মালদা, 20 মে : ভিনরাজ্য থেকে এলাকায় ফিরেছেন শ্রমিকরা ৷ প্রশাসনের নির্দেশ মেনে তাঁরা সবাই প্রথমে থানায় যান ৷ থানা থেকে তাঁদের পাঠানো হয় কোয়ারানটিন সেন্টারে ৷ সরকারি নির্দেশ মেনে সেখানেই রয়েছেন তাঁরা ৷ কিন্তু সেখানে খাবার মিলছে না বলে অভিযোগ ৷ ফলে কার্যত অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে তাঁদের অনেককে ৷ এদিকে প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করবে গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ কারও সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করা হবে না ৷ 14 দিন সেন্টারে থাকার পর সবাইকে ফিরতে হবে বাড়িতে ৷ কিন্তু পঞ্চায়েতের কেউ সেন্টারে আসছে না বলে অভিযোগ ৷ সেখানে কোনও চিকিৎসকও নেই ৷ এই পরিস্থিতিতে তাঁদের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই বাড়ি ফেরানোর দাবি তুলেছেন শ্রমিকরা ৷ এই দাবিতে আজ তাঁরা ভালুকা-হরিশ্চন্দ্রপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ৷ খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তারা ৷ তাঁদের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর এক গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেন্দ্রপুর গ্রামের ঘটনা ৷
সাদ্দাম হোসেন নামে মহেন্দ্রপুর হাইস্কুলে থাকা এক শ্রমিক বলেন, “আমার বাড়ি মহেন্দ্রপুর গ্রামে ৷ দিল্লিতে কাজ করতে গিয়েছিলাম ৷ চারদিন আগে এলাকায় ফিরেছি ৷ থানা থেকে আমাদের স্কুলে পাঠানো হয় ৷ কিন্তু এখানে আসার পর আমাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে না ৷ চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ বাড়ি থেকে খাবার এলে খেতে পাচ্ছি ৷ কোনও রাজনৈতিক নেতা, বিধায়ক, সাংসদ এখানে আসেননি ৷ এদিকে গ্রামেও আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ বাড়ি থেকে মহিলা-শিশুরা এখানে আসছে ৷ আমাদের মধ্যে কারও কোরোনা হয়ে থাকলে তাঁরাও সংক্রামিত হতে পারে ৷ তাই আমাদের দাবি, হয় আমাদের দ্রুত লালারস পরীক্ষা করা হোক নইলে বাড়ি ফিরতে দেওয়া হোক ৷ এই দাবিতে আজ আমরা পথ অবরোধ করেছি ৷ ” আরও এক শ্রমিক সোহেল সরকার বলেন, “আমি রাজস্থানে কাজ করতে গিয়েছিলাম ৷ চারদিন হল গ্রামে ফিরেছি ৷ বাইরে থেকে ফিরে আসার পর আমরা প্রথমে থানায় যাই ৷ সেখান থেকে বলা হয় আমাদের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে এই স্কুলে ৷ লালারসও পরীক্ষা করা হবে সবার ৷ কিন্তু এখনও সেসব কিছু হয়নি ৷ এই স্কুলে প্রায় 200 পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে ৷ এখানে কাউকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না ৷ আমরা চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি ৷ আমাদের প্রত্যেকের লালারসের পরীক্ষা করতে হবে ৷ যাঁদের কোরোনা নেই, তাঁদের বাড়িতে যেতে দিতে হবে ৷”
এই প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 ব্লকের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, “বর্তমানে অন্য রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের হোম কোয়ারানটিনে থাকার কথা ৷ কিন্তু এই শ্রমিকদের অনেকেই হোম কোয়ারানটিনের নিয়ম মানছে না ৷ তাই সরকার ও প্রশাসন পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সরকারি কোয়ারানটিন সেন্টারের ব্যবস্থা করে ৷ এই সেন্টারগুলিতে যারা থাকবে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের পরিবারকে ৷ এর সঙ্গে স্থানীয় কিছু সমাজসেবী সংগঠনও এদের খাবারের ব্যবস্থা করছে ৷ আর এদের প্রত্যেকের লালারস সংগ্রহ করা হবে কি না তা প্রশাসনের বিষয় ৷” হরিশ্চন্দ্রপুর 1-এর BDO অনির্বাণ বসু জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে এই জেলায় সরকারি কোয়ারানটিন সেন্টারগুলিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের শুধু থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ তাদের খাবারের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি দেখছে ৷ তবে এই শ্রমিকদের মধ্যে যাঁদের কোরোনা উপসর্গ ধরা পড়বে, শুধুমাত্র তাঁদেরই লালারস সংগ্রহ করা হবে ৷ এটাই সরকারি নির্দেশিকা ৷”