ETV Bharat / international

কমলা হ্যারিস, এক দক্ষিণ এশীয় অ্যামেরিকান অভিবাসী স্বপ্ন

মনে করা হচ্ছে ট্রাম্পের বর্ণবাদ, পুরুষ প্রধান মানসিকতা, আইন— সব ক্ষেত্রেই বিতর্কে হ্যারিস তাঁকে কড়া লড়াই দেবেন । এই মুহূর্তে অবশ্য কমলা হ্যারিসের অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন, যা তিনি 2019 সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের জন্মদিনে ঘোষণা করেছিলেন, সফল হতে সময় লাগবে । কিন্তু নতুন ইতিহাস তৈরি হতেই পারে ।

Kamala Harris
কমলা হ্যারিস
author img

By

Published : Aug 13, 2020, 3:47 AM IST

2019 সালের জুন মাস । ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নির্বাচনের প্রথম প্রাইমারি বিতর্কে জো বাইডেনের উদ্দেশে এক কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দেন কমলা হ্যারিস । সেনেটর হ্যারিস বলেন, “আপনি কি জানেন যে, ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি সরকারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে একটি শিশু ক্লাস করার জন্য প্রতি দিন বাসে করে স্কুলে যেত? সেই ছোট্ট মেয়েটি ছিলাম আমি ।” সে দিন হ্যারিস এই প্রশ্নটি করেছিলেন বাইডেনের একটি প্রস্তাবের বিরোধিতায় । অ্যামেরিকান আদালত সিদ্ধান্ত নেয়, শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত ডিস্ট্রিক্টগুলিতে বর্ণবৈষম্য ও আর্থ সামাজিক দূরত্ব ঘোচাতে বাসে করে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের আনা হবে । বাইডেন আদালতের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন । সেই সূত্রেই এই প্রশ্ন করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হ্যারিস । সত্তর ও আশির দশকের সময়ের নাগরিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দুই দক্ষিণী বিচ্ছিন্নতাবাদী ডেমোক্র্যাট সেনেটর, মিসিসিপির জেমস ও’ইস্টল্যান্ড এবং জর্জিয়ার হার্মান টালমাজের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেন বাইডেন । এই প্রসঙ্গেও বাইডেনকে তীব্র আক্রমণ করে হ্যারিস বলেন, “আমার কাছে এটা প্রচণ্ড বিস্ময়ের ও আঘাতের যে, আমেরিকার এমন দুই সেনেটরের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন, যাঁরা নিজেদের পরিচিতি তৈরি করেছে বর্ণবৈষম্য ও বিচ্ছিন্নতাবাদের উপর দাঁড়িয়ে । এমনকী আপনি তাঁদের সঙ্গে এই ‘বাসিং’ এর বিরোধিতাও করেছিলেন ।”

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান কমলা হ্যারিস । কিন্তু ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে জো বাইডেনের সঙ্গী হিসাবে কাজ করার ঘোষণা অ্যামেরিকার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে ।

কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায় । তাঁর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস এবং মা শ্যামলা গোপালন দু’জনেই ছিলেন অভিবাসী । ডোনাল্ড ও শ্যামলার প্রথম বার দেখা হয় UC বার্কলেতে । স্নাতক স্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে তাঁরা নাগরিকদের অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলন করছিলেন । কমলাই হলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় অ্যামেরিকান, যিনি অ্যামেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দল থেকে মনোনিত হয়েছেন । তাঁর বাবা ডোনাল্ড এসেছিলেন জামাইকা থেকে । মা শ্যামলা আমেরিকার UC বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন ভারতের তামিলনাডু থেকে ।

শ্যামলার বাবা পিভি গোপালন, ছিলেন এক জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী । তিনি আজীবন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন । তিনি তাঁর বড় মেয়ের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন এবং মেয়ের স্বপ্ন সফল করার উদ্দেশ্যে অবসরের সঞ্চয় বাজি রেখে মেয়েকে সমুদ্র পাড়ি দিতে সাহায্য করেন । 2009 সালে আজিজ হানিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কমলা বলেন, “আমার দাদু ছিলেন ভারতের এক জন প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামী । আমার ছোটবেলার সবচেয়ে পছন্দের স্মৃতিগুলোর অন্যতম হল, দাদুর হাত ধরে বসন্ত নগরের সৈকতে হেঁটে বেড়ানো । অবসরের পর দাদু মাদ্রাজের (বর্তমানে চেন্নাই) ওই অঞ্চলে থাকতেন । প্রতি দিন সকালে তিনি তাঁর আরও কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে ওই সৈকতে হাঁটতেন । দাদুর বন্ধুরা প্রায় সবাই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী । তাঁরা সবাই মিলে রাজনীতি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে আলোচনা করতেন । তাঁরা তাঁদের মত জানাতেন, তর্ক করতেন, হাসাহাসিও করতেন । কিন্তু ওই ছোটবেলায় ওই আলোচনাগুলি আমার উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল । আমায় সৎ, দায়িত্ববান এবং নিষ্ঠাবান হতে সাহায্য করেছিল সেই সব কথোপকথন ।”

বহু সাক্ষাৎকারে কমলা তাঁর দাদুর প্রসঙ্গে বলেছেন যে, দাদু ছিলেন তাঁর সবচেয়ে পছন্দের মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম । এমনকী তাঁর কাছ থেকে যে মানুষের জন্য কাজ করার অনেক কিছু শিখেছেন, তা-ও জানিয়েছেন কমলা । কিন্তু যত বার কমলা বক্তৃতা করেছেন, প্রায় তত বারই উঠে এসেছে তাঁর মায়ের প্রসঙ্গ ।

বছর কয়েকে মধ্যে কমলার বাবা ও মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায় । এর পর শ্যামলা তাঁর দুই মেয়ে কমলা ও মায়াকে মন্ট্রিয়েলে বড় করেন । ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলার নাম ঘোষণার পর তাঁর বোন মায়া দিদির পুরোনো একটি ভাষণের ভিডিয়ো ক্লিপ টুইট করেন । পুরোনো সেই ভিডিয়োয় কমলাকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমার মায়ের গায়ের রং বাদামি । তিনি একার হাতে আমাদের দুই বোনকে বড় করে তোলেন । তিনি ছিলেন এক জন গর্বিত মহিলা । তাঁর উচ্চারণে যথেষ্ট টান ছিল । তিনি এমন এক জন মানুষ ছিলেন, যাঁকে খুব সহজেই উপেক্ষা করা যায় । অনেকেই তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি । এমনকী তাঁর উচ্চারণ দেখে তাঁর বুদ্ধিমত্তাও বিচার করেছেন অনেকে । কিন্তু আমার মা প্রতি ক্ষেত্রেই তাঁদের ভুল প্রমাণ করেছেন । শুধুমাত্র মায়ের জন্য, তাঁর বিশ্বাসের জন্য, তাঁর স্বপ্ন দেখার ক্ষমতার জন্য আমি আজ এখানে পৌঁছতে পেরেছি । মা কোনও দিন কাউকে জিজ্ঞাসা করেননি একটা প্রজন্মের মধ্যে কোনটা সম্ভব আর কোনটা নয় । তাঁর জন্যই আজ আমি অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের অন্যতম দাবিদার ।”

ভিন দেশি শিকড় এবং উদার মানসিকতার কমলা হ্যারিস যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন, তা হলে 2024 সালের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে তালিকার একেবারে উপরের দিকেই থাকবে তাঁর নাম । নজর থাকবে এহেন কমলা কীভাবে ভারতে শাসকের দায়িত্বে থাকা হিন্দু জাতীয়তাবাদী একটি দলের সঙ্গে বোঝাপড়া করেন । ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানের জন্য এর আগে হিউস্টনের সভা ভরিয়ে দিয়েছেন ইন্দো অ্যামেরিকান সম্প্রদায় । ট্রাম্প এবং মোদির অমায়িক সম্পর্কে খুশি হয়েছিল জনতা । কমলা হ্যারিসের শক্তিশালী বিজাতীয় শিকড় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়া দক্ষিণ এশীয় অ্যামেরিকান, বিশেষ করে ইন্দো অ্যামেরিকান সম্প্রদায়কে আরও বেশি করে তাঁকে সমর্থন করার দিকে ঠেলে দেবে । এই মুহূর্তে অ্যামেরিকান কংগ্রেসে রয়েছেন পাঁচ জন ইন্দো অ্যামেরিকান । এঁদের সবাই আবার ডেমোক্র্যাটিক । লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এঁদের মধ্যে কেবলমাত্র কৃষ্ণমূর্তি হিউস্টনের সেই সভায় গিয়েছিলেন । বাকিরা ৩৭০ ধারার বিলুপ্তি এবং কাশ্মীর ইশুতে বিরোধিতা করে সভায় যাননি । এঁদের মধ্যে এক জন সদস্য জয়পাল, গত ডিসেম্বরে ভারতকে ‘জম্মু কাশ্মীরে অবরোধ তুলে নিতে এবং গণ আটক বন্ধ করতে’ অনুরোধ করেন এবং ‘সেখানকার সকল মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা’ ফিরিয়ে দিতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেন ।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে জয়পাল উপস্থিত থাকায় সেই মাসেই অত্যন্ত প্রভাবশালী হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর । ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, জয়শঙ্করের দাবি অগ্রাহ্য করে ওই কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট এঞ্জেল প্যানেল থেকে জয়পালের নাম দিতে অরাজি হন । এঞ্জেলের সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে কমলা হ্যারিস টুইটারে লেখেন, “অন্য কোনও দেশের সরকার কোনও অবস্থাতেই ক্যাপিটাল হলের বৈঠকে কারা উপস্থিত থাকবেন, সে বিষয়ে কংগ্রেসকে কিছু বলতে পারে না। এটা একেবারেই অনুচিত কাজ ।”

পাকিস্তানের অন্যতম সংবাদপত্র ডনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর টেক্সাসে কমলা হ্যারিস বলেন, “আমরা কাশ্মীরিদের জানাতে চাই যে, এই বিশ্বে তাঁরা একা নন । আমরা সমগ্র পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি । যদি প্রয়োজন হয়, আমরা এই বিষয়ে কথা বলব ।”

ইন্দো অ্যামেরিকান সম্পর্ক এখন অনেকটাই পারস্পরিক সহযোগিতার উপর নির্ভরশিল । অ্যামেরিকান কংগ্রেসের যথেষ্ট সমর্থনও রয়েছে এই সম্পর্কে । এই আবহে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে মোদী সরকারের সঙ্গে কমলা হ্যারিস কীভাবে তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক আদর্শকে সামনে রেখে সম্পর্ক রাখবেন, সে দিকে নজর থাকবে সবারই ।

2016 সালে যখন কমলা হ্যারিস সেনেটে নির্বাচিত হন, তখন তিনিই ছিলেন গত এক দশকে নির্বাচিত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা । তিনিই প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, যিনি ঐতিহাসিক ভাবে কৃষ্ণাঙ্ক অধ্যূষিত D.C.-এর হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন । সান ফ্রান্সিস্কোর প্রাক্তন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এবং ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল 55 বছর বয়সি কমলা সেনেটের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সদস্য । এর মধ্যে অন্যতম ইন্টেলিজেন্স কমিটি ও বিচারবিভাগীয় কমিটি । জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পর আমেরিকা ও বিশ্ব জুড়ে হওয়া #ICantBreathe আন্দোলনকে সমর্থন করে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি । বর্ণবাদের মোকাবিলায় পুলিশের কাজে তদারকি করা এবং গণপিটুনির মতো ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় অপরাধের আওতায় আনার পক্ষে মত দেন তিনি । ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আইন প্রসঙ্গে রিচার্ড নিক্সনের পথে হাঁটার চেষ্টা করছেন, তখন প্রসিকিউটার হিসাবে কমলা হ্যারিসের অতীতের রেকর্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে ।

ব্রেট এম ক্যাভেনগ-সহ সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রার্থী মনোনয়ন এবং সেনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ লাইভ টিভিতে দেখেছে বিশ্ব । ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র সেনেটর হিসাবে ক্যাভেনগের মনোনয়নের বিরোধিতা করে কমলা বলেন, “আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতীক হল এক মহিলার হাতে ধরা দাঁড়িপাল্লা । তাঁর চোখ বাঁধা । সুবিচারের চোখ বাঁধা থাকে কারণ, আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা বলে, মানুষের অবস্থানের নিরিখে সুবিচার যেন অন্ধ থাকে । আমরা বলেছি যে, কারও কাছে কত অর্থ রয়েছে, সুবিচার যেন সে দিকে তাকিয়ে না হয় । কাকে আপনি ভালবাসেন বা কাকে পছন্দ করেন বা আপনি কোন ভাষায় কথা বলেন বা আপনার অভিভাবক কারা, সে সব দিকে যেন সুবিচার অন্ধ থাকে । আর সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেক বিচারপতিকে এই মর্মে বিশ্বাস রাখতে হবে । আপনার কাছে যখন সেই সব মামলা আসবে, তখন আপনি প্রত্যেক মার্কিন নাগরিককে সুবিচার দিতে পারবেন তো, না কি সেই রাজনৈতিক দল ও তার মতাদর্শ, যা আপনার কেরিয়ার তৈরি করেছে, তার দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন । আমি আশঙ্কা করছি, আপনি অ্যামেরিকার সংবিধানের চেয়েও যে প্রেসিডেন্ট আপনাকে নিয়োগ করেছেন, তাঁর প্রতি বেশি অনুগত হবেন ।”

নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মাইক পেন্সের কাজটা আরও কঠিন করে তুললেন কমলা হ্যারিস । মনে করা হচ্ছে ট্রাম্পের বর্ণবাদ, পুরুষ প্রধান মানসিকতা, আইন— সব ক্ষেত্রেই বিতর্কে হ্যারিস তাঁকে কড়া লড়াই দেবেন । এই মুহূর্তে অবশ্য কমলা হ্যারিসের অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন, যা তিনি 2019 সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের জন্মদিনে ঘোষণা করেছিলেন, সফল হতে সময় লাগবে । কিন্তু নতুন ইতিহাস তৈরি হতেই পারে । 1972 সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডেমোক্র্যাটদের মনোনিত প্রথম মহিলা প্রার্থী নিউ ইয়র্কের কংগ্রেস সদস্য শার্লি চিসহোম বলেছিলেন, “আমি চাই না ইতিহাস আমাকে মনে রাখুক প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসাবে যিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছেন । আমি চাই বিশ্ব আমায় মনে রাখুক সেই কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসাবে যিনি বিংশ শতকে নিজস্বতাকে সাহস করেছিলেন । আমি চাই ইতিহাস আমায় মনে রাখুক আমেরিকার পরিবর্তনের অনুঘটক হিসাবে ।” সে দিনের সেই পরিবর্তনই আজকের আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম মাইলস্টোন হয়ে রইল ।

2019 সালের জুন মাস । ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নির্বাচনের প্রথম প্রাইমারি বিতর্কে জো বাইডেনের উদ্দেশে এক কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দেন কমলা হ্যারিস । সেনেটর হ্যারিস বলেন, “আপনি কি জানেন যে, ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি সরকারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে একটি শিশু ক্লাস করার জন্য প্রতি দিন বাসে করে স্কুলে যেত? সেই ছোট্ট মেয়েটি ছিলাম আমি ।” সে দিন হ্যারিস এই প্রশ্নটি করেছিলেন বাইডেনের একটি প্রস্তাবের বিরোধিতায় । অ্যামেরিকান আদালত সিদ্ধান্ত নেয়, শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত ডিস্ট্রিক্টগুলিতে বর্ণবৈষম্য ও আর্থ সামাজিক দূরত্ব ঘোচাতে বাসে করে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের আনা হবে । বাইডেন আদালতের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন । সেই সূত্রেই এই প্রশ্ন করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হ্যারিস । সত্তর ও আশির দশকের সময়ের নাগরিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দুই দক্ষিণী বিচ্ছিন্নতাবাদী ডেমোক্র্যাট সেনেটর, মিসিসিপির জেমস ও’ইস্টল্যান্ড এবং জর্জিয়ার হার্মান টালমাজের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেন বাইডেন । এই প্রসঙ্গেও বাইডেনকে তীব্র আক্রমণ করে হ্যারিস বলেন, “আমার কাছে এটা প্রচণ্ড বিস্ময়ের ও আঘাতের যে, আমেরিকার এমন দুই সেনেটরের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন, যাঁরা নিজেদের পরিচিতি তৈরি করেছে বর্ণবৈষম্য ও বিচ্ছিন্নতাবাদের উপর দাঁড়িয়ে । এমনকী আপনি তাঁদের সঙ্গে এই ‘বাসিং’ এর বিরোধিতাও করেছিলেন ।”

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান কমলা হ্যারিস । কিন্তু ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে জো বাইডেনের সঙ্গী হিসাবে কাজ করার ঘোষণা অ্যামেরিকার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে ।

কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায় । তাঁর বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস এবং মা শ্যামলা গোপালন দু’জনেই ছিলেন অভিবাসী । ডোনাল্ড ও শ্যামলার প্রথম বার দেখা হয় UC বার্কলেতে । স্নাতক স্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে তাঁরা নাগরিকদের অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলন করছিলেন । কমলাই হলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় অ্যামেরিকান, যিনি অ্যামেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দল থেকে মনোনিত হয়েছেন । তাঁর বাবা ডোনাল্ড এসেছিলেন জামাইকা থেকে । মা শ্যামলা আমেরিকার UC বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন ভারতের তামিলনাডু থেকে ।

শ্যামলার বাবা পিভি গোপালন, ছিলেন এক জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী । তিনি আজীবন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন । তিনি তাঁর বড় মেয়ের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন এবং মেয়ের স্বপ্ন সফল করার উদ্দেশ্যে অবসরের সঞ্চয় বাজি রেখে মেয়েকে সমুদ্র পাড়ি দিতে সাহায্য করেন । 2009 সালে আজিজ হানিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কমলা বলেন, “আমার দাদু ছিলেন ভারতের এক জন প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামী । আমার ছোটবেলার সবচেয়ে পছন্দের স্মৃতিগুলোর অন্যতম হল, দাদুর হাত ধরে বসন্ত নগরের সৈকতে হেঁটে বেড়ানো । অবসরের পর দাদু মাদ্রাজের (বর্তমানে চেন্নাই) ওই অঞ্চলে থাকতেন । প্রতি দিন সকালে তিনি তাঁর আরও কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে ওই সৈকতে হাঁটতেন । দাদুর বন্ধুরা প্রায় সবাই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী । তাঁরা সবাই মিলে রাজনীতি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে আলোচনা করতেন । তাঁরা তাঁদের মত জানাতেন, তর্ক করতেন, হাসাহাসিও করতেন । কিন্তু ওই ছোটবেলায় ওই আলোচনাগুলি আমার উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল । আমায় সৎ, দায়িত্ববান এবং নিষ্ঠাবান হতে সাহায্য করেছিল সেই সব কথোপকথন ।”

বহু সাক্ষাৎকারে কমলা তাঁর দাদুর প্রসঙ্গে বলেছেন যে, দাদু ছিলেন তাঁর সবচেয়ে পছন্দের মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম । এমনকী তাঁর কাছ থেকে যে মানুষের জন্য কাজ করার অনেক কিছু শিখেছেন, তা-ও জানিয়েছেন কমলা । কিন্তু যত বার কমলা বক্তৃতা করেছেন, প্রায় তত বারই উঠে এসেছে তাঁর মায়ের প্রসঙ্গ ।

বছর কয়েকে মধ্যে কমলার বাবা ও মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায় । এর পর শ্যামলা তাঁর দুই মেয়ে কমলা ও মায়াকে মন্ট্রিয়েলে বড় করেন । ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলার নাম ঘোষণার পর তাঁর বোন মায়া দিদির পুরোনো একটি ভাষণের ভিডিয়ো ক্লিপ টুইট করেন । পুরোনো সেই ভিডিয়োয় কমলাকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমার মায়ের গায়ের রং বাদামি । তিনি একার হাতে আমাদের দুই বোনকে বড় করে তোলেন । তিনি ছিলেন এক জন গর্বিত মহিলা । তাঁর উচ্চারণে যথেষ্ট টান ছিল । তিনি এমন এক জন মানুষ ছিলেন, যাঁকে খুব সহজেই উপেক্ষা করা যায় । অনেকেই তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি । এমনকী তাঁর উচ্চারণ দেখে তাঁর বুদ্ধিমত্তাও বিচার করেছেন অনেকে । কিন্তু আমার মা প্রতি ক্ষেত্রেই তাঁদের ভুল প্রমাণ করেছেন । শুধুমাত্র মায়ের জন্য, তাঁর বিশ্বাসের জন্য, তাঁর স্বপ্ন দেখার ক্ষমতার জন্য আমি আজ এখানে পৌঁছতে পেরেছি । মা কোনও দিন কাউকে জিজ্ঞাসা করেননি একটা প্রজন্মের মধ্যে কোনটা সম্ভব আর কোনটা নয় । তাঁর জন্যই আজ আমি অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের অন্যতম দাবিদার ।”

ভিন দেশি শিকড় এবং উদার মানসিকতার কমলা হ্যারিস যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন, তা হলে 2024 সালের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে তালিকার একেবারে উপরের দিকেই থাকবে তাঁর নাম । নজর থাকবে এহেন কমলা কীভাবে ভারতে শাসকের দায়িত্বে থাকা হিন্দু জাতীয়তাবাদী একটি দলের সঙ্গে বোঝাপড়া করেন । ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানের জন্য এর আগে হিউস্টনের সভা ভরিয়ে দিয়েছেন ইন্দো অ্যামেরিকান সম্প্রদায় । ট্রাম্প এবং মোদির অমায়িক সম্পর্কে খুশি হয়েছিল জনতা । কমলা হ্যারিসের শক্তিশালী বিজাতীয় শিকড় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়া দক্ষিণ এশীয় অ্যামেরিকান, বিশেষ করে ইন্দো অ্যামেরিকান সম্প্রদায়কে আরও বেশি করে তাঁকে সমর্থন করার দিকে ঠেলে দেবে । এই মুহূর্তে অ্যামেরিকান কংগ্রেসে রয়েছেন পাঁচ জন ইন্দো অ্যামেরিকান । এঁদের সবাই আবার ডেমোক্র্যাটিক । লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এঁদের মধ্যে কেবলমাত্র কৃষ্ণমূর্তি হিউস্টনের সেই সভায় গিয়েছিলেন । বাকিরা ৩৭০ ধারার বিলুপ্তি এবং কাশ্মীর ইশুতে বিরোধিতা করে সভায় যাননি । এঁদের মধ্যে এক জন সদস্য জয়পাল, গত ডিসেম্বরে ভারতকে ‘জম্মু কাশ্মীরে অবরোধ তুলে নিতে এবং গণ আটক বন্ধ করতে’ অনুরোধ করেন এবং ‘সেখানকার সকল মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা’ ফিরিয়ে দিতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করেন ।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে জয়পাল উপস্থিত থাকায় সেই মাসেই অত্যন্ত প্রভাবশালী হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর । ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, জয়শঙ্করের দাবি অগ্রাহ্য করে ওই কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট এঞ্জেল প্যানেল থেকে জয়পালের নাম দিতে অরাজি হন । এঞ্জেলের সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে কমলা হ্যারিস টুইটারে লেখেন, “অন্য কোনও দেশের সরকার কোনও অবস্থাতেই ক্যাপিটাল হলের বৈঠকে কারা উপস্থিত থাকবেন, সে বিষয়ে কংগ্রেসকে কিছু বলতে পারে না। এটা একেবারেই অনুচিত কাজ ।”

পাকিস্তানের অন্যতম সংবাদপত্র ডনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর টেক্সাসে কমলা হ্যারিস বলেন, “আমরা কাশ্মীরিদের জানাতে চাই যে, এই বিশ্বে তাঁরা একা নন । আমরা সমগ্র পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি । যদি প্রয়োজন হয়, আমরা এই বিষয়ে কথা বলব ।”

ইন্দো অ্যামেরিকান সম্পর্ক এখন অনেকটাই পারস্পরিক সহযোগিতার উপর নির্ভরশিল । অ্যামেরিকান কংগ্রেসের যথেষ্ট সমর্থনও রয়েছে এই সম্পর্কে । এই আবহে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে মোদী সরকারের সঙ্গে কমলা হ্যারিস কীভাবে তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক আদর্শকে সামনে রেখে সম্পর্ক রাখবেন, সে দিকে নজর থাকবে সবারই ।

2016 সালে যখন কমলা হ্যারিস সেনেটে নির্বাচিত হন, তখন তিনিই ছিলেন গত এক দশকে নির্বাচিত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা । তিনিই প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, যিনি ঐতিহাসিক ভাবে কৃষ্ণাঙ্ক অধ্যূষিত D.C.-এর হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন । সান ফ্রান্সিস্কোর প্রাক্তন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এবং ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল 55 বছর বয়সি কমলা সেনেটের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সদস্য । এর মধ্যে অন্যতম ইন্টেলিজেন্স কমিটি ও বিচারবিভাগীয় কমিটি । জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পর আমেরিকা ও বিশ্ব জুড়ে হওয়া #ICantBreathe আন্দোলনকে সমর্থন করে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি । বর্ণবাদের মোকাবিলায় পুলিশের কাজে তদারকি করা এবং গণপিটুনির মতো ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রীয় অপরাধের আওতায় আনার পক্ষে মত দেন তিনি । ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আইন প্রসঙ্গে রিচার্ড নিক্সনের পথে হাঁটার চেষ্টা করছেন, তখন প্রসিকিউটার হিসাবে কমলা হ্যারিসের অতীতের রেকর্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে ।

ব্রেট এম ক্যাভেনগ-সহ সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রার্থী মনোনয়ন এবং সেনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনসের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ লাইভ টিভিতে দেখেছে বিশ্ব । ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়র সেনেটর হিসাবে ক্যাভেনগের মনোনয়নের বিরোধিতা করে কমলা বলেন, “আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতীক হল এক মহিলার হাতে ধরা দাঁড়িপাল্লা । তাঁর চোখ বাঁধা । সুবিচারের চোখ বাঁধা থাকে কারণ, আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা বলে, মানুষের অবস্থানের নিরিখে সুবিচার যেন অন্ধ থাকে । আমরা বলেছি যে, কারও কাছে কত অর্থ রয়েছে, সুবিচার যেন সে দিকে তাকিয়ে না হয় । কাকে আপনি ভালবাসেন বা কাকে পছন্দ করেন বা আপনি কোন ভাষায় কথা বলেন বা আপনার অভিভাবক কারা, সে সব দিকে যেন সুবিচার অন্ধ থাকে । আর সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেক বিচারপতিকে এই মর্মে বিশ্বাস রাখতে হবে । আপনার কাছে যখন সেই সব মামলা আসবে, তখন আপনি প্রত্যেক মার্কিন নাগরিককে সুবিচার দিতে পারবেন তো, না কি সেই রাজনৈতিক দল ও তার মতাদর্শ, যা আপনার কেরিয়ার তৈরি করেছে, তার দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন । আমি আশঙ্কা করছি, আপনি অ্যামেরিকার সংবিধানের চেয়েও যে প্রেসিডেন্ট আপনাকে নিয়োগ করেছেন, তাঁর প্রতি বেশি অনুগত হবেন ।”

নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মাইক পেন্সের কাজটা আরও কঠিন করে তুললেন কমলা হ্যারিস । মনে করা হচ্ছে ট্রাম্পের বর্ণবাদ, পুরুষ প্রধান মানসিকতা, আইন— সব ক্ষেত্রেই বিতর্কে হ্যারিস তাঁকে কড়া লড়াই দেবেন । এই মুহূর্তে অবশ্য কমলা হ্যারিসের অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন, যা তিনি 2019 সালে মার্টিন লুথার কিংয়ের জন্মদিনে ঘোষণা করেছিলেন, সফল হতে সময় লাগবে । কিন্তু নতুন ইতিহাস তৈরি হতেই পারে । 1972 সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডেমোক্র্যাটদের মনোনিত প্রথম মহিলা প্রার্থী নিউ ইয়র্কের কংগ্রেস সদস্য শার্লি চিসহোম বলেছিলেন, “আমি চাই না ইতিহাস আমাকে মনে রাখুক প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসাবে যিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছেন । আমি চাই বিশ্ব আমায় মনে রাখুক সেই কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসাবে যিনি বিংশ শতকে নিজস্বতাকে সাহস করেছিলেন । আমি চাই ইতিহাস আমায় মনে রাখুক আমেরিকার পরিবর্তনের অনুঘটক হিসাবে ।” সে দিনের সেই পরিবর্তনই আজকের আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম মাইলস্টোন হয়ে রইল ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.