মালদা, 19 নভেম্বর : পারিবারিক অশান্তির জেরে তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষপান করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করলেন এক যুবতি ৷ আজ ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া থানার বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে ৷ সময়মতো জানতে পেরে গ্রামবাসী মা ও তিন সন্তানকে প্রথমে রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল, পরে মালদা মেডিকেলে ভরতি করে ৷ আপাতত মালদা মেডিকেলে সবাই চিকিৎসাধীন ৷ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ তবে, গোটা ঘটনার উপর লক্ষ্য রেখেছে রতুয়া থানার পুলিশ ৷
রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমিত মণ্ডল পেশায় দিনমজুর ৷ প্রায় সাত বছর আগে বিহারের কাটিহার জেলার নাগরাই গ্রামের বাসিন্দা পুণম মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ৷ বিয়ের পর সুমিত স্ত্রী নিয়ে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যান ৷ তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে ৷ বড় ছেলে সূর্যর বয়স মাত্র পাঁচ বছর ৷ দুই মেয়ে নন্দিনী ও মাহির বয়স যথাক্রমে তিন বছর ও পাঁচ মাস ৷
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারে অভাব থাকলেও সুমিতের প্রতিদিন মদ্যপানের নেশা ছিল ৷ এনিয়ে প্রায় প্রতিদিনই বাড়িতে স্ত্রী’র সঙ্গে ঝামেলা হত তাঁর ৷ আজ সকালেও তাঁদের মধ্যে ঝামেলা হয় ৷ এরপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সুমিত ৷ কিছুক্ষণ পর ধান শুকোতে যাচ্ছেন বলে বাচ্চাদের নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান পুণম ৷ বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে তিন সন্তানকে কীটনাশক খাইয়ে নিজেও সেই বিষ পান করেন তিনি ৷ বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় কয়েকজনের ৷ তারা তড়িঘড়ি চারজনকেই স্থানীয় রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ সেখানকার চিকিৎসকরা সবাইকে মালদা মেডিকেলে রেফার করে দেন ৷ গ্রামবাসীই তাদের মেডিকেলে নিয়ে আসে ৷ খবর পেয়ে মেডিকেলে আসেন সুমিতও ৷
সুমিতের দাবি, “আজ আমি বাড়িতে ছিলাম না ৷ সেই সময় পুণমের সঙ্গে আমার মায়ের ঝামেলা হয় ৷ তার জেরেই সে বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ খায় ৷ কী নিয়ে এই ঝামেলা জানি না ৷ পুণমের সঙ্গে কথা বলার পরেই বিষয়টি জানতে পারব ৷” যদিও সুমিতের মা সাবো মণ্ডল বলেন, “আমার সঙ্গে বউমার কোনও ঝামেলা হয়নি ৷ ওরা আলাদা থাকে ৷ আমি সকালে জমি গিয়েছিলাম ৷ বাড়ি ফিরে দেখি, বাচ্চাদের নিয়ে বউমা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ আমি তখন রান্না করছিলাম৷ ভেবেছিলাম, ও হয়ত ধান নাড়তে গেল ৷ খানিক বাদে শুনি, বাচ্চাদের নিয়ে বউমা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ৷ তবে ওদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই ঝামেলা হয় ৷ আজ সকালেও ছেলের সঙ্গে ওর ঝগড়া হয়েছিল ৷ তারপর ছেলে বাজার করে বাড়িতে দিয়ে বেরিয়ে যায় ৷ বউমা গালাগালি করছিল ৷ ওকে জিজ্ঞাসা করেও কোনও উত্তর পাইনি ৷ গ্রামবাসীই চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷”
সুমিতদের পড়শি শেফালি মণ্ডল বলেন, “আজ সকালে ওদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল ৷ খানিক বাদে বাচ্চাদের নিয়ে পুণম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়৷ কিন্তু ও যে বাচ্চাদের নিয়ে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করবে, বুঝতে পারিনি ৷ গ্রামের বাইরেই ওরা বিষ খায় ৷ কিছুক্ষণ পর আমরা ঘটনাটি শুনতে পাই ৷ সংসার থাকলে দুটো কথা চালাচালি হবেই ৷ আমাদের সংসারেও হয় ৷ তবে আজ ওদের বাড়িতে কী হয়েছে, তা ওরাই বলতে পারবে ৷” রতুয়া থানার OC কুণাল দাস জানিয়েছেন, “ঘটনাটি শুনেছি৷ এনিয়ে এখনও কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে জমা পড়েনি৷ তবে আমরা গোটা ঘটনার উপর লক্ষ্য রাখছি৷ অভিযোগ দায়ের হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷”