মালদা, 13 নভেম্বর : মালদা জেলায় বেআইনি আধার কার্ড তৈরি চক্রের ফের প্রমাণ মিলল ৷ এই চক্রের কারবারিরা এখন হানা দিচ্ছে জেলা প্রশাসনিক ভবনেও ৷ খবর পেয়ে আজ হাতেনাতে এক চক্রীকে ধরেছেন খোদ মহকুমাশাসক ৷ আপাতত আটক করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে ৷ জেলা জুড়ে ভুয়ো আধার কারবারে চিন্তায় প্রশাসন ও পুলিশ ৷ এই চক্রের জাল কতটা ছড়িয়ে রয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে ৷ আরও বড় বিষয়, জেলায় এই চক্রের সঙ্গে জঙ্গি যোগেরও সন্ধান পেয়েছে পুলিশ ৷
উল্লেখ্য, জেলায় প্রথম ভুয়ো আধার চক্রের সন্ধান মেলে হরিশ্চন্দ্রপুরে৷ কিছুদিন আগে এলাকার মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানকার চণ্ডীপুর গ্রামে একটি আধার তৈরির কেন্দ্রে হানা দেয় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷ ওই কেন্দ্র থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় ভুয়ো আধার তৈরির একাধিক সামগ্রী ৷ গ্রেপ্তার করা হয় কেন্দ্রের দুই কর্মী আবদুর রউফ ও অভিজিৎ দাসকে ৷ দু’জনেই হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের তুলসিহাটা গ্রামের বাসিন্দা ৷ তাদের জেরা করে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ জানতে পারে, তারা দিল্লিতে ভুয়ো আধার তৈরির ট্রেনিং নিয়েছিল ৷ প্রত্যেক আধার কার্ড তৈরির জন্য তারা 500 টাকা করে নিত ৷ গোটা ঘটনার গুরুত্ব বুঝে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসে ৷ পুলিশ সুপারের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তভার যায় মালদা সাইবার ক্রাইম থানার হাতে ৷ তদন্তে নেমে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ গত সোমবার রাতে মালদা শহরের রথবাড়ি মোড় থেকে সাদ্দাম হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ৷ তার বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর থানার রঘুনাথগঞ্জের রহমানপুর এলাকায় ৷ আদালতের মাধ্যমে তাকে নিজেদের হাতে নিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যায় সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ ৷ তাকে জেরার ভিত্তিতে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের সবদলপুরের বাসিন্দা, 32 বছর বয়সী জয়দেব সরকারকে ৷ তাকেও আদালতের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ নিজেদের হেপাজতে নেয় ৷ এরই মধ্যে আজ জেলা পঞ্চায়েত ভবনে আধার কার্ড কেন্দ্রে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় এক ব্যক্তিকে ৷ কার্ড করাতে আসা অসংখ্য মানুষকে সে টাকার বিনিময়ে কার্ড করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ৷ লাইনে দাঁড়াতে হবে না ভেবে তার ফাঁদে পা দেয় এক ব্যক্তি ৷ এদিকে, ওই ব্যক্তি যে আধারের লাইনে মানুষকে প্রতারণার চেষ্টা করছে, সেই খবর পৌঁছে যায় সদর মহকুমাশাসক সুরেশচন্দ্র রানোর কাছে ৷ তিনি নিজেই ঘটনাস্থানে এসে ওই ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন ৷ ধৃত ব্যক্তির নাম রতন সিং ৷ বাড়ি পুরাতন মালদার মঙ্গলবাড়ি এলাকায় ৷
মহকুমাশাসক এখনই এনিয়ে বিশদে কিছু বলতে চাননি৷ তিনি বলেন, “এই ব্যক্তি আধার কার্ড তৈরি করে দেওয়ার নামে একজনের কাছ থেকে 400 টাকা নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি৷ তাকে ধরা হয়েছে ৷ এটা পুরোপুরি অবৈধ৷ আমরা এনিয়ে তদন্ত করছি ৷ তবে এই ঘটনার সঙ্গে প্রশাসনের কেউ জড়িত রয়েছে কিনা, তদন্ত না করে তা বলা যাবে না৷” এদিকে রতন সিং নিজের অপরাধ সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করে নিয়েছে ৷ সে আরও স্বীকার করে, লকডাউনের শুরু থেকেই সে আধার কার্ড তৈরি করার নামে এভাবে লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে ৷ তার বক্তব্য, “আধার কার্ড তৈরিতে আবেদন করার জন্য আমি আজ এক ব্যক্তির কাছ থেকে 400 টাকা নিয়েছিলাম ৷ আমি অনলাইনে সেই আবেদন করি ৷ আজ মহকুমাশাসক আমাকে ধরে ফেলেন ৷ তবে এর সঙ্গে অফিসের কেউ যুক্ত নেই ৷ আমি নিজেই এই কাজ করি ৷” মালদা জেলা যে ভুয়ো আধার কার্ড তৈরির ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে তা মেনে নিচ্ছে পুলিশের একাংশ ৷ মহল থেকেই জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি কর্নাটকে NIA-এর হাতে ধৃত লস্কর জঙ্গি মুন্নার কাছ থেকে একাধিক ভুয়ো আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে ৷ তদন্ত চালিয়ে NIA জানতে পেরেছে, সেই কার্ডগুলির বেশিরভাগই মালদায় তৈরি করা হয়েছিল ৷ লকডাউনের মধ্যে মুন্না মালদাতেও এসেছিল বলে জানতে পেরেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা৷ ফলে গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে জেলা পুলিশ ৷ পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, “আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি৷ এই ঘটনার তদন্তে বেশ কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে৷ চক্রীদের খোঁজে প্রয়োজনে আমরা ভিনজেলাতেও তল্লাশিতে যেতে পারি ৷”