কলকাতা, 18 জুন : ফের বাড়ছে করোনার প্রকোপ । পরিস্থিতি আয়ত্তে আসার পর খুলেছিল স্কুল-কলেজ ৷ ওয়ার্ক ফ্রম হোমের বদলে শুরু হয়েছিল দশটা-পাঁচটার অফিস । বাড়তি সাবধানতা মেনেই চলছে কাজকর্ম । শ্যুটিং ফ্লোরগুলিতেও করোনার আবহে তৎপরতার সঙ্গে মানা হত সামাজিক বিধি । এমনকী সাংবাদিকরা ধারাবাহিকের সেটে খবর জোগাড় করতে গেলে মাস্ক ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে দেওয়া হত না তাঁদের । পরে করোনার প্রকোপ কমলে সেই বিধিনিষেধ উঠে যায় ।
করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও কোনও অভিনেতার অসুস্থতার খবর কানে আসেনি । এর আগে করোনার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ে দীর্ঘদিন শ্যুটিং বন্ধ থাকায় টেকনিশিয়ানদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় । বহু অভিনেতা বদলে ফেলেছিলেন পেশা । পরে সামাজিক বিধি নিষেধ মেনে শুরু হয় সিনেমা-সিরিয়ালের শ্যুটিং।
করোনার সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী । এবার সব দিক মাথায় রেখে কীরকম সাবধানতা মেনে চলা হচ্ছে ফ্লোরগুলিতে ? নাকি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে বলে সাবধানতায় ঢিলেমি এসেছে (Actors on COVID Situation in Shooting Floor) ?
অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "করোনা তো একেবারেই কমে গিয়েছিল । মৃত্যুও নেই সেভাবে কলকাতায় । মানুষ তো সারাজীবন মুখে মাস্ক পরে ঘুরতে পারে না । তাও মাস্ক পরে থাকার চেষ্টা করছি । তবে, আস্তে আস্তে এই অভ্যেসটা কোথাও গিয়ে কমেছে, এটা সত্যি কথা । যেহেতু আজ আর করোনা সেভাবে হচ্ছে না, তাই ফ্লোর স্যানিটাইজিং-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । তার জন্য অসুবিধে হচ্ছে না । কারণ এই দু-তিন মাসে আমাদের ফ্লোরে কারও জ্বর-সর্দি-কাশি দেখিনি । কারও শরীর খারাপ হলে তা দেখে তো বোঝা যায় । এই ক'দিনে সেরকম দেখিনি কিছু । আমরা সবাই নর্মাল লাইফ লিড করছি । ইন্টিমেট সিন করোনার পর থেকে আর হয় না সিরিয়ালে । সেই দায়িত্ব চ্যানেল এবং হাউজ নিয়েছে । খুব বেশি কাছাকাছি আসতে হয় না চরিত্রদের । এই সব নিয়ম বিধি মেনেই আমরা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এসেছিলাম । এখন আবার আক্রান্তের হার বাড়ছে ঠিকই, তবে মৃত্যুর হার কম । নেই বললেই চলে । এটা একটা ভাইরাস । ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো । আমরা কি শরীর খারাপ হলে বাড়ি থেকে বেরই না ? নাকি কাজ করি না ? এটা থাকবে, এটা নিয়েই থাকতে হবে আমাদের ।"
আরও পড়ুন : চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, সংক্রমণ 300'র দোরগোড়ায়
এ প্রসঙ্গে দ্রোণ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, "কোভিডের দুটো ঢেউ আমরা পেরিয়ে এসেছি ৷ করোনা তো সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো । আসছে, যাচ্ছে, ফের আসছে । এখন প্রত্যেকেই এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি । ভ্যাকসিন, বুস্টার সব নিয়ে ফেলেছি সুস্থ থাকার জন্য । সবই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে এখন । একইভাবে শ্যুটিং ফ্লোরেও আমরা স্বাভাবিকত্বে ফিরে এসেছি । স্যানিটাইজিং নিয়মিত করা হয় । তবে ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স আর মেনে চলা হচ্ছে না । চলাও যাবে না আমাদের কাজের ক্ষেত্রে । স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তো আসতেই হবে । এ ভাবে কতদিন চলবে ? এর মধ্যেই সাবধানে থাকতে হবে ।"
অভিনেত্রী রাত্রি ঘটক জানান, "শ্যুটিংয়ে মাস্ক পরে আসছে না কেউই । একইভাবে ফ্লোরে স্যানিটাইজিং-ও হচ্ছে না । কিন্তু শুধু যে ফ্লোরে স্যানিটাইজিং হচ্ছে না, তা নয় । কোথাওই হচ্ছে না । তাই ইউনিটকে দোষ দিয়ে লাভ নেই । আমরা নিজেরা কি সচেতন ? অন্যকে দোষ না দিয়ে নিজেকে সাবধান থাকতে হবে । 'নো মাস্ক নো এন্ট্রি' ব্যাপারটা উঠে গিয়েছে । আর্টিস্টদের সেজেগুজে মাস্ক পরে থাকাটা তো সত্যিই সম্ভব নয় । আবার টনক নড়লে স্যানিটাইজেশন হবে । তখন সবাই আবার সচেতন হবে ।"
আরও পড়ুন: 95% মানুষ মাস্ক পরছে না, মুম্বইতে করোনার বাড়বাড়ন্তে চিন্তিত মানসী
ওদিকে মুম্বইতে শ্যুটিং ফ্লোরের সাবধানতা নিয়েও কথা বলেছেন অভিনেত্রী মানসী সেনগুপ্ত । এক্ষেত্রে অবশ্য অভিনেতাদের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন তিনি । সেই দলে নিজেও আছেন বলে অকপটে জানান তিনি । সেখানে 95% মানুষ মাস্ক পরছেন না ৷ ফ্লোরে সবাই মাস্ক পরেই থাকে । অভিনেতাদের মেক আপ করে থাকতে হয় । সেক্ষেত্রে বাকিরা যদি মাস্ক পরে থাকে তাহলে আক্রান্তের হার কমবে বলে দাবি তাঁর ।