মালদা, 29 মে : দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর প্রায় 48 ঘণ্টা কেটে গিয়েছে ৷ এখনও জমা জলে হাবুডুবু খাচ্ছে মালদা শহরে অনেকটা এলাকা ৷ প্রশাসনের তরফে পাম্প ব্যবহার করা হলেও তেমন কাজ হচ্ছে না ৷ কারণ, নিকাশির অভাবে জল বেরোতে পারছে না ৷ আগে যে পথে শহরের বর্জ্য জল বেরোত, সেই বিলগুলি এখন জমি হাঙরদের দখলে ৷ বিল বুজিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়িঘর ৷ শুধু শহর নয়, এই হাঙরদের নজরে গ্রামও ৷ নিকাশি পথ আটকে করা হচ্ছে মাছ ও মাখনার চাষ ৷ আজ ইংরেজবাজারের বিডিও ও আইসিকে নিয়ে সেই বদ্ধ জায়গাগুলি ঘুরে দেখেছেন জেলাশাসক ৷ তাঁর চোখে ধরা পড়েছে, কীভাবে বাংলাদেশে প্রবাহিত নালাগুলির কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ আগামিকালই তিনি সমস্ত বাধা মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকে৷
বৃহস্পতিবার প্রবল বৃষ্টিতে জলে ভাসতে শুরু করে মালদা শহর ৷ গতকাল বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি ৷ কিন্তু তবু শহর এখনও পুরোপুরি জলবন্দি দশা থেকে মুক্ত হয়নি ৷ এখনও অনেক জায়গায় জমে রয়েছে জল ৷ তাতে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে ৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে গতকালই জেলাশাসকের নির্দেশে শহরের তিন জায়গায় পাম্প চালু করা হয়েছিল ৷ কেটে দেওয়া হয়েছিল ঘোড়াপীর এলাকায় বন্ধ থাকা কালভার্টের রাস্তা ৷ ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে মালদা-মানিকচক রাজ্য সড়ক ৷
তবু শহরের জমা জল বেরোচ্ছে না দেখে আজ বিডিও সৌগত চৌধুরী ও আইসি মদনমোহন রায়কে নিয়ে যদুপুর-2 গ্রাম পঞ্চায়েতের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বেরিয়ে পড়েন জেলাশাসক ৷ সঙ্গে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির প্রতিনিধি ও পঞ্চায়েত প্রধান ৷ জেলাশাসক দেখেন, শহরের নিকাশি ব্যবস্থার নালাগুলি বিভিন্নভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ কোথাও সেই এলাকা ঘিরে চলছে মাছ চাষ, কোথাও মাখনা চাষ ৷ পুরোটাই বেআইনিভাবে ৷ তিনি নির্দেশ দেন, আগামিকালই নিকাশি নালাগুলি বাধামুক্ত করতে হবে ৷ কেউ বাধা দিলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে ৷
জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, “সীমান্তে জলপ্রবাহ বন্ধ হয়ে রয়েছে ৷ তাই মালদা শহর, যদুপুর-1 ও 2 গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে বর্জ্য জল বেরোতে পারছে না ৷ নিকাশি নিয়ে আমরা একটা মাস্টার প্ল্যান বানানোর চেষ্টা করছি ৷ তাতে সময় লাগবে ৷ সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে ভাতিয়া বিল রয়েছে ৷ আগে মালদা শহর ও সংলগ্ন এলাকার জমা জল সেই বিলে যেত ৷ কিন্তু বিভিন্ন বাধায় এখন ওই বিলে আর জল যেতে পারছে না ৷ এর জন্যই শহরে এভাবে জল জমে থাকছে ৷ আমরা এই বাধা দূর করার চেষ্টা করছি ৷”
এদিকে ইংরেজবাজার থানার আইসি মদনমোহন রায় বলেন, “মালদা শহরের সঙ্গে যদুপুর-2 গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকাও জলমগ্ন হয়ে রয়েছে ৷ আজ সীমান্তের কিছু নালার মুখ আমরা পরিষ্কার করেছি ৷ তাতে আগামী 5-6 ঘণ্টার মধ্যে শহরের জল অনেকটা নেমে যাবে বলে আশা করছি ৷ সমস্যা অন্য জায়গায় ৷ আগে এখানকার জল নিকাশি নালা দিয়ে বাংলাদেশের ভাতিয়া বিলে যেত ৷ কিছু অসৎ মানুষ সেখানে জমি চাষ করার নামে পুকুর তৈরি করেছে ৷ পুকুরের ধারে বাঁধ তৈরি করেছে ৷ ফলে এদিকের জল বেরোতে পারছে না ৷ জেলাশাসকের নির্দেশে আগামিকালই আমরা সমস্ত পুকুরের বাঁধ কেটে দেব ৷ কেউ বাধা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ এনিয়ে আজই আমরা ওই এলাকায় মাইকিং করছি ৷”
আরও পড়ুন : গার্ডোয়াল ছাপিয়ে রাস্তায় জল, উত্তাল দিঘার সমুদ্র