মালদা, 18 ফেব্রুয়ারি : তিনি মালদা শহরের বাঁশিওয়ালা ৷ তিনি সাদিয়া খাতুন ৷ জার্মানির হ্যামেলিনের মতো এই শহরও তাঁর সুরের পিছু নেয় ৷ হ্যান্স ডোবারটিন বেঁচে থাকলে তিনি মালদা শহরের এই মেয়েকে নিয়ে কিছু লিখতেন কিনা জানা নেই ৷ তবে, তাঁর সুরের মূর্ছনায় তিনিও যে কিছুটা সময় থমকে দাঁড়াতেন, তা নিশ্চিত ৷ সেই মেয়েই এবার সুরের বার্তা নিয়ে ভোট লড়াইয়ের মাঠে ৷ তাঁর পিছনে হাঁটছেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশও ৷ ভোটের ফল কী হবে জানা নেই ? তবে, লড়াইয়ে নেমেই এলাকায় গুঞ্জনের জন্ম দিয়েছেন সাদিয়া (Saxophonist Candidate for Municipality Election in English Bazar) ৷
বাইশের সাদিয়া রাজনীতিতে মোটেই সড়গড় নন ৷ গুছিয়ে ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না ৷ বাড়ি মালদা শহরের মীরচকে ৷ ঠাকুরদা, বাবা, সবাই স্যাক্সোফোনে সুর নিয়ে খেলা করেন। ৷ ছোটবেলায় তিনিও সেই দলেই নাম লিখিয়ে ছিলেন ৷ হাতে যখন স্যাক্সোফোন থাকে, তখন সেই যন্ত্রের চাবিগুলিতে সাদিয়ার আঙুল যেন তাঁর মনের কথা বের করে আনে ৷ সাদিয়ার কথায়, “ছোট থেকেই বাড়িতে ঠাকুরদা-বাবাকে এই যন্ত্র বাজাতে দেখেছি ৷ আমারও খুব ভাল লাগে সুর ৷ তাই অল্প বয়সেই বাবা-ঠাকুরদার কাছে এই যন্ত্রে তালিম নিতে শুরু করেছি ৷”
অভাবের সংসার ৷ বাবা সফি শেখের নিজস্ব ব্যান্ড রয়েছে ৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাজনা বাজিয়েই উপার্জন তাঁর ৷ তবে পেশা আর শিল্পের সাধনাকে তিনি সবসময় আলাদা জায়গায় রেখেছেন ৷ স্যাক্সোফোন তাঁর নেশা, ব্যান্ড পেশা ৷ বাবার হাত ধরে এখন সাদিয়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্যাক্সোফোনে সুর তোলেন ৷ দুর্গাপুজো কিংবা যে কোনও অনুষ্ঠানে তাঁর সুরে থমকে যায় মানুষের পা ৷ কয়েক মুহূর্তেই ভিড় জমে যায় তাঁর সামনে ৷ ভেবেছিলেন, ভোটে সেই স্যাক্সোফোন প্রতীকেই লড়বেন ৷ কিন্তু, তা হয়নি ৷ কারণ, তেমন কোনও প্রতীক নির্বাচন কমিশনের কাছে নেই ৷
আরও পড়ুন : Plastic Rice in Mid Day Meal : চাঁচলে মিড-ডে মিলে প্লাস্টিকের চাল মেশানোর অভিযোগ, নমুনা চেয়ে পাঠালেন বিডিও
ইংরেজবাজার পৌরসভার 15 নং ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী সাদিয়া (Saxophonist Sadia Khatun Independent Candidate from Ward No 15 in English Bazar) ৷ স্যাক্সোফোনের বদলে ঢোল তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ৷ সেই প্রতীক নিয়েই প্রচারে বেরিয়েছেন সাদিয়া খাতুন ৷ ঢোল বাজিয়ে চলছে তাঁর প্রচার ৷ মানুষের কাছে নত হয়ে ভোট চাইছেন ৷ কিন্তু, এখনও বিপক্ষ প্রার্থীদের কথার তীরে সেভাবে বিঁধতে পারেননি ৷ মেয়ে যে এখনও ভোট রাজনীতিতে পোক্ত হতে পারেনি, তা বিলক্ষণ জানেন সফি শেখ ৷ তবে, তিনিও এক্ষেত্রে সড়গড় নন ৷ কারণ, সুর আর রাজনীতির মধ্যে যে বিস্তর ফারাক ৷
আরও পড়ুন : TMC Inner Clash : হরিশ্চন্দ্রপুরে পুকুর কাটাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
15 নং ওয়ার্ডে এ বার ছ’জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৷ প্রধান চারটি দলের সঙ্গে রয়েছেন দুই নির্দল ৷ তাঁদের মধ্যে একজন সাদিয়া ৷ এই ওয়ার্ড থেকে জিতেই ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ এবার তাঁর স্ত্রী গায়ত্রী ঘোষ এই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী ৷ ধারে-ভারে অনেকটাই এগিয়ে ৷ প্রচারে বেরিয়ে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে সাদিয়া জানালেন, “নির্বাচনের ময়দানে নেমে খুব ভাল লাগছে ৷ আমি মানুষের পাশে থাকতে চাই, মানুষের কাজ করতে চাই, মানুষকে ভালবাসতে চাই ৷ এর বেশি কিছু চাই না ৷”
অন্যদিকে সফি সাহেব বলছেন, “15 নং ওয়ার্ডে এর আগে অনেক কাউন্সিলর এসেছেন ৷ কিন্তু, তাঁদের কারও কাজকর্মের ধরন আমাদের পছন্দ নয় ৷ তাঁরা এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাও নন ৷ ফলে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কোনও কাজ হয় না ৷ এলাকার প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করার জন্যই মেয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছে ৷ প্রচারে বেশ ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে ৷”
27 ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন, 15 নং ওয়ার্ডের প্রায় 3600 ভোটার কার পাশে দাঁড়াবে তা সময় বলবে ৷ তবে, নির্দল সাদিয়ার প্রচারে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনেক মানুষকেই অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে ৷ যা শাসকদল বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলির কাছে বেশ চিন্তার ৷