হায়দরাবাদ, 21 নভেম্বর: কালের নিয়মে পৃথিবী আধুনিক হলেও প্রেম পড়ে রয়েছে মান্ধাতার আমলেই । আগলে রাখাতেই সে বিশ্বাসী । যেমনভাবে শেষদিন পর্যন্ত প্রেয়সীকে আগলে রাখলেন সব্যসাচী চৌধুরি, বিতুপান টামুলিরা । যেমনভাবে ক্লিশে, ওল্ড স্কুল, বোরিং প্রেমিকরাই প্রেম'হীন' পৃথিবীকে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভালোবাসার অপূর্ণতাতেও পূর্ণতা থাকে (Unforgettable Love story of Sabyasachi-Aindrila)।
'মাত্র' পাঁচ বছর সম্পর্কে ছিলেন ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচী । তারমধ্যেই মারণরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ঐন্দ্রিলা । অসম লড়াইয়ের পর ফিরেছেন মূলস্রোতে । জীবনের চড়াই-উৎরাইতেও ভালোবাসার গোলাপ ফুটিয়েছেন সব্যসাচী । কেমোথেরাপির জন্য যখন ঐন্দ্রিলার চুল কেটে ফেলতে হয়, মাথা কামিয়েছিলেন তিনিও । তাঁর নিঃশব্দ ভালোবাসার মধুর শব্দ যেন কয়েক যোজন দূরেও সুরের 'সৌরভ' ছড়িয়েছে ।
জীবন লম্বা নয়, মহৎ হওয়া প্রয়োজন । আনন্দ সিনেমায় রাজেশ খান্নার সেই সংলাপ যেন নিজের জীবন দিয়ে বোঝালেন ঐন্দ্রিলা । যে কাজের জন্য দর্শক একজন অভিনেত্রীকে মনে রাখেন, তা হয়তো বহরমপুরের মিষ্টি'র ঝুলিতে নেই । মাত্র 24 বসন্ত পেরনো ঐন্দ্রিলা সে অর্থে কেরিয়ার বিস্তৃত করার সুযোগ পেলেন কই ? কিন্তু রেখে গিয়েছেন অফুরন্ত প্রাণশক্তি, লড়াইয়ের নিদর্শন । ধারাবাহিকের চরিত্র হিসেবে নয়, অভিনেত্রীকে বাস্তব চরিত্র হিসেবেই মনে রাখবেন সকলে ।
ঠিক যেভাবে সব্যসাচী মনে থাকবেন প্রেমিক হিসেবে । 1 নভেম্বর, ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী । টানা 20 দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষপর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেন । তাঁর সঙ্গেই হাসপাতালে রাত কেটেছে তাঁর প্রিয়জনের । ফেরা কঠিন জেনেও সকলে প্রার্থনা করেছেন, মিরাকেল ঘটুক । সব্যসাচীর বুকেই ফিরুক ঐন্দ্রিলা । শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রার্থনা বিফলে গিয়েছে ।
আরও পড়ুন: আফতাবের নৃশংতাতেও প্রেমের 'সৌরভ' ছড়াচ্ছেন বিতুপান-সব্যসাচী
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, আমি মৃত্যুর চেয়ে বড় । সব্যসাচী দেখালেন, ভালোবাসা শোক-অসহায়তার থেকেও বড়। যা মৃত্যুতেও স্তব্ধ হয় না । তার ব্যাপ্তি চাওয়া-পাওয়ায় অনেক উর্ধ্বে । প্রতিটা লড়াইয়ের মুহূর্তে শক্ত করে ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে থাকা থেকে ঐন্দ্রিলার পা'য়ে চুম্বন এঁকে শেষ বিদায়, যেন তারই প্রতিচ্ছবি ।