হায়দরাবাদ, 8 সেপ্টেম্বর: পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ থাকেন, যাঁদের সম্পর্কে লিখতে গেলে কলম হঠাৎ করেই থেমে যায় ৷ তাঁদের নামের পাশে বিশেষণগুলোও যেন বড্ড ফিকে লাগে ৷ যাদের নাম বলার সময় অতিরিক্ত কোনও শব্দ ব্যবহার করতে হয় না ৷ আশা ভোঁসলে ৷ আজ তাঁর 90তম জন্মদিন ৷ দশকের পর দশক ধরে যিনি সুরের জাদুতে মুগ্ধ করে চলেছেন আপামর বিশ্ববাসীকে ৷ যাঁর গান শুনলে আজও গুন গুন করে মন ৷ ছন্দে ছন্দে গানে গানে যিনি পারেন মধুর সন্ধ্যা জমিয়ে দিতে ৷ কিংবদন্তি শিল্পীর জন্মদিনে ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল বর্তমান প্রজন্মের দুই শিল্পীর সঙ্গে ৷ মধুরা ভট্টাচার্য ও পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ৷ তাঁদের স্মৃতিতে ধরা দিলেন সকলের প্রিয় আশাজি ৷
সঙ্গীতশিল্পী মধুরা ভট্টাচার্য ও পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় সিরিয়ালের গান, ছবির গান, লোক গানে ইতিমধ্যেই মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন ৷ তাঁদের কণ্ঠশৈলী শ্রোতাদের মুগ্ধ করে চলেছে ৷ সেই শিল্পীদের কাছে আশা ভোঁসলের নাম বললে, কোন গানটা প্রথম মন পড়ে? প্রশ্নের জবাবে মধুরা বলেন, "আশাজির কোনটা গানটা প্রথম মনে পড়ে এটা বলা সত্যি খুব চাপের ৷ ওনার নাম বললেন হাজারো গান মাথায় ঘুরতে থাকে ৷ এখন হঠাৎ করে এই গানটা বলতে পারি, যেতে দাও আমায় ডেকো না ৷ বিভিন্ন ভাষায় এত রকমের গান রয়েছে ওনার ৷ তাই যে কোনও একটা গান বেছে নেওয়া মুশকিল ৷"
পৌষালি বলেন, " ওনার নাম প্রথম শুনলে গানের সমুদ্র মাথায় আসে ৷ একটা সমুদ্র যাঁর নাম আশা ভোঁসলে ৷ একজন লিভিং লেজেন্ড ৷ ওনার প্রতিভা, মঞ্চে গান করার ধরণ, কীভাবে সুর ধরেন, সেই সব কিছু আমাদের মতো শিল্পীরা মুগ্ধ হয়ে দেখে, শোনে ৷ আজ সকাল থেকে একটা গান গুন গুন করছি, 'এমন মধুর সন্ধ্যায়....একা কি থাকা যায়... ৷"
আশা ভোঁসলে সকল গায়কিদের কাছেই অনুপ্রেরণাদায়ক ৷ একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন মধুরা ও পৌষালি ৷ মধুরা বলেন, "এমন কোনও মাপকাঠি নেই, যা দিয়ে বলা যায়, তিনি কতটা জুড়ে রয়েছেন আমার কাছে ৷ এক এক সময়ে, এক এক ধরনের গান ভিন্ন অনুভূতি তৈরি করে ৷ যত বড় হচ্ছি, ততই ওনাদের কাছ থেকে শিখছি ৷ এখন কোনও গান শুনলে মনে হয়, আহাহা, এখানে গলা এই ভাবে করেছেন, এই গানে সুর এইভাবে লাগিয়েছেন ৷ সেই বোধটা দিন দিন বাড়ছে ৷ ওনাকে শুনে শুনে শেখাটা বয়সের সঙ্গে বাড়ছে ৷"
এই বিষয়ে পৌষালি বলেন, "আমাদের ছোটবেলায় সিডি তো ছিল না ৷ পুজোর সময় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে নতুন গান বাজত ৷ সেখানে কিছু কিছু গান যেমন ধরো খোঁপার কাঁটা, এইগুলো শুনতাম ৷ খাতাতেও গানগুলো লিখে রাখতাম ৷ আর আমাদের বাড়িতে চটুল হিন্দি গান শোনার চল ছিল না ৷ বাবা পছন্দ করতেন না ৷ আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকর, মহম্মদ রফি, মুকেশ-এনাদের গান চলত ৷ তাই শুনেই বড় হওয়া ৷"
অন্যদিকে, এক অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে মধুরা সামনে থেকে সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন আশা ভোঁসলের ৷ সেই অভিজ্ঞতা মধুরা শেয়ার করেন ইটিভি ভারতের সঙ্গে ৷ তিনি বলেন, "একটি অনুষ্ঠানে সৌভাগ্য হয়েছিল চরণ স্পর্শ করে ওনার আশীর্বাদ নেওয়ার ৷ সম্ভবত আসানসোলে অনুষ্ঠানটি ছিল ৷ ওনার স্টেজে ওঠার আগে আমার অনুষ্ঠান ছিল ৷ আমি গান করি যখন নামি, তখন উনি ব্যাক স্টেজে বসেছিলেন ৷ আমি তো ওনাকে সামনে থেকে দেখে আপ্লুত ৷ যখন সামনে গেলাম, উনি একটা অদ্ভুত, স্নেহভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিলেন ৷ মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন ৷ সেটা একটা আলাদা পাওয়া জীবনের ৷ যা আমার সারাজীবনের ধন হয়ে থাকবে ৷ উনি সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এই কামনা করি৷"
আরও পড়ুন: জন্মাষ্টমী নিয়ে মেতে উঠলেন সন্দীপ্তা-তনুশ্রীরা
পৌষালি আবার নকল করতেন কিংবদন্তি শিল্পী আশা ভোঁসলেকে ৷ তিনি বলেন, "আমি একটু বড় বয়সে এসে ওনাকে নকল করতাম ৷ উনি যেভাবে শাড়ি পড়ে মঞ্চে অনুষ্ঠান করতেন, ফুলঅফ এক্সপ্রেশন নিয়ে তা আমার আজও ভীষণ ভালো লাগে ৷ চাইলেই উনি অন্যরকম পোশাক পরতে পারতেন ৷ কিন্তু ওই যে শাড়ির ঐতিহ্য যেভাবে বহন করে চলেছেন আজও, তা আমাকে মুগ্ধ করে ৷ ওনার জন্মদিনে তিনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন প্রার্থণা করি ৷"