ETV Bharat / city

গৌড়বঙ্গে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ফাইল চুরির চেষ্টার অভিযোগ

গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ফাইল চুরির চেষ্টার অভিযোগ উপাচার্যের। পালটা অভিযোগ দায়ের।

গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়
author img

By

Published : Mar 16, 2019, 3:42 AM IST

মালদা, ১৬ মার্চ : "উপাচার্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন। উনি যে কোনও উপায়ে আমার সম্মানহানির চেষ্টা করছেন। আমার ভবিষ্যৎ শেষ করার চেষ্টা করছেন।" রাতের অন্ধকারে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইল লোপাটের চেষ্টায় অভিযুক্ত এক অধ্যাপক গতকাল উপাচার্যের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন। যদিও এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি উপাচার্য। তবে গতকাল সন্ধ্যায় এনিয়ে ইংরেজবাজার থানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্ত অধ্যাপক একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ, পরশুরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলমারি থেকে রুশার (RUSA) ফাইল লোপাট করতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন রসায়ন বিভাগের এক ছাত্র। নিরাপত্তারক্ষীরা ওই ছাত্রকে ধরে রেখে খবর দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে। কিন্তু রেজিস্ট্রার পরশু মালদার বাইরে ছিলেন। তিনি গোটা বিষয়টি উপাচার্য স্বাগত সেনকে জানান। খবর পেয়ে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান উপাচার্য। খবর দেওয়া হয় ইংরেজবাজার থানায়। পুলিশের উপস্থিতিতে ফাইলটি নিজের হেপাজতে নেন উপাচার্য। তাঁর অভিযোগ, এই ঘটনার পিছনে রসায়ন বিভাগের এক অধ্যাপকের হাত রয়েছে। নাম না করলেও বোঝা যায় অভিযোগের তির রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সৌগত পালের দিকে।

গতকাল উপাচার্য জানান, "ঘটনাটি পরশু রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। গত ১২ মার্চ আমরা একটি চিঠি পাই। ওই চিঠিতে সম্ভবত রসায়ন বিভাগেরই কোনও ছাত্র জানান, ওই বিভাগে মাঝরাত পর্যন্ত লোকজন থাকছে। সেখানে অসামাজিক কাজকর্ম হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। এদিকে নিরাপত্তারক্ষীরাও জানায়, অনেক রাতে কিছু মানুষ কিছু ফাইল ভরতি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তারক্ষীদের জানিয়ে দিই, রাতে সন্দেহজনক কেউ ব্যাগ নিয়ে বেরোলে তারা যেন সেই ব্যাগ পরীক্ষা করে দেখে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ নিরাপত্তারক্ষীরা জানায়, এক ছাত্র একটি ব্যাগ ভরতি ফাইল নিয়ে যাচ্ছিল। নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ফাইল দেখাতে বললে সে ফাইল দেখায়। তারপর সেসব নিয়ে ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে চলে যায়। ওই ছাত্র হয়ত রসায়ন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। ওই বিভাগের এক অধ্যাপকও রাতে তাঁর কক্ষে ছিলেন। এই খবর পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। আসেন কিছু অধ্যাপক অধ্যাপিকাও। আমরা সবাই দেখি, একটি ফাইল ওই অধ্যাপকের ঘরের দরজার কোনে পড়ে রয়েছে। ওই অধ্যাপক একসময় রুশার আহ্বায়ক ছিলেন। সেই সময় তাঁর কাছে থাকা সমস্ত ফাইল তাঁকে ১৩ মার্চের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি সেদিনের মধ্যে সব ফাইল জমা দিতে পারবেন না বলে রেজিস্ট্রারকে মেইল করেন। কিন্তু তার পরদিন রাত সাড়ে ১০টার সময় যদি কেউ কোনও ফাইল নিয়ে বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যায়, তবে তা কাম্য নয়। এই ঘটনার পর গতকাল আমরা সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় জানাই। পুলিশের উপস্থিতিতে ওই অধ্যাপকের ঘর থেকে পাওয়া ফাইলটি সিল করা হয়। ঘটনার তদন্তের জন্য আমি একটি কমিটিও গঠন করেছি।" উপাচার্য আজ আরও বলেন, "উপাচার্য পরিবর্তনের সময় রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে উধাও হয়ে যাওয়া আরও অনেক ফাইল এখনও পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার সঙ্গে পুরোনো সেই ঘটনার কোনও যোগ রয়েছে কী না সেটাও আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এমনও হতে পারে, এখনও পর্যন্ত যে ফাইলগুলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেসব রুশা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার দপ্তরের ফাইল। পূর্বতন উপাচার্যের আমলে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশা সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। যে কারণে রুশা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দেয়। এখনও আমাকে তার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অর্থের অভাবে আমরা অনেককে প্রাপ্য টাকা দিতে পারছি না।"

এদিকে উপাচার্যের তির যে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে, তিনি রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সৌগত পাল। সৌগতবাবুর দাবি, "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে UG CBCS (choice based credit system) চালু হয়েছে৷ গতকাল সন্ধে ৭-৭.৩০ নাগাদ আমি এক স্কলারের সঙ্গে সেই স্কিম নিয়েই কাজ করছিলাম। ওই স্কিমে সিলেবাস পরিবর্তনের কাজ চলছিল। সাড়ে ৭টা নাগাদ আমরা সবাই চা খেতে যাই। চা খাওয়ার পর আমি ছাত্রকে বলি, আজ আর কাজ করব না। রাতে বাড়িতে বাকি কাজটা করব। আমি তাকে আমার ল্যাপটপটা বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলি। আমি তাকে একথা বলে বাড়ি চলে যাই। এই রিসার্চ যদি অসামাজিক কাজের মধ্যে পড়ে তাহলে সেটা আমার জানা নেই। আর মাঝরাত পর্যন্ত বিভাগে কাজ চলার যে কথা বলা হচ্ছে সেটা শুধুমাত্র অভিযোগ। আমি জানি না একথা উনি কেন বলছেন। তবে উনি যে এসব কেন বলছেন তা আমার কাছে পরিষ্কার। উনি যে কোনও উপায়ে আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করছেন। আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাইছেন। উপাচার্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছেন। উনি যা করবেন, সেটাই সবাইকে মেনে নিতে হবে। কোনও কথা বলা যাবে না। কোনও ছাত্রের হাত দিয়ে ফাইল বাইরে যাওয়া আর বই বাইরে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। পরশু আমি একাধিকবার আমার ল্যাপটপের ব্যাগ তল্লাশি করার জন্য আবেদন করেছি। পুলিশের সামনেই সেই আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু আমার আবেদনে সাড়া দেওয়া হয়নি। রিসার্চের বাইরে আমার ছাত্ররা কোনও ফাইলে হাত দেয় না। কিন্তু যা হয়েছে, আমি মনে করি তা চরম অনৈতিক। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক উপাচার্য, তাই এই অনৈতিক কাজের দায় তাঁকেই নিতে হবে।"

গোটা ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় সৌগতবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট অফিসার রাজীব পুততুণ্ডর। একই সময় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন অধ্যাপক সৌগত পালও। পুলিশ জানিয়েছে, দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হচ্ছে।

মালদা, ১৬ মার্চ : "উপাচার্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন। উনি যে কোনও উপায়ে আমার সম্মানহানির চেষ্টা করছেন। আমার ভবিষ্যৎ শেষ করার চেষ্টা করছেন।" রাতের অন্ধকারে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইল লোপাটের চেষ্টায় অভিযুক্ত এক অধ্যাপক গতকাল উপাচার্যের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন। যদিও এনিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি উপাচার্য। তবে গতকাল সন্ধ্যায় এনিয়ে ইংরেজবাজার থানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্ত অধ্যাপক একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ, পরশুরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলমারি থেকে রুশার (RUSA) ফাইল লোপাট করতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন রসায়ন বিভাগের এক ছাত্র। নিরাপত্তারক্ষীরা ওই ছাত্রকে ধরে রেখে খবর দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে। কিন্তু রেজিস্ট্রার পরশু মালদার বাইরে ছিলেন। তিনি গোটা বিষয়টি উপাচার্য স্বাগত সেনকে জানান। খবর পেয়ে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান উপাচার্য। খবর দেওয়া হয় ইংরেজবাজার থানায়। পুলিশের উপস্থিতিতে ফাইলটি নিজের হেপাজতে নেন উপাচার্য। তাঁর অভিযোগ, এই ঘটনার পিছনে রসায়ন বিভাগের এক অধ্যাপকের হাত রয়েছে। নাম না করলেও বোঝা যায় অভিযোগের তির রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সৌগত পালের দিকে।

গতকাল উপাচার্য জানান, "ঘটনাটি পরশু রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ। গত ১২ মার্চ আমরা একটি চিঠি পাই। ওই চিঠিতে সম্ভবত রসায়ন বিভাগেরই কোনও ছাত্র জানান, ওই বিভাগে মাঝরাত পর্যন্ত লোকজন থাকছে। সেখানে অসামাজিক কাজকর্ম হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। এদিকে নিরাপত্তারক্ষীরাও জানায়, অনেক রাতে কিছু মানুষ কিছু ফাইল ভরতি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তারক্ষীদের জানিয়ে দিই, রাতে সন্দেহজনক কেউ ব্যাগ নিয়ে বেরোলে তারা যেন সেই ব্যাগ পরীক্ষা করে দেখে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ নিরাপত্তারক্ষীরা জানায়, এক ছাত্র একটি ব্যাগ ভরতি ফাইল নিয়ে যাচ্ছিল। নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ফাইল দেখাতে বললে সে ফাইল দেখায়। তারপর সেসব নিয়ে ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে চলে যায়। ওই ছাত্র হয়ত রসায়ন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত। ওই বিভাগের এক অধ্যাপকও রাতে তাঁর কক্ষে ছিলেন। এই খবর পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। আসেন কিছু অধ্যাপক অধ্যাপিকাও। আমরা সবাই দেখি, একটি ফাইল ওই অধ্যাপকের ঘরের দরজার কোনে পড়ে রয়েছে। ওই অধ্যাপক একসময় রুশার আহ্বায়ক ছিলেন। সেই সময় তাঁর কাছে থাকা সমস্ত ফাইল তাঁকে ১৩ মার্চের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি সেদিনের মধ্যে সব ফাইল জমা দিতে পারবেন না বলে রেজিস্ট্রারকে মেইল করেন। কিন্তু তার পরদিন রাত সাড়ে ১০টার সময় যদি কেউ কোনও ফাইল নিয়ে বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যায়, তবে তা কাম্য নয়। এই ঘটনার পর গতকাল আমরা সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় জানাই। পুলিশের উপস্থিতিতে ওই অধ্যাপকের ঘর থেকে পাওয়া ফাইলটি সিল করা হয়। ঘটনার তদন্তের জন্য আমি একটি কমিটিও গঠন করেছি।" উপাচার্য আজ আরও বলেন, "উপাচার্য পরিবর্তনের সময় রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে উধাও হয়ে যাওয়া আরও অনেক ফাইল এখনও পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার সঙ্গে পুরোনো সেই ঘটনার কোনও যোগ রয়েছে কী না সেটাও আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এমনও হতে পারে, এখনও পর্যন্ত যে ফাইলগুলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেসব রুশা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার দপ্তরের ফাইল। পূর্বতন উপাচার্যের আমলে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশা সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। যে কারণে রুশা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দেয়। এখনও আমাকে তার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অর্থের অভাবে আমরা অনেককে প্রাপ্য টাকা দিতে পারছি না।"

এদিকে উপাচার্যের তির যে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে, তিনি রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সৌগত পাল। সৌগতবাবুর দাবি, "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে UG CBCS (choice based credit system) চালু হয়েছে৷ গতকাল সন্ধে ৭-৭.৩০ নাগাদ আমি এক স্কলারের সঙ্গে সেই স্কিম নিয়েই কাজ করছিলাম। ওই স্কিমে সিলেবাস পরিবর্তনের কাজ চলছিল। সাড়ে ৭টা নাগাদ আমরা সবাই চা খেতে যাই। চা খাওয়ার পর আমি ছাত্রকে বলি, আজ আর কাজ করব না। রাতে বাড়িতে বাকি কাজটা করব। আমি তাকে আমার ল্যাপটপটা বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলি। আমি তাকে একথা বলে বাড়ি চলে যাই। এই রিসার্চ যদি অসামাজিক কাজের মধ্যে পড়ে তাহলে সেটা আমার জানা নেই। আর মাঝরাত পর্যন্ত বিভাগে কাজ চলার যে কথা বলা হচ্ছে সেটা শুধুমাত্র অভিযোগ। আমি জানি না একথা উনি কেন বলছেন। তবে উনি যে এসব কেন বলছেন তা আমার কাছে পরিষ্কার। উনি যে কোনও উপায়ে আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করছেন। আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাইছেন। উপাচার্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছেন। উনি যা করবেন, সেটাই সবাইকে মেনে নিতে হবে। কোনও কথা বলা যাবে না। কোনও ছাত্রের হাত দিয়ে ফাইল বাইরে যাওয়া আর বই বাইরে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। পরশু আমি একাধিকবার আমার ল্যাপটপের ব্যাগ তল্লাশি করার জন্য আবেদন করেছি। পুলিশের সামনেই সেই আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু আমার আবেদনে সাড়া দেওয়া হয়নি। রিসার্চের বাইরে আমার ছাত্ররা কোনও ফাইলে হাত দেয় না। কিন্তু যা হয়েছে, আমি মনে করি তা চরম অনৈতিক। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক উপাচার্য, তাই এই অনৈতিক কাজের দায় তাঁকেই নিতে হবে।"

গোটা ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় সৌগতবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট অফিসার রাজীব পুততুণ্ডর। একই সময় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন অধ্যাপক সৌগত পালও। পুলিশ জানিয়েছে, দুটি অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হচ্ছে।

Intro:মালদা, ২৪ ডিসেম্বর : কাঁদতে কাঁদতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসছেন বিদায়ি রেজিস্ট্রার৷ হঠাৎ বুকে হাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই বসে পড়লেন তিনি৷ অসহ্য ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে তাঁর মুখ৷ সেই দৃশ্য দেখতে পেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে পড়েছেন কিছু পড়ুয়া৷ শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের মোটরবাইকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে৷ সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করে নেওয়া হয় তাঁকে৷ সরবিট্রেট জিভের তলায় দিয়ে মুখে পরিয়ে দেওয়া হয় অক্সিজেনের মাস্ক৷ চালু করা হয় স্যালাইন৷ অভূতপূর্ব এই ছবি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের৷ অসুস্থ বোধ করার আগেই অবশ্য বিদায়ি রেজিস্ট্রার আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার৷ এর পর তাঁকে শো-কজ করা সহ তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হতে পারে৷ Body:গত ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠতে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সাধনকুমার সাহাকে৷ কী কারণে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তা অবশ্য জানাতে চাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত সেন৷ তিনি শুধু জানিয়েছিলেন, পারিবারিক কারণে সাধনবাবু নিজেই রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন৷ তাই তাঁকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক বিপ্লব গিরিকে৷ সেদিন উপাচার্য জানিয়েছিলেন, সোমবার বিপ্লববাবু দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন৷ একই বক্তব্য দিয়েছিলেন বিপ্লববাবুও৷ যদিও শনিবার সকালেই শনিবার সকালেই সাধনবাবু রেজিস্ট্রারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন৷ সেদিন থেকে শুরু হয় রেজিস্ট্রার বিভাগের সমস্ত নথি হস্তান্তরের পালা৷ আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেই পালা তখনও চলছে৷ রেজিস্ট্রার বিভাগে ভিডিয়ো ক্যামেরার সামনে ফাইলের স্তুপ৷ ঘরে রয়েছেন বিপ্লববাবু, সাধনবাবু, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সপেকটর অফ কলেজেস্ অপূর্ব চক্রবর্তী সহ একাধিক কর্মী৷ সেখানেই সাধনবাবুকে চুপ করে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল৷
         নথিপত্র হস্তান্তরে এত সময় লাগছে কেন? প্রশ্নের উত্তরে বিপ্লববাবু জানান, “রেজিস্ট্রার দপ্তরে অনেক নথি রয়েছে৷ আমরা সমস্ত পেপার বুঝে নেব৷ কত পেপার রয়েছে তা আমিও জানিনা৷ সবে মাত্র জয়েন করেছি৷ সেসব একটা একটা করে বুঝে নিচ্ছি৷” বিপ্লববাবু আমরা বলতে কাকে কাকে বুঝিয়েছেন, তা অবশ্য খোলসা করেননি৷ তবে টানা দেড়দিন ধরে ভিডিয়ো ক্যামেরার সামনে নথি হস্তান্তর এর আগে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে কিনা তা মনে করতে পারছেন না অনেক অধ্যাপকও৷
         ওই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সাধনবাবু জানিয়েছিলেন, শনিবার সারাদিন তিনি নথি হস্তান্তরের সময় বসে ছিলেন৷ গতকাল তিনি কিছুটা অসুস্থ ছিলেন৷ তার উপর এসএসসি দপ্তরে তাঁর কাজ ছিল৷ আজও তিনি অসুস্থ৷ তবু নথি হস্তান্তরের নামে সকাল থেকে তাঁকে ফের বসিয়ে রাখা হয়েছে৷ তাঁর মনে হচ্ছে, রেজিস্ট্রার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে তিনি অপরাধ করে ফেলেছিলেন৷ তখনই সাধনবাবু জানান, তাঁর আশঙ্কা, তিনি কোনও কোনও বিষয়ে কথা বলেছিলেন৷ যা অনেকের পছন্দ নয়৷ সেই কারণে তিনি আশঙ্কা করছেন, তাঁর উপর শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে৷ কারণ, কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসার পরিবর্তন করা হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে নথি হস্তান্তরে এত কিছু করা হয়নি৷ তিনিও যখন রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব নেন, তখন তাঁকে শুধুমাত্র চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ বাস্তবে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও আধিকারিকের পরিবর্তনের সময় এমনভাবে নথি হস্তান্তরের ঘটনা ঘটেনি৷ সাধনবাবুকে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তিনি সমস্ত ফাইল বুঝিয়ে দিতে পারছেন না৷ উত্তরে তিনি বলেন, ফাইল তিনি দেখাশোনা করতেন না৷ রেজিস্ট্রার বিভাগের কর্মীরাই সমস্ত ফাইল দেখাশোনা করেন৷ কর্মীরা সেই সব ফাইল নতুন রেজিস্ট্রারকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন৷ তিনি কেন তা বুঝতে পারছেন না তা তাঁর জানা নেই৷
         এর কিছুক্ষণ পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় সাধনবাবুকে৷ তিনি বলেন, তিনি অসুস্থ৷ তা সত্বেও তাঁকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁকে কোনও চিকিৎসক দেখতে আসেননি৷ উপাচার্যকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যেন তাঁর সামাজিক সম্মান নষ্ট না করেন৷ কিন্তু উপাচার্য যেভাবে নথিপত্র হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন, তা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না৷ এতে তাঁর সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে৷ তিনি তফশিলি জাতিভুক্ত বলেই তাঁকে এভাবে অসম্মান করা হচ্ছে৷
Conclusion:গোটা ঘটনায় উপাচার্য স্বাগত সেন জানান, সাধনবাবুর অসুস্থ হয়ে যাওয়ার খবর তিনি পাননি৷ তাঁর যাতে কোনও সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন না হয় তা দেখা হবে৷ তিনি গোটা বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন৷
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.