কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর: বারাসতের পর্বতারোহী সুনীতা হাজরাকে ভোলা সম্ভব না বাঙালির। এভারেস্টে উঠতে গিয়ে মৃত্যুকে খুব সামনে থেকে দেখেছিলেন তিনি । এহেন সুনীতা কি আদৌ ছুঁয়েছিলেন এভারেস্টের চূড়া? তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে ওঠে । সালটা 2016 । সুত্রের খবর অনুযায়ী এভারেস্ট ছুঁয়ে নামার সময়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হন সুনীতা । সেই সময় এক বিদেশি ক্লাইম্বারের আগমন একেবারে ঈশ্বরের মতো । তিনিই পুনর্জন্ম দেন সুনীতাকে । এরপর আর খোঁজ মেলেনি তাঁর । এহেন সুনীতার জীবনের গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবি বানাচ্ছেন পরিচালক দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় । ছবির নাম 'মিশন এভারেস্ট'।
এই ছবিতে সুনীতার আদলে তৈরি চরিত্রের নাম দেওয়া হয়েছে সুচন্দ্রা হাজরা । এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন চান্দ্রেয়ী ঘোষ (Chandrayee Ghosh on Mission Everest)। চান্দ্রেয়ী এদিন ইটিভি ভারতকে বলেন, "এরকম একটা ছবিতে অভিনয় করার আগে মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি দুটোই অত্যন্ত জরুরি । ছবিটা করব ফাইনাল হওয়ার পর আমার জিম ইন্সট্রাক্টরকে বললাম যে, দুমাসের মধ্যে অ্যাথলিটদের মতো ফিজিক্যাল ফিটনেস আমার লাগবে । তার জন্য কী করতে হবে? বললেন, দু'বেলা ওয়ার্ক-আউট করতে হবে। আমি সকালে 45 মিনিট আর রাতে শ্যুটিঙের পরে 45 মিনিট ওয়ার্ক-আউট শুরু করলাম । এ ছাড়া হেলথ টেস্ট, চেক আপ, ইমিউনিটি বাড়ানোর ঠিকঠাক ওষুধপত্র খাওয়া সবই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করি । রিয়েল লোকেশনে শ্যুট তাই খুব ভালোভাবেই জানতাম, অত উচ্চতায় যাওয়ার ঘটনাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে গেলে আমার শরীরে সেরকম ফিটনেস থাকতে হবে । অত উচ্চতায় উঠে কীভাবে সুস্থ থাকা যায় তার জন্যও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছি(Chandrayee New Film Mission Everest )।"
সুনীতা হাজরার সঙ্গে কি দেখা করেছিলেন ? অভিনেত্রী জানান, দেখা তো করেছেনই অনেক কথাও হয়েছে ওঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে । পেয়েছেন জরুরি টিপস ৷ তাছাড়া শ্যুটিং-এর সময়ে সুনীতার স্বামীও ছিলেন সঙ্গে, অভিজ্ঞ দু'জন শেরপাও ছিলেন শ্যুটিং-এ । অভিনেত্রী বলেন, "শ্যুটিং-এর সময় মনে হচ্ছিল কী ভীষণ মানসিক আর শারীরিক জোর সঙ্গে নিয়ে সুনীতাদিরা ওঠেন। যখন তখন প্রকৃতির পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস রাখা চাট্টিখানি কথা নয়।"
চান্দ্রেয়ীর কথায়, "সুনীতাদি সকল নারীর জন্য ইনস্পিরেশন । মেয়েরা সব পারে তা আরও একবার প্রমাণিত হয় সুনীতাদিদের জন্য । সুনীতা দি'র স্বামীর কাছ থেকে শ্যুটিং-এর সময়ে জেনেছি কীভাবে হাঁপায় ওঠার সময়, কীভাবে নিঃশ্বাস নিতে হয় ওই সময়ে । না-হলে চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না । আমি তো 40 মিনিট ট্রেক করে উঠে হাঁপিয়ে যেতাম। ইউনিট অনেক দূরে থাকত । শুনতেও পেতাম না ঠিক করে দেবাদিত্যর কথা । ওইভাবেই কাজ এগিয়েছে।"
অন্যদিকে সুনীতা বলেন, "যখন দেবাদিত্য আমায় বলেন এভারেস্ট নিয়ে এরকম একটা সিনেমা হতে পারে খুবই অবাক হয়েছিলাম । পাশাপাশি চাইছিলাম যে সিনেমাটা হোক, সবাই দেখুক । সামনেই রিলিজ । আমরা যারা পাহাড়ে যাই তারা সবসময় প্রস্তুত থাকি আমাদের সামনে কী আসতে পারে, কী কী প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতে পারে তার জন্য । কিন্তু অভিনেতারা প্রস্তুত নন । কিন্তু এই ছবিতে চান্দ্রেয়ী যেভাবে সবটা ফুটিয়ে তুলেছে তাতে আমি অবাক । ছবির অভিনেতারা মাইনাস টেম্পারেচর ফেস করেছে । তার মাঝেই চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলেছে । আমি অবাক হয়ে গিয়েছি । অসম্ভব ডেডিকেশন না-থাকলে এটা সম্ভব না(Sunita Hazra on Mission Everest)।"
আরও পড়ুন: অক্ষয়ের জন্মদিনে ফিরে দেখা তাঁর 100 কোটির ক্লাবে স্থান পাওয়া ছবির তালিকা
প্রসঙ্গত, ছবিটিকে সুনীতার বায়োপিক বলছেন না পরিচালক । বরং সুনীতার জীবনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই এই ছবি বলতে চাইছেন তিনি । ক্যামেলিয়া প্রোডাকশন এবং ক্রিয়েটিভ লিবার্টির যৌথ প্রযোজনায় আসছে এই ছবি । ছবিটি তৈরি হয় বেশ কিছুদিন আগেই । সম্প্রতি এর স্পেশাল স্ক্রিনিং দেখে ছবিটিকে পুজোর আবহে বড় পর্দায় নিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছে প্রযোজকদ্বয় । 30 সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে এই ছবি ।