দার্জিলিং, 18 মে: উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি (Girls fighting against Child Marriage)। দার্জিলিং জেলার সমতলের শিলিগুড়ি সংলগ্ন মহকুমার চারটি ব্লক প্রত্যন্ত গ্রাম ও চা বাগান অধ্যুষিত। বরাবরই এই এলাকা মানব পাচার ও নাবালিকা বিয়ের আখড়া । এর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে গ্রামের নাবালিকারাই ৷ গত দু'বছরে সাতটি নাবালিকার বিয়ে আটকে নজির গড়েছে তারা ৷
করোনাকালে দ্বিগুণ হয়েছিল নাবালিকা বিয়ে ও নারীপাচার ৷ আয় কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে না পেরে বাড়ির মেয়েদের দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিতে উদ্যত হতেন বাবা-মায়েরা ৷ অনেকে আবার লোভের তাড়নায় হত পাচারের শিকার ৷ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পাওয়ার অফ গার্লস গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষকে বুঝিয়ে এই দুই বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেছে ৷ নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাড়ির প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালাচ্ছে তারা ৷
এই কাজে সমাজের একাংশের বাধার মুখেও পড়তে হচ্ছে তাদের ৷ আসছে হুমকি (Siliguri child marriage)৷ তবে তাতে এতটুকুও না দমে মাইকিং করে, পথনাটিকা করে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে রিয়া, পূজা, মামনিরা ।
লড়াইটা শুরু হয়েছিল 2018 সালে । খড়িবাড়ি ব্লকের বাতাসী এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম সুকানু পালপাড়া । সেই গ্রামের কেউ স্কুল পড়ুয়া আবার কেউ কলেজে পড়ে ৷ তারাই এখন এলাকার বাঘিনী । কারণ তাদের ভয়ে আর কোনও পরিবার নিজের বাড়ির নাবালিকার বিয়ে দিতে পারে না । কোথাও নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে শুনলেই পৌঁছে যায় তারা । বিয়ে রুখে দিয়ে তারা উদ্ধার করে নাবালিকাকে ।
2018 সালে পাওয়ার অফ গার্লসের সংখ্যাটা আট থেকে দশ জন হলেও এখন সেই দলের সদস্য সংখ্যা আরও বেড়েছে ৷ এখন প্রতিটি গ্রামে কাজ করছে অন্তত আট থেকে দশ জন । এই কাজে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের উদাসীনতা তাদের কাজ কঠিন করে তোলে । কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মাঝেও তারা লড়াই জারি রেখেছে ।
আরও পড়ুন: বাল্য বিবাহ রোধে জুলিমার লড়াই কুর্নিশযোগ্য
পঞ্চম শ্রেণি থেকে কলেজ পড়ুয়া, দলে রয়েছে নানা বয়সের মেয়ে । খোলা আকাশের নিচে আবার কখনও গাছের তলায় তাদের প্রশিক্ষণ চলে । কীভাবে নাবালিকার বিয়ে আটকাতে হয়, কীভাবে পুলিশে অভিযোগ জানাতে হয়, কীভাবে নজরদারি চালাতে হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়, চলে এ সবের প্রশিক্ষণ ৷ দলের এক সদস্য রিয়া সিংহ বলল, "অনেক হুমকি আসে । আগে খুব ভয় পেতাম । কিন্তু এখন আর পাই না । ছয় থেকে সাতটা নাবালিকার বিয়ে আমরা আটকেছি । কখনও বাইরে থেকে নাবালিকাকে বিয়ে করে আনছে আবার কখনও এলাকায় লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে । খবর পেলেই আমরা পৌঁছে যাই । পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করলে আমাদের আরও সুবিধা হয় ।"
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য নীলিমা রায় বললেন, "করোনাকালে নাবালিকার বিয়ে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল । তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি ৷ কোথাও কোনও নাবালিকার বিয়ে হলেই মেয়েরা পৌঁছে যায় । নিজেরাই পুলিশ ও চাইল্ড লাইনকে জানায় ।"
বাল্য বিবাহ ও নারীপাচার রুখতে নিরলস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মেয়েরা ৷ এই লড়াই খুবই কঠিন ৷ কারণ এই অপরাধে সামিল থাকে তাদের নিজেদের লোকেরাই ৷ তবে হুমকি ও চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে আরও সচেতনতা গড়ে তুলে এই অপরাধের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলাটাই বড় চ্যালেঞ্জ পূজা, রিয়া ও মামনিদের কাছে ৷
আরও পড়ুন: Child Marriage Stopped: দেগঙ্গায় নাবালিকার বিয়ে রুখল পুলিশ, আসর থেকে পালাল বরযাত্রীরা