ETV Bharat / city

Durga Puja: মুসলিম জমিদার প্রবর্তিত দুর্গাপুজোয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা - নুরপুর

328 বছর আগে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন মালদার রতুয়ার নুরপুরের মুসলিম জমিদার জুহুর খান ৷ দেবীর স্বপ্নাদেশে তিনি এই পুজো শুরু করেছিলেন ৷ কথিত আছে কালিন্দী নদীর পাড়ে মা দুর্গার কাঠামো ভেসে এসেছিল ৷ সেখান থেকেই ওই কাঠামো তুলে নিয়ে গিয়ে দেবী দুর্গাকে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেছিলেন জমিদার জুহুর খান ৷

328 Years Old Durga Pujo Which is introduced by Ratuas Muslim Zamindar Juhoor Khan
328 বছরের মুসলিম জমিদার প্রবর্তিত দুর্গাপুজোয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা
author img

By

Published : Oct 10, 2021, 10:02 PM IST

মালদা, 10 অক্টোবর : বাংলায় একাধিক প্রাচীন দুর্গাপুজো রয়েছে ৷ প্রতিটি পুজোর ক্ষেত্রেই রয়েছে বিভিন্ন কাহিনি ৷ কিন্তু, কোনও মুসলিম জমিদারের শুরু করা দুর্গাপুজো ৷ তেমন কাহিনি বোধহয় এখনও সেভাবে শোনা যায়নি ৷ ঠিক এমনই ঘটেছিল রতুয়ায় ৷ স্বপ্নাদেশে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন করেছিলেন জমিদার জুহুর খান ৷ সেই পুজো এবার 328 বছরে পা দিতে চলেছে ৷ ওই দুর্গা মন্দিরে এখন সাজো সাজো রব ৷

রতুয়া থানা থেকে সামান্য দূরে মাড়োয়ারি পট্টি ৷ সামনে কালিন্দী নদী ৷ খানিকটা দূরে ফুলহার থেকে তার উৎপত্তি ৷ বছর চল্লিশ আগেও খরস্রোতা ছিল এই শাখা নদী ৷ ফুলহারের জলে পূর্ণগর্ভা থাকত বছরের বেশিরভাগ সময় ৷ তবে, দুই নদীর সঙ্গমে বাঁধ তৈরি করে দিয়েছে সেচ দফতর ৷ তাই এখন সারা বছর ফুলহারের জল কালিন্দী নদীতে আসতে পারে না ৷ তবে, বর্ষায় ফুলহারের জলের চাপ ধরে রাখতে পারে না সেই বাঁধ ৷ প্রায় প্রতি বছরই ফুলহারের বাঁধভাঙা জল কালিন্দী চলে আসে ৷

আরও পড়ুন : Durga Pujo 2021 : সিরাজউদৌল্লার আমলে প্রবর্তিত পুজোয় এখনও দেখা মেলে নীলকণ্ঠ পাখির

একটা সময় রতুয়া, চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর প্রভৃতি এলাকা ছিল মালদা জেলার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় নৌকা, এমনকি পণ্যবোঝাই জাহাজ এসে ঠেকত রতুয়ায় কালিন্দীর ঘাটে ৷ সেই বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই ইংরেজ আমলে এখানে জমিদারি শুরু করেছিলেন জুহুর খান ৷ তিনি ছিলেন মানিকচকের নুরপুর এলাকার বাসিন্দা ৷ এখন অবশ্য তাঁর বংশধররা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছেন ৷ মাড়োয়ারি পট্টির নদীঘাটের কাছেই ছিল জুহুর সাহেবের কাছারি ৷ কথিত আছে, 328 বছর আগে দেবীর স্বপ্নাদেশে তিনি কাছারির পাশেই দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন ৷ স্বপ্নে দেবী তাঁকে নির্দেশ দেন, তাঁর কাঠামো কালিন্দীর ঘাটে ঠেকে রয়েছে ৷ জমিদার যেন সেই কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন করেন ৷ মায়ের আদেশ উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি ৷ পুজোরবিধি না জানলেও তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেন ৷

মুসলিম জমিদার প্রবর্তিত দুর্গাপুজোয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা

আরও পড়ুন : Durga Puja: 156 বছরে পড়ল বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

বর্তমানে এই পুজো চালাচ্ছেন স্থানীয় হিন্দুরা ৷ মুসলিমরাও পুজোয় অংশ নেন ৷ পুজো কমিটির এক সদস্য অশোক আগরওয়াল জানালেন, “মুসলমান জমিদার জুহুর খান এই পুজো প্রবর্তন করেছিলেন ৷ মায়ের স্বপ্নাদেশে তিনি এই পুজো প্রবর্তন করেন ৷ প্রথমে কয়েক বছর তিনিই এই পুজোর আয়োজন করেছিলেন ৷ কিন্তু কয়েক বছর পর তিনি পুজোর দায়িত্ব হিন্দু সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেন ৷ এবার এই পুজো 328 বছরে পা দিচ্ছে ৷ জুহুর সাহেব মায়ের পুজোর জন্য দুই একর জমি দান করেছিলেন ৷ সেই জায়গাতেই পরবর্তী সময়ে মন্দির তৈরি হয়েছে ৷ এই মন্দিরের বয়সও প্রায় 100 বছর হল ৷ এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব, এখনও মায়ের মূর্তিতে পত্তনের সময়কালের ছোঁয়া রয়েছে ৷ কালিন্দীতে ভেসে আসা মায়ের কাঠামোর উপর এখনও দেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয় ৷ যে পদ্ধতিতে পুজোর প্রবর্তন হয়েছিল, এখনও সেই রীতিতে পুজো করা হয় ৷ পুজোর কোনও নিয়ম পরিবর্তন করা হয়নি ৷ আগের মতো এখনও পুজোয় বলিপ্রথা চালু রয়েছে ৷ পুজো কমিটির তরফে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে একটি করে ছাগল বলি দেওয়া হয় ৷ মহানবমীতে ভক্তদের দেওয়া প্রায় তিনশো পাঁঠাবলি হয় ৷ পুজোকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে ৷ তবে, করোনার জন্য দু’বছর ধরে মেলা বন্ধ রয়েছে ৷’’

আরও পড়ুন : Durga Puja Special : দাসবাড়ির দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর দিনে আজও ওড়ে শঙ্খচিল

পুজো কমিটির সভাপতি অশোক কুমার ঘোষ বলেন, “প্রথম থেকেই পুজোয় নরনারায়ণ সেবার আয়োজন করা হয় ৷ অষ্টমী তিথিতে প্রচুর মানুষ খিচুড়ি ভোগ পান ৷ করোনার জন্য আমরা অবশ্য কাউকে বসে খাওয়াতে পারছি না ৷ প্লেটে খিচুড়ি বিলি করা হচ্ছে ৷ ভোগ বিলির সময় কঠোরভাবে করোনাবিধি মেনে চলা হয় ৷ নবমী তিথিতে প্রতি বছর এখানে প্রায় 270টি পাঁঠাবলি হয় ৷ এবার পুজোর বাজেট দু’লাখ 20 হাজার টাকা ৷ প্রতিমা তৈরি করছেন দেবীপুরের রতন মিশ্র ৷ পূজারি এলাকারই সুনীল ঠাকুর ৷ শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও এই পুজোয় আমাদের সহযোগিতা করেন ৷ তার জন্য আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাই ৷ এই পুজো রতুয়া বারোয়ারি দুর্গাপুজো নামেই জেলায় পরিচিত ৷’’

আরও পড়ুন : Durga Pujo : 300 বছর ধরে মেদিনীপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবারে অসুর ছাড়া পূজিত হন অভয়া দুর্গা

18 বছর ধরে এখানে মাতৃমূর্তি তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী রতন মিশ্র ৷ তিনি জানান, “এই মূর্তি পৌরাণিক মত অনুযায়ী তৈরি হয় ৷ চালা নিয়ে মূর্তির উচ্চতা 11 ফুট ৷ প্রথম থেকেই একই আঙ্গিকে মূর্তি তৈরি হয়ে আসছে ৷ যে চালিতে প্রথম মূর্তি তৈরি হয়েছিল, সেই চালিতেই এখনও প্রতিমা তৈরি হয় ৷ চালির কোনও কাঠ নষ্ট হয়ে গেলে, সেটা পালটে দেওয়া হলেও এখনও 328 বছর আগের কাঠ চালিতে রয়েছে ৷ এছাড়া মূর্তির আর কোনও বিশেষ বৈশিষ্ট্য নেই ৷’’

মালদা, 10 অক্টোবর : বাংলায় একাধিক প্রাচীন দুর্গাপুজো রয়েছে ৷ প্রতিটি পুজোর ক্ষেত্রেই রয়েছে বিভিন্ন কাহিনি ৷ কিন্তু, কোনও মুসলিম জমিদারের শুরু করা দুর্গাপুজো ৷ তেমন কাহিনি বোধহয় এখনও সেভাবে শোনা যায়নি ৷ ঠিক এমনই ঘটেছিল রতুয়ায় ৷ স্বপ্নাদেশে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন করেছিলেন জমিদার জুহুর খান ৷ সেই পুজো এবার 328 বছরে পা দিতে চলেছে ৷ ওই দুর্গা মন্দিরে এখন সাজো সাজো রব ৷

রতুয়া থানা থেকে সামান্য দূরে মাড়োয়ারি পট্টি ৷ সামনে কালিন্দী নদী ৷ খানিকটা দূরে ফুলহার থেকে তার উৎপত্তি ৷ বছর চল্লিশ আগেও খরস্রোতা ছিল এই শাখা নদী ৷ ফুলহারের জলে পূর্ণগর্ভা থাকত বছরের বেশিরভাগ সময় ৷ তবে, দুই নদীর সঙ্গমে বাঁধ তৈরি করে দিয়েছে সেচ দফতর ৷ তাই এখন সারা বছর ফুলহারের জল কালিন্দী নদীতে আসতে পারে না ৷ তবে, বর্ষায় ফুলহারের জলের চাপ ধরে রাখতে পারে না সেই বাঁধ ৷ প্রায় প্রতি বছরই ফুলহারের বাঁধভাঙা জল কালিন্দী চলে আসে ৷

আরও পড়ুন : Durga Pujo 2021 : সিরাজউদৌল্লার আমলে প্রবর্তিত পুজোয় এখনও দেখা মেলে নীলকণ্ঠ পাখির

একটা সময় রতুয়া, চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর প্রভৃতি এলাকা ছিল মালদা জেলার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড় বড় নৌকা, এমনকি পণ্যবোঝাই জাহাজ এসে ঠেকত রতুয়ায় কালিন্দীর ঘাটে ৷ সেই বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই ইংরেজ আমলে এখানে জমিদারি শুরু করেছিলেন জুহুর খান ৷ তিনি ছিলেন মানিকচকের নুরপুর এলাকার বাসিন্দা ৷ এখন অবশ্য তাঁর বংশধররা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছেন ৷ মাড়োয়ারি পট্টির নদীঘাটের কাছেই ছিল জুহুর সাহেবের কাছারি ৷ কথিত আছে, 328 বছর আগে দেবীর স্বপ্নাদেশে তিনি কাছারির পাশেই দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন ৷ স্বপ্নে দেবী তাঁকে নির্দেশ দেন, তাঁর কাঠামো কালিন্দীর ঘাটে ঠেকে রয়েছে ৷ জমিদার যেন সেই কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন করেন ৷ মায়ের আদেশ উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি ৷ পুজোরবিধি না জানলেও তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেন ৷

মুসলিম জমিদার প্রবর্তিত দুর্গাপুজোয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা

আরও পড়ুন : Durga Puja: 156 বছরে পড়ল বারদ্রোণের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

বর্তমানে এই পুজো চালাচ্ছেন স্থানীয় হিন্দুরা ৷ মুসলিমরাও পুজোয় অংশ নেন ৷ পুজো কমিটির এক সদস্য অশোক আগরওয়াল জানালেন, “মুসলমান জমিদার জুহুর খান এই পুজো প্রবর্তন করেছিলেন ৷ মায়ের স্বপ্নাদেশে তিনি এই পুজো প্রবর্তন করেন ৷ প্রথমে কয়েক বছর তিনিই এই পুজোর আয়োজন করেছিলেন ৷ কিন্তু কয়েক বছর পর তিনি পুজোর দায়িত্ব হিন্দু সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেন ৷ এবার এই পুজো 328 বছরে পা দিচ্ছে ৷ জুহুর সাহেব মায়ের পুজোর জন্য দুই একর জমি দান করেছিলেন ৷ সেই জায়গাতেই পরবর্তী সময়ে মন্দির তৈরি হয়েছে ৷ এই মন্দিরের বয়সও প্রায় 100 বছর হল ৷ এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব, এখনও মায়ের মূর্তিতে পত্তনের সময়কালের ছোঁয়া রয়েছে ৷ কালিন্দীতে ভেসে আসা মায়ের কাঠামোর উপর এখনও দেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয় ৷ যে পদ্ধতিতে পুজোর প্রবর্তন হয়েছিল, এখনও সেই রীতিতে পুজো করা হয় ৷ পুজোর কোনও নিয়ম পরিবর্তন করা হয়নি ৷ আগের মতো এখনও পুজোয় বলিপ্রথা চালু রয়েছে ৷ পুজো কমিটির তরফে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে একটি করে ছাগল বলি দেওয়া হয় ৷ মহানবমীতে ভক্তদের দেওয়া প্রায় তিনশো পাঁঠাবলি হয় ৷ পুজোকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে ৷ তবে, করোনার জন্য দু’বছর ধরে মেলা বন্ধ রয়েছে ৷’’

আরও পড়ুন : Durga Puja Special : দাসবাড়ির দুর্গাপুজোয় অষ্টমীর দিনে আজও ওড়ে শঙ্খচিল

পুজো কমিটির সভাপতি অশোক কুমার ঘোষ বলেন, “প্রথম থেকেই পুজোয় নরনারায়ণ সেবার আয়োজন করা হয় ৷ অষ্টমী তিথিতে প্রচুর মানুষ খিচুড়ি ভোগ পান ৷ করোনার জন্য আমরা অবশ্য কাউকে বসে খাওয়াতে পারছি না ৷ প্লেটে খিচুড়ি বিলি করা হচ্ছে ৷ ভোগ বিলির সময় কঠোরভাবে করোনাবিধি মেনে চলা হয় ৷ নবমী তিথিতে প্রতি বছর এখানে প্রায় 270টি পাঁঠাবলি হয় ৷ এবার পুজোর বাজেট দু’লাখ 20 হাজার টাকা ৷ প্রতিমা তৈরি করছেন দেবীপুরের রতন মিশ্র ৷ পূজারি এলাকারই সুনীল ঠাকুর ৷ শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও এই পুজোয় আমাদের সহযোগিতা করেন ৷ তার জন্য আমরা তাঁদের ধন্যবাদ জানাই ৷ এই পুজো রতুয়া বারোয়ারি দুর্গাপুজো নামেই জেলায় পরিচিত ৷’’

আরও পড়ুন : Durga Pujo : 300 বছর ধরে মেদিনীপুরের মুখোপাধ্যায় পরিবারে অসুর ছাড়া পূজিত হন অভয়া দুর্গা

18 বছর ধরে এখানে মাতৃমূর্তি তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী রতন মিশ্র ৷ তিনি জানান, “এই মূর্তি পৌরাণিক মত অনুযায়ী তৈরি হয় ৷ চালা নিয়ে মূর্তির উচ্চতা 11 ফুট ৷ প্রথম থেকেই একই আঙ্গিকে মূর্তি তৈরি হয়ে আসছে ৷ যে চালিতে প্রথম মূর্তি তৈরি হয়েছিল, সেই চালিতেই এখনও প্রতিমা তৈরি হয় ৷ চালির কোনও কাঠ নষ্ট হয়ে গেলে, সেটা পালটে দেওয়া হলেও এখনও 328 বছর আগের কাঠ চালিতে রয়েছে ৷ এছাড়া মূর্তির আর কোনও বিশেষ বৈশিষ্ট্য নেই ৷’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.