ETV Bharat / city

মালদায় রমরমিয়ে চলছে ভেজাল হলুদের ব্যবসা, নিষ্ক্রিয় প্রশাসন - মিড-ডে মিল

মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরে বহুদিন ধরেই রমরমিয়ে চলছে ভেজাল হলুদ তৈরির ব্যবসা ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর ১-এর বিডিও’র কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন ওই এলাকার মানুষ ৷

adulterant turmeric
হরিশ্চন্দ্রপুর হলুদ মিল
author img

By

Published : Feb 14, 2020, 12:20 PM IST

মালদা, ১৪ ফেব্রুয়ারি : প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি হিসাবে হলুদের ব্যবহার প্রচলিত ৷ আধুনিক গবেষণা বলছে, হলুদের মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিহত করার ক্ষমতা৷ দেশের প্রতিটি ঘরেই রান্নায় ব্যবহৃত হয় হলুদ ৷ কিন্তু ভেজাল মেশানো হচ্ছে হলুদেও ৷ বহুদিন ধরেই মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরে রমরমিয়ে চলছে এই ব্যবসা ৷ মূলত ইসলামপুর, তিলডাঙ্গি, রামপুর, মালিওর প্রভৃতি এলাকায় এই কালো বাজারি চলছে ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর ১-এর বিডিও’র কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন ওই এলাকার মানুষ ৷

হরিশ্চন্দ্রপুরের একাধিক মিলে হলুদ গুঁড়ো তৈরির যে ছবি ধরা পড়েছে তা দেখলে যে কোনও মানুষের চোখ কপালে উঠবে ৷ কিছু গোটা ও প্রায় পচে যাওয়া হলুদের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ধানের তুষের গুঁড়ো, চালের গুঁড়ো, আটা, বিভিন্ন রাসায়নিক রং, এমনকি ইটের গুঁড়োও ৷ সমস্ত সামগ্রী ভালো করে মিশিয়ে গুঁড়ো করা হচ্ছে, সেই হলুদ গুঁড়ো বস্তাবন্দী করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন হাটেবাজারে৷ খালি চোখে সেই হলুদ গুঁড়োয় ভেজাল বোঝার উপায় নেই৷ বাজার চলতি নামি কম্পানির তুলনায় দামও বেশ খানিকটা কম হওয়ায় মানুষও না জেনেই সেই হলুদ গুঁড়ো দিয়েই রান্না করছে ৷ ফলে নানাবিধ রোগের শিকার হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা৷ পেটের অসুখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসুখে ভুগছে সবাই ৷

সম্প্রতি অসাধু ব্যবসায়ীদের এই ভেজাল হলুদ গুঁড়ো তৈরির কার্যপ্রণালি এলাকার মানুষজনের নজরে আসে ৷ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর ধরে ভেজাল হলুদ তৈরির ব্যবসা চলছে এলাকায় ৷ এই নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয় বিডিও’র কাছে ৷ রামপুর এলাকার এক মিল মালিক অতীশ সাহা বলছেন, “বছর দুয়েক আগে আমি হলুদে ভেজাল মেশাতাম ৷ কিন্তু এখন সেসব বন্ধ করে দিয়েছি ৷ এখন পুরোপুরি বিশুদ্ধ হলুদ আমার মিলে ভাঙানো হয় ৷ তাতে আর কোনও ভেজাল মেশাই না ৷ তবে হরিশ্চন্দ্রপুরে ভেজাল হলুদের রমরমা কারবার চলছে ৷” রামপুর গ্রামের বাসিন্দা মহবুল শেখ বলেন, “এখানকার মিলগুলিতে হলুদের সঙ্গে আটা, রাসায়নিক রং সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস মেশানো হচ্ছে৷ সেই হলুদই সবাই খাচ্ছে ৷ আমরাও খাচ্ছি ৷ এতে শরীরের ক্ষতি তো হচ্ছেই ৷ প্রশাসনকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে ৷”

হরিশ্চন্দ্রপুরের ব্যবসায়ী উৎপল সরকার বলেন, “আমার দোকানে খোলা হলুদ বিক্রি হয় না৷ খোলা হলুদে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে ৷ আমার দোকানের ক্রেতারাও এখন ভালো কম্পানির প্যাকেটের হলুদ গুঁড়ো চাইছে ৷ তাই আমরা শুধুমাত্র নামি কম্পানির হলুদই দোকানে রাখি ৷ কিন্তু গরিব মানুষজন খোলা হলুদই খেতে অভ্যস্ত ৷ সেই হলুদ খেয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্তও হচ্ছে তারা ৷”

ভেজাল হলুদ খেলে শরারের কী কী ক্ষতি হতে পারে- তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার অমলকৃষ্ণ মণ্ডলকে ৷ তিনি বলেন, “ভেজালে কী ধরনের রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে তার উপরেই শরীরে কী প্রভাব পড়বে , তা নির্ভর করে ৷ ধানের তুষের গুঁড়ো, পচা হলুদ, চালের গুঁড়োর মতো জিনিস হলুদে মেশালে সেই হলুদ খেলে সাধারণ পেটের রোগ হতে পারে ৷ কিন্তু ক্ষতিকর রাসায়নিক, যেমন কার্সিনোজেনিক রং মেশালে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে ৷ শুধু তাই নয়, আলসার সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে৷ এই ভেজাল কারবারীদের সবার আগে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন ৷ এই ভেজাল ব্যবসা বন্ধ করতেই হবে৷ পুলিশ ও প্রশাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত ৷”

মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের মিলে চলছে ভেজাল হলুদ তৈরির কাজ ৷

প্রাথমিক স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নায় ভেজাল হলুদ ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হরিশ্চন্দ্রপুর হাইস্কুলের মিড-ডে মিলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, “মিড ডে মিলের জন্য আমরা হলুদ কিংবা যেসব মশলা কিনি, তা সবই প্যাকেটজাত ৷ তাই ভেজাল হলুদ আমাদের রান্নাঘরে ঢোকার কোনও সম্ভাবনাই নেই ৷ তাছাড়া আমরা নিজেরাই মিড-ডে মিলের বাজার করি৷ আমরা সবসময় পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখি ৷ তবে হরিশ্চন্দ্রপুরে হলুদ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই অভিযোগ রয়েছে ৷”

মালদা, ১৪ ফেব্রুয়ারি : প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি হিসাবে হলুদের ব্যবহার প্রচলিত ৷ আধুনিক গবেষণা বলছে, হলুদের মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিহত করার ক্ষমতা৷ দেশের প্রতিটি ঘরেই রান্নায় ব্যবহৃত হয় হলুদ ৷ কিন্তু ভেজাল মেশানো হচ্ছে হলুদেও ৷ বহুদিন ধরেই মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরে রমরমিয়ে চলছে এই ব্যবসা ৷ মূলত ইসলামপুর, তিলডাঙ্গি, রামপুর, মালিওর প্রভৃতি এলাকায় এই কালো বাজারি চলছে ৷ হরিশ্চন্দ্রপুর ১-এর বিডিও’র কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন ওই এলাকার মানুষ ৷

হরিশ্চন্দ্রপুরের একাধিক মিলে হলুদ গুঁড়ো তৈরির যে ছবি ধরা পড়েছে তা দেখলে যে কোনও মানুষের চোখ কপালে উঠবে ৷ কিছু গোটা ও প্রায় পচে যাওয়া হলুদের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ধানের তুষের গুঁড়ো, চালের গুঁড়ো, আটা, বিভিন্ন রাসায়নিক রং, এমনকি ইটের গুঁড়োও ৷ সমস্ত সামগ্রী ভালো করে মিশিয়ে গুঁড়ো করা হচ্ছে, সেই হলুদ গুঁড়ো বস্তাবন্দী করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন হাটেবাজারে৷ খালি চোখে সেই হলুদ গুঁড়োয় ভেজাল বোঝার উপায় নেই৷ বাজার চলতি নামি কম্পানির তুলনায় দামও বেশ খানিকটা কম হওয়ায় মানুষও না জেনেই সেই হলুদ গুঁড়ো দিয়েই রান্না করছে ৷ ফলে নানাবিধ রোগের শিকার হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা৷ পেটের অসুখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসুখে ভুগছে সবাই ৷

সম্প্রতি অসাধু ব্যবসায়ীদের এই ভেজাল হলুদ গুঁড়ো তৈরির কার্যপ্রণালি এলাকার মানুষজনের নজরে আসে ৷ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর ধরে ভেজাল হলুদ তৈরির ব্যবসা চলছে এলাকায় ৷ এই নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয় বিডিও’র কাছে ৷ রামপুর এলাকার এক মিল মালিক অতীশ সাহা বলছেন, “বছর দুয়েক আগে আমি হলুদে ভেজাল মেশাতাম ৷ কিন্তু এখন সেসব বন্ধ করে দিয়েছি ৷ এখন পুরোপুরি বিশুদ্ধ হলুদ আমার মিলে ভাঙানো হয় ৷ তাতে আর কোনও ভেজাল মেশাই না ৷ তবে হরিশ্চন্দ্রপুরে ভেজাল হলুদের রমরমা কারবার চলছে ৷” রামপুর গ্রামের বাসিন্দা মহবুল শেখ বলেন, “এখানকার মিলগুলিতে হলুদের সঙ্গে আটা, রাসায়নিক রং সহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস মেশানো হচ্ছে৷ সেই হলুদই সবাই খাচ্ছে ৷ আমরাও খাচ্ছি ৷ এতে শরীরের ক্ষতি তো হচ্ছেই ৷ প্রশাসনকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে ৷”

হরিশ্চন্দ্রপুরের ব্যবসায়ী উৎপল সরকার বলেন, “আমার দোকানে খোলা হলুদ বিক্রি হয় না৷ খোলা হলুদে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে ৷ আমার দোকানের ক্রেতারাও এখন ভালো কম্পানির প্যাকেটের হলুদ গুঁড়ো চাইছে ৷ তাই আমরা শুধুমাত্র নামি কম্পানির হলুদই দোকানে রাখি ৷ কিন্তু গরিব মানুষজন খোলা হলুদই খেতে অভ্যস্ত ৷ সেই হলুদ খেয়ে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্তও হচ্ছে তারা ৷”

ভেজাল হলুদ খেলে শরারের কী কী ক্ষতি হতে পারে- তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার অমলকৃষ্ণ মণ্ডলকে ৷ তিনি বলেন, “ভেজালে কী ধরনের রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে তার উপরেই শরীরে কী প্রভাব পড়বে , তা নির্ভর করে ৷ ধানের তুষের গুঁড়ো, পচা হলুদ, চালের গুঁড়োর মতো জিনিস হলুদে মেশালে সেই হলুদ খেলে সাধারণ পেটের রোগ হতে পারে ৷ কিন্তু ক্ষতিকর রাসায়নিক, যেমন কার্সিনোজেনিক রং মেশালে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে ৷ শুধু তাই নয়, আলসার সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে৷ এই ভেজাল কারবারীদের সবার আগে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন ৷ এই ভেজাল ব্যবসা বন্ধ করতেই হবে৷ পুলিশ ও প্রশাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত ৷”

মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের মিলে চলছে ভেজাল হলুদ তৈরির কাজ ৷

প্রাথমিক স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নায় ভেজাল হলুদ ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হরিশ্চন্দ্রপুর হাইস্কুলের মিড-ডে মিলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, “মিড ডে মিলের জন্য আমরা হলুদ কিংবা যেসব মশলা কিনি, তা সবই প্যাকেটজাত ৷ তাই ভেজাল হলুদ আমাদের রান্নাঘরে ঢোকার কোনও সম্ভাবনাই নেই ৷ তাছাড়া আমরা নিজেরাই মিড-ডে মিলের বাজার করি৷ আমরা সবসময় পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখি ৷ তবে হরিশ্চন্দ্রপুরে হলুদ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই অভিযোগ রয়েছে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.