মালদা, 21 সেপ্টেম্বর : গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়লেন সরকারি কর্মীরাও ৷ এমন ঘটনার কথা আগে কোথাও শোনা গিয়েছে কি না জানা নেই ৷ তবে আজ সেই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল পুরাতন মালদা ব্লক অফিসে উপস্থিত মানুষজন ৷ প্রায় 150 জন ব্লক ও পঞ্চায়েতকর্মী আজ বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে গত 18 সেপ্টেম্বর BJP-র বিক্ষোভ ও ধরনা কর্মসূচির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাল ৷ BJP-র নাম না করে সরকারি কর্মীদের অভিযোগ, সেদিন গেরুয়া শিবিরের লোকজন নিয়ম না মেনে ব্লক দপ্তরে কার্যত সন্ত্রাস চালিয়েছে ৷ BDO-কে অসম্মান করেছে ৷ আজ সেই ঘটনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সরকারি কর্মীদের ৷ তাঁরা ব্লক ও পঞ্চায়েত দপ্তরে উপযুক্ত পুলিশি নিরাপত্তা দাবি করেন ৷ তিনদিন আগের ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ সরকারি কর্মীরা BDO-কে একটি ডেপুটেশন দেন ৷ যদিও নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় BJP নেতৃত্ব৷ এই কর্মসূচির জন্য অবশ্য আজ এক ঘণ্টা বেশি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারি কর্মীরা ৷
ঘটনার সূত্রপাত 18 সেপ্টেম্বর ৷ সেদিন পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির তরফে 100 দিনের কাজ নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছিল ৷ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা, BJP-র নিতাই মণ্ডল, সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান উকিল মণ্ডল সহ গেরুয়া শিবিরের অন্য সদস্যরা ৷ বৈঠক শেষে নিতাইবাবু সরকারি ত্রাণ বিলির বিষয়টি জানতে চান ৷ ত্রাণ সংক্রান্ত নথিপত্রও দেখতে চান ৷ তাঁদের অভিযোগ, ত্রাণ বিলি নিয়ে তাঁরা জানতে চাইলেও প্রশাসন কিংবা শাসকদলের কেউ তাঁদের পাত্তা দেয়নি ৷ কোরোনা আবহে গরিব মানুষকে কীভাবে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, ত্রাণ বিলির শিবিরগুলি কোথায় কোথায় করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত কতজনকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, সেসব বিষয়ই জানতে চেয়েছিলেন তাঁরা ৷ কোনও উত্তর না পেয়ে সেদিন BJP সদস্যরা ব্লক অফিস চত্বরে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ধরনা দিয়ে বিক্ষোভ দেখান ৷ সেদিনের ঘটনার প্রতিবাদে আজ ব্লক ও পঞ্চায়েত কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়ে ধিক্কার প্রদর্শন করেন৷ এক কর্মী প্রদীপকুমার দাস বলেন, “কোরোনা পরিস্থিতিতেও আমরা মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে পরিষেবা দিয়ে আসছি ৷ শুধু ব্লক নয়, গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীরাও কোরোনা আবহে নিয়মিত মানুষকে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন ৷ কিন্তু কিছুদিন থেকে দেখছি, বিভিন্ন কারণে আগাম কিছু না জানিয়ে কিছু দুষ্কৃতী ব্লকে ঢুকে কর্মী ও আধিকারিকদের শাসাচ্ছে ৷ গ্রাম পঞ্চায়েতে সরকারি কর্মীদের আক্রমণ করছে ৷ আজ আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি ৷ এর সুরাহার জন্য আমরা BDO-কে একটি স্মারকলিপি দিলাম৷ তাঁকে এনিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছি৷ জয়েন্ট BDO সেই স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন৷ তিনি এনিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন৷”
এই ধিক্কার কর্মসূচিতে শামিল ছিলেন জয়েন্ট BDO রাণাদিত্য বিশ্বাসও ৷ তিনি বলেন, আজ ব্লকের সব দপ্তরের কর্মীরা BDO-কে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন ৷ তাঁরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার এই ব্লকে একটি প্রতিবাদ জমায়েত হয়েছিল ৷ ওই জমায়েত থেকে BDO-র উদ্দেশ্যে অশালীন আচরণ করা হয় ৷ আগাম কোনও নোটিস ছাড়া বেআইনিভাবে সেদিন অফিসের নথি দেখানোর জন্য জোরাজুরি করা হয়েছে ৷ অফিস চত্বরে স্লোগান চলেছে ৷ কর্মীদের ভয় দেখানো হয়েছে ৷ তাই কর্মীরা ব্লকের প্রতিটি দপ্তরে উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি করেছেন ৷ স্মারকলিপিতে কর্মীরা জানিয়েছেন, সরকারি দপ্তরে যে কেউ ডেপুটেশন দিতে পারে ৷ কিন্তু তার জন্য সমস্ত নিয়ম মেনে সবাইকে চলতে হবে ৷ BDO-’র পক্ষ থেকে আমি কর্মীদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছি৷”
এদিকে 18 তারিখ ধরনায় উপস্থিত পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা নিতাই মণ্ডল জানিয়েছেন, “সেদিন আমরা কেউ BDO-’র উদ্দেশ্যে কোনও অশালীন মন্তব্য করিনি ৷ মানুষের স্বার্থে আমরা শুধু ত্রাণ সম্পর্কিত কিছু তথ্য জানতে চেয়েছিলাম ৷ আজ সরকারি কর্মীরা যেভাবে একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমেছেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ব্লক কিংবা পঞ্চায়েতগুলিতে কীভাবে শাসকদল রাজত্ব চালাচ্ছে ৷ শুধু পুরাতন মালদা নয়, রাজ্যের প্রতিটি সরকারি দপ্তরে এভাবেই কর্মীদের সঙ্গে শাসকদলের আঁতাত চলছে ৷ পুরাতন মালদা ব্লকে ত্রাণ বিলি নিয়ে একাধিক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ আমাদের সামনে এসেছে ৷ সরকারি কর্মী কিংবা আধিকারিকরা সেসব ধামাচাপা দিতেই আজ প্রকাশ্যে নেমে পড়েছেন ৷”