ETV Bharat / entertainment

Musicians on Classical Music: নতুন প্রজন্ম আগ্রহ হারাচ্ছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে, কী বলছেন শিল্পীরা? - নতুন প্রজন্ম আগ্রহ হারাচ্ছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে

ধ্রুপদী সংগীতে (Classical Music) কি আগ্রহ হারাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম ৷ নাকি তাদের মন মোহিত করতে পারছে ক্লাসিকাল মিউজিক? কী বলছেন প্রথিতযশা শিল্পীরা?

Musicians Share Their Thoughts on Classical Music
নতুন প্রজন্ম কি আগ্রহ হারাচ্ছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে? কী মত শিল্পীদের?
author img

By

Published : Dec 3, 2022, 4:37 PM IST

কলকাতা, 3 ডিসেম্বর: কথায় আছে সঙ্গীতের অপর নাম সাধনা ৷ আর ধ্রুপদী সংগীত যে কতোটা কঠিন সাধনার ফসল তা না বললেও চলে ৷ তবে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে থেকে আসতে আসতে উধাও হয়ে যাচ্ছে সেই সাধনার নেশা । তাদের মূল আকর্ষণ কম সময়ের গানের দিকে । কিন্তু কেন সামনে আসছে এই ছবি? তবে কি বাংলার সংস্কৃতিকে ক্রমেই ঢেকে দিচ্ছে পশ্চিমী সংস্কৃতি? এই নিয়েই মুখ খুললেন প্রথিতযশা সংগীত শিল্পীরা (Musicians Share Their Thoughts on Classic Music)৷

এই বিষয়ে বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গান জিনিসটা বর্তমানে সকলের কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে(Subhamita Banerjee on Classical Music) । চাইলেই যে কেউ রেকর্ড করে ফেলতে পারছে, মান বিচার হচ্ছে না । যে একটু ভাল গান করতে পারে সেই গেয়ে ফেলছে। কিন্তু এটার জন্য যে একটা প্রথাগত শিক্ষা দরকার, সাধনা দরকার সেটা কেউ বুঝছে না । হয়তো সেই ইচ্ছা কিছুদিন পরেই কেটে যাচ্ছে । ফলে, আর একজন রশিদ খান, আর একটা কৌশিকী চক্রবর্তী তৈরি হচ্ছে না । শ্রেয়া ঘোষাল, অরিজিৎ সিং এমনকি আমিও রিয়েলিটি শো থেকেই উঠে এসেছি । শিক্ষা নিয়ে উঠে এসেছি। এখন রিয়েলিটি শো শুধুমাত্র শো হয়েই গিয়েছে, প্রতিযোগিতা আর নেই । আমি খুবই হতাশ ।"

নিজে একটি রিয়েলিটি শোয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও একই মত পোষণ করেছেন জয় সরকারও (Joy Sarkar on Classical Music) । তবে শুধু গান নয় সিনেমাতেও এর প্রভাব পড়ছে । তাঁর কথায়,"আমার মনে হয় মানুষের ধৈর্য্য কমে গেছে । বসে একটা গোটা সিনেমা দেখার ধৈর্য্য মানুষের নেই । বাড়িতে কেউ ওয়েব সিরিজ দেখলে একটা এপিসোড পুরোটা একবারে দেখেন না । একটু পজ করে কাজে ডুবে যায় পরের দিন হয়তো আবার দেখে । একটা ভালো জিনিস শিখতে গেলে বা দেখতে গেলে যে ধরনের সংকল্প দরকার সেটা হারিয়ে যাচ্ছে । মানুষ প্রচণ্ড দৌড়চ্ছে । গান বাজনার ক্ষেত্রে নতুন একটা জিনিস চালু হয়েছে আমি নিজেও কাজ করেছি সেটা হল 1 মিনিটের গান । ক্লাসিকাল মিউজিক শুনতে গেলে সে মানসিক স্থিতি দরকার সেটার অভাব ঘটছে । সবথেকে বড় কথা বর্তমান জেনারেশন খুব ভালো গান করছে । কিন্তু মেলে ধরার মত মঞ্চ নেই ।"

পণ্ডিত তন্ময় বোসের কথায়, "ধ্রুপদী সংগীত করতে হলে তার চিন্তা অনেক বেশি । মনকে শান্ত রাখতে হয় । ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় । পারিবারিক সাপোর্ট দরকার হয় । বর্তমান যুগের যুব সমাজের একটা চিন্তা রোজগার। ক্লাসিকাল ঘরানার গানের একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে সমাজে। সব সময় রোজগার করার চিন্তা থাকলে চলবে না। ফলে সব সময় বাচ্চাদের দোষ দেওয়ায় যায় না । এটা নিয়ে এগোনোর জন্য যে মনের জোর দরকার সেটা অনেকে পান না । তাই হয়তো একটু কম পড়ে যাচ্ছে ।"

আগে বেশ কিছু সিনেমায় শোনা যেত এই ধরনের সঙ্গীত । যা বর্তমানে নেই বললেই চলে। এবিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, " আগে যাঁরা ছবি পরিচালনা করতেন প্রত্যেকের ক্লাসিকাল মিউজিক সম্পর্কে একটা জ্ঞান ছিল । আমি কাউকে ছোট না করেই বলতে পারি আজকে খুব কম পরিচালক বা প্রযোজক বা সঙ্গীত পরিচালক আছেন যাঁদের ক্লাসিকাল সঙ্গীত সম্পর্কে জ্ঞান আছে । তার ফলে তাঁরা জানেন না, কোথায় ধ্রুপদী সঙ্গীত ব্যবহার করতে হয়(Tanmoy Bose on Classical Music)।"

Musicians on Classical Music
কিন্তু বারবার কেন উঠে আসছে এই ছবি? তবে কি বাংলার সংস্কৃতিকে ক্রমেই ঢেকে দিচ্ছে পশ্চিমী সংস্কৃতি? এই নিয়েই মুখ খুললেন প্রথিতযশা সংগীত শিল্পীরা

তবে এই সম্পূর্ণ বিষয়টির সঙ্গে একদমই একমত নন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও পন্ডিত বিক্রম ঘোষ । পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কথায়,"সিনেমার ক্ষেত্রে যারা প্রযোজক বা পরিচালক তাঁরা হয়তো মনে করছেন সিনেমার সঙ্গে ধ্রুপদী সঙ্গীত যাবে না সেই কারণে ব্যবহার কম হচ্ছে । যখন দরকার হয় তখন কিন্তু রাখতে হয় । আর ছোটোদের ক্ষেত্রে সব থেকে বড়ো জিনিস ওস্তাদ নয়, ওদের বাবা হয়ে উঠতে হবে ।"

আরও পড়ুন: 'ঈশ্বর বাঁচিয়েছেন...', আরোগ্য কামনার জন্য় ফ্যানেদের ধন্যবাদ দিলেন জুবিন

একই কথা জানান পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ । তাঁর কথায়,"আমি খুব একটা এটার সঙ্গে একমত নই । যুব সম্প্রদায়ও শিখছে ধ্রুপদী ঘরানার গান । এখনও এই সংখ্যাটা যথেষ্ট বেশি । যাদের আকাদেমি রয়েছে তাঁরাই জানেন যে কত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী গান শিখছে। একটা জিনিস বলতে পারেন, ক্লাসিকাল মিউজিককে হয়তো সেভাবে সামনে আনা হয় না। সেই চাহিদা অতটা নেই । বিক্রম ঘোষের ছবিতে কিন্তু একদিকে ক্লাসিকাল মিউজিকের ব্যবহার হয়েছে এবং মানুষ সেগুলো ভালোবেসে দেখছেন ।"

তবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে চর্চা কিন্তু থেমে নেই ৷ হ্য়াঁ এই বিতর্ক নিশ্চই রয়েছে যে যুব সমাজ সেভাবে আর ধ্রুপদী সংগীত শুনছে না ৷ তবে শ্রোতার কাছে পৌঁছাতে আয়োজনে কিন্তু কোনও ত্রুটি রাখছেন না শিল্পীরা ৷ ঠিক যেমন 15 থেকে 18 ডিসেম্বর পর্যন্ত কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে স্বরসম্রাট ফ্যাস্টিভ্যাল ৷

কলকাতা, 3 ডিসেম্বর: কথায় আছে সঙ্গীতের অপর নাম সাধনা ৷ আর ধ্রুপদী সংগীত যে কতোটা কঠিন সাধনার ফসল তা না বললেও চলে ৷ তবে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে থেকে আসতে আসতে উধাও হয়ে যাচ্ছে সেই সাধনার নেশা । তাদের মূল আকর্ষণ কম সময়ের গানের দিকে । কিন্তু কেন সামনে আসছে এই ছবি? তবে কি বাংলার সংস্কৃতিকে ক্রমেই ঢেকে দিচ্ছে পশ্চিমী সংস্কৃতি? এই নিয়েই মুখ খুললেন প্রথিতযশা সংগীত শিল্পীরা (Musicians Share Their Thoughts on Classic Music)৷

এই বিষয়ে বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গান জিনিসটা বর্তমানে সকলের কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে(Subhamita Banerjee on Classical Music) । চাইলেই যে কেউ রেকর্ড করে ফেলতে পারছে, মান বিচার হচ্ছে না । যে একটু ভাল গান করতে পারে সেই গেয়ে ফেলছে। কিন্তু এটার জন্য যে একটা প্রথাগত শিক্ষা দরকার, সাধনা দরকার সেটা কেউ বুঝছে না । হয়তো সেই ইচ্ছা কিছুদিন পরেই কেটে যাচ্ছে । ফলে, আর একজন রশিদ খান, আর একটা কৌশিকী চক্রবর্তী তৈরি হচ্ছে না । শ্রেয়া ঘোষাল, অরিজিৎ সিং এমনকি আমিও রিয়েলিটি শো থেকেই উঠে এসেছি । শিক্ষা নিয়ে উঠে এসেছি। এখন রিয়েলিটি শো শুধুমাত্র শো হয়েই গিয়েছে, প্রতিযোগিতা আর নেই । আমি খুবই হতাশ ।"

নিজে একটি রিয়েলিটি শোয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও একই মত পোষণ করেছেন জয় সরকারও (Joy Sarkar on Classical Music) । তবে শুধু গান নয় সিনেমাতেও এর প্রভাব পড়ছে । তাঁর কথায়,"আমার মনে হয় মানুষের ধৈর্য্য কমে গেছে । বসে একটা গোটা সিনেমা দেখার ধৈর্য্য মানুষের নেই । বাড়িতে কেউ ওয়েব সিরিজ দেখলে একটা এপিসোড পুরোটা একবারে দেখেন না । একটু পজ করে কাজে ডুবে যায় পরের দিন হয়তো আবার দেখে । একটা ভালো জিনিস শিখতে গেলে বা দেখতে গেলে যে ধরনের সংকল্প দরকার সেটা হারিয়ে যাচ্ছে । মানুষ প্রচণ্ড দৌড়চ্ছে । গান বাজনার ক্ষেত্রে নতুন একটা জিনিস চালু হয়েছে আমি নিজেও কাজ করেছি সেটা হল 1 মিনিটের গান । ক্লাসিকাল মিউজিক শুনতে গেলে সে মানসিক স্থিতি দরকার সেটার অভাব ঘটছে । সবথেকে বড় কথা বর্তমান জেনারেশন খুব ভালো গান করছে । কিন্তু মেলে ধরার মত মঞ্চ নেই ।"

পণ্ডিত তন্ময় বোসের কথায়, "ধ্রুপদী সংগীত করতে হলে তার চিন্তা অনেক বেশি । মনকে শান্ত রাখতে হয় । ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় । পারিবারিক সাপোর্ট দরকার হয় । বর্তমান যুগের যুব সমাজের একটা চিন্তা রোজগার। ক্লাসিকাল ঘরানার গানের একটা অনিশ্চয়তা রয়েছে সমাজে। সব সময় রোজগার করার চিন্তা থাকলে চলবে না। ফলে সব সময় বাচ্চাদের দোষ দেওয়ায় যায় না । এটা নিয়ে এগোনোর জন্য যে মনের জোর দরকার সেটা অনেকে পান না । তাই হয়তো একটু কম পড়ে যাচ্ছে ।"

আগে বেশ কিছু সিনেমায় শোনা যেত এই ধরনের সঙ্গীত । যা বর্তমানে নেই বললেই চলে। এবিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, " আগে যাঁরা ছবি পরিচালনা করতেন প্রত্যেকের ক্লাসিকাল মিউজিক সম্পর্কে একটা জ্ঞান ছিল । আমি কাউকে ছোট না করেই বলতে পারি আজকে খুব কম পরিচালক বা প্রযোজক বা সঙ্গীত পরিচালক আছেন যাঁদের ক্লাসিকাল সঙ্গীত সম্পর্কে জ্ঞান আছে । তার ফলে তাঁরা জানেন না, কোথায় ধ্রুপদী সঙ্গীত ব্যবহার করতে হয়(Tanmoy Bose on Classical Music)।"

Musicians on Classical Music
কিন্তু বারবার কেন উঠে আসছে এই ছবি? তবে কি বাংলার সংস্কৃতিকে ক্রমেই ঢেকে দিচ্ছে পশ্চিমী সংস্কৃতি? এই নিয়েই মুখ খুললেন প্রথিতযশা সংগীত শিল্পীরা

তবে এই সম্পূর্ণ বিষয়টির সঙ্গে একদমই একমত নন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ও পন্ডিত বিক্রম ঘোষ । পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কথায়,"সিনেমার ক্ষেত্রে যারা প্রযোজক বা পরিচালক তাঁরা হয়তো মনে করছেন সিনেমার সঙ্গে ধ্রুপদী সঙ্গীত যাবে না সেই কারণে ব্যবহার কম হচ্ছে । যখন দরকার হয় তখন কিন্তু রাখতে হয় । আর ছোটোদের ক্ষেত্রে সব থেকে বড়ো জিনিস ওস্তাদ নয়, ওদের বাবা হয়ে উঠতে হবে ।"

আরও পড়ুন: 'ঈশ্বর বাঁচিয়েছেন...', আরোগ্য কামনার জন্য় ফ্যানেদের ধন্যবাদ দিলেন জুবিন

একই কথা জানান পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ । তাঁর কথায়,"আমি খুব একটা এটার সঙ্গে একমত নই । যুব সম্প্রদায়ও শিখছে ধ্রুপদী ঘরানার গান । এখনও এই সংখ্যাটা যথেষ্ট বেশি । যাদের আকাদেমি রয়েছে তাঁরাই জানেন যে কত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী গান শিখছে। একটা জিনিস বলতে পারেন, ক্লাসিকাল মিউজিককে হয়তো সেভাবে সামনে আনা হয় না। সেই চাহিদা অতটা নেই । বিক্রম ঘোষের ছবিতে কিন্তু একদিকে ক্লাসিকাল মিউজিকের ব্যবহার হয়েছে এবং মানুষ সেগুলো ভালোবেসে দেখছেন ।"

তবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে চর্চা কিন্তু থেমে নেই ৷ হ্য়াঁ এই বিতর্ক নিশ্চই রয়েছে যে যুব সমাজ সেভাবে আর ধ্রুপদী সংগীত শুনছে না ৷ তবে শ্রোতার কাছে পৌঁছাতে আয়োজনে কিন্তু কোনও ত্রুটি রাখছেন না শিল্পীরা ৷ ঠিক যেমন 15 থেকে 18 ডিসেম্বর পর্যন্ত কলকাতার নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে স্বরসম্রাট ফ্যাস্টিভ্যাল ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.