মালদা, ৩ ফেব্রুয়ারি : পুরাতন মালদার ধুমাদিঘি হাটে গণবিবাহের আসরে হামলার ঘটনায় রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ । বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আয়োজিত গণবিবাহের অনুষ্ঠানে সশস্ত্র ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠে । পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে এই হামলা হল সে নিযেও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পদস্থ নেতারা ।
এই ঘটনার সঙ্গে শাসকদলের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি সংগঠনের নেতৃত্ব ৷ রবিবার পুরাতন মালদার আট মাইল এলাকার ধুমাদিঘি হাটে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আয়োজিত গণ বিবাহের অনুষ্ঠানে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা হয় । এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ নিজেদের দপ্তরে এক সাংবাদিক বৈঠক করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতৃত্ব ৷ গতকালের ঘটনায় ইতিমধ্যেই সংগঠনের পক্ষ থেকে মালদা থানায় JDP নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও আজ সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্বহিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয় ।
সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় নেতা অচ্যুতানন্দ কর বলেন, “গতকাল আমরা পুলিশ ও প্রশাসনকে আগাম সব জানিয়ে আট মাইল ধুমাদিঘি হাটে গণবিবাহের আয়োজন করেছিলাম ৷ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রচুর পুলিশও মোতায়েন ছিল৷ যে আদিবাসীরা আর্থিক সংকটের জন্য বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পারে না, মূলত তাদেরই বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ আদিবাসী সমাজের রীতি মেনেই বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল৷ সেখানে কোনও আদিবাসীর ধর্মান্তরণ করা হয়নি৷ বিয়ের অনুষ্ঠান ঠিকভাবেই চলছিল৷ " তিনি জানান, বেলা দুটো নাগাদ বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতারা খবর পান, ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি এই বিয়ের অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছে৷ অচ্যুতানন্দ বলেন, "কিছুক্ষণ পরেই আমরা খবর পাই, প্রায় দেড়শো সশস্ত্র আদিবাসী যুবক বিয়ের অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ে৷ তাদের হাতে তরোয়াল, তির, লাঠি ছিল । তারা রীতিমতো তাণ্ডব চালায় ৷ ভেঙে দেওয়া হয় আদিবাসীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি বিবাহ মণ্ডপ৷ আমাদের প্রশ্ন, একশোরও বেশি পুলিশের উপস্থিতিতে তারা কীভাবে আসরে ঢুকল৷ পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই তারা অনুষ্ঠানস্থলে চলে আসে । আমাদের তরফে প্রতিরোধ পেয়ে তারা তাণ্ডব চালিয়ে চলে যায়৷ "
এই ঘটনায় বিশ্বহিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ গতকালের ঘটনায় চারজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে বলেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা দাবি করেছেন । অচ্যুতানন্দ বলেন, "আমরা আদিবাসী সমাজের রীতির বিরুদ্ধে নই ৷ তাদের কেউ কেউ ভুল বোঝাচ্ছে ৷ গতকাল যা হয়েছে, তার পিছনে আমরা গভীর ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি৷ আদিবাসীরা হিন্দু ধর্মেরই অন্তর্ভুক্ত ৷ তাদের হিন্দুধর্ম থেকে পৃথক করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে৷ সারণা কোনও আলাদা ধর্ম নয়৷ সেটা হিন্দু ধর্মেরই অংশ৷ যেমন শিখ, বৈষ্ণব, রামানুজ সম্প্রদায় রয়েছে, তেমনই আদিবাসীদের সারণা৷"
গতকালের ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনকে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন নিয়ে তাঁরা জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করবে বলে জানান৷ গতকালের ঘটনা নিয়ে পুলিশের একাংশের মধ্যেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের গণবিবাহের আসরে এধরনের হামলা হতে পারে বলে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল৷ প্রশ্ন উঠছে, সেক্ষেত্রে পুলিশ আগাম তেমন ব্যবস্থা নিল না কেন? প্রথমে শুধুমাত্র মালদা থানার পুলিশবাহিনীকেই ওই এলাকায় দেখা গেছিল৷ পরবর্তীতে ঝামেলা শুরু হওয়ার পর অবশ্য পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়৷ পুলিশের একাংশের মতে, প্রথম থেকেই সেখানে আরও বেশি পুলিশ থাকলে এই ঝামেলা এড়ানো যেত৷