কলকাতা: বিকেল থেকে রাত-বাংলা ধারাবাহিকে মজে থাকে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা । খড়ি থেকে টুম্পা, মিঠাই থেকে জগদ্ধাত্রী কিংবা গুড্ডি দর্শকের ঘরের মেয়ে তারা । পর্দায় চরিত্রগুলিকে ভালোবেসে তাদের আপন করে নেয় দর্শক। কিন্তু সেই চরিত্রদের বাস্তব জীবন, তাদের ভালোলাগা, খারাপ লাগা, আগামী কাজ সবকিছু যাঁরা আমজনতার সামনে তুলে ধরেন তাঁরা সাংবাদিক । যে কোনও ধারাবাহিকের গল্পের আগাম খবর, টিআরপি'র ওঠানামার খবর দিয়ে থাকেন সাংবাদিকরাই । সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু ধারাবাহিকে এই সাংবাদিকদেরকেই বারংবার গল্পে দেখানো হয় খুব খাটো করে ।
সম্প্রতি একটি ধারাবাহিকে দেখানো হয়েছে, এক সাংবাদিক গল্পের নায়িকার উদ্দেশ্যে বলছে, "আপনি মাতৃত্ব নিয়ে এত বড় বড় কথা বলছেন, আপনি নিজেই তো মা হতে পারবেন না আমাদের কাছে খবর আছে ।" সাধারণত এহেন খবর সাংবাদিকদের কাছে থাকে না । তার উপরে সাংবাদিকরা এই জাতীয় প্রশ্ন সর্বসমক্ষে সাধারণত কাউকে করেন না । করলেও করেন একান্ত ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে ।
বলা বাহুল্য, শুধু সাংবাদিক নয়, অন্যান্য পেশাকেও খাটো করে দেখানোর প্রচেষ্টা চলছে বাংলা ধারাবাহিকগুলিতে । এতে সেই পেশার মানুষটির পাশাপাশি বেশি খাটো করা হয় সেই পেশাটিকে । একটি পেশায় ভালো এবং মন্দ দুই ধরনের মানুষ থাকেন । কোনও পেশাকে অপমান করার অধিকার কারোর নেই । সংবাদ মাধ্যম কখনও কোনও পেশার মানুষকে সরাসরি 'চোর', 'ঘুষখোর' বা 'ধর্ষক' বলে আখ্যায়িত করে না । 'অভিযোগ উঠেছে' এই জাতীয় বক্তব্যে খবর পরিবেশন করে থাকে । কখনও দেখানো হচ্ছে একজন ডাক্তার কিডনি পাচারের সঙ্গে জড়িত । কিংবা টাকার বিনিময়ে কোনও ল্যাব থেকে টেস্টের মিথ্যে রিপোর্ট সরবরাহ হচ্ছে । নার্স টাকার বিনিময়ে রোগীকে ভুল ইঞ্জেকশন দিচ্ছেন । এহেন ঘটনা দুনিয়ায় ঘটে না তার গ্যারান্টি যেমন কেউ দিতে পারে না তেমনি এহেন ঘটনা যখন সরাসরি টিভিতে দেখানো হয় তখন মানুষের ডাক্তার, নার্স, সাংবাদিকের প্রতি আস্থা চলে যায় । তাঁদের প্রতি সম্মান হারায় আমজনতা ।
এই ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজক বলেন, "দুর্নীতি সব পেশাতেই আছে । তাই গল্পের খাতিরে দেখানো হয় । তবে সেক্ষেত্রে এমন কিছু দেখানো উচিত না যা একটা পেশাকে আঘাত হানে ।" পরিচালক-অভিনেতা অনিন্দ্য সরকার বলেন, "সিনেমা সিরিয়াল হল সমাজের দর্পণ । যা দেখি তাই তুলে ধরা হয় । তবে একজনকে খারাপ দেখানোর পাশাপাশি আরেকজনে ওই একই পেশার মানুষকে ভালো দেখানো উচিত যিনি খারাপ মানুষটিকে খারাপ কাজে বাধা দেবেন । তা হলেই আর সমস্যা থাকে না । এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতেই হয়, আগে কাজের যে নিষ্ঠা আর আন্তরিকতা ছিল তা আজ নেই । একটা ধারাবাহিক দোল নিয়ে এপিসোড দেখালে আরেকটা ধারাবাহিকও সেটা নিয়ে মেতে ওঠে । আমি বলব ওই সময়ে যদি কোনও সিরিয়ালে দেখানো হয় একটা পরিবার দোল খেলছে না কোনও কারণে সেটা দর্শক আরও বেশি করে নেবেন । সুতরাং এই ব্যাপারে একটু যত্নশীল হলে বাংলায় কাজটা ভালো হবে বলে আমার বিশ্বাস ।'
স্বনামধন্য পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, "একদিক থেকে দেখতে গেলে এগুলো দেখলে মানুষ মজাও পায় । কারণ আজ যে সব ঘটছে চারদিকে তার সঙ্গে মিল খুঁজে পায় । আমরা এখন টিভি খুললে কোনও ভালো খবর দেখিনা । চুরি জোচ্চুরির খবরই দেখি । আমরা নিজেরাই কদর্য হয়ে গেছি আসলে । এখন আমদের বক্তব্য এটাই যে, চুরি করো ধরা পোড়ো না । এই আর কি । আর যারা ধারাবাহিকে বিভিন্ন পেশা নিয়ে নানান জিনিস দেখায় যেটা এই প্রতিবেদনের বিষয় তারাও চারদিকে যা ঘটছে সেখান থেকেই সূত্র নেয় । তবে, আমি মনে করি এগুলো ধারাবাহিকে না দেখানোই ভালো । কোনওকিছুই অজানা নয় মানুষের। ফলাও করে বলার বা দেখানোর দরকার নেই।"
আরও পড়ুন: নতুন গান 'সনক' নিয়ে আপত্তি ওঠায় ক্ষমা চাইলেন বাদশা