ETV Bharat / international

ইতিহাসে লড়াকু কমলা, প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট পেল অ্যামেরিকা

56 বছর বয়সি কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায় । তাঁর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস এবং মা শ্যামলা গোপালন দু’জনেই ছিলেন অভিবাসী ।

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Nov 8, 2020, 8:47 AM IST

Updated : Nov 8, 2020, 11:42 AM IST

ওয়াশিংটন, 8 নভেম্বর : কমলা হ্যারিস ৷ অ্যামেরিকায় বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম মুখ ৷ যাঁকে বারবার দেখা গিয়েছে অ্যামেরিকার রাস্তায় কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের দাবি নিয়ে সরব হতে ৷ আজ তিনি অ্যামেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট ৷ প্রথম কোনও মহিলা ও অশ্বেতাঙ্গ, এশীয়-অ্যামেরিকান হিসেবে যিনি এই পদে নির্বাচিত হলেন ।

56 বছর বয়সি কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায় । তাঁর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস এবং মা শ্যামলা গোপালন দু’জনেই ছিলেন অভিবাসী । ডোনাল্ড ও শ্যামলার প্রথম বার দেখা হয় UC বার্কলেতে । স্নাতক স্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে তাঁরা নাগরিকদের অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ।

ডোনাল্ড হ্যারিস এসেছিলেন জামাইকা থেকে । মা শ্যামলা অ্যামেরিকার UC বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন ভারতের তামিলনাডু থেকে । শ্যামলার বাবা পিভি গোপালন ছিলেন এক পদস্থ সরকারি কর্মচারী । তিনি আজীবন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন । তিনি তাঁর বড় মেয়ের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন এবং মেয়ের স্বপ্ন সফল করতে অবসরের সঞ্চয় দিয়ে তাঁকে সমুদ্র পাড়ি দিতে সাহায্য করেন ।

কমলার বয়স যখন 7 তখন বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর বাবা ও মায়ের ৷ এক সাক্ষাৎকারে কমলা তাঁর দাদুর প্রসঙ্গে বলেছেন যে, দাদু ছিলেন তাঁর সবচেয়ে পছন্দের মানুষের মধ্যে অন্যতম । এমনকী তাঁর কাছ থেকে মানুষের জন্য কাজ করার অনেক কিছু শিখেছেন । যত বার কমলা বক্তৃতা দিয়েছেন ততবারই উঠে এসেছে তাঁর মায়ের প্রসঙ্গ । বলেছেন, “আমার মায়ের গায়ের রং বাদামি । তিনি একার হাতে আমাদের দুই বোনকে বড় করে তোলেন । তিনি ছিলেন একজন গর্বিত মহিলা । তাঁর উচ্চারণে যথেষ্ট টান ছিল । তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যাঁকে খুব সহজেই উপেক্ষা করা যায় । অনেকেই তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি । এমনকী তাঁর উচ্চারণ দেখে তাঁর বুদ্ধিমত্তাও বিচার করেছেন অনেকে । কিন্তু আমার মা প্রতি ক্ষেত্রেই তাঁদের ভুল প্রমাণ করেছেন ।"

kamala
অ্য়ামেরিকার প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস

হাওয়ার্ড ও পরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন কমলা । 2003 সালে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর অ্যাটর্নি জেনেরাল হিসেবে নিযুক্ত হন । এরপর 2010 সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হন । সেটাই ছিল ইতিহাসের সূচনা ৷ প্রথম অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে এই দায়িত্ব সামলেছেন তিনি । 2016-তে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেন ৷

প্রথম থেকেই লড়াকু ছিলেন কমলা ৷ যখনই কৃষ্ণাঙ্গদের উপর অত্যাচার হয়েছে রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি ৷ চলতি বছরে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পর অ্যামেরিকা ও বিশ্ব জুড়ে হওয়া #ICantBreathe আন্দোলনকে সমর্থন করে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন । এর মোকাবিলায় পুলিশের কাজে তদারকি করা এবং গণপিটুনির মতো ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় অপরাধের আওতায় আনার পক্ষেও মত দেন তিনি ।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেই ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন জো বাইডেন । সিদ্ধান্ত নেন কমলাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপার্থী করার ৷ চর্চা শুরু হয় তখন থেকেই ৷ সেই সময় ট্রাম্পকে বিঁধে তিনি বলেন, "আমাদের দুঃখকে উনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন । জো ক্ষমতায় এলে আমাদের সকলকে একত্রে বেঁধে রাখবেন ।"

1972 সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডেমোক্র্যাটদের মনোনীত প্রথম মহিলা প্রার্থী নিউ ইয়র্কের কংগ্রেস সদস্য শার্লি চিসহোম বলেছিলেন, “আমি চাই না ইতিহাস আমাকে মনে রাখুক প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসাবে যিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছেন । আমি চাই ইতিহাস আমায় মনে রাখুক অ্যামেরিকার পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে ।” আর আজ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যেন তাঁর পথেই হাঁটলেন কমলা ।

2019 সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের জন্মদিনে হ্যারিস বলেছিলেন, "সফল হতে সময় লাগবে । কিন্তু নতুন ইতিহাস তৈরি হতেই পারে ।" আর তা তৈরি করেই দেখালেন তিনি ।

ওয়াশিংটন, 8 নভেম্বর : কমলা হ্যারিস ৷ অ্যামেরিকায় বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম মুখ ৷ যাঁকে বারবার দেখা গিয়েছে অ্যামেরিকার রাস্তায় কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের দাবি নিয়ে সরব হতে ৷ আজ তিনি অ্যামেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট ৷ প্রথম কোনও মহিলা ও অশ্বেতাঙ্গ, এশীয়-অ্যামেরিকান হিসেবে যিনি এই পদে নির্বাচিত হলেন ।

56 বছর বয়সি কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায় । তাঁর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস এবং মা শ্যামলা গোপালন দু’জনেই ছিলেন অভিবাসী । ডোনাল্ড ও শ্যামলার প্রথম বার দেখা হয় UC বার্কলেতে । স্নাতক স্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে তাঁরা নাগরিকদের অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ।

ডোনাল্ড হ্যারিস এসেছিলেন জামাইকা থেকে । মা শ্যামলা অ্যামেরিকার UC বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন ভারতের তামিলনাডু থেকে । শ্যামলার বাবা পিভি গোপালন ছিলেন এক পদস্থ সরকারি কর্মচারী । তিনি আজীবন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন । তিনি তাঁর বড় মেয়ের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন এবং মেয়ের স্বপ্ন সফল করতে অবসরের সঞ্চয় দিয়ে তাঁকে সমুদ্র পাড়ি দিতে সাহায্য করেন ।

কমলার বয়স যখন 7 তখন বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর বাবা ও মায়ের ৷ এক সাক্ষাৎকারে কমলা তাঁর দাদুর প্রসঙ্গে বলেছেন যে, দাদু ছিলেন তাঁর সবচেয়ে পছন্দের মানুষের মধ্যে অন্যতম । এমনকী তাঁর কাছ থেকে মানুষের জন্য কাজ করার অনেক কিছু শিখেছেন । যত বার কমলা বক্তৃতা দিয়েছেন ততবারই উঠে এসেছে তাঁর মায়ের প্রসঙ্গ । বলেছেন, “আমার মায়ের গায়ের রং বাদামি । তিনি একার হাতে আমাদের দুই বোনকে বড় করে তোলেন । তিনি ছিলেন একজন গর্বিত মহিলা । তাঁর উচ্চারণে যথেষ্ট টান ছিল । তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যাঁকে খুব সহজেই উপেক্ষা করা যায় । অনেকেই তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি । এমনকী তাঁর উচ্চারণ দেখে তাঁর বুদ্ধিমত্তাও বিচার করেছেন অনেকে । কিন্তু আমার মা প্রতি ক্ষেত্রেই তাঁদের ভুল প্রমাণ করেছেন ।"

kamala
অ্য়ামেরিকার প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস

হাওয়ার্ড ও পরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন কমলা । 2003 সালে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর অ্যাটর্নি জেনেরাল হিসেবে নিযুক্ত হন । এরপর 2010 সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হন । সেটাই ছিল ইতিহাসের সূচনা ৷ প্রথম অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে এই দায়িত্ব সামলেছেন তিনি । 2016-তে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেন ৷

প্রথম থেকেই লড়াকু ছিলেন কমলা ৷ যখনই কৃষ্ণাঙ্গদের উপর অত্যাচার হয়েছে রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি ৷ চলতি বছরে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পর অ্যামেরিকা ও বিশ্ব জুড়ে হওয়া #ICantBreathe আন্দোলনকে সমর্থন করে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন । এর মোকাবিলায় পুলিশের কাজে তদারকি করা এবং গণপিটুনির মতো ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় অপরাধের আওতায় আনার পক্ষেও মত দেন তিনি ।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেই ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন জো বাইডেন । সিদ্ধান্ত নেন কমলাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপার্থী করার ৷ চর্চা শুরু হয় তখন থেকেই ৷ সেই সময় ট্রাম্পকে বিঁধে তিনি বলেন, "আমাদের দুঃখকে উনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন । জো ক্ষমতায় এলে আমাদের সকলকে একত্রে বেঁধে রাখবেন ।"

1972 সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডেমোক্র্যাটদের মনোনীত প্রথম মহিলা প্রার্থী নিউ ইয়র্কের কংগ্রেস সদস্য শার্লি চিসহোম বলেছিলেন, “আমি চাই না ইতিহাস আমাকে মনে রাখুক প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসাবে যিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছেন । আমি চাই ইতিহাস আমায় মনে রাখুক অ্যামেরিকার পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে ।” আর আজ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যেন তাঁর পথেই হাঁটলেন কমলা ।

2019 সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের জন্মদিনে হ্যারিস বলেছিলেন, "সফল হতে সময় লাগবে । কিন্তু নতুন ইতিহাস তৈরি হতেই পারে ।" আর তা তৈরি করেই দেখালেন তিনি ।

Last Updated : Nov 8, 2020, 11:42 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.