কলকাতা: বাংলার ছেলে বিশাখ জ্যোতি । জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বনগাঁয় । আচার্য সঞ্জয় চক্রবর্তী এবং রেশমি চক্রবর্তীর হাত ধরে খুব কম বয়সেই তাঁর সঙ্গীত যাত্রা শুরু হয় । 2007 সালে, বিশাখ জ্যোতি বাংলা রিয়েলিটি শো 'সারেগামাপা'র একজন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি 2010 সালে হিন্দি ভাষায় সম্প্রচারিত 'সারেগামাপা'তেও জয়লাভও করেন । এরপরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই তরুণকে। এই মুহূর্ত বিশাখ জ্যোতি হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন ব্যস্ত সুরকার এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরার ।
তাঁর প্রথম ছবি ছিল 'বাবলু হ্যাপি হ্যায়'। উল্লেখ্য, বিশাখ জ্যোতি সর্বকনিষ্ঠ বাঙালি জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী সুরকার । তিনি নন-ফিচার ফিল্ম বিভাগে সুদীপ্ত সেনের পরিচালনাতেই 'গুরুজি: দ্য অ্যাহেড অফ টাইমস' চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন । আর তাঁর সাম্প্রতিকতম কাজের মধ্যে অন্যতম চলচ্চিত্র সুদীপ্ত সেনেরই 'দ্য কেরালা স্টোরি' । এই ছবিতে সুরকার হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ইটিভি ভারতকে মুম্বইয়ে বসে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন বিশাখ জ্যোতি।
ইটিভি ভারত: অফারটা কার কাছ থেকে আসে?
বিশাখ জ্যোতি: প্রথম অফার সুদীপ্তদার কাছ থেকেই পাই । ওর সঙ্গে এর আগেও কিছু ছবিতে কাজ করেছি । আমি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছি ওঁর ছবির জন্যই। আমার খুব দুঃখ লাগে এটা ভেবে যে 'দ্য কেরালা স্টোরি'র আমি সুর দিয়েছি সেটা জানার আগে কেউ জানতই না যে আমি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি! যেদিন আমি জাতীয় পুরস্কার পাই সেদিন নিজের সব ভালো লাগা উজার করে দিয়েছিলাম সুদীপ্তদাকে। সুদীপ্তদা আমার খুব প্রিয় মানুষ।
ইটিভি ভারত: কটা গান আছে ছবিতে?
বিশাখ জ্যোতি: পাঁচটা গান রয়েছে । কণ্ঠ দিয়েছেন মহালক্ষ্মী আয়ার এবং সুনিধি চৌহান ৷ আর আমি নিজেও গেয়েছি।
ইটিভি ভারত: বাংলার বুকে এখনও সাড়া মেলেনি এই ছবির। অনেক মানুষই দেখতে পারেনি।
বিশাখ জ্যোতি: বনগাঁতে চলছে শুনলাম । মফস্বলের বেশ কিছু সিনেমা হলে সিঙ্গল স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে এমনও শুনেছি। বাকিটা জানি না। তবে, শুরুর দিকে কলকাতা থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যবসা হয়ে গেছে। ফলে এক থেকে দেড় লক্ষ মানুষ ছবিটা দেখে ফেলেছে বলা যায়। তবে, যে ধরনের ছবি এটা তাতে আরও অনেক মানুষের দেখা উচিত। এটা কোনও মুসলিম বা অন্য কোনও জাতি বিদ্বেষী ছবিই নয়। দেখলে গোটা বিষয়টা বোঝা যাবে। কোনও পলিটিক্যাল অ্যাজেন্ডা নেই ছবিটার মধ্যে। ইউরোপ থেকে এসে প্রতি মাসে 20-25টা মেয়ে স্বেচ্ছায় আইএসআইএসে জয়েন করছে। সেই খবরও পাওয়া গিয়েছে। এবং সেগুলোই দেখানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট দেখানোর অনুমতি দেওয়ার পরেও এখনও কেন সব সিনেমা হল এই ছবি চলছে না এটা আমার খুব অবাক লাগছে।
ইটিভি ভারত: কোনও ছবির এরকম প্রতিক্রিয়া, সেই ছবির সঙ্গীত পরিচালকের কেরিয়ারে কীরকম প্রভাব ফেলে?
বিশাখ জ্যোতি: অনীক দত্ত'র 'ভবিষ্যতের ভূত' নিয়েও এরকমই তোলপাড় হয়েছিল বাংলা। তাতে কী হল? গত দশ বছরে সেরা হিট ছবি 'অপরাজিত' উনিই তো দিলেন আমাদের । এসব ব্যান করে শিল্পীর শিল্পীসত্ত্বাকে আটকে রাখা যায় না । তবে, মুম্বইতে এর জন্য মান সম্মান হারিয়েছে এটুকু বলতে পারি । রামগোপাল বর্মা থেকে শুরু করে অনেকেই বলেছেন, "এটা কেন হল? তোমাদের শহর কেন তোমাদের ছবিকে সাপোর্ট করল না?" এমনিতেই বাঙালি মুম্বইতে তির্যক কোণে থাকে । এবার সেটা আরও দৃঢ় হল ।