ETV Bharat / international

ট্রাম্পের নিক্সন-মুহূর্ত, তীব্র বিক্ষোভের মুখে আইনশৃঙ্খলার তাস খেলা

সামাজিক পরিস্থিতি ঠিক রাখতে, অপরাধমূলক কাজ কমাতে পুলিশি সক্রিয়তা প্রয়োজন । কিন্তু এক্ষেত্রে পুলিশি ব্য়বস্থার সংস্কার প্রয়োজন । - দিল্লি থেকে লিখছেন স্মিতা শর্মা

author img

By

Published : Jun 11, 2020, 10:00 AM IST

ছবি
ছবি

শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের হাতে অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু । যার প্রতিবাদ দেখিয়ে অ্যামেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহর বিক্ষোভে দেখিয়ে পথে নেমেছেন মানুষজন ।

25 মে মিনেসোটার মিনেপলিসে একটি দোকানের বাইরে গ্রেপ্তার করা হয় ফ্লয়েডকে । তাঁকে আক্ষরিক অর্থেই দমবন্ধ করে মারেন পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন । যিনি প্রায় ন’মিনিট ধরে ফ্লয়েডের গলা নিজের হাঁটু দিয়ে চেপে রেখেছিলেন । এমনকী তখনও, যখন ফ্লয়েড বার বার বলতে থাকেন, “আমি শ্বাস নিতে পারছি না ।” পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় । তারপর থেকেই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের জন্য সুবিচার চেয়ে অ্যামেরিকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয় । অ্যামেরিকায় যখন কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, তখন সেসব উপেক্ষা করেই মিছিলে যোগ দেন বহু মানুষ । মঙ্গলবার ফ্লয়েডকে শ্রদ্ধা জানাতে ও তাঁকে সমাহিত করতে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল । সেই শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও দাসত্বের যুগ আর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় থেকে কয়েকশ বছর ধরে চলে আসা কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের সংগ্রামের কথা স্মরণ করা হয় ।

একইরকম ভাবে টামির রাইস, মাইকেল ব্রাউন এবং এরিক গার্নারের মৃত্যুর পর, গত কয়েক বছর ধরে, “কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনেরও মূল্য আছে”, এই শব্দবন্ধটি অ্যামেরিকার প্রদেশগুলিতে একটা মিছিলের স্লোগানে পরিণত হয়েছে । নিউ ইয়র্কে, যেখানে কোরোনায় সবথেকে বেশি মৃত্যু সেখানে বিক্ষোভরত জনতার মাধ্যমে ভাইরাস আরও ছড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল । সেখানে বিধিনিষেধ শেষপর্যন্ত শিথিল হওয়ার পর নতুন করে বিক্ষোভ হচ্ছে । এর পাশাপাশি রয়েছে তিনের দশকে গ্রেট ডিপ্রেশনের পর ফের কর্মহীনদের সংখ্যায় বিপুল বৃদ্ধি এবং অর্থনীতির অধঃগতি ।

বর্ষীয়ান সাংবাদিক এবং কলামনিস্ট সীমা সিরোহি, যিনি প্রায় দু’দশক ধরে অ্যামেরিকায় রয়েছেন, তাঁর মতে এই সময়ের প্রতিবাদ আলাদা ধরvsর এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ । তিনি বলেন, অতীতে পুলিশি অত্যাচারে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষের মৃত্যুর ঘটনাগুলিতে কোনও স্পষ্ট প্রমাণ থাকত বা থাকত না । কিন্তু জর্জ ফ্লয়েডের ক্ষেত্রে ভিডিয়ো ফুটেজ একেবারে স্পষ্ট এবং তা দেখা যন্ত্রণাদায়ক । যার জন্য ক্ষোভ এতটা ইন্ধন পেয়েছে । তিনি বলেন, "এখনও পর্যন্ত এটা শান্তিপূর্ণ । গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, অ্যামেরিকার প্রধান শহরগুলিতে 11 বা 12 দিন ধরে টানা বিক্ষোভ । মানুষ এখন প্রকৃত পরিবর্তন চাইছেন । পুলিশকে অর্থ না দেওয়ারও দাবি উঠেছে । আবার কোথাও পুলিশে সংস্কারের দাবিও উঠছে । এধরণের কিছু বিষয়ের মোকাবিলার জন্য ডেমোক্র্যাটরা হাউজ় অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভে একটি বিল আনার প্রস্তাব দিয়েছে । যেভাবে এই বিক্ষোভ টিকে রয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে যে মানুষ এবার ঘরে ফিরে যাবেন না ।"

বর্ষীয়ান সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে ওয়াশিংটন থেকে ফোনে তিনি বলেন, "মহামারীর মধ্যেই এটা হয়েছে । বেকারত্ব খুবই বেশি । ৪০ মিলিয়ন অ্যামেরিকান কর্মহীন । সমাজে যা ঘটছে মানুষ তা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে । কিন্তু ভিডিয়োটা এতটাই স্পষ্ট ছিল, যে মানুষের এ নিয়ে কোনও মতবিরোধ থাকতেই পারে না ।"

বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি পুলিশ বাহিনীতে সংস্কার, যা নিয়ে বিরোধী ডেমোক্র্যাট সেনেটররা বিভিন্ন চমকপ্রদ প্যাকেজ সামনে আনছেন । যাতে পুলিশি অত্যাচার এবং বর্ণবৈষম্যমূলক অবিচার বন্ধ করার জন্য আইন পরিবর্তনের কথাও বলা হয়েছে । পুলিশের হাতে সন্দেহভাজনদের ‘চোকিং’ এবং গায়ের রঙ দেখে টার্গেট চিহ্নিত করা নিষিদ্ধ ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে এই প্যাকেজে । পুলিশের অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করার মতো চূড়ান্ত দাবিও উঠেছে, যা ট্রাম্প স্পষ্টভাবে খারিজ করে দিয়েছেন ।

এই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ পৌঁছে গেছে 50টি প্রদেশের সুদূর গ্রামীণ এলাকাতেও । এবং তা বহু জাতিভিত্তিকও বটে । পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । পুলিশ প্রধান থেকে শুরু করে সেনা এবং জেমস মাটিসসহ প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিবরা তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমনে সেনা নামানোর সমালোচনা করেছেন । কয়েকটি জায়গায় বিশৃঙ্খলার মধ্যে চুরি বা লুঠের মতো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে । যদিও, সীমা সিরোহি বিশ্বাস করেন, যে ডোনাল্ড ট্রাম্প নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন । তা করতে গিয়ে ট্রাম্প, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নোটবুকের একটি পাতা তুলে নিয়েছেন – আইনশৃঙ্খলার তাস ।

সীমা সিরোহি বলেন, "যেভাবে ট্রাম্প চাল দিয়েছেন, তাতে পুরো পরিস্থিতি তাঁর পক্ষেই কাজ করতে পারে । কারণ তিনি এখন নিজেকের আইনশৃঙ্খলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুলে ধরছেন । 1968 সালে এটাই করেছিলেন রিচার্ড নিক্সন । নিক্সন জিতেছিলেন, কারণ বহু কৃষ্ণাঙ্গসহ অ্যামেরিকার অনেকেই পুলিশকে ‘ডিফান্ড’ করতে চাননি । বরং তাঁরা আরও সক্রিয় কিন্তু ভালো পুলিশি ব্যবস্থা চেয়েছিলেন । পুলিশ না থাকলে চলবে কী করে । অপরাধীরা একে অপরকে খুন করছে, চোর-ডাকাতরাও রয়েছে । তাই পুলিশের প্রয়োজন আছে । সেক্ষেত্রে উগ্র বামপন্থীদের দাবি প্রায় অবাস্তব । যেটা প্রয়োজন, সেটা হল পুলিশের সংস্কার ।”

অ্যামেরিকা, ব্রিটেন থেকে ফ্রান্সের রাজধানী শহরগুলিতে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদীদের ছবি নজর ঘুরিয়ে দিয়েছে সেই ঔপনিবেশিক অতীতের দিকে । যা ক্রীতদাস প্রথা এবং চামড়ার রঙের ভিত্তিতে বৈষম্যের সঙ্গে যুক্ত । রবিবার ব্রিটেনে সপ্তদশ শতকের দাস ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড কলস্টনের মূর্তি ব্রিস্টল বন্দরের জলে ফেলে দেন বিক্ষোভকারীরা । কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার নিয়ে সরব যাঁরা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো সেই তারকারা ভারতে মুক্তচিন্তার চর্চাকারীদের সমালোচনার মুখে পড়ছেন । কারণ তাঁরা গত কয়েক মাস ধরে CAA বিরোধী আন্দোলনে যে সংখ্যালঘু এবং বিভিন্ন ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারা পুলিশি নির্যাতনের মুখে পড়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে নীরব ।

ভারতে ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ক্ষেত্রে, ইন্দো-অ্যামেরিকানদের উপর সেদেশে বিক্ষোভ কী কোনওভাবে ছায়া ফেলতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে সীমা সিরোহি বলেন, “প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার নিয়ে যা বলার বলছেন কিন্তু ভারতে চলা প্রতিবাদ নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন । তিনি সাধারণভাবে BJP সরকারের পক্ষে । কিন্তু একটা উপলব্ধি তৈরি হবে । তরুণতর প্রজন্মের ভারতীয়-অ্যামেরিকানরা খুবই সরব । খুবই ডেমোক্র্যাট এবং বামপন্থী । যখন তাঁদের সময় আসবে, আমার মনে হয় ভারত সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হবে । নভেম্বরে ডেমোক্র্যাটরা জিতলে, গল্পটা একদমই অন্যরকম হবে ।"

শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারের হাতে অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ অ্যামেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু । যার প্রতিবাদ দেখিয়ে অ্যামেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহর বিক্ষোভে দেখিয়ে পথে নেমেছেন মানুষজন ।

25 মে মিনেসোটার মিনেপলিসে একটি দোকানের বাইরে গ্রেপ্তার করা হয় ফ্লয়েডকে । তাঁকে আক্ষরিক অর্থেই দমবন্ধ করে মারেন পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন । যিনি প্রায় ন’মিনিট ধরে ফ্লয়েডের গলা নিজের হাঁটু দিয়ে চেপে রেখেছিলেন । এমনকী তখনও, যখন ফ্লয়েড বার বার বলতে থাকেন, “আমি শ্বাস নিতে পারছি না ।” পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় । তারপর থেকেই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের জন্য সুবিচার চেয়ে অ্যামেরিকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয় । অ্যামেরিকায় যখন কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, তখন সেসব উপেক্ষা করেই মিছিলে যোগ দেন বহু মানুষ । মঙ্গলবার ফ্লয়েডকে শ্রদ্ধা জানাতে ও তাঁকে সমাহিত করতে শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল । সেই শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও দাসত্বের যুগ আর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় থেকে কয়েকশ বছর ধরে চলে আসা কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের সংগ্রামের কথা স্মরণ করা হয় ।

একইরকম ভাবে টামির রাইস, মাইকেল ব্রাউন এবং এরিক গার্নারের মৃত্যুর পর, গত কয়েক বছর ধরে, “কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনেরও মূল্য আছে”, এই শব্দবন্ধটি অ্যামেরিকার প্রদেশগুলিতে একটা মিছিলের স্লোগানে পরিণত হয়েছে । নিউ ইয়র্কে, যেখানে কোরোনায় সবথেকে বেশি মৃত্যু সেখানে বিক্ষোভরত জনতার মাধ্যমে ভাইরাস আরও ছড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল । সেখানে বিধিনিষেধ শেষপর্যন্ত শিথিল হওয়ার পর নতুন করে বিক্ষোভ হচ্ছে । এর পাশাপাশি রয়েছে তিনের দশকে গ্রেট ডিপ্রেশনের পর ফের কর্মহীনদের সংখ্যায় বিপুল বৃদ্ধি এবং অর্থনীতির অধঃগতি ।

বর্ষীয়ান সাংবাদিক এবং কলামনিস্ট সীমা সিরোহি, যিনি প্রায় দু’দশক ধরে অ্যামেরিকায় রয়েছেন, তাঁর মতে এই সময়ের প্রতিবাদ আলাদা ধরvsর এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ । তিনি বলেন, অতীতে পুলিশি অত্যাচারে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষের মৃত্যুর ঘটনাগুলিতে কোনও স্পষ্ট প্রমাণ থাকত বা থাকত না । কিন্তু জর্জ ফ্লয়েডের ক্ষেত্রে ভিডিয়ো ফুটেজ একেবারে স্পষ্ট এবং তা দেখা যন্ত্রণাদায়ক । যার জন্য ক্ষোভ এতটা ইন্ধন পেয়েছে । তিনি বলেন, "এখনও পর্যন্ত এটা শান্তিপূর্ণ । গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, অ্যামেরিকার প্রধান শহরগুলিতে 11 বা 12 দিন ধরে টানা বিক্ষোভ । মানুষ এখন প্রকৃত পরিবর্তন চাইছেন । পুলিশকে অর্থ না দেওয়ারও দাবি উঠেছে । আবার কোথাও পুলিশে সংস্কারের দাবিও উঠছে । এধরণের কিছু বিষয়ের মোকাবিলার জন্য ডেমোক্র্যাটরা হাউজ় অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভে একটি বিল আনার প্রস্তাব দিয়েছে । যেভাবে এই বিক্ষোভ টিকে রয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে যে মানুষ এবার ঘরে ফিরে যাবেন না ।"

বর্ষীয়ান সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে ওয়াশিংটন থেকে ফোনে তিনি বলেন, "মহামারীর মধ্যেই এটা হয়েছে । বেকারত্ব খুবই বেশি । ৪০ মিলিয়ন অ্যামেরিকান কর্মহীন । সমাজে যা ঘটছে মানুষ তা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে । কিন্তু ভিডিয়োটা এতটাই স্পষ্ট ছিল, যে মানুষের এ নিয়ে কোনও মতবিরোধ থাকতেই পারে না ।"

বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি পুলিশ বাহিনীতে সংস্কার, যা নিয়ে বিরোধী ডেমোক্র্যাট সেনেটররা বিভিন্ন চমকপ্রদ প্যাকেজ সামনে আনছেন । যাতে পুলিশি অত্যাচার এবং বর্ণবৈষম্যমূলক অবিচার বন্ধ করার জন্য আইন পরিবর্তনের কথাও বলা হয়েছে । পুলিশের হাতে সন্দেহভাজনদের ‘চোকিং’ এবং গায়ের রঙ দেখে টার্গেট চিহ্নিত করা নিষিদ্ধ ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে এই প্যাকেজে । পুলিশের অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করার মতো চূড়ান্ত দাবিও উঠেছে, যা ট্রাম্প স্পষ্টভাবে খারিজ করে দিয়েছেন ।

এই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ পৌঁছে গেছে 50টি প্রদেশের সুদূর গ্রামীণ এলাকাতেও । এবং তা বহু জাতিভিত্তিকও বটে । পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প । পুলিশ প্রধান থেকে শুরু করে সেনা এবং জেমস মাটিসসহ প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিবরা তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমনে সেনা নামানোর সমালোচনা করেছেন । কয়েকটি জায়গায় বিশৃঙ্খলার মধ্যে চুরি বা লুঠের মতো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে । যদিও, সীমা সিরোহি বিশ্বাস করেন, যে ডোনাল্ড ট্রাম্প নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন । তা করতে গিয়ে ট্রাম্প, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নোটবুকের একটি পাতা তুলে নিয়েছেন – আইনশৃঙ্খলার তাস ।

সীমা সিরোহি বলেন, "যেভাবে ট্রাম্প চাল দিয়েছেন, তাতে পুরো পরিস্থিতি তাঁর পক্ষেই কাজ করতে পারে । কারণ তিনি এখন নিজেকের আইনশৃঙ্খলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুলে ধরছেন । 1968 সালে এটাই করেছিলেন রিচার্ড নিক্সন । নিক্সন জিতেছিলেন, কারণ বহু কৃষ্ণাঙ্গসহ অ্যামেরিকার অনেকেই পুলিশকে ‘ডিফান্ড’ করতে চাননি । বরং তাঁরা আরও সক্রিয় কিন্তু ভালো পুলিশি ব্যবস্থা চেয়েছিলেন । পুলিশ না থাকলে চলবে কী করে । অপরাধীরা একে অপরকে খুন করছে, চোর-ডাকাতরাও রয়েছে । তাই পুলিশের প্রয়োজন আছে । সেক্ষেত্রে উগ্র বামপন্থীদের দাবি প্রায় অবাস্তব । যেটা প্রয়োজন, সেটা হল পুলিশের সংস্কার ।”

অ্যামেরিকা, ব্রিটেন থেকে ফ্রান্সের রাজধানী শহরগুলিতে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদীদের ছবি নজর ঘুরিয়ে দিয়েছে সেই ঔপনিবেশিক অতীতের দিকে । যা ক্রীতদাস প্রথা এবং চামড়ার রঙের ভিত্তিতে বৈষম্যের সঙ্গে যুক্ত । রবিবার ব্রিটেনে সপ্তদশ শতকের দাস ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড কলস্টনের মূর্তি ব্রিস্টল বন্দরের জলে ফেলে দেন বিক্ষোভকারীরা । কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার নিয়ে সরব যাঁরা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো সেই তারকারা ভারতে মুক্তচিন্তার চর্চাকারীদের সমালোচনার মুখে পড়ছেন । কারণ তাঁরা গত কয়েক মাস ধরে CAA বিরোধী আন্দোলনে যে সংখ্যালঘু এবং বিভিন্ন ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারা পুলিশি নির্যাতনের মুখে পড়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে নীরব ।

ভারতে ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ক্ষেত্রে, ইন্দো-অ্যামেরিকানদের উপর সেদেশে বিক্ষোভ কী কোনওভাবে ছায়া ফেলতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে সীমা সিরোহি বলেন, “প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার নিয়ে যা বলার বলছেন কিন্তু ভারতে চলা প্রতিবাদ নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন । তিনি সাধারণভাবে BJP সরকারের পক্ষে । কিন্তু একটা উপলব্ধি তৈরি হবে । তরুণতর প্রজন্মের ভারতীয়-অ্যামেরিকানরা খুবই সরব । খুবই ডেমোক্র্যাট এবং বামপন্থী । যখন তাঁদের সময় আসবে, আমার মনে হয় ভারত সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হবে । নভেম্বরে ডেমোক্র্যাটরা জিতলে, গল্পটা একদমই অন্যরকম হবে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.