কলকাতা : গাজনের মাস। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন অর্থাৎ নীলষষ্ঠী অবধি ব্রত । এরপর বাবার মাথায় জল- এই চিত্র আজও বহাল বাঙালি সংস্কৃতিতে । আজও জেলা, শহর, শহরতলির আনাচে কানাচে দেখা মেলে গাজন উৎসবের, দেখা মেলে গাজন সন্ন্যাসীদের । আরেকটু পিছনে হাঁটলে দেখা যাবে, বন্তি ঝাঁপ, বান ফন্ডা, ছাদক ঘূর্ণি, জ্বলন্ত কাঠকয়লার উপর খালি পায়ে হাঁটা সবই ছিল তৎকালীন ট্রেন্ড । একইভাবে ছিল নীলষষ্ঠীর দিনে শিবের মাথায় জল ঢেলে গঙ্গাস্নান সেরে পালকিতে করে কোনও সতীসাবিত্রীর ঘরে ফেরা ।
ঘেরাটোপে ঢাকা পালকির পর্দা সরিয়ে তাঁকে দেখার উপায়টুকু নেই । চোখ আটকে যেত পরনে লাল রংয়ের হাতকাটা মেরজাই, হাতে সোনার কাঁকন, কানে মোটা মাকড়ি পরা বেহারার দলের দিকেই । পালকি কাঁধে ছুটছে তাঁরা । পিছনে পিছনে লাঠিসোঁটা নিয়ে ছুটছে দারোয়ান । পালকির ঘেরাটোপ দেখেই বোঝা যেত কোন বাড়ির পালকি যাচ্ছে । উল্লেখ্য, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পালকির ঘেরাটোপ ছিল টুকটুকে লাল রঙের । পাড়ের রং হলুদ ।
সেই সময় সময় চৈত্র সংক্রান্তির দিনে কেরাঞ্চিতে চড়ে চড়কের গাজন দেখতে যেত নর্তকীর দল । কেরাঞ্চি ছিল তখনকার কলকাতায় জনপ্রিয় গাড়ি । এই মেলায় তখন গৃহস্থ ঘরের মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল । শুধু গাজন নয়, বাইরের অন্য অনেক উৎসব আনন্দে মেতে উঠতেই বাধা ছিল তাদের । অন্দরে তারা তাই নিজেদের সাজগোজ, খাওয়াদাওয়া, দেদার আনন্দ মিটিয়ে নিতেন ।
আজ সময় পাল্টেছে । এখন মেয়েরাই পালকি ছেড়ে ফুটপাথে হেঁটে চৈত্রসেলে কেনাকাটা করেন, শপিং মলে ঢুকে ইচ্ছেমতো উইন্ডো শপিং করেন । ফ্যাশন কনশাস নারী, গ্ল্যামার দুনিয়ার নারী মেতে ওঠেন ফটো শ্য়ুটে । গরমের ফ্যাশন ফান্ডা নিয়ে ভরে ওঠে ম্যাগাজিনের পাতা, ছয়লাপ হয় সোশ্যাল মিডিয়া । বাংলায় দোকানগুলিতে পয়লা বৈশাখের দিনে 'হালখাতা' এক চিরাচরিত আচার (Bengali New Year Celebration)। এই সময়ে বুটিকগুলিতেও আসে গ্রীষ্মকালীন নিত্যনতুন রেঞ্জ ।
আরও পড়ুন : নববর্ষে নতুন গান নিয়ে হাজির রূপঙ্কর-লোপামুদ্রা-শ্রীকান্তরা
এক্ষেত্রেও পিছনে হাঁটলে দেখি, হুতোমের বাবুরা নববর্ষে চুনোট করা ধুতি, গিলে করা পাঞ্জাবি পরে লাল পাড়ায় যেতেন নর্তকীর দরবারে। সেই বাবুরাই আজ ধুতির কোঁচা সামলাতে হিমশিম। তাই তাঁরা এদিন ফিনফিনে পাঞ্জাবি আর চুড়ি পাজামা গলিয়ে রওনা দেন পার্কস্ট্রিটের বারে । বারবার দোষের ভাগী পার্কস্ট্রিটই কেন? ডানলপ থেকে বেহালা সর্বত্রই তো ফ্যামিলি বার কালচার । সেখানে নাচ আছে, গান আছে, সুরা আছে, খুশির তুফান আছে, যা কিছু কিনতে চাও কেনো না...। শুধু বাঙালি তুমি হারিয়ে যেও না।