কলকাতা, 24 ফেব্রুয়ারি : আবার সংঘাত । বাজেট অধিবেশন নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না । আর বিতর্কের অলিন্দে একদিকে নবান্ন, অন্যদিকে রাজভবন ।
বিধানসভার বাজেট অধিবেশন ডাকা নিয়ে মন্ত্রিসভার প্রস্তাবে রাজ্য সরকারের নজিরবিহীন ভুল । সময়ে দুপুর 2টোর বদলে মধ্যরাত অর্থাৎ রাত 2টো । ভুল রয়েছে বুঝতে পেরেও স্বাক্ষর রাজ্যপালের । আর তাতেই প্রশ্ন উঠছে, সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলাই কি এই মুহূর্তে রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকারের ((Bengal Governor Jagdeep Dhankhar)) প্রধান উদ্দেশ্য ?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন হতে পারে এটা প্রিন্টিং মিসটেক । রাজ্যপাল চাইলেই এই ভুল সংশোধনের সুযোগ ছিল । কিন্তু তিনি তা করেননি । বরং বাজেট অধিবেশনের বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তা জানিয়ে দিয়ে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন (why dhankhar make public government document through social media?) ।
বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এটা ক্লারিক্যাল মিসটেক হতে পারে । বিষয়টি চাইলে রাজ্যপাল এড়িয়ে যেতে পারতেন । ক্যাবিনেটের যে নোট গিয়েছে, তাতে প্ৰথমে দুপুর 2টো লেখা ছিল । উনি তো বুঝবেন, রাত 2টোর সময় বাজেট অধিবেশন হওয়া একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা । রাজ্য সরকারের তরফে আগেও যে চিঠি গিয়েছিল তাতে দুপুর 2টো ছিল । তবে ক্যাবিনেট মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নোট যেটা গিয়েছে, সেটা হয়তো রাত 2টো হয়ে গিয়েছে ।
বিধানসভায় শাসকদলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘এই ধরনের ক্ষেত্রে সব সময়েই বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে ভুলটাকে শুধরে নেওয়া হয় । কিন্তু রাজ্যপাল স্থির করে নিয়েছেন যে প্রতিমুহূর্তে নবান্নকে বিব্রত ও বেইজ্জত করাই তাঁর লক্ষ্য । আর সে কারণেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন । নবান্ন শিগগির পুরনো প্রস্তাব সংশোধন করে নয়া প্রস্তাব পাঠাবে । ওইদিন দুপুর 2টোতেই অধিবেশন বসবে ।’’
অন্যদিকে বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘রাজ্যপালের এ বিষয়ে কোনও দোষ রয়েছে, তা বলা যাবে না । কারণ, ভুলের বিষয়টি বুঝতে পেরেই রাজ্যপাল মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে রাজভবনে ডেকেছিলেন । যাতে সরকারকে কোনও অস্বস্তির মধ্যে পড়তে না হয় । কিন্তু মুখ্যসচিব সেই ডাকে সাড়া দেননি । তাহলে রাজ্যপালকে ধরে নিতেই হবে বিষয়টি সরকারের অবগতি ক্রমে করা হয়েছে । যেহেতু মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, তাই তাতে স্বাক্ষর করেছেন রাজ্যপাল । আমি বলব, সঠিক কাজ করেছেন রাজ্যপাল ।’’
এদিকে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েনই এর জন্য দায়ী বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা প্রেসিডেন্সি অমল প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের । তিনি বলেন, ‘‘শাসক-বিরোধী দু'পক্ষের বক্তব্যে যুক্তি রয়েছে । রাজ্যপাল চাইলে এই বিষয়টি খুব সহজে সংশোধন করে নেওয়া যেত । আবার এটাও ঠিক যেহেতু মুখ্যসচিব আসেননি, অতএব মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন রাজ্যপাল ৷ এতে অন্তত জগদীপ ধনকরকে কোনও দোষ দেওয়া যায় না ।’’
এর সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘তবে রাজ্যপাল এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় না দিলেই পারতেন । তার সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া রাজ্য সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে তাতে কোনও সন্দেহ নেই । আরে সবটাই হয়েছে সরকার এবং রাজভবনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কারণে । এখন দেখার কিভাবে গোটা বিষয়টি সামলে নেওয়া যায় ।’’
আরও পড়ুন : Dhankhar Summons Budget Session : আগামী 7 মার্চ রাত 2টোয় বিধানসভার বাজেট অধিবেশন ডাকলেন রাজ্যপাল