কলকাতা, 3 জানুয়ারি: প্রয়াত সুমিত্রা সেন (Sumitra Sen Passes Away)৷ বছরের শুরুতেই সংগীতের দুনিয়াকে এক প্রকার দেউলিয়া করে চিরবিদায়ের সুর বাজিয়ে সুরের আকাশে পাড়ি দিলেন সুমিত্রা সেন । আজ অভিভাবকহীন তাঁর সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'ত্রিবেণী' (Eminent Rabindra Sangeet Artist Sumitra Sen)। রবীন্দ্রসংগীতের জগতে আরেক নক্ষত্রপতন ঘটে গেল মঙ্গলবার সকালে ৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 89 বছর (Sumitra Sen Dies At The Age of 89) ৷
অতি সংকটজনক অবস্থায় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুমিত্রা সেনকে গত 21 ডিসেম্বর দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় । চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী তিনি ভুগছিলেন ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ায় । বর্ষীয়ান শিল্পীর শারীরিক অবস্থা সংকটজনক বলে জানান চিকিৎসকরা। সোমবার মা'কে সপ্তপর্ণীতে ফিরিয়ে আনেন শ্রাবণী এবং ইন্দ্রাণী সেন। এরপর মঙ্গলবার সকালেই মাতৃহারা হলেন সংগীতজগতের দুই গুণী কন্যা শ্রাবণী সেন এবং ইন্দ্রাণী সেন ।
রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর সুমিত্রা সেন দায়িত্ব পান রবীন্দ্র সদনের ৷ উল্লেখ্য, নতুন সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে 11 জনের নতুন কমিটিও গঠন করা হয় রবীন্দ্র সদনে । কমিটিতে নাম ছিল জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, পার্থ ঘোষ, নচিকেতা চক্রবর্তী, অলকানন্দা রায়, বনশ্রী সেনগুপ্ত, সন্ধ্যা রায়, যোগেন চৌধুরী, জয় গোস্বামী, মোহন সিং এবং স্মিতা বক্সীরও । আর এঁদের শীর্ষে ছিলেন সুমিত্রা সেন । রবি ঠাকুরের অঙ্গণেই তাঁর নিত্য আনাগোনা । রবি ঠাকুরের গানে তাঁর অনুভবী কণ্ঠ শ্রুতি সুখকর সুমিষ্ট সতেজতা, সমৃদ্ধ উচ্চারণ বরাবরই মুগ্ধ রবীন্দ্র সংগীত পিপাসুদের (Career of Rabindra Sangeet Artist Sumitra Sen)।
ছোটবেলাতেই 'গীতবিতান'-এ গান শেখা শুরু তাঁর । 'বৈতানিক'-এও সংগীতের পাঠ নেন । তবে, প্রাথমিক পাঠ মায়ের কাছেই । পরবর্তীকালে শিক্ষাগুরু হিসেবে অনাদি দস্তিদার, প্রদ্যুত নারায়ণ, সুরেন চক্রবর্তী, শ্রীমতি রাধারানি, সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়, ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের ৷ এরপর ধীরে ধীরে প্রথিতযশা সুমিত্রা সেন হয়ে ওঠা ৷ প্রথম রেকর্ডিং শুরু কিন্তু রবীন্দ্রসংগীত নয়, নজরুলগীতি দিয়ে ৷ 1951 সালে দু'টি নজরুলগীতি 'গোঠের রাখাল বলে দে রে' আর 'বেদনার বেদী তলে' দিয়ে শিল্পী হিসাবে সুমিত্রার আত্মপ্রকাশ ৷ তখনও অবশ্য তিনি সুমিত্রা দাশগুপ্ত ৷ ছয়ের দশকের ছবিতেও গলা দিয়েছিলেন শুধু উত্তমকুমারের অনুরোধে ৷ ছবির নাম ছিল 'শুধু বরনারী' ৷ পরবর্তীতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ভি বালসারাদের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন তিনি ৷ হয়েছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধানও ৷
আরও পড়ুন: বছরের শুরুতেই নক্ষত্রপতন ! প্রয়াত বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুমিত্রা সেন
'এইচএমভি' থেকে 'লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড' প্রাপ্তিও খুব তাড়াতাড়ি ঘটে গিয়েছিল তাঁর জীবনে । একটা সময়ে নিয়মিত গাইতেন আকাশবাণীতে। এ ছাড়া কলকাতা দূরদর্শনের শুরুর দিন থেকেই তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল সেখানে । এই সবের সঙ্গে স্বামী অনিল সেনের প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'ত্রিবেণী' এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিল তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র । আজ সেই 'ত্রিবেণী'ও অভিভাবকহীন ।