মালদা, 22 অগস্ট: এ বার হরিশচন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের তুলসিহাটা হাটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ ৷ আর তার জেরে হাটে বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাট কেনাবেচা (INTTUC to Stop Selling Jute at Tulsihata Market) ৷ এর ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন গরিব কৃষকরা ৷ এ নিয়ে শাসকদলের নেতাকর্মীদের দুষছেন হাটের ব্যবসায়ীরা ৷ যদিও, সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হরিশচন্দ্রপুর ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ তবে, দ্রুত সমস্যা না মিটলে কৃষকরা আরও বড় সমস্যায় পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ৷
মালদা জেলায় যে’কটি বড় হাট রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের তুলসিহাটা হাট ৷ নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি চত্বরে প্রতি রবিবার সেই হাট বসে। যেখানে বিপুল পরিমাণ পাট কেনাবেচা হয় ৷ অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের দাদাগিরিতে গতকাল হাটে এক আঁটি পাটও বিক্রি করতে পারেননি চাষিরা (Malda Tulsihata Market Closed) ৷ গাড়ি ভাড়া করে হাটে পাট আনার পরেও তা আবার ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের ৷
কিন্তু, কেন এই অবস্থা ! জানা গিয়েছে, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে 20 অগস্ট থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের পাট শ্রমিকরা ধর্মঘটে নেমেছেন ৷ আর তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছে স্থানীয় আইএনটিটিইউসি নেতৃত্ব ৷ শ্রমিকরা দাবি করেছেন, প্রতি বছরের মতো 5-6 শতাংশ নয় ৷ তাঁদের মজুরি অন্তত 30-40 শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে ৷ তা না হলে, কোনও পাইকারি হাট থেকে পাট কিনতে পারবেন না ৷ এর জেরেই গতকাল তুলসিহাটা হাটে এক আঁটি পাটও বিক্রি করতে পারেননি চাষিরা ৷
নাসিমুদ্দিন নামে চাঁচলের ভবানীপুর গ্রামের এক পাটচাষি বলেন, “হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে হাটে 10 কুইন্টাল পাট এনেছিলাম ৷ কিন্তু, পাইকাররা কেউ হাটে আসেনি ৷ ফের পাট ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে ৷ ফের হাজার টাকা ভাড়া লাগবে ৷ এত টাকা পাব কোথায় ? পাওনাদারদের টাকাই বা দেব কী করে ? পাট তো আর খাবার জিনিস নয় ৷ বিক্রি করতে না পারলে খাব কী ?’’
আরও পড়ুন: পাট-রাজনীতির হাত ধরে কি এবার ঘরে ফেরা নিশ্চিত করতে চান অর্জুন ?
এ নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর জুট মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গোপাল ভগত বলেন, “আমরা প্রতি বছর পাট শ্রমিকদের মজুরি 5 থেকে 8 শতাংশ বৃদ্ধি করি ৷ কিন্তু, তাতে তাঁরা সন্তুষ্ট নন ৷ তাঁদের দাবি, মজুরি বাড়াতে হবে 30 থেকে 40 শতাংশ ৷ এই দাবিতে তাঁরা ধর্মঘটে নেমেছেন ৷ এই শ্রমিক আন্দোলনের পিছনে রয়েছে আইএনটিটিইউসি ৷ সংগঠনের লোকজন আমাদের হুমকি দিচ্ছে, ওই হারে মজুরি বৃদ্ধি না করলে হাটে পাট বেচাকেনা করা যাবে না ৷ তাই আমরা পাট কেনা বন্ধ রেখেছি ৷ এখনই আমাদের অন্য হাটগুলির থেকে বেশি দামে পাট কিনতে হয় ৷ কলকাতার বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের চলতে হয় ৷ এর পরেও শ্রমিকদের মজুরি অত বাড়ানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় ৷’’
অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আইএনটিটিইউসির হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লক সভাপতি সাহেব দাস ৷ তিনি বলেন, “বাজারে জিনিসের দাম যে হারে বাড়ছে সেই অনুপাতে পাট শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে না ৷ মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আমরা শ্রমিকদের পাশে রয়েছি ৷ কিন্তু, কে বা কারা পাটের পাইকার ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়েছে, তা আমার জানা নেই ৷ তেমন হয়ে থাকলে প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে ৷ আমরা চাই, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক ৷’’