কলকাতা, 26 জুলাই : সোমবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ থাকবেন কয়েকদিন ৷ তৃতীয়বার বাংলার মসনদ দখল করার পর এই প্রথম তিনি পৌঁছলেন দেশের রাজধানীতে ৷
এবার অবশ্য তাঁকে দ্বৈত ভূমিকায় দেখা যাবে ৷ একদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের (Ramnath Kovind) সঙ্গে ৷ আবার তৃণমূলের (Trinamool Congress) চেয়ারপার্সন হিসেবে বিজেপি (BJP) বিরোধী দলগুলির নেতানেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকেও বসবেন ৷
আরও পড়ুন : Pegasus Spyware : পেগাসাস কাণ্ডে রাজ্যের তদন্তে স্বাগত কংগ্রেসের, কটাক্ষ বাম-বিজেপির
2021-এর বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021) পশ্চিমবঙ্গে কার্যত মমতা ও মোদির ডুয়েল হয়েছে ৷ সেই লড়াইয়ে জিতেছেন মমতা ৷ ফলে জাতীয়স্তরে মোদি-বিরোধী হিসেবে মমতার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বেড়েছে ৷ আর সেটাকেই পুঁজি করে মোদি-বিরোধীদের একজোট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷
তাঁর লক্ষ্য যে 2024-এর লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Election), তাও সাম্প্রতিক শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে অকপটে জানিয়েছেন মমতা ৷ নিজস্ব স্বার্থ ভুলে মোদি ও বিজেপিকে হারাতে এক হওয়ার বার্তাও দিয়েছেন তিনি ৷ জোট প্রক্রিয়ার সলতে পাকানোর কাজ অনেকটা এগিয়ে রাখতেই তাঁর এই দিল্লি সফর বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee: দিল্লি যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় বকেয়ার হিসেব মন্ত্রীদের থেকে নিলেন মমতা
কিন্তু তাঁর এই উদ্যোগ কি সফল হবে ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এখনও দ্বিধায় পলিটিক্যাল পণ্ডিতেরা ৷ কারণ, এর আগে দু’বার প্রবল পরাক্রমশালী বিরোধীর বিপক্ষে মহাজোট গড়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ তাই এবার কি সেই অধরা সাফল্য আসবে ? আপাতত এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে কলকাতা ও নয়াদিল্লির রাজনৈতিক মহলে ৷
রাজ্য রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁরা বলছেন যে মমতার প্রথম মহাজোট গঠনের প্রয়াস ছিল 2001 সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ৷ তখন মমতার তৈরি তৃণমূল কংগ্রেসের বয়স মাত্র তিন ৷ সেবার সিপিএমের (CPIM) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারকে হারাতে মমতা ‘এবার, নয় নেভার’-এর ডাক দিয়েছিলেন ৷
আরও পড়ুন : Pegasus-Nabanna : কমিশন গড়ে আড়িপাতার তদন্ত করবে নবান্ন
সেই সময়ই মমতা একের বিরুদ্ধে একের লড়াইয়ের থিওরি প্রথম সামনে আনেন ৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সেবার কাজ অনেক কঠিন ছিল ৷ কারণ, মমতা মহাজোট করতে চেয়েছিলেন কংগ্রেস (Congress) ও বিজেপিকে নিয়ে ৷ সেই সময় কেন্দ্রে ক্ষমতায় বিজেপি ৷ আর বিরোধী আসনে কংগ্রেস ৷ ফলে কোনও রাজ্যে এই দুই প্রতিপক্ষের হাত মেলানো ছিল কার্যত অসম্ভব ৷ তাই অনেক আলোচনার পরও সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল ৷
তহলেকা কেলেঙ্কারির জেরে রেলমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন মমতা ৷ তার পর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে লড়াই করেন ৷ সেই ভোটই তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা দিয়েছিল ৷
আরও পড়ুন : Mamata Delhi visit : আজ মমতার দিল্লি যাত্রা, নজরে 28’র জোট বৈঠক
অন্যদিকে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও মোদি-বিরোধীদের একমঞ্চে আনার চেষ্টা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কলকাতার ব্রিগেডে সভাও করেছিলেন ৷ সেখানে সারা দেশের বিজেপি বিরোধী একাধিক আঞ্চলিক দল যোগও দিয়েছিল ৷ মমতা ওই নির্বাচনেও একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন ৷
কিন্তু সেবারও তিনি মহাজোট গড়তে ব্যর্থ হন ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, মূলত কংগ্রেসের অনীহা 2019 সালে মোদি বিরোধী জোট গড়ে তুলতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ৷ আর তার ফলে নরেন্দ্র মোদি 2014 সালের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে দিল্লির মসনদে ফিরে আসেন ৷
আরও পড়ুন : Mamata-Biman : মমতার সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা খারিজ করলেন না বিমান
এবার কী হবে ? মোদি জয়ের হ্যাটট্রিক করতে পারবেন ? নাকি মহাজোট গঠনে সফল হয়ে মমতা বাংলার নির্বাচনের মতো লোকসভাতেও মাত করে দেবেন বিজেপিকে ?
এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে সময়ের গর্ভে ৷ আর এই প্রশ্নের উত্তর মধ্যেই রয়েছে মহাজোট গঠনে মমতার সাফল্যের সম্ভাবনা ৷ আগে দু’বার তাঁর এই ধরনের প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছিল ৷ এবার কি তিনি সফল হবেন ? উত্তরের অপেক্ষায় সারা দেশের আমজনতা ৷
আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রীকে ভুয়ো বলে আক্রমণ মিনাক্ষীর