মালদা, ২২ ফেব্রুয়ারি : মালদা জেলার প্রধান অর্থনৈতিক ফসল আম। এবার জেলার প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। আম চাষে যেমন ভালো শীত প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন ধীরে ধীরে তাপমাত্রার বৃদ্ধি। মূলত পৌষ মাসের শুরুতেই গাছে মুকুল তৈরি হতে শুরু করে। মাঘ মাসে দু'এক পশলা বৃষ্টি মুকুলকে স্বাস্থ্যবান করে তোলে। মাঘ মাসের শেষের দিক থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলেই মুকুল পল্লবগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এবার ঠিক এমনই আবহাওয়া রয়েছে এই জেলায়। ফলে ভালো ফলনের আশায় দিন গুনছে চাষিরা।
এই বিষয়ে, জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগের উপ অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী বলেন, "বিগত ৬-৭ বছর ধরে আমরা লক্ষ্য করছি, প্রতি বছরই আমের মুকুল ভালো আসছে। আগে এটা ছিল না। তখন এক বছর ফলন বেশি হলে পরের বছর ফলন কম হত। বাগান পরিচর্যার মান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবধান অনেকটা ঘুচে গেছে। এবছর প্রথমদিকে মুকুল খুব একটা ভালো আসছিল না। আমরাও চিন্তায় পড়ে গেছিলাম। ১০ দিন আগেও শুধুমাত্র লক্ষ্মণভোগ ছাড়া অন্য গাছগুলিতে তেমন মুকুল দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু দিনের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিটা বদলে গেছে। ফলে গাছে ভালো মুকুল এসেছে। আশ্বিনা ও আম্রপালি প্রজাতির গাছেও মুকুল একটু কম এসেছে। ঠান্ডা ভালো পড়লে মুকুল তৈরি হতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে যখন দিনের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছোয়, তখন মুকুল বেরোতে শুরু করে। এখন জেলার তাপমাত্রা মুকুল বেরোনোর পক্ষে আদর্শ। ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ মুকুল বেরিয়ে এসেছে। এই সময় কিছু কিছু মুকুলে ফুলও ফুটে গেছে। তবে গাছে কোনও ধরনের কীটনাশক ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কারণ, এখন গাছে কীটনাশক স্প্রে করা হলে মুকুলে পরাগ সংযোগকারী মাছি মরে যাবে। মাছি কমে গেলে মুকুল থেকে আম তৈরি হবে না। এখন গাছে শুধু জল দিতে হবে। গুটি ধরার পর গাছে খাবারও ব্যবহার করা যেতে পারে। গুটি ধরে যাওয়ার পর প্রয়োজন অনুযায়ী কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এই সপ্তাহের শেষ দিকে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে পরাগসংযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। মুকুল থেকে ফুলও ঝরে পড়তে পারে। কিন্তু এক-দেড়দিন বৃষ্টি হলে কোনও সমস্যা নেই।"
রাহুলবাবু জানান, মালদার আমে তুলনামূলকভাবে কীটনাশক কম ব্যবহার করা হয়। মহারাষ্ট্র কিংবা উত্তরপ্রদেশে মরশুমে ১০ বার স্প্রে করা হয়। সেখানে এই জেলায় মরশুমে মাত্র ৪ বার কীটনাশক স্প্রে করা হয়। কিন্তু এখানে একটি সমস্যা রয়েছে। পরিপক্ক হওয়ার আগেই অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আম পাকিয়ে দেন। এতে মালদার আমের সুনাম অনেকটা নষ্ট হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের বার বার সচেতন করছেন।
এই বিষয়ে, ইংরেজবাজারের এক আমচাষি শিবনাথ ঘোষ বলেন, "আশা করছি এবার আমের ভালো উৎপাদন হবে। ইতিমধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ মুকুল বেরিয়ে এসেছে। এবারের আবহাওয়া চাষের পক্ষে খুব অনুকূল। মাঘ মাসের শুরুতে যে বৃষ্টি হয়েছিল, তাতে খুব ভালো মুকুল হয়েছে। মুকুল থেকে ফুল বেরিয়ে এলে যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে চাষের কোনও সমস্যা নেই। তবে ফুল ফোটার আগে বৃষ্টি হলে মুকুল কালো হয়ে যেতে পারে। তাতে ছত্রাকের আক্রমণেরও আশঙ্কা রয়েছে। এখন গাছে কীটনাশক স্প্রে শুরু করা হয়েছে।"