কলকাতা, 6 সেপ্টেম্বর: একটা সময় গায়ের রং শ্যামলা বলে সামাজিক মাধ্যমে ট্রোলড হতে হয় অভিনেত্রী শ্রুতি দাসকে । আজও শুনতে হয় সেইসব কথা । তবে, অন্যভাবে, অন্য কায়দায় । এবার মহালয়ায় কালী চরিত্রের জন্য তাঁকে বেছে নিয়েছে একটি চ্যানেল ৷ তারপর থেকেই সোশাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে ট্রোলিং ৷ নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, চ্যানেল তাঁর মতো 'কালো' মেয়েকে বেছে নিয়েছে মেকআপের খরচ বাঁচাতে (Shruti Das on Trolling)৷
কাটোয়ার মেয়ে শ্রুতি দাস । নাচ করেন, গানও গান । অভিনয়ের প্রতি ইচ্ছেটা ছিল মনের কোনে । আর তাই মনের কথা শুনে কাটোয়া থেকে কলকাতায় আসেন 'ত্রিনয়নী' ধারাবাহিকের অডিশন দিতে । সেদিন শহরে ছিল ব্রিগেড সমাবেশ । ঘেমে নেয়ে ট্রেনে চড়ে একেবারে চিরে চ্যাপ্টা হয়ে ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োতে পৌঁছন শ্রুতি । যথারীতি নিয়োগ কর্তাদের কাছে পাত্তা পান না শামাঙ্গী কন্যে । তবে পরিচালক সাহানা দত্ত মাথা ঘামাননি তাঁর রং নিয়ে ৷ তাঁকে মুগ্ধ করেছিল অভিনেত্রীর গুণ ৷ আর ব্যস, গৌরব রায়চৌধুরীর সঙ্গে জুটি বেঁধে টেলিজার্নি শুরু হয়ে যায় তাঁর । বাঙালি দর্শকের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন নয়ন নামে(Shruti Das on Kali Controversy) ।
এরপর 'দেশের মাটি' ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করেন শ্রুতি । সেই সময়েই সামাজিক মাধ্যমে নানা কথা শুনতে হয় তাঁকে অকারণে । চুপ ছিলেন না শ্রুতি। চালিয়ে গিয়েছেন প্রতিবাদ । এমনকী কুমন্তব্যকারীদের কোর্ট পর্যন্ত টেনে আনতে বাধ্য করেছেন অভিনেত্রী । ধারাবাহিকটি শেষ হওয়ার পর আর কোনও ধারাবাহিকে এখনও দেখা মেলেনি তাঁর । তবে হ্যাঁ, এবার রয়েছে এক জবর খবর । কালী রূপে একটি চ্যানেলের মহালয়ার অনুষ্ঠানে ধরা দেবেন শ্রুতি ।
এই ব্যাপারে শ্রুতির কাছে জানতে চাওয়া হয়, মহালয়ার জন্য কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করলে?শ্রুতি বলেন, " দীর্ঘ তিন বছর হল নাচের চর্চায় নেই । খানিকটা অবহেলা, খানিকটা অন্য কাজের চাপ, পার্সোনাল কাজের প্রেশার, কাজ না পাওয়ার প্রেশার সব মিলিয়ে নাচটা হয়ে ওঠে না ৷ তবে, কালী চরিত্রের জন্য সেরকম কোনও প্রস্তুতি নিতে পারেনি ৷ লাগেওনি বলা যায় । কেননা নাচটা আমি ছোট থেকেই করি । তবে হ্যাঁ, অনুশীলনের অভাবে দমের কষ্ট হয় আজকাল । অনুশীলন করতে পেরেছি মাত্র একদিন । আমি যতদূর জানি, এখানে যাঁরা দেবী হয়েছেন তাঁরা সকলেই অনুশীলনের জন্য একটাই দিন পেয়েছেন । আমি লাকি যে কাশ্মীরাদিকে কোরিওগ্রাফার হিসেবে পেয়েছি । বছর ছয়েক আগে কাটোয়াতে ওয়ার্কশপ করেছিলাম দিদির কাছে । তখন ত্রিনয়নীতে আসিওনি । বিশ্বাস ও ভরসা করেন উনি আমায় । নাচটা কাশ্মীরাদিই তোলান । 'দেবী দশমহাবিদ্যা'-র প্রোমোর রেসপন্স ভালো । সত্যি ভাবিনি এত ভালো রেসপন্স পাব (Shruti Das on Social Media)।"
আরও পড়ুন: আগামী জানুয়ারিতেই বিয়ের পিঁড়িতে আথিয়া রাহুল?
একটা সময়ে তাঁর গায়ের চাপা রং নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল সোশাল মিডিয়া । আর এবার মহালয়াতেও মা কালী রূপেই হাজির হচ্ছেন তিনি ৷ ফের শুরু হয়েছে কটাক্ষ ৷ তাঁকে কি অন্য কোনও দেবী রূপে আনা যেত না? আর সোশাল মিডিয়ায় এই ধরনের নানা অকথা কুকথাকেই বা কীভাবে দেখছেন তিনি? শ্রুতির দাবি আগে তো আরও বেশি কথা হত তাঁকে নিয়ে ৷ এখনও হয় তবে তা কিছুটা কম ৷ তিনি বলেন, "এখন অন্য কায়দায় নানারকমের মন্তব্য করা হয় । বলা হয় প্রতিবাদী দিদি জেলে ভরে দেবে । আমি লড়াই জারি রেখেছি। যারা কুমন্তব্য করেছে তারা তো অনেকেই কলকাতায় কোর্টে হাজিরা দিতে আসে।"
অভিনেত্রী আরও জানান, সোশাল মিডিয়ায় শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত দু'রকমের মানুষই থাকে। শিক্ষিতরা কুমন্তব্য এড়িয়ে যায় । পাত্তা দেয় না। অর্ধশিক্ষিতরা খুব বেশি কিছু বলতে চায় না । অশিক্ষিতরাই প্রতিবাদ করে । আর তাদের কথার প্রতিবাদ করলেই তাকে 'কল তলার ঝগড়ুটি' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । কিন্তু প্রতিবাদটা দরকার ।
মা কালী প্রসঙ্গে শ্রুতির সাফ কথা, মা কালীর চরিত্র যিনি করবেন তাঁকে নাচ জানতেই হবে । ফর্সা বা কালো এই রং নিয়ে মা কালীর চরিত্র নির্বাচন করা হয় না কখনও । তাঁর কথায়, "একবার একটা কমেন্ট এসেছিল যে এবার চ্যানেল নাকি খরচা বাঁচানোর জন্য শ্রুতিকে নিয়েছে কালী রূপে । যাতে কালো মেক আপ বেশি না করতে হয় । তাদের জানা দরকার, মা কালীকে যে রূপে আমরা দেখি আমি নিশ্চয় ততটাও কালো নই । সাধারণ বাঙালি শ্যামলা মেয়ের মতো রঙ আমার । আমার মনে হয় যারা অশিক্ষিত তারাই এসব মন্তব্য করে । কালী চরিত্র যে কেউ করতে পারে।"