মালদা, 27 মার্চ : কোরোনা মোকাবিলায় যেকোনও ধরনের জমায়েত বিপজ্জনক বলে বার বার সাবধান করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৷ একই বক্তব্য চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদেরও ৷ কিন্তু সেই সব সতর্কবার্তা কী সব ধর্মভীরুদের কানে ঢুকছে ? এই প্রশ্নই এখন মালদা জেলায় ৷
আজ জুম্মার নমাজ ৷ জেলার প্রতিটি মসজিদেই প্রচুর ভিড় ৷ এই পরিস্থিতিতে অনেক ধর্মগুরুই লকডাউনের মধ্যে মানুষকে বাড়িতে নমাজ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন ৷ তাঁরা মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ারও আবেদন জানিয়েছেন ৷ সেই পরামর্শ মেনে জেলার বেশকিছু মসজিদ ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । তবে, খোলাও রয়েছে অনেক ৷ আজ মালদার এক মসজিদে জুম্মার নমাজে অংশ নিতেও দেখা গিয়েছে মানুষকে ৷ নমাজে যেমন বৃদ্ধদের দেখা মিলেছে, তেমনই দেখতে পাওয়া গিয়েছে অল্পবয়সীদেরও ৷
ইতিমধ্যে দেশে কোরোনায় আক্রান্ত সাতশোর বেশি মানুষ ৷ মৃত্যু হয়েছে 17 জনের ৷ সবচেয়ে বড় বিষয়, আট মাসের এক শিশুও কোরোনায় আক্রান্ত ৷ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারতে কোরোনা এখন সোশাল ট্রান্সমিশনে ঢোকার অপেক্ষা করছে ৷ এই সময় সোশাল ডিস্ট্যান্সিং অত্যন্ত জরুরি ৷ সামাজিক মেলামেশা পুরোপুরি বন্ধ না করলে কোরোনার মোকাবিলা করা কিছুতেই সম্ভব নয় ৷ সেই মেলামেশা বন্ধ করতেই চলছে লকডাউন । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, সময়মতো এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত গোটা পৃথিবীকে পথ দেখাচ্ছে ৷ লকডাউনে বন্ধ হয়েছে মন্দির, মসজিদ, গির্জা । সরকার নির্দেশ দিয়েছে, কোনওভাবেই ভিড় জমানো যাবে না । কিন্তু তা উপেক্ষা করেই আজ মালদার বিভিন্ন মসজিদে জুম্মার নমাজে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো ।
মালদা শহরের উত্তর পিরোজপুর জামে মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ এই মুহূর্তে কাউকে মসজিদে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী 14 এপ্রিল পর্যন্ত মসজিদ বন্ধ থাকবে ৷ প্রতিদিন মসজিদ থেকে পাঁচবার নমাজ পড়বেন ইমামরা ৷ সবাই যেন বাড়িতে বসেই সেই সময় নমাজ পড়ে ৷ কিন্তু ঠিক তার উলটো ছবি দেখা গিয়েছে বিবিগ্রাম জামে মসজিদে ৷ আজ সেখানে অন্যান্য দিনের মতোই হয়েছে জুম্মার নমাজ ৷ ভিড় জমিয়েছিল প্রায় 150 জন ।
এই পরিস্থিতিতে কেন এই মহামারী নিয়ে এই নিস্পৃহতা ? মসজিদের সম্পাদক সাইদুর শেখের দাবি, “আমাদের মসজিদটা একেবারের পাড়ার মধ্যে ৷ এখানে বাইরের লোক খুব কম আসে৷ অফিস-কাছারি খোলা থাকলে কিছু বাইরের লোক আসলেও এখন তারা কেউ আসছে না৷ আমাদের মসজিদের আয়তন বিশাল ৷ এখানে আমরা সবাইকে আলাদা আলাদা করে নমাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছি ৷ এখানে কোনও জমায়েত করতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ নিয়মিত নমাজি ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ অন্য শুক্রবার এখানে প্রায় পাঁচশো মানুষ নমাজ পড়তে আসেন ৷ আজ দেড়শোর বেশি লোক হয়নি ৷ নমাজে যেন বৃদ্ধ ও বাচ্চারা না আসে তার জন্য আমরা মাইকে জানিয়ে দিয়েছি ৷ আমরা চেষ্টা করেছিলাম নমাজ বন্ধ করার ৷ কিন্তু তাতে আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ৷ আমরা পুলিশ প্রশাসনকেও বিষয়টি জানিয়েছিলাম ৷ পুলিশও আমাদের জমায়েত বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে ৷ কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আমরা নমাজ বন্ধ করতে পারিনি ৷ পরিস্থিতি দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব ৷”