মালদা, 10 ডিসেম্বর : মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী মালদা জেলার 37 জন আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিকে বিশেষ হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু এখনও সেই চাকরি জোটেনি নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের আরও 26 জন লিঙ্কম্যানের৷ ৷ নিজেদের চাকরির দাবিতে তাঁরা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জমা করলেও এখনও পর্যন্ত তাঁদের চাকরির জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের ৷ চাকরি না হলে তাঁরা কিছুদিনের মধ্যে কলকাতার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে আমরণ অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷
রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাওবাদি ও কেএলও’র মতো জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত এই রাজ্যের যুবক-যুবতিদের অস্ত্র ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার আহ্বান জানান ৷ তাঁর কথায় দক্ষিণে মাওবাদি ও উত্তরে কেএলও সংগঠনে যুক্ত অনেকেই আত্মসমর্পণ করেন ৷ দীর্ঘ টালবাহানার পর কিছুদিন আগেই মালদা জেলায় 37 জন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিকে বিশেষ হোমগার্ড পদে চাকরি দেয় রাজ্য সরকার ৷ আরও 13 জন চাকরি পাওয়ার অপেক্ষায় ৷ তাঁদের কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ৷ কিন্তু বাদ থেকে যান এমন আরও ২৬ জন যুবক ৷ তাঁরা সবাই বামনগোলা ও হবিবপুর ব্লকের বাসিন্দা ৷ নিজেদের চাকরির দাবিতে এই 26 জন আজ নিজেদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঠিক করতে একটি সভায় বসেন ৷ বামনগোলা ব্লকের পাকুয়াহাট সংলগ্ন ঘোলাপুকুর গ্রামে একটি কৃষিজমিতে সেই সভা অনুষ্ঠিত হয় ৷
নিজেদের অবস্থান প্রসঙ্গে সঞ্জয়কুমার বর্মণ নামে এক প্রাক্তন কেএলও লিঙ্কম্যান বলেন, “আমরা সবাই একসময় কেএলও লিঙ্কম্যান হিসাবে কাজ করতাম ৷ আমাদের দেওয়া তথ্যের উপরেই সংগঠনের কর্মপন্থা ঠিক হত ৷ এর জন্য হবিবপুর ও বামনগোলা থানার পুলিশ আমাদের বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করেছে ৷ আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য মামলা রুজু করে জেলে পাঠানো হয়েছে ৷ দীর্ঘদিন জেল খেটে আমরা বাড়িতে ফিরে আসি ৷ রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আত্মসমর্পণ করলে কিংবা বিভিন্ন সময়ে জেলে থাকা কেএলও জঙ্গি ও লিঙ্কম্যানদের তিনি হোমগার্ডের চাকরি দেবেন ৷ সেই সুবাদেই ফলেন বর্মণ, সুকুমার রায়, ইলিয়াসরা গত 8 অক্টোবর হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, সঠিকভাবে জানার পর গত 16 অক্টোবর আমরা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে সরকারি চাকরির জন্য আবেদন জানিয়েছি ৷ মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েছি৷ কিন্তু এখনও আমরা চাকরি পাইনি৷ গত 2 নভেম্বর আমরা জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করি৷ তাঁরা আমাদের ডিআইবি’র কাছে পাঠিয়ে দেন৷ সেখানে গিয়ে আমরা জানতে পারি, আমাদের কোনও নথিপত্রই সেখানে জমা পড়েনি৷ তাই দ্রুত চাকরির জন্য আমরা মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ৷ যদি আমাদের চাকরি না দেওয়া হয়, তবে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে আমরণ অনশনে বসব ৷”
আরেক প্রাক্তন লিঙ্কম্যান প্রভাত মণ্ডল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যেক কেএলও জঙ্গি ও লিংকম্যানদের স্পেশাল হোমগার্ডে নিয়োগ করার কথা ঘোষণা করেন৷ প্রথমে আমরা বিষয়টি ঠিকমতো জানতে পারিনি৷ পরে সব জানতে পেরে আমরা নির্ধারিত ফর্মে সবকিছু পূরণ করে আবেদনপত্র জমা দিই ৷ 16 অক্টোবর আমরা এই আবেদন জানিয়েছি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আমাদের ফর্মগুলি পাঠিয়েছি ৷ আমাদের 26 জনেরই চাকরির দাবি করছি ৷ চাকরি না দেওয়া হলে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে আমরণ অনশনে বসতে বাধ্য হব৷” জেলা পুলিশ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, যেসময় এই প্রাক্তন জঙ্গি ও লিঙ্কম্যানদের চাকরির নির্দিষ্ট ফর্ম এবং যাবতীয় তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছিল, সেই সময় যাঁরা আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে কিছুজনকে ইতিমধ্যে চাকরি দেওয়া হয়েছে৷ আরও কয়েকজনকে চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে৷ তবে এই 26 জনের কোনও নথিপত্র দপ্তরে জমা পড়েনি ৷ সেই তথ্য জমা পড়লে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে ৷
আরও পড়ুন : নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর