ETV Bharat / city

খুন করলে কঠোর শাস্তি হোক, বলছেন ছোটনের মামা

author img

By

Published : Dec 12, 2019, 11:21 PM IST

পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় ছোটনের সঙ্গে আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার সম্ভাবনা ক্রমশই প্রবল হচ্ছে ৷ সেই সম্ভাবনা থেকেই ছোটনের স্ত্রী সহ মোট 4 জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে ৷ তবে এই বিষয়ে আজ কোনও পুলিশ কর্তা সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে চাননি ।

malda murder
মালদায় ধৃত ছোটন

মালদা, 12 ডিসেম্বর : এখনও ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না কোতয়ালির শাহ জালালপুর গ্রামের বাসিন্দারা ৷ গ্রামের এক দুধ ব্যবসায়ী যে খুন করে সেই প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহ পুড়িয়ে দিতে পারে, তা তাদের ধারণার বাইরে ৷ এই ঘটনায় দোষী বাপন ঘোষের ওরফে ছোটনের কঠোর শাস্তি দাবি করছে তারা ৷ একই দাবি করেছেন বাপন ঘোষের মামাও ৷ মামার বাড়িতেই ছেলেবেলা কাটিয়েছিল বাপন ৷ গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে এখনও শাহ জালালপুর গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ ৷ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি উঠেছে গ্রামে ৷

পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় ছোটনের সঙ্গে আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার সম্ভাবনা ক্রমশই প্রবল হচ্ছে ৷ সেই সম্ভাবনা থেকেই ছোটনের স্ত্রী সহ মোট 4 জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে ৷ তবে এই বিষয়ে আজ কোনও পুলিশ কর্তা সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে চাননি ।

দেখুন ভিডিয়ো...

গত 5 ডিসেম্বর শাহ জালালপুর গ্রাম থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই ধানতলা গ্রামের এক আমবাগান থেকে এক তরুণীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ তদন্তের শুরুর পর গতকালই সেই যুবতির পরিচয় জানা গেছে ৷ বছর পঁচিশের ওই যুবতি শিলিগুড়ির অম্বিকানগর এলাকার বাসিন্দা ৷ তাঁর সঙ্গে ছোটনের সম্পর্ক ছিল ৷ সেই সম্পর্কের টানে তিনি মাঝেমধ্যেই মালদায় আসতেন ৷ দু’একদিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন ৷ কিন্তু এবার 2 ডিসেম্বর NJP থেকে মালদায় আসার পর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি ৷ তাঁর পরিবারের লোকজনও জানতে পারেনি, ঝুমা দে নামে ওই যুবতিকে মালদার এক আমবাগানে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে ৷ শেষ পর্যন্ত গতকালই সব কিছু জানা যায় ৷ গ্রেপ্তার করা হয় ছোটনকে ৷ তার স্ত্রী টুম্পা ঘোষকেও আটক করেছে পুলিশ ৷

আরও পড়ুন : পরকীয়ার জেরেই মালদায় যুবতিকে খুন, জানাল পুলিশ

আজ ধৃত ছোটনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় সেখানে কেউ নেই ৷ বাড়ির গোয়ালে একটি গোরু, বাছুর ও দুটি ছাগল ৷ আজও সেই বাড়ির সামনে পড়শিদের ভিড় ৷ এখনও কেউ ভাবতে পারছেন না, ছোটন এভাবে একটি মেয়েকে মালদায় ডেকে এনে নৃশংসভাবে খুন করেছে ৷ আরও বড়ো বিষয়, গ্রামের অনেকেই জানিয়েছে, যেদিন ঝুমার মৃতদেহ আমবাগানে পড়ে থাকতে দেখা যায়, সেদিন পুলিশের উপস্থিতিতেই ছোটনকে সেখানে দেখা গিয়েছিল ৷ গ্রামবাসীদের অনেকেই ঘটনাস্থানে সেদিন ছোটনকে দেখেছে ৷ যদিও পুলিশের ভয়ে ক্যামেরার সামনে সেকথা কেউ জানাতে রাজি হয়নি ৷ ছোটনের বাড়ির সামনেই থাকেন বিশ্বনাথ দাস ৷ তিনি বলেন, "বছর দুয়েক ধরে ছোটন এখানে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে ৷ সারাক্ষণই তার কানে ফোন থাকত ৷ এই নিয়ে আমি ওকে প্রশ্নও করেছিলাম ৷ কোনও উত্তর দেয়নি ৷ ওর বাড়িতে বন্ধুবান্ধবদেরও দেখা যায়নি ৷ বুঝতেই পারিনি এমন ঘটনা ও ঘটাতে পারে ৷ ওদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও তেমন কোনও ঝামেলা ছিল না ৷ তবে ওদের সঙ্গে আমরা কেউ তেমনভাবে মিশতাম না ৷ ছোটন মালদা শহরেই দুধের ব্যবসা করত ৷ সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকত ৷"

গ্রামের আরেক বাসিন্দা হাসি দাস বলেন, " এমন ঘটনার কথা ভাবতেও পারিনি ৷ ভয়ে ছেলেমেয়েরা এখন বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছে না ৷ স্কুল কিংবা টিউশনেও কেউ যাচ্ছে না ৷ পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে ৷ আমরা চাই, এখানে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হোক ৷ এখানে একটা পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও পুলিশ থাকে না ৷ সেখানে পুলিশ নিয়োগ করা হোক ৷ তবে একটা কথা ঠিক, আর আমরা ছোটনদের এখানে থাকতে দেব না ৷ আমাদের ঘরে ছেলেমেয়ে রয়েছে ৷ ওরা যে ফের এমন ঘটনা ঘটাবে না সেটা কে বলতে পারে? তাই এখান থেকে ওদের উঠে যেতে হবে ৷"

ছেলেবেলায় ছোটন মামার বাড়িতে মানুষ ৷ তার মামা শ্রীদাম ঘোষের বাড়ি কোতয়ালিরই টিপাজানি গ্রামে ৷ আজ ছোটনের পালিত গোরুকে খাবার দিতে এসেছিলেন তিনি ৷ তিনি বলেন, "ছোটবেলায় দুই ভাগ্নে আমাদের বাড়িতে থাকত ৷ একটু বড়ো হলে ওদের নিয়ে চলে যায় বাবা-মা ৷ ছোটন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও করেছে ৷ পড়াশোনা শেষ করে ওরা ফের এখানে চলে আসে ৷ তবে এই ঘটনায় ছোটন দোষী প্রমাণিত হলে আমিও ভাগনের কঠোর শাস্তি চাই৷"

আরও পড়ুন : প্রেমিকের থেকে মোবাইল আনতেই মালদায় গিয়েছিল ঝুমা, বলছে বান্ধবী

ছোটনের বাড়ির পিছনদিকে 200 মিটারের মধ্যে জেলার কংগ্রেস নেতা প্রয়াত বরকত গণি খান চৌধুরি বাড়ি ৷ সেই বাড়িতেই থাকেন দক্ষিণ মালদার সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি ও জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর ৷ আজ তাঁদের কাউকে অবশ্য বাড়িতে পাওয়া যায়নি ৷ তবে ছোটনের বাড়ি থেকে আমবাগানের ভিতর দিয়ে ঘটনাস্থানের দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয় ৷ আজ ছোটনকে 14 দিনের পুলিশি হেপাজতের আবেদন জানিয়ে জেলা আদালতে তোলা হয় । ছোটনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 302 ধারায় খুন, 201 ধারায় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ও 34 নম্বর ধারায় সংগঠিতভাবে অপরাধ করার মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷ 34 নম্বর ধারা প্রয়োগ করে পুলিশ কার্যত জানান দিচ্ছে, এই ঘটনায় ছোটন ছাড়াও আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে ৷ এখন দেখার, এই ঘটনায় জড়িত আর ক’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ৷

মালদা, 12 ডিসেম্বর : এখনও ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না কোতয়ালির শাহ জালালপুর গ্রামের বাসিন্দারা ৷ গ্রামের এক দুধ ব্যবসায়ী যে খুন করে সেই প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহ পুড়িয়ে দিতে পারে, তা তাদের ধারণার বাইরে ৷ এই ঘটনায় দোষী বাপন ঘোষের ওরফে ছোটনের কঠোর শাস্তি দাবি করছে তারা ৷ একই দাবি করেছেন বাপন ঘোষের মামাও ৷ মামার বাড়িতেই ছেলেবেলা কাটিয়েছিল বাপন ৷ গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে এখনও শাহ জালালপুর গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ ৷ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি উঠেছে গ্রামে ৷

পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় ছোটনের সঙ্গে আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার সম্ভাবনা ক্রমশই প্রবল হচ্ছে ৷ সেই সম্ভাবনা থেকেই ছোটনের স্ত্রী সহ মোট 4 জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে ৷ তবে এই বিষয়ে আজ কোনও পুলিশ কর্তা সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে চাননি ।

দেখুন ভিডিয়ো...

গত 5 ডিসেম্বর শাহ জালালপুর গ্রাম থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই ধানতলা গ্রামের এক আমবাগান থেকে এক তরুণীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ তদন্তের শুরুর পর গতকালই সেই যুবতির পরিচয় জানা গেছে ৷ বছর পঁচিশের ওই যুবতি শিলিগুড়ির অম্বিকানগর এলাকার বাসিন্দা ৷ তাঁর সঙ্গে ছোটনের সম্পর্ক ছিল ৷ সেই সম্পর্কের টানে তিনি মাঝেমধ্যেই মালদায় আসতেন ৷ দু’একদিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন ৷ কিন্তু এবার 2 ডিসেম্বর NJP থেকে মালদায় আসার পর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি ৷ তাঁর পরিবারের লোকজনও জানতে পারেনি, ঝুমা দে নামে ওই যুবতিকে মালদার এক আমবাগানে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে ৷ শেষ পর্যন্ত গতকালই সব কিছু জানা যায় ৷ গ্রেপ্তার করা হয় ছোটনকে ৷ তার স্ত্রী টুম্পা ঘোষকেও আটক করেছে পুলিশ ৷

আরও পড়ুন : পরকীয়ার জেরেই মালদায় যুবতিকে খুন, জানাল পুলিশ

আজ ধৃত ছোটনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় সেখানে কেউ নেই ৷ বাড়ির গোয়ালে একটি গোরু, বাছুর ও দুটি ছাগল ৷ আজও সেই বাড়ির সামনে পড়শিদের ভিড় ৷ এখনও কেউ ভাবতে পারছেন না, ছোটন এভাবে একটি মেয়েকে মালদায় ডেকে এনে নৃশংসভাবে খুন করেছে ৷ আরও বড়ো বিষয়, গ্রামের অনেকেই জানিয়েছে, যেদিন ঝুমার মৃতদেহ আমবাগানে পড়ে থাকতে দেখা যায়, সেদিন পুলিশের উপস্থিতিতেই ছোটনকে সেখানে দেখা গিয়েছিল ৷ গ্রামবাসীদের অনেকেই ঘটনাস্থানে সেদিন ছোটনকে দেখেছে ৷ যদিও পুলিশের ভয়ে ক্যামেরার সামনে সেকথা কেউ জানাতে রাজি হয়নি ৷ ছোটনের বাড়ির সামনেই থাকেন বিশ্বনাথ দাস ৷ তিনি বলেন, "বছর দুয়েক ধরে ছোটন এখানে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে ৷ সারাক্ষণই তার কানে ফোন থাকত ৷ এই নিয়ে আমি ওকে প্রশ্নও করেছিলাম ৷ কোনও উত্তর দেয়নি ৷ ওর বাড়িতে বন্ধুবান্ধবদেরও দেখা যায়নি ৷ বুঝতেই পারিনি এমন ঘটনা ও ঘটাতে পারে ৷ ওদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও তেমন কোনও ঝামেলা ছিল না ৷ তবে ওদের সঙ্গে আমরা কেউ তেমনভাবে মিশতাম না ৷ ছোটন মালদা শহরেই দুধের ব্যবসা করত ৷ সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকত ৷"

গ্রামের আরেক বাসিন্দা হাসি দাস বলেন, " এমন ঘটনার কথা ভাবতেও পারিনি ৷ ভয়ে ছেলেমেয়েরা এখন বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছে না ৷ স্কুল কিংবা টিউশনেও কেউ যাচ্ছে না ৷ পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে ৷ আমরা চাই, এখানে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হোক ৷ এখানে একটা পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও পুলিশ থাকে না ৷ সেখানে পুলিশ নিয়োগ করা হোক ৷ তবে একটা কথা ঠিক, আর আমরা ছোটনদের এখানে থাকতে দেব না ৷ আমাদের ঘরে ছেলেমেয়ে রয়েছে ৷ ওরা যে ফের এমন ঘটনা ঘটাবে না সেটা কে বলতে পারে? তাই এখান থেকে ওদের উঠে যেতে হবে ৷"

ছেলেবেলায় ছোটন মামার বাড়িতে মানুষ ৷ তার মামা শ্রীদাম ঘোষের বাড়ি কোতয়ালিরই টিপাজানি গ্রামে ৷ আজ ছোটনের পালিত গোরুকে খাবার দিতে এসেছিলেন তিনি ৷ তিনি বলেন, "ছোটবেলায় দুই ভাগ্নে আমাদের বাড়িতে থাকত ৷ একটু বড়ো হলে ওদের নিয়ে চলে যায় বাবা-মা ৷ ছোটন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও করেছে ৷ পড়াশোনা শেষ করে ওরা ফের এখানে চলে আসে ৷ তবে এই ঘটনায় ছোটন দোষী প্রমাণিত হলে আমিও ভাগনের কঠোর শাস্তি চাই৷"

আরও পড়ুন : প্রেমিকের থেকে মোবাইল আনতেই মালদায় গিয়েছিল ঝুমা, বলছে বান্ধবী

ছোটনের বাড়ির পিছনদিকে 200 মিটারের মধ্যে জেলার কংগ্রেস নেতা প্রয়াত বরকত গণি খান চৌধুরি বাড়ি ৷ সেই বাড়িতেই থাকেন দক্ষিণ মালদার সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি ও জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর ৷ আজ তাঁদের কাউকে অবশ্য বাড়িতে পাওয়া যায়নি ৷ তবে ছোটনের বাড়ি থেকে আমবাগানের ভিতর দিয়ে ঘটনাস্থানের দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয় ৷ আজ ছোটনকে 14 দিনের পুলিশি হেপাজতের আবেদন জানিয়ে জেলা আদালতে তোলা হয় । ছোটনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 302 ধারায় খুন, 201 ধারায় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ও 34 নম্বর ধারায় সংগঠিতভাবে অপরাধ করার মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷ 34 নম্বর ধারা প্রয়োগ করে পুলিশ কার্যত জানান দিচ্ছে, এই ঘটনায় ছোটন ছাড়াও আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে ৷ এখন দেখার, এই ঘটনায় জড়িত আর ক’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ৷

Intro:মালদা, ১২ ডিসেম্বর : এখনও ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না কোতওয়ালির শাহ জালালপুর গ্রামের বাসিন্দারা৷ গ্রামের এক দুধ ব্যবসায়ী যে খুন এবং সেই প্রমাণ লোপাটের জন্য এক তরুণীকে পুড়িয়ে দিতে পারে, তা তাদের ধারণার বাইরে৷ এই ঘটনায় দোষী বাপন ঘোষের ওরফে ছোটনের কঠোর শাস্তি দাবি করছে তারা৷ একই দাবি করেছেন ধৃত বাপন ঘোষের মামাও৷ এই মামার বাড়িতেই ছেলেবেলা কাটিয়েছিল বাপন৷ গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে এখনও শাহ জালালপুর গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ৷ নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি উঠেছে গ্রামে৷ এদিকে আজ ধৃত ছোটনকে ১৪ দিনের পুলিশি হেপাজতের আবেদন জানিয়ে জেলা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ৷ পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই ঘটনায় ছোটনের সঙ্গে আরও লোকজন জড়িত থাকার সম্ভাবনা ক্রমশই প্রবল হচ্ছে৷ সেই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সেই সম্ভাবনা থেকেই ছোটনের স্ত্রী সহ মোট ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে৷ তবে এব্যাপারে আজ কোনও পুলিশকর্তা সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে চাননি।


Body:         গত ৫ ডিসেম্বর শাহ জালালপুর গ্রাম থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই ধানতলা গ্রামের এক আমবাগান থেকে এক তরুণীর দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ৷ অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর গতকালই সেই তরুণীর পরিচয় জানা গেছে৷ বছর পঁচিশের ওই তরুণী শিলিগুড়ির অম্বিকানগর এলাকার বাসিন্দা৷ তাঁর সঙ্গে ছোটনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল৷ সেই সম্পর্কের টানে তিনি মাঝেমধ্যেই মালদায় আসতেন৷ দু’একদিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন৷ কিন্তু এবার গত ২ ডিসেম্বর এনজেপি থেকে মালদায় আসার পর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি৷ তাঁর পরিবারের লোকজনও জানতে পারেনি, ঝুমা দে নামে ওই তরুণীকে মালদার এক আমবাগানে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত গতকালই সব কিছু জানা যায়৷ গ্রেফতার করা হয় ছোটনকে৷ তার স্ত্রী টুম্পা ঘোষকেও পুলিশ আটক করে৷
         আজ ধৃত ছোটনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেউ নেই৷ বাড়ির গোয়ালে একটি গোরু, বাছুর ও দুটি ছাগল৷ আজও সেই বাড়ির সামনে পড়শিদের ভিড়৷ এখনও কেউ ভাবতে পারছেন না, ছোটন এভাবে একটি মেয়েকে মালদায় ডেকে এনে নৃশংসভাবে খুন করেছে৷ আরও বড়ো বিষয়, গ্রামের অনেকেই জানিয়েছে, যেদিন ঝুমার মৃতদেহ আমবাগানে পড়ে থাকতে দেখা যায়, সেদিন পুলিশের উপস্থিতিতেই ছোটনকে সেখানে দেখা গিয়েছিল৷ গ্রামবাসীদের অনেকেই ঘটনাস্থানে সেদিন ছোটনকে দেখেছে৷ যদিও পুলিশের ভয়ে ক্যামেরার সামনে সেকথা কেউ জানাতে রাজি হয়নি৷ ছোটনের বাড়ির সামনেই থাকেন বিশ্বনাথ দাস৷ তিনি বলেন, “বছর দুয়েক ধরে ছোটনরা এখানে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে৷ ২৪ ঘণ্টাই তার কানে ফোন থাকত৷ এনিয়ে আমি ওকে প্রশ্নও করেছিলাম৷ কোনও উত্তর দেয়নি৷ ওর বাড়িতে বন্ধুবান্ধবদেরও দেখা যায়নি৷ বুঝতেই পারিনি, এমন ঘটনা ও ঘটাতে পারে৷ ওদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও তেমন কোনও ঝামেলা ছিল না৷ প্রত্যেক বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেমন ছোটোখাটো ঝামেলা হয়, তেমনই হত৷ তবে ওদের সঙ্গে আমরা কেউ তেমনভাবে মিশতাম না৷ আসলে আমাদের মধ্যে সমাজের পার্থক্য রয়েছে৷ আর ছোটন মালদা শহরেই দুধের ব্যবসা করত৷ সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকত৷” গ্রামের আরেক বাসিন্দা হাসি দাস বলেন, “এই ঘটনা জানার পর আমরা অসম্ভব আতঙ্কে রয়েছি৷ আমরা এখানে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বাস করি৷ কিন্তু এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি৷ এমন ঘটনার কথা ভাবতেও পারিনি৷ ভয়ে ছেলেমেয়েরা এখন বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছে না৷ স্কুল কিংবা টিউশনেও কেউ যাচ্ছে না৷ পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে৷ আমরা চাই, এখানে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হোক৷ এখানে একটা পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও পুলিশ থাকে না৷ সেখানে পুলিশ নিয়োগ করা হোক৷ তবে একটা কথা ঠিক, আর আমরা ছোটনদের এখানে থাকতে দেব না৷ আমাদের ঘরে ছেলেমেয়ে রয়েছে৷ ওরা যে ফের এমন ঘটনা ঘটাবে না সেটা কে বলতে পারে? তাই এখান থেকে ওদের উঠে যেতে হবে৷”
         ছেলেবেলায় ছোটন মামার বাড়িতে মানুষ৷ তার মামা শ্রীদাম ঘোষের বাড়ি কোতওয়ালিরই টিপাজানি গ্রামে৷ আজ ছোটনের পালিত গোরুকে খাবার দিতে এসেছিলেন তিনি৷ তিনি বলেন, “ছোটোতে দুই ভাগ্নে আমাদের বাড়িতে থাকত৷ একটু বড়ো হলে ওদের নিয়ে চলে যায় বাবা-মা৷ ছোটন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও করেছে৷ পড়াশোনা শেষ করে ওরা ফের এখানে চলে আসে৷ একজনের বিক্রি করা দুধের ব্যবসা ওরা কিনে নেয়৷ তারপর এখানে ওরা জায়গা কেনে৷ পরে সেখানেই বাড়ি করে বসবাস শুরু করে ছোটন৷ ওর ভাই মিলকিতে থাকে৷ ও আলাদা ব্যবসা করে৷ তবে এই ঘটনায় ছোটন দোষী প্রমাণিত হলে আমিও ভাগনের কঠোর শাস্তি চাই৷”


Conclusion:         ছোটনের বাড়ির পিছনদিকে ২০০ মিটারের মধ্যে বাড়ি এই জেলার প্রবাদপ্রতিম নেতা প্রয়াত বরকত গণি খান চৌধুরির৷ সেই বাড়িতেই থাকেন দক্ষিণ মালদার সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি ও জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নূর৷ আজ তাঁদের কাউকে অবশ্য বাড়িতে পাওয়া যায়নি৷ তবে ছোটনের বাড়ি থেকে আমবাগানের ভিতর দিয়ে ঘটনাস্থানের দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়৷ আজ ছোটনকে ১৪ দিনের পুলিশি হেপাজতের আবেদন জানিয়ে জেলা আদালতে তোলা হয়েছে৷ তবে এখনও পর্যন্ত বিচারক তাঁর নির্দেশ জানাননি৷ ছোটনের বিরুদ্ধে ভারতীয় আইনের ৩০২ ধারায় খুন, ২০১ ধারায় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ও ৩৪ ধারায় সংগঠিতভাবে অপরাধ করার মামলা রুজু করেছে পুলিশ৷ ৩৪ ধারা প্রয়োগ করে পুলিশ কার্যত জানান দিচ্ছে, এই ঘটনায় ছোটন ছাড়াও আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে৷ এখন দেখার, এই ঘটনায় জড়িত আর ক’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.