কলকাতা, 29 জুন : গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ (GTA) ৷ দার্জিলিং-সহ পাহাড়ের শাসন ভার এই জিটিএ-র হাতে ৷ সম্প্রতি পাহাড় সফরে গিয়ে জিটিএ-র কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar) । জিটিএ-র বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছেন তিনি । কিন্তু তাঁর অভিযোগকে আমল দিতে নারাজ রাজ্য সরকার ৷ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এই বিষয়ে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (Gorkha Territorial Administration) পাশে দাঁড়িয়েছেন ।
কিন্তু জিটিএ নিয়ে কেন এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন ? কেন জিটিএ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে ? তাহলে কি পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য জিটিএ-তে যে অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, তা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে ? জিটিএ-র দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন ? আপাতত এই প্রশ্নই ঘোরাঘুরি করছে রাজনৈতিক মহলে ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন সুবাস ঘিসিংয়ের পার্বত্য পরিষদের সময় থেকেই বিরোধীদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে পাহাড়ের দুর্নীতি । পরবর্তীতে বিমল গুরুং বা অনিত থাপাদের হাতে পাহাড়ের শাসনভার এলেও বিরোধীদের অভিযোগের বিষয় কিন্তু বদলাইনি । এখনও তাদের মুখে শাসকের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান ইস্যু হল দুর্নীতি । রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে রাজনৈতিক দলগুলি পাহাড়ের শাসন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করলেও কোথায় কোথায় দুর্নীতি সে বিষয় নিয়ে বিশেষ কিছু বলে না ৷ এবার রাজ্যপালও সেই পথ ধরলেন ৷ সরব হলেন পাহাড়ের প্রশাসনের দুর্নীতি নিয়ে ৷ তিনিও স্পষ্ট করেননি কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে হাওয়া নীরজ জিম্বার
কালিম্পংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক তথা পাহাড়ি রাজনীতির অন্যতম পরিচিত মুখ হরকাবাহাদুর ছেত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রাজ্যপালের আচরণের বিরোধিতা করেছেন । তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘রাজ্যপালের দুর্নীতি নিয়ে মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত । রাজ্যপাল পাহাড়ে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেননি । এমনকি প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য জানার চেষ্টা করেননি । তাঁর পছন্দের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে বলছেন জিটিএ দুর্নীতিগ্রস্ত । আমার মনে হয় রাজ্যপালের এ ধরনের বক্তব্য পাহাড়ের রাজনীতিতে অশান্তি ডেকে আনতে পারে । এবং তা প্রবলভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ৷’’
একই মত তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ শান্তা ছেত্রীরও । তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার অশান্ত পাহাড়কে শান্ত করার চেষ্টা করেছে এবং পাহাড়ের মানুষকে নিয়ে একটা উন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে । রাজ্যপাল এই শান্তি নষ্ট করতে চাইছেন । ওঁর যদি জিটিএ নিয়ে কোনও কিছু জানার থাকে কেন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তিনি জানতে চাইছেন না ।’’ তাঁর মতে, রাজ্যপালের বক্তব্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে । রাজ্যপাল হিসেবে কখনোই এ ধরনের পরিস্থিতিতে ইন্ধন দেওয়া তার জন্য উচিত নয় ৷
আরও পড়ুন : জিটিএ চেয়ারম্যান অনিত থাপা কি নেপালের বাসিন্দা ?
এদিন রাজ্যপালের অডিটের প্রশ্নে জিটিএ প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অনিত থাপা জানিয়েছেন, তাঁরা যেকোনও ধরনের অডিটের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত । তিনি জানান, তবে রাজ্যপাল যেভাবে জিটিএকে একতরফাভাবে কাঠগড়ায় তুলছেন তা কাঙ্ক্ষিত নয় । এই মুহূর্তে তাঁদের মূল লক্ষ্য হল পাহাড়ের উন্নয়ন । পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ও পর্যটনের পরিবেশ যাতে তৈরি করা যায় সে বিষয়ে নজর রাখা । সেই দায়িত্ব তাঁরা পালন করবেন । সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে রাজ্যপাল নিরপেক্ষ নন । আর তাই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো তিনিও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন ৷
পাহাড়-রাজনীতির বিশেষজ্ঞ এবং ‘দ্য বুদ্ধ অ্যান্ড দ্য বর্ডার্স’ বইয়ের লেখক নির্মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির এ ধরনের প্রবৃত্তি দীর্ঘ সময় ধরে দেখা গিয়েছে । বিশেষ করে কেন্দ্র, তারা নিজের দায়িত্ব পালন না করে বিছিন্নতাবাদের রাজনীতিকে সমর্থন করছে । আর এর ফল ভুগতে হচ্ছে রাজ্যের মানুষকে ৷
আরও পড়ুন : জিটিএতে দুর্নীতির অভিযোগ, ক্যাগকে দিয়ে স্পেশাল অডিট করানোর হুঁশিয়ারি রাজ্যপালের
তিনি আরও জানান যে, এই মুহূর্তে পাহাড়ের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বছরের পর বছর ধরে খারাপ হয়ে থাকা জাতীয় সড়ক দ্রুত মেরামত হওয়া । প্রয়োজন পানীয় জলের । বন্ধ চা-বাগানগুলি খোলার জন্য কেন্দ্রের উদ্যোগ নেওয়া । তা না করে এ ধরনের রাজনীতি করছেন রাজ্যপাল । যেটা হওয়া কাম্য নয় ৷
নির্মাল্যবাবুর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রীও । তাঁর বক্তব্য হল যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, রাস্তা এই যে প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলি আছে, সেগুলি থেকে নজর ঘোরাতেই বারবার করে দুর্নীতির কথা বলা হয় । অন্তত পাহাড়ের রাজনীতিতে দুর্নীতি যেন একটা রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত হয়েছে । অডিট সেখানে একটা রাজনৈতিক অস্ত্র মাত্র ।
আরও পড়ুন : "ছোটবোন" মমতার অভিযোগ ওড়ালেন "দাদা" ধনকড়