মালদা, 5 মার্চ : দেশ জুড়ে প্রধানমন্ত্রীর বেটি বাচাও, বেটি পড়াও বা রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী প্রকল্প বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হলেও কন্যাসন্তানকে ‘দায়’ মনে করার মানসিকতা যে এখনও পরিবর্তিত হয়নি, তা প্রমাণিত হল আরও একবার ৷ কন্যা সন্তান হওয়ায় খড়ের গাদায় ফেলে গেল পরিবার ৷ স্থানীয় বাসিন্দারা ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ পরে তাঁকে চাঁচল সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয় ৷
যখন মেয়েদের জন্য এত কিছু সরকারি সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে, ঠিক তখনই এক নবজাত কন্যাসন্তানকে পরিত্যাগ করল মা৷ কাল দুপুর ১২টা নাগাদ প্রতিদিনের মতোই কাজে ব্যস্ত ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা সালিনু বিবি ৷ হঠাৎ তিনি শুনতে পান, বাড়ির পাশে থাকা খড়ের গাদা থেকে ভেসে আসছে এক সদ্যোজাতের কান্নার আওয়াজ ৷ তিনি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান সেখানে ৷ দেখেন, এক নবজাত কন্যাসন্তান সেই খড়ের গাদায় পড়ে রয়েছে, তাঁর নাড়িও পুরোপুরি কাটা হয়নি ৷ শরীরে নেই কোনও কাপড়ও ৷ সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই সদ্যোজাতকে কোলে তুলে নেন ৷ বাড়িতে নিয়ে এসে কাপড় দিয়ে মুড়ে ফেলেন ৷ খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে ছুটে আসে পড়শিরা ৷
সালিনু বিবি বলেন, “আমি বাড়িতে ঝাড়ু দিয়ে আবর্জনা ফেলতে এসেছিলাম ৷ কান্নার আওয়াজ শুনে এখানে এসে দেখি খড়ের গাদায় একটি বাচ্চা শুয়ে কাঁদছে ৷ আমি সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাটিকে তুলে বাড়ির বারান্দায় শুইয়ে দিই ৷ খবর দিই গ্রামবাসীদের ৷ গ্রামের ছেলেরা বাচ্চাটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ গ্রামের সবাই বলছে হয়তো কারোর মেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছে, না হয় কোনও কুমারি মেয়ে মা হয়ে যাওয়ায় এই সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে পরিত্যাগ করেছে৷”
ওই সদ্যোজাতকে স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান গ্রামের বাসিন্দা সাদিনুর ইসলাম ও তার বন্ধুরা ৷ তিনি বলেন, “বাচ্চাটিকে উদ্ধার করার পর আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি ৷ তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে ৷ সে চোখও খুলেছে ৷ বাচ্চাটির কোনও শারীরিক সমস্যা নেই ৷ চিকিৎসকরা তাকে ভালোভাবেই রেখেছেন ৷ তবে বাচ্চাটিকে কে বা কারা ফেলে গিয়েছে তা বলা যাচ্ছে না ৷”
হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অমলকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “এই খবর পাওয়ার পরেই আমি এক আশাকর্মীকে বাচ্চাটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলি ৷ বাচ্চাটির প্ল্যাসেন্টা কাটা ছিল না ৷ অবশ্য বাচ্চাটির ওজন বেশ ভালো, ২ কিলো ৬০০ গ্রাম ৷ প্রথমে একটু কমজোরি থাকলেও হাসপাতালে থাকা এক মা তাকে স্তন্যপান করানোর পরই সে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে ৷ তবে এই হাসপাতালে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট নেই, ভেন্টিলেশন নেই ৷ তাই আমরা বাচ্চাটিকে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠাচ্ছি ৷ বাচ্চাটি এখন পুরোপুরি সুস্থ৷”