেরিকার অভ্যন্তরীণ নীতিগুলোকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং বলছেন যে তিনিই অ্যামেরিকার হাল ফেরাবেন । তিনি আমেরিকার মানুষকে বোঝাচ্ছেন বা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে ট্রাম্প এক বিকৃতি, তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা ছাড়া কিছু করেননি এবং আমার মতো একজনই অ্যামেরিকারকে পথে ফেরাতে পারে ।”