কলকাতা, 6 এপ্রিল : চার পুলিশ কর্তার বদলির নির্দেশে ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন? সংবাদমাধ্যমের হাতে একটি চিঠি এসেছে যা মুখ্যমন্ত্রীর অফিশিয়াল প্যাডে লেখা হয়নি এবং তাতে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সই নেই। তবে নবান্ন সূত্রে খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নাকি কমিশনকে ওই চিঠি লিখেছেন।
চিঠিতে কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, "নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট পরিচালনা। সেখান থেকে সরে গিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা BJP-র হয়ে কমিশন কাজ করছে না তো?"
চিঠির শুরুতেই লেখা হয়েছে, "কমিশনের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ৫ এপ্রিল কমিশন পুলিশের যে বদলির অর্ডার দিয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। এই বিষয়ে আমার তীব্র প্রতিবাদ আছে। ওই নির্দেশ পক্ষপাতমূলক। BJP-র নির্দেশে এই কাজ করা হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।"
চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, "দিনকয়েক আগে সংবাদমাধ্যমের কাছে BJP নেতারা বলেছিলেন, ওই পুলিশ কর্তাদের নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দেবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী একটি টেলিভিশন চ্যানেলের শোয়ে মন্তব্য করেন, পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। তাই সাত দফায় ভোট হচ্ছে। ঠিক তারপর কমিশনের তরফে বদলির নির্দেশ জারি করা হয়। নির্বাচন কমিশনের অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনার যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে তা তারা পালন করছে, না কি কেন্দ্রের BJP-র হয়ে কাজ করছে?"
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, চিঠির বয়ান দেখে মনে হচ্ছে মমতার ক্ষোভ মূলত কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের বদলির নির্দেশ নিয়ে। চিঠিতে লেখা হয়েছে, "কলকাতা এবং বিধাননগর কসমোপলিটন এলাকা। এখানে নানা সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণের মানুষ বাস করে। এই দুই এলাকার দুই পুলিশ কমিশনার সংবেদনশীলতা এবং দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করছিলেন। নির্বাচনের সময় তারা প্রচুর সোনা, টাকা, বেআইনি মদ বাজেয়াপ্ত করেছেন। নির্বাচন কমিশনের বদলির নির্দেশ দেখে এই প্রশ্ন উঠছে যে, কড়া হাতে ওই বেআইনি কাজ দমনের বিষয়টি কারও রাজনৈতিক স্বার্থে আঘাত হানেনি তো?"
কলকাতার ও বিধাননগরের নতুন পুলিশ কমিশনার যথাক্রমে রাজেশ কুমার এবং নটরাজন রমেশবাবুর অন্য রাজ্যে পুলিশ অবজ়ারভার হিসেবে ভোট পরিচালনা করতে যাওয়ার কথা ছিল। সেই সূত্রে ২৬ মার্চ দিল্লিতে গিয়ে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন। সেই সূত্র ধরে চিঠিতে লেখা হয়েছে, "এমন দু'জনকে ওই দুই কমিশনারেটের কমিশনার করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন যাদের অন্য রাজ্যে পুলিশ অবজ়ারভার হিসেবে কাজ করার কথা ছিল। তাঁদের কলকাতা এবং বিধাননগর নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। তাই ওই দুই বড় শহরে যদি আইনশৃঙ্খলার কোনও সমস্যা হয়, তার দায় কমিশন নেবে তো?"
চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, "আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। কিন্তু ওই পুলিশ অফিসারদের বদলির আগে রাজ্যের কাছে কোনও প্যানেল চাওয়া হয়নি। এই পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কমিশন রাজ্য সরকারের পরামর্শ চাইতে পারত।" চিঠির শেষে কমিশনার বদলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়েছে।