কলকাতা, 17 ডিসেম্বর : রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দানে বারবার তৃণমূল কংগ্রেসকে সিন্ডিকেট, তোলাবাজি এবং দলীয় কর্মীদের বিশৃঙ্খলা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের আক্রমণের মুখে পড়তে হয় । গোটা দেশে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অন্যতম প্রধান বিরোধী মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস, তখন বারবার এই ধরনের অভিযোগ ওঠা ঘাসফুল শিবিরের জন্য বেশ অস্বস্তির বইকি ।
তবে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশলের বেশ কিছুটা পরিবর্তন এসেছে । এই মুহূর্তে তৃণমূল নেতারাই জোর গলায় বলছেন, ভোট লুট করা যাবে না । শুধু তাই নয়, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ যাতে করা যায়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে ।
আরও পড়ুন : KMC Election 2021 : 25 নম্বর ওয়ার্ডে লড়াইয়ে মুখোমুখি দুই ভাই, রাজনীতি ছায়া ফেলেনি সম্পর্কে
ঠিক এই অবস্থায় নির্বাচনী প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় বিরোধী সুর । তিনি শাসকদলের নেতাদের সতর্ক করছেন সিন্ডিকেট রাজ নিয়ে। বলছেন, ‘‘আপনি কাউন্সিলর মানে আপনার কাছ থেকেই ইমারতি দ্রব্য নিতে হবে এমনটা করা যাবে না ।’’ তিনি বলছেন, ‘‘যদি কাউন্সিলর হয়ে মানুষের সুবিধা অসুবিধায় পাশে না থাকা যায়-তাহলে তাঁদের কাউন্সিলর হওয়ার দরকার নেই ।’’
এমন কথা শুনে অনেকেই বলছেন, হঠাৎ কী শোনা যাচ্ছে তৃণমূল নেত্রীর গলায় (why mamata banerjee criticises tmc leader in kmc election 2021 campaign) ? এতদিন যে কথাগুলি বিরোধীরা বলতেন তাই বলছেন তৃণমূল নেত্রী ।
আরও পড়ুন : KMC Election 2021 : পৌরভোটের প্রচারমঞ্চে ক্ষিতিকন্যাকে প্রশংসায় ভরালেন মমতা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসলে এটা বিরোধীদের পরিসর কেড়ে নেওয়ার কৌশল । এবং অবশ্যই তা বিরোধীদের দুর্বলতাকেই সূচিত করে । গত বিধানসভা ভোটে এমনিতেই বাম-কংগ্রেস শূন্য হয়ে গিয়েছে । রাজ্যে বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপি থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন তারা এতটাই দুর্বল যে, এই বক্তব্য থেকে লাভ তারা ঘরে তুলতে পারবেন না । এই বিষয়টিতে নিশ্চিত হয়ে প্রশাসক মমতা এখানে অভিভাবক মমতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে । ভালর পাশাপাশি যিনি দলের খারাপ দিকটা তুলে ধরেও দলীয় নেতাদের সংশোধন করার চেষ্টা করেন ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ রাজ্যে বিরোধীদের অবস্থা যে কতটা দুর্বল তা বোধহয় আলাদা করে কাউকে বোঝাতে হবে না । কলকাতা পৌরসভার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ছেড়ে দিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল সিঙ্গুরে গিয়ে ধরনা করছে । এই অবস্থায় মানুষের কাছে এই বার্তা যাচ্ছে নির্বাচনের আগেই পরাজয় মেনে নিয়েছে বিজেপি । আর বিরোধীদের এই গা ছাড়া মনোভাবের কারণেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্দ্বিধায় এই কথাগুলি বলতে পারছেন ।’’
আরও পড়ুন : KMC election 2021: শেষবেলায় নজর কাড়ল তৃণমূলের রঙিন প্রচার
যদিও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, জনমানসে ক্রমেই দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে । তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ আসলেই ড্যামেজ কন্ট্রোল ছাড়া কিছু নয় । তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে 10 বছর আগে এই কথাগুলি বলতে পারতেন । তাতে জনমানসে দলের প্রতি যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা প্রশমিত হত । এখন মানুষ বুঝতে পারছে, সবটাই ভোটের কারণে । তাই এর ফল আদতে কতটা ভোট বাক্সে পড়বে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে ।’’