শেষ হতে চলল গোটা একটা দশক ৷ নতুন দশকের নতুন কিছু স্বপ্নে বুক বাঁধছে বিশ্ববাসী ৷ ফেলে আসা দশকের কিছু বিভীষিকাময় স্মৃতির কথা মনে পড়লে আজও গায়ে কাঁটা দেয় ৷ ভূমিকম্প, অগ্নুৎপাত, ঘূর্ণিঝড় থেকে সুনামি ৷ বাদ পড়েনি কিছুই ৷ প্রাণ কেড়েছে হাজার হাজার মানুষের ৷ ঘরছাড়া হয়েছেন অগুনতি মানুষ ৷ দশকের ভয়াবহ কিছু প্রাকৃতিক বিপর্যয় একনজরে ৷
আন্তর্জাতিক
- 2010 সালের 12 জানুয়ারি হাইতিতে তীব্র ভূমিকম্প হয় । কম্পনের মাত্রা ছিল 7.0 । প্রাণ হারায় আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ । আহতের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন লক্ষ ।
- 2010 সালের অক্টোবরের শেষের দিকে ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট মেরাপিতে অগ্নুৎপাত হয় । ঘটনায় 353 জন মানুষ প্রাণ হারায় । সরকারি তৎপরতায় সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষকে জাভা থেকে অন্যত্র সড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ।
- 2011 সালের 11 মার্চ তীব্র ভূমিকম্প ও জলোচ্ছাস হয় জাপানের তোহোকু সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে । জলতলের নীচে হওয়া এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল 9.0-9.1 । ভূমিকম্প ও সুনামির জেরে প্রাণ হারায় 15 হাজার 899 জন মানুষ । আহতের সংখ্যা ছিল ছয় হাজারেরও বেশি ।
- 2012 সালের 25 নভেম্বর ফিলিপিনস ও মাইক্রোনেশিয়ায় আছড়ে পড়ে অতি শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় টাইফুন বোফা । ঘূর্ণিঝড়ের গতি ছিল 278 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা । বোফার দাপটে প্রাণ হারায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ ।
- 2013 সালের 3 নভেম্বর ফের ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় টাইফুন হাইয়ানের কবলে পড়ে ফিলিপিনস, হংকং, মাইক্রোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান । ঘূর্ণিঝড়ের গতি ছিল 315 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা । ঝড়ের দাপটে প্রাণ হারায় 6 হাজার 340 জন মানুষ ।
- 2014 সালের 3 অগাস্ট ভূমিকম্প হয় চিনের লুডিয়ানে । কম্পনের তীব্রতা ছিল 6.1 । ভূমিকম্পে কমপক্ষে 617 জন মানুষ মারা যায় । আহত হয় প্রায় দুহাজার 400 জন । তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি ।
- 2015 সালের 25 এপ্রিল নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় 9 হাজারেরও বেশি মানুষ । জখমের সংখ্যা প্রায় 22 হাজার । রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল 7.8-8.1 ।
- 2017 সালের 16 সেপ্টেম্বর ডোমিনিকান রিপাবলিক ও পুয়ের্তো রিকোয় আছড়ে পড়ে হ্যারিকেন মারিয়া । ঝড়ের গতি ছিল 282 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা । মারিয়ার দাপটে প্রাণ হারায় তিন হাজারেরও বেশি মানুষ ।
জাতীয়
- 2013 সালের জুনে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় কেদারনাথ সহ উত্তরাখণ্ডের বেশ কিছু অঞ্চলে । তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে মন্দাকিনীর দুই পাশের বাড়িগুলি । সরকারি হিসেবে, 934 জন স্থানীয় সহ 5 হাজার 700 জন মানুষ প্রাণ হারায় ।
- 2014 সালের অক্টোবরে শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ আছড়ে পড়ে বিশাখাপত্তনমে ৷ হুদহুদের দাপটে কমপক্ষে 124 জন প্রাণ হারান ৷ ঝড়ের গতি ছিল 185 থেকে 215 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ৷
- 2018 সালের মে মাসে টানা দু'দিন ধরে ধুলিঝড় হয় উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে ৷ ধুলিঝড়ে প্রাণ হারায় 125 জন ৷ আহত হয় আরও কমপক্ষে 200 জন ৷
- 2018 সালের অগাস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় কেরালায় ৷ বন্যার প্রকোপে কমপক্ষে 438 জন মারা যায় ৷ প্রায় 10 লক্ষ মানুষকে বন্যা কবলিত এলাকা থেকে অন্যত্র সড়িয়ে নিয়ে যায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ৷ রাজ্য জুড়ে জারি করা হয় কড়া সতর্কতা ৷
- 2019 সালের এপ্রিলে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে অতি শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ফণী ৷ ঝড়ের গতি ছিল 250 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা ৷ ফণীর তাণ্ডবে প্রাণ হারান কমপক্ষে 89 জন ৷
- 2019 সালের জুলাই মাসে গুজরাটের ভদোদরায় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ৷ বন্যার কবলে প্রাণ হারান 8 জন ৷ 6 হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৷
- 2019 সালের অগাষ্টে ফের কেরালায় ভয়াবহ বন্যা দেখা যায় ৷ বন্যার প্রকোপে কমপক্ষে 100 জন মারা যায় ৷
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে বারবার মাথা নুইয়েছে সভ্যতা ৷ কিন্তু প্রতিবারই ঘুরে দাঁড়িয়েছে ৷ বিজ্ঞানের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করেছে বিপর্যয়ের সঙ্গে ৷ কিন্তু, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ে সেই বিজ্ঞান কতটা হাত শক্ত করবে, সে প্রশ্নটা থেকেই গেল ।