মালদা, 13 সেপ্টেম্বর : আদিবাসী অধ্যুষিত হবিবপুর ব্লক (Durga Puja 2022) ৷ আদিবাসী অধ্যুষিত হবিবপুর ব্লক ৷ কেন্দপুকুর স্ট্যান্ড থেকে খানিকটা ভিতরে গেলেই ভাঙাদিঘি গ্রাম ৷ গ্রামে ৩৫টি পরিবারের প্রত্যেকেই আদিবাসী ৷ এই গ্রামেই মূর্তি তুলে দুর্গাপুজো করে আসছেন আদিবাসী মানুষজন ৷ যা তাঁদের প্রাচীন রীতির পরিপন্থী ৷ কারণ, আদিবাসীদের মধ্যে সাধারণত দুর্গা বন্দনা করা হয় না ৷ তাঁদের কাছে অসুর দেবীর থেকেও শক্তিশালী, ক্ষমতাবান ৷ কিন্তু নিজেদের নিয়ম নিজেরাই ভেঙে দিয়ে হবিবপুর ব্লকে দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠেন আদিবাসীরা ৷ এই পুজোর মধ্যে প্রকৃতি বন্দনা করেন তাঁরা ৷
নিজেদের রীতিকে তোয়াক্কা না-করে গ্রামের আদিবাসী মানুষজন দেবী আরাধনায় এলেন কীভাবে? সে এক অন্য ইতিহাস ৷ পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা বাবুলাল হাঁসদা ৷ মূলত তাঁর পরিবারেরই পুজো এটি ৷ তিনি বলেন, “আমার ঠাকুরদা বাংলাদেশের নাচোল থানার হাকরোল গ্রামে থাকতেন ৷ দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনিই মায়ের পুজো শুরু করেন ৷ তবে মূর্তি নয়, তিনি ঘটপুজো চালু করেছিলেন ৷ আমার বাবাও ঘটপুজো করে এসেছেন ৷ ততদিনে তিনি বাংলাদেশ থেকে এই গ্রামে চলে এসেছেন ৷ তাঁরা প্রয়াত হলে পুজোর দায়িত্ব আমার কাঁধে বর্তায় ৷ একদিন মায়ের স্বপ্নাদেশ পাই, তাঁর মৃন্ময়ী রূপের পুজো করতে হবে ৷ এরপরেই 2000 সালে আমি প্রথম মূর্তিপুজো চালু করি ৷
তবে এই পুজো এখন গ্রামের পুজো হয়ে গিয়েছে ৷ শুধু এই গ্রাম নয়, আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ মায়ের পুজোয় অংশ নেন ৷ কোনও ব্রাহ্মণ নয়, পুজোর পুরোহিত আমিই ৷ কোনও সংস্কৃত মন্ত্র নয়, নিজেদের ভাষাতেই মায়ের পুজো করি ৷ মায়ের কাছে প্রকৃতিকে ভালো রাখার আবেদন জানাই ৷ এবার বেগুনবাড়ি গ্রামের রতন পাল এই পুজোর মূর্তি তৈরি করছেন ৷ আমি চাষবাস করি ৷ মায়ের পুজোর অনেক খরচ ৷ মা’ই তার ব্যবস্থা করে দেন ৷”
আরও পড়ুন: দু’বছর পর বেড়েছে পুজো সংখ্যার বিক্রি, আশায় ব্যবসায়ীরা
আদিবাসী বাবুলাল হাঁসদা মায়ের নামে নিজের বড় মেয়ের নাম রেখেছেন দুর্গামনি হাঁসদা ৷ বাড়ির সামনে টিনের আটচালায় দুর্গার বেদি দেখাশোনার দায়িত্ব তাঁরই ৷ পুজোয় যে আনন্দ হয় তা বোঝা গেল দুর্গামনির কথাতেই ৷ তিনি বলেন, ‘‘পুজোয় খুব আনন্দ করি ৷ ক’দিন সবাই একসঙ্গে মিলে প্রসাদ খাই ৷ নবমীতে খিচুড়ি হয় ৷ সবাই একসঙ্গেই পুজো করি ৷”