কলকাতা, 16 জুন: মিঠুন চক্রবর্তী, পরিচয় হিসেবে নামটাই যথেষ্ট ৷ বাংলা তো বটেই বলিউডের দর্শকদের মন জয় করেছেন তিনি ৷ এমনকী রাশিয়াতেও তাঁর অনুষ্ঠানে ভিড় জমাতেন অনুরাগীরা ৷ তাঁর নাচ হিন্দি ছবিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল । প্রতিভা দিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বাঙালিও 'টল,ডার্ক অ্যান্ড হ্যান্ডসাম' হিরো হতে পারে ৷
একসময় স্পটবয়ের চাকরিও করেছেন পেট চালাতে ৷ সেই মিঠুন চক্রবর্তীর নিজের অভিনয় জীবন শুরু করেন 'মৃগয়া' ছবি দিয়ে ৷ মমতা শংকরের সঙ্গে তাঁর জুটি নজর কাড়ে সকলের ৷ তারপর শুরু হয় স্বপ্নের দৌড়। প্রথম কাজ ছিল, হিন্দি ছবির দুনিয়ায় নিজের আসন তৈরি করা। খানিকটা সময় লাগল বটে তবে করলেন শেষমেশ। জীবনের একদম শুরু থেকেই পরিশ্রম আর লড়াই তাঁর সহচর। মিঠুন থেকে লাখো লাখো অনুরাগীর কাছে 'মিঠুন'দা এবং মহাগুরু হয়ে ওঠার এই জার্নি সহজ ছিল না ৷ আজ তাঁর জন্মদিনে ফিরে দেখা এমনই কিছু অধ্য়ায় ৷
1976 সালে তাঁর প্রথম ছবির জন্য়ই জাতীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী ৷ মৃণাল সেন পরিচালিত এই ছবি হয়তো বদলে দিতে পারতো অনেকের কেরিয়ার কিন্তু মিঠুনের কষ্টের দিন শেষ হয়নি ৷ সম্মান তিনি পেয়েছেন বটে আবার শ্যাম বর্ণ নিয়ে হিরো হতে চাওয়া এই তরুণকে শোনানো হয়েছে নানা কটু কথা ৷ প্রযোজক, পরিচালকদের কাছে বহুবার ধাক্কা খেয়েছেন অভিনেতা ৷
মৃগয়ার প্রায় 6 বছর বাদে মুক্তি পায় 'ডিস্কো ডান্সার' ৷ জিমি চরিত্রে অভিনয় করেন মিঠুন ৷ আর এই ছবি দিয়েই শুরু হয় তাঁর উড়ান ৷ ছবিটি রাশিয়াতেও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে ৷ বলিউডের 100 কোটির ক্লাবে জায়গা করে নেওয়া প্রথম ছবির নাম 'ডিস্কো ডান্সার' ৷ বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে তৎকালীন রাশিয়ায় ছবিটি কমবেশি 90 কোটি টাকা আয় করেছিল ৷
ঠিক যেমন সাফল্যের চূড়া তিনি ছুঁয়েছেন বারবার, তেমনই কখনও শ্রীদেবীর সঙ্গে তাঁর রসায়ণ নিয়ে তৈরি হয়েছে গুজব ৷ এমনকী তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি ৷ প্রথম পর্বে নকশাল আন্দোলনের শরিক মিঠুন একসময় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন ছবির জগতে ৷ পরে আবার মমতা বন্দোপাধ্য়ায়ের হাত ধরে তাঁর সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসা ৷ এর আগে অবশ্য় সুভাষ চক্রবর্তীর কাছের লোক বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ শুধু তাই সুভাষের হয়ে তাঁকে নির্বাচনী প্রচারেও দেখা গিয়েছে। তবে মমতার হাত ধরেই হয়েছিলেন রাজ্য়সভার সাংসদ ৷ কিন্তু চিটফাণ্ডকাণ্ডে নাম জড়ানোয় মেয়াদ ফুরোনোর তিন বছর আগেই সাংসদ পদ ছেড়ে দেন।
এই নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি ৷ এরপর তাঁর বিজেপি শিবিরে যোগদান নিয়ে আবারও তৈরি হয় বিতর্ক ৷ এমনকী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি যেভাবে তাঁর ছবির 'আমি বালিবোড়াও নই...' শীর্ষক সংলাপগুলি উচ্চারণ করেন তা নিয়েও তোলপাড় পড়ে যায় ৷ থানায় এফআইআরও হয়। শুধু রাজনৈতিক নয়. সিনে-জীবনও বারবার বিতর্কের মুখে পড়েছেন ৷ সম্প্রতি মিঠুন পুত্র মিমো এও জানিয়েছেন, একসময় উটির হোটেল বাঁচাতে মিঠুনকে বি গ্রেড ছবিতেও মুখ দেখাতে হয়েছিল ৷
আরও পড়ুন: শেষ 'দ্য ভ্য়াকসিন ওয়ার' ছবির কাজ, সেটের ঝলক শেয়ার করে জানালেন রাইমা
আবার তাঁর সাম্প্রতিক ছবি 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' এবং 'প্রজাপতি' নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি ৷ যদিও দু'টি ছবিই সুপারহিট ৷ 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' ছবির ক্ষেত্রে বিতর্ক মূলত ছিল তার গল্প নিয়ে ৷ অনেকেই ছবিকে প্রচারসর্বস্ব বলে দাবি করেছিলেন ৷ আর অন্য়দিকে, আবার 'প্রজাপতি' ছবিতে তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন অনেকেই ৷ তবে 'প্রজাপতি' প্রমাণ করে দিয়েছে মিঠুনকে নিয়ে হাজারো বিতর্ক থাকতেই পারে তবে তাঁর অভিনয় গুণে আজও তিনি স্টার ৷ আর মিঠুন মানেই রূপোলি পর্দার ম্যাজিক ৷