ETV Bharat / international

রিপাবলিকানদের জাতীয় সম্মেলন ও ট্রাম্পের ভাষণের বিশ্লেষণ

প্রস্তাব গ্রহণ করার ওই ভাষণে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে বাইডেন চিনের বিষয়ে নরম । বলেছেন, ‘বাইডেন যদি জিতে যায়, তাহলে চিন আমাদের দেশ দখল করে নেবে ।’ তিনি অ্যামেরিকান দূতাবাস জ়েরুজ়ালেমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং UAE ও ইজ়রায়েলের মধ্যে অ্যামেরিকান পরিচালিত শান্তি চুক্তির বিষয়টি বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন ।

author img

By

Published : Aug 28, 2020, 9:22 PM IST

Decoding Republican National Convention
ট্রাম্পের ভাষণের বিশ্লেষণ

ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ সরকারি ভাবে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হিসেবে শাসক দলের হয়ে তাঁর আবার মনোনয়ন গ্রহণ করেছেন । আর এই ঘটনার যবনিকা পড়ল রিপাবলিকানদের জাতীয় সম্মেলনে । হোয়াইট হাউজ়ের লনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁর বাবাকে স্বাগত জানান কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প । সেখানে এই প্যানডেমিকের মধ্যেও অতিথিরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখেননি । এমনকী অধিকাংশকেই মাস্ক ছাড়া দেখা গিয়েছে । অথচ এই প্যানডেমিকের জেরে অ্যামেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই এক লাখ 80 হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন । আর মৃত্যুর সংখ্যা রোজই বৃদ্ধি পাচ্ছে । ইভাঙ্কা নিজের ভাষণে বাবাকে ‘জনগণের’ প্রেসিডেন্ট বলে উল্লেখ করেছেন । তাঁর দাবি, রাজনৈতিক ভাবে হয়তো ট্রাম্প সব সময় সঠিক হন না । কিন্তু তিনি ‘আমেরিকাকে আবার শিখরে নিয়ে যেতে’ কঠোর পরিশ্রম করছেন ।

ইভাঙ্কা ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমার বাবা দৃঢ় প্রত্যয়ী । তিনি কী বিশ্বাস করেন, সেটা তিনি জানেন । আর তিনি যেটা মনে করেন, সেটাই মুখে প্রকাশ করেন । আপনারা তাঁর সঙ্গে সহমত হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন । কিন্তু আপনারা সব সময় জানেন যে তাঁর অবস্থান কী । আমি এটাকে আমার বাবা সংযোগ স্থাপনের ধারা বলেই চিহ্নিত করব, যা সকলের পছন্দ হয় না । আর আমি জানি যে তাঁর ট্যুইট একটুও ঝাড়াই-বাছাই করা হয় না । কিন্তু ফলাফল তাঁদের হয়েই কথা বলে ।’’

অন্যদিকে ট্রাম্প তাঁর ভাষণের পুরোটাই রেখেছিলেন তাঁর বিরোধী জো বাইডেনকে আক্রমণ করার জন্য এবং জন প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর অতীতের 47 বছরের কথা বলার জন্য । তিনি ডেমোক্র্যাটদের ‘উগ্র মৌলবাদী বামপন্থী’ বলে উল্লেখ করেন । প্রশ্ন তোলেন যে বর্ণবিদ্বেষ ও কৃষ্ণাঙ্গের জীবনের মর্যাদার দাবি মিনিয়াপোলিস ও কেনোশার মতো ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরে কেন হিংসাত্মক হয়ে উঠল । ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের দেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন । ভোটারদের কাছে দুইটি দলের মধ্যে, দুইটি নীতির মধ্যে, দুইটি দর্শনের মধ্যে বা দুইটি অ্যাজেন্ডার মধ্যে বেছে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই । এই নির্বাচন ঠিক করবে যে আমরা কি আমাদের অ্যামেরিকান স্বপ্নকে রক্ষা করব । নাকি সমাজতন্ত্রবাদীদের অ্যাজেন্ডাকে দেশের ভবিতব্যকে ধ্বংস করার অনুমতি দেব ।’’

তাঁর ৭১ মিনিটের লম্বা ভাষণে এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘এই নির্বাচন ঠিক করবে যে আমরা কি অ্যামেরিকান জীবনযাত্রার পথকে রক্ষা করব । নাকি কোনও মৌলবাদী আন্দোলনকে এই জীবনযাত্রার পথকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা দেওয়ার অনুমতি দেব । ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশনে জো বাইডেন ও তাঁর দল বারবার এটা প্রমাণ করতে চেয়েছে যে আমেরিকা আসলে একটি বর্ণবিদ্বেষমূলক এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিত ক্ষেত্রে অবিচার করা হয়, এমন একটি দেশ । তাই আজ রাতে আমি আপনাদের একটা অত্যন্ত সহজ প্রশ্ন করতে চাই: ডেমোক্র্যাট পার্টি, যারা বেশির ভাগ সময় দেশকে নীচে নামার কাজে সচেষ্ট থাকে, তাদের কীভাবে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া যায় ?’’

রিপাবলিকানদের প্রকাশ্য জাতীয় সম্মেলন গত সপ্তাহে হয়ে যাওয়া ডেমোক্র্যাটদের ভার্চুয়াল জাতীয় সম্মেলন থেকে কতটা বেশি নম্বর পেল ? ঐতিহাসিক হোয়াইট হাউজ়, যা ক্ষমতায় থাকা অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্টের বাড়ি, সেটাকে একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সম্মেলনের জন্য কীভাবে ব্যবহার করা হল, তা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন । ট্রাম্পকে কি আরও মানবিক করে দেখানোর চেষ্টা হল ? অতিথিদের বাছাইয়ের মাধ্যমে ট্রাম্পকে কি আরও সহানুভূতিশীল ও যন্তবান বলে তুলে ধরা হল ? আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে প্রধান ইস্যুগুলি কী হতে পারে ? সিনিয়র সাংবাদিক স্মিতা শর্মা #BattlegroundUSA2020 এর এক্সক্লুসিভ সিরিজ়ের এই পর্বে আলোচনা করেছেন ট্রাম্পের সরকারি ভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করার ভাষণ ও RNC এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে ।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখিকা সীমা সিরোহি বলেন, ‘‘প্রায় 1500 লোক হোয়াইট হাউজ়ের লনে ছিলেন । তাঁদের প্রায় কেউ প্রায় মাস্ক পরে ছিলেন না । এটা খুবই নজরে পড়ার মতো বিষয় । চেয়ারগুলি একে অপরের খুব কাছাকাছি ছিল । মনে হচ্ছিল যে প্যানডেমিক বলে কিছুই যেন ঘটেনি । অন্যতম একজন বক্তা প্যানডেমিক সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেটাকে অতীতের ঘটনার মতো উল্লেখ করলেন । সুতরাং এটা দেখে সম্পূর্ণ অন্য একটা বাস্তব বলেই মনে হচ্ছিল । যেন অন্য একটা পৃথিবী । হোয়াইট হাউজ়ে প্রবেশ করার একটা ফটকে পোস্টার লাগানো ছিল । আর পুলিশ গেট আড়াল করে রেখেছিল । আগামীকাল ওয়াশিংটনে একটা বড় মিছিল রয়েছে । আমার মনে হচ্ছে যেন এটা দুইটি আলাদা আলাদা দেশ । এটা কিছু সময়ের ঘটনা । কিন্তু আজ এটাকে নিখুঁত ভাবে শব্দে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল ।’’ ভাগ্যশ্রী কে জর্জ, দ্য হিন্দুর অ্যাসোসিয়েট এডিটর পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘‘আজ আপনারা যেটা শুনলেন, তা হল আমেরিকা আসলে কী, আর কী হওয়া উচিত, সেটার ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা । কয়েকদিন আগে আমরা শুনেছিলাম আমেরিকার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা । একটা নির্দিষ্ট স্তরে দুটো ব্যাখ্যাই বৈধ বা অবৈধ । একটি নির্বাচনে নিজেদের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে অধিকাংশের সমর্থন যিনি আদায় করতে পারবেন, তিনিই সফল হবেন ।’’ ভাগ্যশ্রী ‘Open Embrace: Indo-US Ties In The Age of Modi andTrump’ বইটির লেখিকা ।

ভাগ্যশ্রী জর্জ 2016 সালের নির্বাচনের সময় ওয়াশিংটন ডিসিতে কর্মরত ছিলেন । তিনি বলেন, ‘‘এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে ট্রাম্প ও বাইডেন যে ব্যাখ্যা পেশ করেছেন, তার মধ্যে ট্রাম্পের ব্যাখ্যা, যা আজ পেশ করা হয়েছে, তা হল আমরা ভাইরাসকে গুরুত্ব দিচ্ছি না । আমরা এমন একটি সভ্যতা যা ভাইরাসের কাছে আত্মসমর্পণ করব না । কিন্তু পাল্টা লড়াই করে ভাইরাসকে শেষ করে দেব । এটাই অ্যামেরিকান ইতিহাসের সরল ব্যাখ্যা, যা তিনি নিজের জনগণ ও বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছেন । এটা এমন একটা দেশ, যারা বিশ্বাস করে যে অ্যামেরিকানরা ইরাকে লড়াই করতে গিয়েছিল এবং মধ্য প্রাচ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে ।’’ রিপাবলিকান ও BJP এর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শগত প্রচারের সমান্তরাল ব্যাখ্যা তৈরি করে তিনি উল্লেখ করেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদী যে ভাবে জাতিগত বাধার ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দু ও হিন্দুত্বকে আরও বড় করে প্রচারে তুলে ধরেছেন । একই ভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনের মর্যাদার ইস্যুতে বৃহত্তর ক্যাথলিক বিশ্বাসকে তুলে ধরতে চাইছেন ট্রাম্প । বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদের মধ্যেও এই বিশ্বাস অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান সমাজকেও রক্ষণশীল মনোভাবের মাধ্যমে এক করে রেখেছে ।

প্রস্তাব গ্রহণ করার ওই ভাষণে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে বাইডেন চিনের বিষয়ে নরম । বলেছেন, ‘বাইডেন যদি জিতে যায়, তাহলে চিন আমাদের দেশ দখল করে নেবে ।’ তিনি অ্যামেরিকান দূতাবাস জ়েরুজ়ালেমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং UAE ও ইজ়রায়েলের মধ্যে অ্যামেরিকান পরিচালিত শান্তি চুক্তির বিষয়টি বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন ।

ট্রাম্প বলেন, ‘‘যখন আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন মধ্য প্রাচ্য প্রচুর গোলমাল চলছে । ISIS ক্ষতি করেই ছিল । ইরান সামনে এগিয়ে আসছিল এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধ কোথায় শেষ হবে, তার কোনও হিসেব ছিল না । ভয়ঙ্কর পক্ষপাতদুষ্ট ইরান নিউক্লিয়ার চুক্তি থেকে আমি সরে আসি । অন্য প্রেসিডেন্টদের মতো না করে আমি নিজের প্রতিশ্রুতি রেখেছি । ইজ়রায়েলের আসল রাজধানীকে স্বীকৃতি দিয়েছি । দূতাবাস জ়েরুজ়ালেমে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছি । এটাকে ভবিষ্যতের জন্য কথা না বলে আমরা তৈরি করে ফেলেছি ।’’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘গোলান হাইটসে ইজ়রায়েলের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়েছি । আর এই মাসে গত 25 বছরের মধ্যে প্রথমবার মধ্য প্রাচ্য শান্তি চুক্তিতে পৌঁছতে পেরেছি । এর সঙ্গে আমরা ISIS এর প্রভাবকে 100 শতাংশ শেষ করতে পেরেছি । আর এদের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা আবু বকর আল বাগদাদিকে হত্যা করেছি । এর পর অন্য একটি অভিযানে আমরা বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসবাদী কাসেম সুলেইমানিকে শেষ করেছি । আমি অন্য প্রশাসকদের মতো না করে আমেরিকাকে নতুন যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচিয়েছি । আর আমাদের বাহিনী দেশে ফিরে আসছে ।’’

হিংসাত্মক মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ট্রাম্পের মধ্য প্রাচ্যে শান্তির পরিকল্পনা এবং বাগদাদি ও সুলেইমানিকে মেরে ফেলার মতো নিরাপত্তা ইস্যুগুলি কি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে ? এই প্রশ্নটি মিথোস ল্যাবের CEO প্রিয়াঙ্ক মাথুরকে করেন স্মিতা শর্মা । প্রিয়াঙ্ক বলেন, ‘‘সাধারণত বিদেশ নীতি আমেরিকার নির্বাচনে প্রভাব ফেলে না । কিন্তু এটার দুটো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে । এটা বিশেষ বিষয় । কারণ, ইজ়রায়েলকে বিশেষ সাব ক্যাটাগরিতে রাখা হয় । দক্ষিণপন্থীদের কাছে বিশ্বাস একটা বড় বিষয় । ইজ়রায়েল দক্ষিণপন্থীদের বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ।’’ একই সঙ্গে তাঁর যুক্তি এটা ধর্মীয় ভিত্তির দিকেই ইঙ্গিত করছে । এর মধ্যে শান্তি চুক্তির ভালো দিক বা খারাপ দিক কাজ করছে না । প্রিয়াঙ্ক বলেন, ‘‘কাসেম সুলেইমানি বা বাগদাদি এত বড় নাম নয়, যতটা বড় ছিল ওসামা বিন লাদেন । আপনি বলতে পারেন যে তারা সেই পরিস্থিতিটা তৈরি করার চেষ্টা করছিল । তারা বোঝাতে চাইছে যে সে তাদের বিন লাদেন ছিল । আর আমরা তাকে মেরে ফেলেছি । কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হল, অধিকাংশ অ্যামেরিকানরা জানেই না যে কাসেম সুলেইমানিকে ।’’ ওবামার শাসন কালে অ্যামেরিকান নেভি সিলস যখন ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করল, তখন অ্যামেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় নেমে মানুষ উৎসবে সামিল হয়েছিলেন । সেই কথাও প্রিয়াঙ্কা আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন ।

কোরোনা ভাইরাসের জন্য অ্যামেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টাল ব্যালট নিয়ে যে আলোচনা চলছে এবং আসল ভোটরারাই কি সেক্ষেত্রে ভোট দেবেন ? এই বিষয়টির উপরও আলোচনা হয়েছে । প্যানেলিস্টরা একমত হয়েছিলেন যে এটি খুব খারাপ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে পারে । কারণ 4 নভেম্বর নির্বাচনের পরেই ফলাফল ঘোষিত হবে না, যেমনটা আগে হত । তবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি হতে পারে ।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ সরকারি ভাবে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হিসেবে শাসক দলের হয়ে তাঁর আবার মনোনয়ন গ্রহণ করেছেন । আর এই ঘটনার যবনিকা পড়ল রিপাবলিকানদের জাতীয় সম্মেলনে । হোয়াইট হাউজ়ের লনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তাঁর বাবাকে স্বাগত জানান কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প । সেখানে এই প্যানডেমিকের মধ্যেও অতিথিরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখেননি । এমনকী অধিকাংশকেই মাস্ক ছাড়া দেখা গিয়েছে । অথচ এই প্যানডেমিকের জেরে অ্যামেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই এক লাখ 80 হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন । আর মৃত্যুর সংখ্যা রোজই বৃদ্ধি পাচ্ছে । ইভাঙ্কা নিজের ভাষণে বাবাকে ‘জনগণের’ প্রেসিডেন্ট বলে উল্লেখ করেছেন । তাঁর দাবি, রাজনৈতিক ভাবে হয়তো ট্রাম্প সব সময় সঠিক হন না । কিন্তু তিনি ‘আমেরিকাকে আবার শিখরে নিয়ে যেতে’ কঠোর পরিশ্রম করছেন ।

ইভাঙ্কা ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমার বাবা দৃঢ় প্রত্যয়ী । তিনি কী বিশ্বাস করেন, সেটা তিনি জানেন । আর তিনি যেটা মনে করেন, সেটাই মুখে প্রকাশ করেন । আপনারা তাঁর সঙ্গে সহমত হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন । কিন্তু আপনারা সব সময় জানেন যে তাঁর অবস্থান কী । আমি এটাকে আমার বাবা সংযোগ স্থাপনের ধারা বলেই চিহ্নিত করব, যা সকলের পছন্দ হয় না । আর আমি জানি যে তাঁর ট্যুইট একটুও ঝাড়াই-বাছাই করা হয় না । কিন্তু ফলাফল তাঁদের হয়েই কথা বলে ।’’

অন্যদিকে ট্রাম্প তাঁর ভাষণের পুরোটাই রেখেছিলেন তাঁর বিরোধী জো বাইডেনকে আক্রমণ করার জন্য এবং জন প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর অতীতের 47 বছরের কথা বলার জন্য । তিনি ডেমোক্র্যাটদের ‘উগ্র মৌলবাদী বামপন্থী’ বলে উল্লেখ করেন । প্রশ্ন তোলেন যে বর্ণবিদ্বেষ ও কৃষ্ণাঙ্গের জীবনের মর্যাদার দাবি মিনিয়াপোলিস ও কেনোশার মতো ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরে কেন হিংসাত্মক হয়ে উঠল । ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের দেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন । ভোটারদের কাছে দুইটি দলের মধ্যে, দুইটি নীতির মধ্যে, দুইটি দর্শনের মধ্যে বা দুইটি অ্যাজেন্ডার মধ্যে বেছে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই । এই নির্বাচন ঠিক করবে যে আমরা কি আমাদের অ্যামেরিকান স্বপ্নকে রক্ষা করব । নাকি সমাজতন্ত্রবাদীদের অ্যাজেন্ডাকে দেশের ভবিতব্যকে ধ্বংস করার অনুমতি দেব ।’’

তাঁর ৭১ মিনিটের লম্বা ভাষণে এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘এই নির্বাচন ঠিক করবে যে আমরা কি অ্যামেরিকান জীবনযাত্রার পথকে রক্ষা করব । নাকি কোনও মৌলবাদী আন্দোলনকে এই জীবনযাত্রার পথকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা দেওয়ার অনুমতি দেব । ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশনে জো বাইডেন ও তাঁর দল বারবার এটা প্রমাণ করতে চেয়েছে যে আমেরিকা আসলে একটি বর্ণবিদ্বেষমূলক এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিত ক্ষেত্রে অবিচার করা হয়, এমন একটি দেশ । তাই আজ রাতে আমি আপনাদের একটা অত্যন্ত সহজ প্রশ্ন করতে চাই: ডেমোক্র্যাট পার্টি, যারা বেশির ভাগ সময় দেশকে নীচে নামার কাজে সচেষ্ট থাকে, তাদের কীভাবে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া যায় ?’’

রিপাবলিকানদের প্রকাশ্য জাতীয় সম্মেলন গত সপ্তাহে হয়ে যাওয়া ডেমোক্র্যাটদের ভার্চুয়াল জাতীয় সম্মেলন থেকে কতটা বেশি নম্বর পেল ? ঐতিহাসিক হোয়াইট হাউজ়, যা ক্ষমতায় থাকা অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্টের বাড়ি, সেটাকে একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সম্মেলনের জন্য কীভাবে ব্যবহার করা হল, তা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন । ট্রাম্পকে কি আরও মানবিক করে দেখানোর চেষ্টা হল ? অতিথিদের বাছাইয়ের মাধ্যমে ট্রাম্পকে কি আরও সহানুভূতিশীল ও যন্তবান বলে তুলে ধরা হল ? আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে প্রধান ইস্যুগুলি কী হতে পারে ? সিনিয়র সাংবাদিক স্মিতা শর্মা #BattlegroundUSA2020 এর এক্সক্লুসিভ সিরিজ়ের এই পর্বে আলোচনা করেছেন ট্রাম্পের সরকারি ভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করার ভাষণ ও RNC এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে ।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখিকা সীমা সিরোহি বলেন, ‘‘প্রায় 1500 লোক হোয়াইট হাউজ়ের লনে ছিলেন । তাঁদের প্রায় কেউ প্রায় মাস্ক পরে ছিলেন না । এটা খুবই নজরে পড়ার মতো বিষয় । চেয়ারগুলি একে অপরের খুব কাছাকাছি ছিল । মনে হচ্ছিল যে প্যানডেমিক বলে কিছুই যেন ঘটেনি । অন্যতম একজন বক্তা প্যানডেমিক সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেটাকে অতীতের ঘটনার মতো উল্লেখ করলেন । সুতরাং এটা দেখে সম্পূর্ণ অন্য একটা বাস্তব বলেই মনে হচ্ছিল । যেন অন্য একটা পৃথিবী । হোয়াইট হাউজ়ে প্রবেশ করার একটা ফটকে পোস্টার লাগানো ছিল । আর পুলিশ গেট আড়াল করে রেখেছিল । আগামীকাল ওয়াশিংটনে একটা বড় মিছিল রয়েছে । আমার মনে হচ্ছে যেন এটা দুইটি আলাদা আলাদা দেশ । এটা কিছু সময়ের ঘটনা । কিন্তু আজ এটাকে নিখুঁত ভাবে শব্দে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল ।’’ ভাগ্যশ্রী কে জর্জ, দ্য হিন্দুর অ্যাসোসিয়েট এডিটর পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘‘আজ আপনারা যেটা শুনলেন, তা হল আমেরিকা আসলে কী, আর কী হওয়া উচিত, সেটার ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা । কয়েকদিন আগে আমরা শুনেছিলাম আমেরিকার বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা । একটা নির্দিষ্ট স্তরে দুটো ব্যাখ্যাই বৈধ বা অবৈধ । একটি নির্বাচনে নিজেদের ব্যাখ্যা বুঝিয়ে অধিকাংশের সমর্থন যিনি আদায় করতে পারবেন, তিনিই সফল হবেন ।’’ ভাগ্যশ্রী ‘Open Embrace: Indo-US Ties In The Age of Modi andTrump’ বইটির লেখিকা ।

ভাগ্যশ্রী জর্জ 2016 সালের নির্বাচনের সময় ওয়াশিংটন ডিসিতে কর্মরত ছিলেন । তিনি বলেন, ‘‘এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে ট্রাম্প ও বাইডেন যে ব্যাখ্যা পেশ করেছেন, তার মধ্যে ট্রাম্পের ব্যাখ্যা, যা আজ পেশ করা হয়েছে, তা হল আমরা ভাইরাসকে গুরুত্ব দিচ্ছি না । আমরা এমন একটি সভ্যতা যা ভাইরাসের কাছে আত্মসমর্পণ করব না । কিন্তু পাল্টা লড়াই করে ভাইরাসকে শেষ করে দেব । এটাই অ্যামেরিকান ইতিহাসের সরল ব্যাখ্যা, যা তিনি নিজের জনগণ ও বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছেন । এটা এমন একটা দেশ, যারা বিশ্বাস করে যে অ্যামেরিকানরা ইরাকে লড়াই করতে গিয়েছিল এবং মধ্য প্রাচ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে ।’’ রিপাবলিকান ও BJP এর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শগত প্রচারের সমান্তরাল ব্যাখ্যা তৈরি করে তিনি উল্লেখ করেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদী যে ভাবে জাতিগত বাধার ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দু ও হিন্দুত্বকে আরও বড় করে প্রচারে তুলে ধরেছেন । একই ভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনের মর্যাদার ইস্যুতে বৃহত্তর ক্যাথলিক বিশ্বাসকে তুলে ধরতে চাইছেন ট্রাম্প । বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদের মধ্যেও এই বিশ্বাস অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান সমাজকেও রক্ষণশীল মনোভাবের মাধ্যমে এক করে রেখেছে ।

প্রস্তাব গ্রহণ করার ওই ভাষণে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে বাইডেন চিনের বিষয়ে নরম । বলেছেন, ‘বাইডেন যদি জিতে যায়, তাহলে চিন আমাদের দেশ দখল করে নেবে ।’ তিনি অ্যামেরিকান দূতাবাস জ়েরুজ়ালেমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং UAE ও ইজ়রায়েলের মধ্যে অ্যামেরিকান পরিচালিত শান্তি চুক্তির বিষয়টি বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন ।

ট্রাম্প বলেন, ‘‘যখন আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন মধ্য প্রাচ্য প্রচুর গোলমাল চলছে । ISIS ক্ষতি করেই ছিল । ইরান সামনে এগিয়ে আসছিল এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধ কোথায় শেষ হবে, তার কোনও হিসেব ছিল না । ভয়ঙ্কর পক্ষপাতদুষ্ট ইরান নিউক্লিয়ার চুক্তি থেকে আমি সরে আসি । অন্য প্রেসিডেন্টদের মতো না করে আমি নিজের প্রতিশ্রুতি রেখেছি । ইজ়রায়েলের আসল রাজধানীকে স্বীকৃতি দিয়েছি । দূতাবাস জ়েরুজ়ালেমে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছি । এটাকে ভবিষ্যতের জন্য কথা না বলে আমরা তৈরি করে ফেলেছি ।’’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘গোলান হাইটসে ইজ়রায়েলের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়েছি । আর এই মাসে গত 25 বছরের মধ্যে প্রথমবার মধ্য প্রাচ্য শান্তি চুক্তিতে পৌঁছতে পেরেছি । এর সঙ্গে আমরা ISIS এর প্রভাবকে 100 শতাংশ শেষ করতে পেরেছি । আর এদের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা আবু বকর আল বাগদাদিকে হত্যা করেছি । এর পর অন্য একটি অভিযানে আমরা বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসবাদী কাসেম সুলেইমানিকে শেষ করেছি । আমি অন্য প্রশাসকদের মতো না করে আমেরিকাকে নতুন যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচিয়েছি । আর আমাদের বাহিনী দেশে ফিরে আসছে ।’’

হিংসাত্মক মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ট্রাম্পের মধ্য প্রাচ্যে শান্তির পরিকল্পনা এবং বাগদাদি ও সুলেইমানিকে মেরে ফেলার মতো নিরাপত্তা ইস্যুগুলি কি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে ? এই প্রশ্নটি মিথোস ল্যাবের CEO প্রিয়াঙ্ক মাথুরকে করেন স্মিতা শর্মা । প্রিয়াঙ্ক বলেন, ‘‘সাধারণত বিদেশ নীতি আমেরিকার নির্বাচনে প্রভাব ফেলে না । কিন্তু এটার দুটো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে । এটা বিশেষ বিষয় । কারণ, ইজ়রায়েলকে বিশেষ সাব ক্যাটাগরিতে রাখা হয় । দক্ষিণপন্থীদের কাছে বিশ্বাস একটা বড় বিষয় । ইজ়রায়েল দক্ষিণপন্থীদের বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ।’’ একই সঙ্গে তাঁর যুক্তি এটা ধর্মীয় ভিত্তির দিকেই ইঙ্গিত করছে । এর মধ্যে শান্তি চুক্তির ভালো দিক বা খারাপ দিক কাজ করছে না । প্রিয়াঙ্ক বলেন, ‘‘কাসেম সুলেইমানি বা বাগদাদি এত বড় নাম নয়, যতটা বড় ছিল ওসামা বিন লাদেন । আপনি বলতে পারেন যে তারা সেই পরিস্থিতিটা তৈরি করার চেষ্টা করছিল । তারা বোঝাতে চাইছে যে সে তাদের বিন লাদেন ছিল । আর আমরা তাকে মেরে ফেলেছি । কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি হল, অধিকাংশ অ্যামেরিকানরা জানেই না যে কাসেম সুলেইমানিকে ।’’ ওবামার শাসন কালে অ্যামেরিকান নেভি সিলস যখন ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করল, তখন অ্যামেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় নেমে মানুষ উৎসবে সামিল হয়েছিলেন । সেই কথাও প্রিয়াঙ্কা আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন ।

কোরোনা ভাইরাসের জন্য অ্যামেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে পোস্টাল ব্যালট নিয়ে যে আলোচনা চলছে এবং আসল ভোটরারাই কি সেক্ষেত্রে ভোট দেবেন ? এই বিষয়টির উপরও আলোচনা হয়েছে । প্যানেলিস্টরা একমত হয়েছিলেন যে এটি খুব খারাপ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে নিয়ে যেতে পারে । কারণ 4 নভেম্বর নির্বাচনের পরেই ফলাফল ঘোষিত হবে না, যেমনটা আগে হত । তবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত দেরি হতে পারে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.