কলকাতা, 22 ফেব্রুয়ারি : তৃণমূলের অন্দরে নিভেও নিভেছে না আগুন । তৃণমূল নেত্রীর ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলার বার্তাও যেন সেভাবে কাজে আসছে না । তাই প্রকাশ্যে বারবার আইপ্যাকের নাম করে আক্রমণ করা হলেও, এই আক্রমণ যেন ঘুরিয়ে অন্যদিকে বর্ষিত হচ্ছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC Chairperson Mamata Banerjee) বলেছেন, ‘‘ওল্ড ইজ গোল্ড ৷’’ তাই তিনিই সর্বোচ্চ, এমনটা বলে ঘুরিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের দু'নম্বর শীর্ষ নেতাকে ।
ঘাসফুল শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য এই নিয়ে চুপ । তাহলে কি কালীঘাট বনাম ক্যামাক স্ট্রিট-এর লড়াই এখন কার্যত ঠান্ডা যুদ্ধের রূপ নিয়েছে, প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে ! এই প্রশ্ন উঠছে বারংবার আইপ্যাককে ঘুরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বরিষ্ঠ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (TMC MP Kalyan Banerjee) আক্রমণ ঘিরে । কখনও ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (Poll Strategist Prashant Kishor) সংস্থাকে দালাল বলে আক্রমণ করছেন তিনি । আবার কখনও বলছেন কন্ট্রাকটর ।
রাখঢাক না করেই তিনি বলছেন, 108 পুরসভায় প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের যে জেরবার অবস্থা, তা সবটাই হয়েছে এই সংস্থার জন্য । মমতা বা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় (TMC Leader Partha Chatterjee) অথবা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী (TMC Leader Subrata Bakshi) বিষয়টি দেখলে এমন হত না । আসলে সবটাই হয়েছে নাকি কলকাতার এক নেতার অঙ্গুলি হেলনে । প্রশ্ন উঠতেই পারে, কার দিকে অঙ্গুল তুলছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ? এটা কি দল বিরোধী কাজ নয় ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব পক্ষকে ডেকে একসঙ্গে চলার বার্তা দেওয়ার পরও কেন এমন মন্তব্য করা হচ্ছে ? তারপরে কলকাতার সেই নেতা আর পার্থ-বক্সীর সঙ্গে দূরত্ব থেকে যাচ্ছে কেন ?
রাজনৈতিক মহল বলছে, জোড়াতালির রাস্তার মতোই এ হল সর্ম্পকে জোড়াতালি । সব থেকেও ক্ষত নাকি ঢাকা যাচ্ছে না । আর সে কারণেই সংবাদমাধ্যমে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, কল্যাণ তো শ্রীরামপুরে খুব খাটছেন ।
এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রাজীব রায় বলছেন, ‘‘কথা কিছু কিছু বুঝে নিতে হয়, সে তো মুখে বলা যায় না । চোখ খোলা রাখলেই সকলেই বুঝতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপের পরও নবীন-প্রবীণের ঝামেলা আসলে মেটেনি । বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ তো বারবারই বলছেন এই ঝামেলা আসলে ক্ষমতার লড়াই । আর আমি বলব, বাইরের ছবি আর অন্দরের ছবি এক নয় ।’’
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একা এই নিয়ে মুখ খুললেও আরও অনেকের আইপ্যাককে (IPAC) নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে । ভুলে গেলে চলবে না প্রশান্ত কিশোর কার্যত দলীয় নেতা হিসাবে ছড়ি ঘুরিয়েছেন । আর সবটা সম্ভব হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই ৷ কারণ, তিনি প্রশান্তকে হাতে ধরে এই রাজ্যের নিয়ে এসেছিলেন । এখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে অন্যদের অব্যক্ত বক্তব্যই মিডিয়ার সামনে তুলে ধরছেন ।’’
এখানেই থামেননি অমলবাবু । আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা বোঝা যাচ্ছে দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে । সেই অন্তর্দ্বন্দ্বের এক প্রান্তে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্য প্রান্তে রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC National General Secretary Abhishek Banerjee) ।’’ তাঁর মতে, ‘‘এত সহজে এই অন্তর্দ্বন্দ্ব থামবে না । এভাবেই যদুবংশ ধ্বংস হবে ।’’
আরও পড়ুন : Kalyan Banerjee on I-PAC : "আইপ্যাকের ঠেলায় আমাদের জান বেরিয়ে যাচ্ছে", বিস্ফোরক কল্যাণ