কলকাতা, 16 জানুয়ারি: "অন্ধকার অমাবস্যা হয়ে/সে এসে দাঁড়ায় মন ঢেকে/যন্ত্রণার তারা ছুঁয়ে ছুঁয়ে/নয়নে চরণরেণু রেখে।"-সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের লেখা গল্প বা কবিতা বাঙালি সাহিত্যপাঠক মনে রয়ে যাবে আজীবন ৷ তাঁর 'ভালোবাসার বারান্দা'য় কতজন যে মনের শান্তি ও আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে তা বলা কঠিন ৷ কিছুদিন আগেই 85তম জন্মদিন পার করেছেন প্রয়াত লেখিকা ৷ কথায় কথায় সাহিত্যিকের লেখার প্রতি অসীম ভালোবাসার কথা ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন অভিনেত্রী মানসী সিনহা।
লেখিকাকে খুব বেশিবার না-হলেও তাঁর কাছাকাছি আসার সুযোগ পেয়েছেন অভিনেত্রী। যে দিনটা ছিল তাঁর কাছে বহু মূল্যবান। অভিনেত্রী মানসী বলেন, "আমার মন খারাপের সঙ্গী ওঁর লেখা। একবার বইমেলায় সামনা-সামনি আলাপ হয়েছিল। প্রথম দেখাতেই আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বললেন যেন কতদিনের আলাপ। উনি আমাকে বললেন, তোমাকে তো আমি চিনি। আমি তোমার নাটক দেখেছি। উনি অ্যাকাডেমিতে আমার নাটক দেখেছেন এবং সেটা ওনার তখনও মনে ছিল, এটা ভেবেই আমি আপ্লুত। আমাকে দেখেই চিনতে পেরেছিলেন। এরপর আমার কাজের প্রশংসা করে বলেন, তুমি তো এখন সিনেমা-সিরিয়াল কর। এই সব কথা ওই উচ্চতার একজন মানুষের কাছ থেকে শোনা মানে জীবন ধন্য হওয়া।"
অভিনেত্রী আরও বলেন, "কী সুন্দর সাজতেন উনি। সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। জীবনে সমস্যা আসবে সেটাকে মেনে নিয়েই হাসিমুখে থাকতে হবে এই ছিল ওনার মূলমন্ত্র। আর সেটা শিক্ষণীয় প্রত্যেকটি মানুষের। জীবনটাকে উপভোগ করতেন তিনি। জীবনের শেষদিন অবধি মজা করে গিয়েছেন। কী মজার মজার কথা বলতেন! রাগতে দেখিনি কখনও। আমরা যখন 'প্রথম প্রতিশ্রুতি'র শুটিং করছি তখন উনি এসেছিলেন সেটে। সেই সুন্দর সাজুগুজু করে। তখন বেশ কিছুটা অসুস্থ উনি। তাও সবার সঙ্গে কী সুন্দর করে কথা বললেন। ছবি তুললেন। ওঁর সঙ্গে দেখা হওয়া দিনগুলো আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি বলে মনে করি আমি।"
লেখার মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয় হয়েছেন আমজনতার কাছে। তাঁর ভক্তসংখ্যা নেহাত কম নয়। নানা মহলে রয়েছে তাঁর অগণিত ভক্ত। তিনি তাঁর রূপকথার গল্প এবং দুঃসাহসিক গল্পের জন্যও বিখ্যাত হয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে জানা যায়, দুর্দান্ত আঁকতে পারতেন তিনি। নিজের লেখা প্রথম বই 'প্রথম প্রত্যয়'-এর প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন তিনি। সনাতনদের সঙ্গে আধুনিক মিশেল ছিল সেই আঁকাতে। শুধু তাই নয়, আলপনা দেওয়া থেকে শুরু করে বিয়ের তত্ত্ব সাজানোতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন নবনীতা দেবসেন। পাড়া এবং বন্ধুমহলে আলপনা দিতে ডাক পড়ত তাঁর। গুরুত্ব দিতেন সর্বস্তরের মানুষকে। মন দিয়ে কথা শুনতেন সকলের। সর্বোপরি জীবনমুখী মানুষ ছিলেন নবনীতা দেব সেন ৷ আজ এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যি বিরল বলে মনে করেন অভিনেত্রী মানসী সিনহা ৷
আরও পড়ুন:
1. 'ছবি থেকে শিক্ষা নিতে হবে', 'ম্যায় অটল হু' মুক্তির আগে সিনেপ্রেমীদের বার্তা পঙ্কজের
2. প্রকাশ্যে ফিল্মফেয়ারের নমিনেশন লিস্ট, সেরা-সহ অভিনেতার তালিকায় বাংলার টোটা
3. 'স্টেজ থেকে নামার পর সময় চাই, নাহলে প্রতিবাদ নেমেসিসের ভাষা হয়ে যাবে', মুখ খুললেন রকস্টার