কলকাতা, 31 জুলাই: অমৃতলোকে পাড়ি দিয়েছেন প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী নির্মলা মিশ্র । তিনি 'পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি'র উপদেষ্টা পরিষদ এবং 'বাংলা সঙ্গীতমেলা' কমিটির কার্যকরী সমিতির সদস্যাও ছিলেন । তাঁর প্রয়াণে শোকবার্তা জ্ঞাপন করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও । নির্মলা ভালোবাসতেন সেজেগুজে থাকতে । ছোট ছোট চুল, কপালে বড় লাল টিপ আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক- তাঁকে নিয়ে কোনও কথা বলতে গেলে এক লহমায় বাঙালির মনে পড়ে তাঁর সেই পরিপাটি সাজুগুজুতে হাসিমাখা মুখখানি । যেমন ভাল গাইতেন তেমন ছিলেন মিষ্টি স্বভাবেরও ।
নবাগত শিল্পীদের উৎসাহ দিতেন তিনি । এই প্রজন্মের সঙ্গীত শিল্পী সর্বজিৎ ঘোষ (Sarbajit Ghosh Opens up About Nirmala Mishra)বলেন, "আমার সাগরিকা মিউজিক থেকে পুজোর গানের অ্যালবাম 'মাই লাভ' প্রকাশের দিনে হাজির ছিলেন বনশ্রী সেনগুপ্ত, নির্মলা মিশ্র, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় । ২০১৪ সাল । নির্মলা আন্টির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তোচন (ঘোষ) জেঠুর মাধ্যমে । আমার পুজোর গানের অ্যালবামের সিডি রিলিজে নির্মলা আন্টি এসেছিলেন আউট্রাম ক্লাবে । প্রথম আলাপেই পুত্রস্নেহে কাছে টেনে নিয়েছিলেন আমায় । অনেক উপদেশও দিয়েছিলেন ।"
![Sarbajit Ghosh on Nirmala Mishra](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/nirmalamishra_31072022115815_3107f_1659248895_743.jpg)
সর্বজিৎ-এর কথায়, "একটা ঘটনা বলি । সময়টা আমার সঙ্গীত-জগতে পদার্পণের শুরুর দিক । এখনকার তুলনায় আমার গলা তখন ছিল অনেক বেশি পাতলা । সিডি রিলিজের দিন উনি প্রথম আমার গান শোনেন । 'স্নিগ্ধ বাতাসে' নামক গানটি চালানো হয়েছিল । প্রথম অন্তরা শুরু হবার আগে উপস্থিত সকলে অনুরোধ করেন যদি আমি অন্তরার শুরু থেকে তখনই গলা মেলাই । সেদিন আবার আমার গলা ছিল ঠাণ্ডা লেগে বসা । দু-তিন দিন ধরেই সর্দি-কাশিতে খুব ভুগছিলাম । তাই গলাটা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটা বেশি ভারী ছিল । সেই অবস্থাতেই সবার অনুরোধ উপেক্ষা না করে ভারী গলায় অন্তরা থেকে মাইকে গাওয়া শুরু করলাম । কিন্তু চার লাইন গাইতে না গাইতেই নির্মলা আন্টি রীতিমতো "রেকর্ডিংটা বন্ধ করো" বলে একপ্রকার চেঁচিয়েই উঠলেন । আমিও চরম অপ্রস্তুত । কী হলো হঠাৎ?কিন্তু আন্টি বকলেন না । অবাক স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন "রেকর্ডিংয়ের গলাটা কি তোমারই?" আমি 'হ্যাঁ' বলাতে উনি আরো বিচলিত হয়ে বললেন "কিন্তু ওই গলাটা কতো পাতলা । এখন যে গাইলে শুনলাম, কী ভারী গলা তোমার । কি ওজন গলায়, বাবা! শ্রদ্ধেয় হেমন্তদার কথা মনে পড়ে গেল ! কিন্তু রেকর্ডিংএ এতো পাতলা লাগছে কেন?"
সর্বজিৎ আরও বলেন, "সেই সময় আমার মা ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন । মা নির্মলা আন্টিকে বললেন দিদি, আসলে ওর গত দু-তিন দিন খুব ঠাণ্ডা লেগেছে, তাই গলাটা এরম ভারী । নির্মলা আন্টি তখন হেসে আমায় বললেন তা হলে আমি তোমায় আশীর্বাদ করি যাতে প্রতিবার রেকর্ডিংয়ের আগে তোমার এরমই ঠাণ্ডা লাগে আর গলা ভারী হয়।"
আরও পড়ুন: স্তব্ধ মহাজীবন! ফিরে দেখা নির্মলার সুরেলা সফর
সর্বজিৎ আরও বলেন, "পরে বুঝেছিলাম উনি কী বলতে চেয়েছিলেন । এবং সেদিনের পর থেকেই আমি নীচু স্কেলে ও নিচের অক্টেভে বেশি করে রেওয়াজ করা শুরু করি, এবং পরবর্তীকালে আমার গলা এবং গায়কী, দুটোরই ওনেক উন্নতি হয় । তারপর থেকেই মাঝে মধ্যে ওঁর সঙ্গে দেখা হত। বেশ কয়েকটা অনুষ্ঠানে দুজনে একই মঞ্চেও উঠেছি অতিথি হেসেবে।" শিল্পীর প্রতি শোকজ্ঞাপন করে সর্বজিৎ বলেন, "বিগত অনেকদিন ধরেই আন্টির খুব শরীর খারাপ ছিল। গতকাল রাতে খবরটা পাই। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।"