ETV Bharat / city

রিঙ্কির বিয়েতে হাত বাড়াল আবদুল্লারা - মালদায় হিন্দু মেয়ের বিয়ে দিল মুসলিমরা

কালিয়াচকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির ৷ এক হিন্দু মেয়ের বিয়ের যাবতীয় আয়োজন করল গ্রামের কয়েকজন মুসলমান যুবক ৷

some-of-muslims-arranged-for-a-marriage-of-hindu-girl-
some-of-muslims-arranged-for-a-marriage-of-hindu-girl-
author img

By

Published : Dec 11, 2020, 10:59 PM IST

মালদা, 11 ডিসেম্বর : স্বামী মারা গিয়েছেন প্রায় 18 বছর আগে ৷ ঘরে কোনও ছেলে নেই ৷ এদিকে দুটি মেয়ে ৷ তারা বড় হয়েছে ৷ অনেক চেষ্টা করে বছর চারেক আগে কোনও আয়োজন ছাড়া বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন মা ৷ ততদিনে ছোটো মেয়ের বিয়ের বয়সও প্রায় হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু এক মেয়ের বিয়ে দিতেই ঘরে যা কিছু ছিল, সব চলে গিয়েছে ৷ কীভাবে ছোটো মেয়ের বিয়ে হবে? কপাল জোড়ে তার পাত্রও জুটে গিয়েছিল ৷ পাত্র বিয়েতে কোনও পণ নেবে না বলেও জানিয়ে দেয় ৷ কিন্তু বিয়ের খরচ জোগাড় হবে কীভাবে? ভেবেই পাচ্ছিলেন না রচনা মণ্ডল ৷ তবে কি টাকার অভাবে রিঙ্কির বিয়ে হবে না ! এই পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে দাঁড়ান গ্রামেরই 7-8 জন যুবক ৷ তাঁরা প্রত্যেকেই মুসলমান ৷ তাঁদেরই চেষ্টায় গতকাল গভীর রাতে বিয়ে হয়েছে রিঙ্কির ৷ আজ সন্ধেয় স্বামীর ঘরে যাবেন তিনি ৷

কালিয়াচকের চরি অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দৌলতটোলা গ্রাম ৷ এই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন বিশ্বনাথ মণ্ডল ৷ প্রায় 18 বছর আগে মারা যান তিনি ৷ দুই মেয়েকে নিয়ে চরম সমস্যায় পড়ে যান রচনাদেবী ৷ কৃষি শ্রমিকের কাজ করে মেয়েদের বড় করে তোলেন তিনি ৷ কিন্তু মেয়েদের বিয়ে ! সেটা কল্পনাতেও আসেনি তাঁর ৷ তবে বড় মেয়ের বিয়ের সময় পড়শিরা কিছু সাহায্য করেছিল ৷ তা দিয়ে কোনওরকমে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছিলেন ৷ কিন্তু তিনি তো মা ৷ তাঁরও তো ইচ্ছে হয়, একটু আয়োজন করে মেয়ের বিয়ে দেবেন ৷ তাই ছোটো মেয়ে রিঙ্কির পাত্র পেয়েই তিনি যোগাযোগ করেন গ্রামের আবদুল্লা, আলমগীর, ইলিয়াস, হাবিবদের সঙ্গে ৷ রিঙ্কির বিয়ের জন্য তাদের সাহায্য চান ৷ এগিয়ে আসে ওই যুবকরাও ৷ নিজেরা অর্থ সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা সংগ্রহ করা হয় ৷ উঠেও যায় বেশ কিছু টাকা ৷ তা দিয়েই গতকাল রাতে পূর্ণ আয়োজনে বিয়ে হয়েছে রিঙ্কির ৷ রাত জেগে বিয়ের সব ব্যবস্থা করেছেন আবদুল্লারা ৷ ছাদনাতলা সাজানো থেকে শুরু করে অতিথিদের আপ্যায়ন, খামতি ছিল না কোনও কিছুতেই ৷ রাতের স্তব্ধতা ভেঙে দিয়েছিল বিয়ের বাজনা ৷

আবদুল্লা বলেন, “রিঙ্কিরা সত্যিই বড্ড অসহায় ৷ তাই ওর বিয়ে যাতে সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়, তার জন্য আমাদের এখানে আসা ৷ এই বিয়ের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সবকিছুর দায়িত্বই ছিল আমাদের ৷ বিয়ের আয়োজন, পোশাক, বরযাত্রীদের আপ্যায়ন, অতিথিদের খাবার খাওয়ানো সহ যাবতীয় ব্যবস্থা আমরাই করেছি ৷ রিঙ্কির মা আমাদের কাছে ওর বিয়েতে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন ৷ রিংকি আমাদেরও বোন ৷ দাদা হয়ে বোনের বিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য ৷ তাই আমরা দ্বিতীয়বার কিছু ভাবিনি ৷ রিঙ্কির মাকে কথা দিয়েছিলাম, ওর বিয়ের যাবতীয় দায়িত্ব আমাদের ৷ বোনের বিয়ে যাতে ঠিকভাবে হয়, তার যাবতীয় চেষ্টা করেছি ৷”

রচনাদেবী বলেন, “খুব কষ্ট করে বড় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছিলাম ৷ পরের মেয়েটার বিয়ে ঠিক করেছিলাম ৷ কিন্তু কীভাবে বিয়ে দেব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না ৷ এই অবস্থায় এলাকার কয়েকটি ছেলে আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ৷ ওদের জন্যই বিয়েটা দিতে পারলাম ৷ আমার স্বামী নেই, ছেলেও নেই ৷ ঘরে দুটোই মেয়ে ৷ হাত-পা ছাড়া আমার ঘরে কিছুই নেই ৷ এই ছেলেদের জন্যই আমি মেয়েটার বিয়ে দিতে পারলাম ৷ ওরাই আমার মেয়ের বিয়ের সব ব্যবস্থা করেছে ৷ ওদের জন্য আমার মানসিক চাপ পুরোপুরি কেটে গিয়েছে ৷”

মালদা, 11 ডিসেম্বর : স্বামী মারা গিয়েছেন প্রায় 18 বছর আগে ৷ ঘরে কোনও ছেলে নেই ৷ এদিকে দুটি মেয়ে ৷ তারা বড় হয়েছে ৷ অনেক চেষ্টা করে বছর চারেক আগে কোনও আয়োজন ছাড়া বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন মা ৷ ততদিনে ছোটো মেয়ের বিয়ের বয়সও প্রায় হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু এক মেয়ের বিয়ে দিতেই ঘরে যা কিছু ছিল, সব চলে গিয়েছে ৷ কীভাবে ছোটো মেয়ের বিয়ে হবে? কপাল জোড়ে তার পাত্রও জুটে গিয়েছিল ৷ পাত্র বিয়েতে কোনও পণ নেবে না বলেও জানিয়ে দেয় ৷ কিন্তু বিয়ের খরচ জোগাড় হবে কীভাবে? ভেবেই পাচ্ছিলেন না রচনা মণ্ডল ৷ তবে কি টাকার অভাবে রিঙ্কির বিয়ে হবে না ! এই পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে দাঁড়ান গ্রামেরই 7-8 জন যুবক ৷ তাঁরা প্রত্যেকেই মুসলমান ৷ তাঁদেরই চেষ্টায় গতকাল গভীর রাতে বিয়ে হয়েছে রিঙ্কির ৷ আজ সন্ধেয় স্বামীর ঘরে যাবেন তিনি ৷

কালিয়াচকের চরি অনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দৌলতটোলা গ্রাম ৷ এই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন বিশ্বনাথ মণ্ডল ৷ প্রায় 18 বছর আগে মারা যান তিনি ৷ দুই মেয়েকে নিয়ে চরম সমস্যায় পড়ে যান রচনাদেবী ৷ কৃষি শ্রমিকের কাজ করে মেয়েদের বড় করে তোলেন তিনি ৷ কিন্তু মেয়েদের বিয়ে ! সেটা কল্পনাতেও আসেনি তাঁর ৷ তবে বড় মেয়ের বিয়ের সময় পড়শিরা কিছু সাহায্য করেছিল ৷ তা দিয়ে কোনওরকমে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছিলেন ৷ কিন্তু তিনি তো মা ৷ তাঁরও তো ইচ্ছে হয়, একটু আয়োজন করে মেয়ের বিয়ে দেবেন ৷ তাই ছোটো মেয়ে রিঙ্কির পাত্র পেয়েই তিনি যোগাযোগ করেন গ্রামের আবদুল্লা, আলমগীর, ইলিয়াস, হাবিবদের সঙ্গে ৷ রিঙ্কির বিয়ের জন্য তাদের সাহায্য চান ৷ এগিয়ে আসে ওই যুবকরাও ৷ নিজেরা অর্থ সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা সংগ্রহ করা হয় ৷ উঠেও যায় বেশ কিছু টাকা ৷ তা দিয়েই গতকাল রাতে পূর্ণ আয়োজনে বিয়ে হয়েছে রিঙ্কির ৷ রাত জেগে বিয়ের সব ব্যবস্থা করেছেন আবদুল্লারা ৷ ছাদনাতলা সাজানো থেকে শুরু করে অতিথিদের আপ্যায়ন, খামতি ছিল না কোনও কিছুতেই ৷ রাতের স্তব্ধতা ভেঙে দিয়েছিল বিয়ের বাজনা ৷

আবদুল্লা বলেন, “রিঙ্কিরা সত্যিই বড্ড অসহায় ৷ তাই ওর বিয়ে যাতে সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়, তার জন্য আমাদের এখানে আসা ৷ এই বিয়ের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সবকিছুর দায়িত্বই ছিল আমাদের ৷ বিয়ের আয়োজন, পোশাক, বরযাত্রীদের আপ্যায়ন, অতিথিদের খাবার খাওয়ানো সহ যাবতীয় ব্যবস্থা আমরাই করেছি ৷ রিঙ্কির মা আমাদের কাছে ওর বিয়েতে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন ৷ রিংকি আমাদেরও বোন ৷ দাদা হয়ে বোনের বিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য ৷ তাই আমরা দ্বিতীয়বার কিছু ভাবিনি ৷ রিঙ্কির মাকে কথা দিয়েছিলাম, ওর বিয়ের যাবতীয় দায়িত্ব আমাদের ৷ বোনের বিয়ে যাতে ঠিকভাবে হয়, তার যাবতীয় চেষ্টা করেছি ৷”

রচনাদেবী বলেন, “খুব কষ্ট করে বড় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছিলাম ৷ পরের মেয়েটার বিয়ে ঠিক করেছিলাম ৷ কিন্তু কীভাবে বিয়ে দেব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না ৷ এই অবস্থায় এলাকার কয়েকটি ছেলে আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ৷ ওদের জন্যই বিয়েটা দিতে পারলাম ৷ আমার স্বামী নেই, ছেলেও নেই ৷ ঘরে দুটোই মেয়ে ৷ হাত-পা ছাড়া আমার ঘরে কিছুই নেই ৷ এই ছেলেদের জন্যই আমি মেয়েটার বিয়ে দিতে পারলাম ৷ ওরাই আমার মেয়ের বিয়ের সব ব্যবস্থা করেছে ৷ ওদের জন্য আমার মানসিক চাপ পুরোপুরি কেটে গিয়েছে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.