মালদা, 21 মে : রাজ্য পুলিশকে অন্ধকারে রেখে অভিযান বিহার পুলিশের ৷ অভিযোগ শুক্রবার সন্ধের মুখে মালদা-বিহার সীমানার হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের সাদলিচক গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তার ধারের 20টি ঝুপড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিহার পুলিশ (Bihar Police Accused of Breaking 20 Houses in Harishchandrapur of Malda District) ৷ বাধা দিতে গেলে বিহার পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ ৷ বিহার পুলিশের বিরুদ্ধে মহিলাদেরও মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ৷ গোটা ঘটনায় এলাকারই কিছু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ঘরহারারা ৷
তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা তাঁর জমির সামনের অংশ খালি করানোর জন্য বিহার পুলিশকে টাকা দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন এলাকার সাংসদ ৷ তিনিও এ নিয়ে তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ৷ অন্যদিকে, ঘটনাটি মালদা জেলার মধ্যে ঘটলেও ঘটনাস্থলকে বিহার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করেছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ৷ ঘর হারানো মানুষজনের অভিযোগ পেয়ে এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ ৷
হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের সাদলিচক পঞ্চায়েতের পরেই শুরু হয়েছে বিহার রাজ্য ৷ সহরা বহরা এলাকায় রাস্তার একধারে বাংলা, অন্য পাশে বিহার ৷ সেই রাস্তার ধারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জমিতে 70 বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে 20টি পরিবার ৷ এই পরিবারগুলির নিজস্ব কোনও জমি নেই ৷ অভিযোগ, এই বাড়িগুলির পিছনে রয়েছে গণেশ প্রামাণিক নামে একজনের জমি ৷ তিনি আবার এলাকার তৃণমূল নেতা ৷ জমির সামনের অংশ ফাঁকা করতে তিনি মাঝেমধ্যেই এই পরিবারগুলিকে হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ ৷ এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা লেগেই ছিল ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, ব্যক্তিগত কারণে প্রায় প্রতিদিনই নাকি বিহারে যাতায়াত করেন গণেশ প্রামাণিক ৷ একজন রাজনৈতিক নেতা হওয়ায় তাঁর সঙ্গে বিহার পুলিশের সখ্যতাও তৈরি হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে ৷ অভিযোগ, সেই বিষয়টি কাজে লাগিয়ে টাকার বিনিময়ে গণেশবাবু গতকাল সন্ধেয় এই বাড়িগুলিতে ভাঙচুর করিয়েছেন ৷ বন্দুক হাতে বিহারের প্রচুর পুলিশ এ’রাজ্যের জমিতে থাকা বাড়িঘর মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ ৷ এই কাজে গণেশবাবুকে সাদলিচকের পঞ্চায়েত প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকার সাহায্য করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে ৷
বিহার পুলিশের হাতে হেনস্তার শিকার আকালু দাস বলেন, “নিজের জমির সামনের অংশ দখল করতে গণেশ প্রামাণিক বিহারের পুলিশ দিয়ে আমাদের 20টি বাড়ি ভেঙে দিয়েছে ৷ আমাদের মারধর করেছে। রেহাই মেলেনি মেয়েদেরও। বিহার পুলিশের দাবি, এই জায়গা নাকি ওদের রাজ্যের। অথচ এটা পশ্চিমবঙ্গের জায়গা। আসলে আমরা গণেশের জমির পাশেই রাস্তার ধারে বাস করি। পুলিশ এখানে এসেছে। তারা জানিয়েছে, এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ বাড়িঘর না থাকায় রাত থেকে আমরা আকাশের নীচে ৷ রাতের বৃষ্টিতে ভিজেছি ৷ ঘরের সমস্ত খাবার বিহার পুলিশ নষ্ট করে দিয়েছে ৷ সবাই না খেয়ে আছি ৷ আমাদের একটু সাহায্য করলে ভাল হয় ৷’’
আরও পড়ুন : 100 Days Work Corruption : 100 দিনের কাজে দুর্নীতিতে তিন সরকারি কর্মীকে বরখাস্ত মালদার জেলাশাসকের
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ তিনি বলেন, “এই মৌজা এবং গ্রামটি পশ্চিমবঙ্গের ৷ রাস্তার ওপারে বিহার ৷ এই রাস্তার ধারে বাংলার অংশে দীর্ঘদিন ধরে কিছু গরিব মানুষ অস্থায়ী ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন ৷ গতকাল হঠাৎ বিহারের কিছু পুলিশ এখানে ভাঙচুর করে ৷ জানতে পারি, এই বাড়িগুলির পিছনে তৃণমূলের লোকজনের জমি রয়েছে ৷ তারা জমির সামনের অংশ খালি করার জন্য বিহারের পুলিশকে টাকা দিয়ে এই কাজ করিয়েছে ৷ অথচ এই জায়গাটি পশ্চিমবঙ্গের ৷ এই মানুষগুলিকে এমন অবস্থায় ফেলে দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী তৃণমূলের লোকজন ৷ যে পুলিশকর্মীরা এই অন্যায় কাজ করেছেন, তাঁদেরও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি ।”
এ দিকে ফোন মারফৎ সাদলিচক গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকার দাবি করেন, “আমি ঘটনার কিছুই জানি না ৷ শুনেছি, বিহার সীমানায় থাকা ওই ঘরগুলি বিহার পুলিশ ভেঙে দিয়েছে ৷ এতে আমার কী বলার আছে ? এটা বাংলার বিষয় নয় ৷ বিহারের বিষয় ৷ তাই কিছু বলতে পারব না ।”
তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান ঘটনাস্থলকে একবাক্যে বিহার বলে দিলেও, তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন মালদা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্বু রহমান ৷ তিনি বলেন, “ওই পরিবারগুলি বাংলার জমিতেই বসবাস করে ৷ দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা সেখানে রয়েছেন । আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলে আসছেন, প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো মানছেন না ৷ বিহারও বিজেপি শাসিত রাজ্য ৷ তারাও সেই পরিকাঠামো মানছে না ৷ গতকালের ঘটনায় তা প্রমাণিত ৷’’
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানিয়েছেন, “যতদূর শুনেছি, বিহারের কোনও আদালতের নির্দেশে সেই রাজ্যের ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিহার পুলিশ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে ৷ বিষয়টি জানতে পেরেই ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে ৷ তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জায়গাটি কোন রাজ্যের, তা নিয়ে সার্ভে করেছেন ৷ সেই রিপোর্ট হাতে পেলেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব ৷ জায়গাটি যদি পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে হয়, তবে প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ করা হবে ৷’’