ওয়াশিংটন, 5 নভেম্বর: টিকা আগেই নিয়ে হাজির হয়েছে তারা । এবার কোভিডের ওষুধ তৈরির দৌড়ও শামিল আমেরিকার ফাইজার সংস্থা । তাদের তৈরি ওষুধ কোভিড রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং মৃত্যুর হার 90 শতাংশ কমাতে কমাতে পারে বলে দাবি ফাইজারের । আপাতত আমেরিকায় ছাড়পত্র পাওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে তারা । ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক বাজারেও নিজেদের তৈরি ওষুধ পৌঁছে দিতে আগ্রহী ফাইজার ।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্য লাভের পর শুক্রবার ওষুধের কার্যকারিতা সংক্রান্ত প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফাইজার । তাতে বলা হয়েছে, 775 জন প্রাপ্তবয়স্কের উপর এক মাস ধরে এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালানো হয় । তাতে দেখা যায়, অন্য ভাইরাল প্রতিরোধী ওষুধের চেয়ে ফাইজারের ওষুধ অনেক বেশি কার্যকর । ফাইজারের ওষুধ খাওয়ার রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং মৃত্যুর হার 89 শতাংশ কমে যায় ।
ফাইজারের দাবি, তাদের তৈরি ওষুধ খাওয়ার পর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে মাত্র 1 শতাংশ । একজনও মারা যাননি । বাকি ওষুধের ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ মানুষকে ওষুধ খাওয়ার পরেও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় । এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে ।
আরও পড়ুন: Bangladesh Violence : বাংলাদেশে হিংসার দায় বিএনপি-জামাতের উপর চাপালেন হাসিনার মন্ত্রী
এই মুহূর্তে বাজারে কোভিড প্রতিরোধী হিসেবে শুধুমাত্র টিকাই রয়েছে, যা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োগ করতে হয় । তার চেয়ে সহজ উপায়ে, শুধুমাত্র ট্যাবলেট বা ওষুধ খেয়ে কোভিড নিরাময়ের চেষ্টা করছিলেন বিজ্ঞানীরা । সম্প্রতি তাতে আশার আলো দেখায় ফাইজারের প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা মার্ক অ্যান্ড কো । কোভিড প্রতিরোধী ওষুধ তৈরি করে ইতিমধ্যেই ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করে ফেলেছে তারা । মৃদু উপসর্গের কোভিড রোগীদের জন্য ব্রিটেন আবার তাদের ছাড়পত্রও দিয়েছে । তার পরেই নিজেদের তৈরি ওষুধের রিপোর্ট প্রকাশ করল ফাইজার ।
ফাইজার জানিয়েছে, যাঁদের টিকাকরণ হয়নি, ডায়বিটিস, স্থূলতা এবং হৃদরোগে ভুগছিলেন, যাঁদের নিয়ে ঝুঁকি বেশি ছিল, তাঁদের নিয়েই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালিয়েছে তারা । তাতে ইতিবাচক ফলাফলই মিলেছে । অল্পস্বল্প পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও, সংখ্যাটা ছিল অত্যন্ত কম, মাত্র 20 শতাংশ ।
আমেরিকার চিকিৎসক মহল যদিও এখনও পর্যন্ত টিকাকরণের উপরই বেশি জোর দিচ্ছে । তবে টিকাকরণে আগ্রহী নন এমন বহু মানুষ রয়েছেন । তা ছাড়া ইউরোপে যে ভাবে নতুন করে আগ্রাসী রূপে এগোচ্ছে করোনা, তাতে ওষুধ সহায় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে । আবার মার্ক সংস্থার তৈরি ওষুধ যেখানে গর্ভবতী মহিলাদের উপর প্রয়োগ করা হয়নি, সেখানে ফাইজারকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: Booker Prize: বর্ণবিদ্বেষের গল্প শুনিয়ে বুকার পুরস্কার জয় দক্ষিণ আফ্রিকার লেখকের
এখনও পর্যন্ত নিজেদের তৈরি ওষুধের নাম প্রকাশ করেনি ফাইজার । তবে 2003 সালে এশিয়ায় সার্স-এর প্রকোপের সময়ই এই ওষুধ আবিষ্কার হয় বলে জানা গিয়েছে । সার্স এবং করোনার চারিত্রিক বৈশিষ্টে মিল থাকায় গত বছর ওই ওষুধ নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু হয় ।
এর আগে, ভাইরাল প্রতিরোধী রেমডেসিভির ওষুধটিকে করোনা রোগীদের উপর ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছিল আমেরিকা । এ ছাড়াও তিনটি অ্যান্টিবডি থেরাপিতে সায় দেয় তারা । যদিও, সে ক্ষেত্রে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলকই থেকেছে । কিন্তু ফাইজারের দাবি, তাদের ওষুধই করোনা প্রতিরোধে সক্ষম । তার জন্য টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই ।
খুব শীঘ্রই আমেরিকার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন জানাতে চলেছে ফাইজার । তারপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল সংক্রান্ত রিপোর্টের উপর সব কিছু নির্ভর করছে । রিপোর্টে কোথাও ফাঁক না থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ছাড়পত্র পেয়ে যেতে পারে ফাইজার । অন্যথায় কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে ।