কলকাতা, 30 মার্চ : অনুপ মাজি । পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের একাধিক কোলিয়ারি এলাকায় কয়লা পাচারে এই অভিযুক্ত এখন কোল মাফিয়া লালা নামেই বেশি পরিচিত । কিন্তু কে এই বছর 38 এর যুবক ? কীভাবে তিনি সাধারণ অনুপ মাজি থেকে হয়ে উঠলেন প্রভাবশালী কয়লা মাফিয়া লালা ?
সিবিআই ও ইডি সূত্রের খবর, আদতে নিতুরিয়া থানার ভামুরিয়া গ্রামের ছেলে অনুপ মাজি ওরফে লালা । কলেজ জীবনেই রাজনীতির কোনও যোগ ছিল না ৷ পরে ধীরে ধীরে আলাপ হয় একাধিক প্রভাবশালীদের সঙ্গে । পরে নেমে পড়েন কয়লা পাচারে । সিবিআই সূত্রের খবর, লালার সঙ্গে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিক থেকে শুরু করে রেলের শীর্ষ আধিকারিক ও সিআইএসএফ-এরও পরিচিতি আছে ।
সূত্র বলছে, লালা ম্যাট্রিক পাশও নয়। সামান্য মাছ বিক্রি করত। পরিবারে অভাবের জন্য। বাম আমলে বেআইনী কয়লা খাদান করে। সেই সময় অনেকেই করত। কিন্তু অল্প কয়েক দিনে লালার কয়লার ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে। তৃণমূল সরকারে আসার পর, লালা হয়ে কিংপিন, অর্থাৎ যত কয়লা মাফিয়া আছে তাদের মাথার উপর বসে। কয়লা খাদান করা, কয়লার ডিপো তৈরি, কয়লা পাচার, ইসিএলের খনি থেকে কয়লা চুরি, পুরোটাই লালার নিয়ন্ত্রণে থাকত। বিভিন্ন জেলা ও রাজ্যে কয়লা পাচারের জন্য পুলিশ সেটিং করত লালা। চলত প্যাড (বেআইনি কয়লা পাচারের বিশেষ রসিদ) লালার প্যাড না নিলে কেউ কয়লা পাচার করতে পারবে না। একেবারে মনোপলি ব্যবসা। আর এতেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয় লালা। একাধিক কারখানা রয়েছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি রিসর্ট। বাংলা সিনেমা প্রযোজনা করেছে। প্রতি বছর লালার দুর্গাপুজোয় মুম্বই-বাংলার বিখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে ১০ দিন ধরে অনুষ্ঠান চলে ভামুরিয়া গ্রামে। যার বাজেট কয়েক কোটি টাকা। করোনা কালে জেলার সব পুজোয় রাশ টানা হলেও লালার পুজো একই রকম জমজমাট হয়েছে।
2009 সাল থেকেই গোয়েন্দাদের নজরে লালা । ইডি সূত্রের খবর, রেলের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে আলাপ কাজে লাগিয়ে প্রথমবার পুরুলিয়া জেলা থেকেই কয়লা পাচার কারবার শুরু করেন তিনি ৷ কারণ, পুরুলিয়া জেলা থেকেই প্রথম কয়লা পাচার প্রকাশ্যে আসে ।
অভিযোগ, ট্রেনের চালকদের সঙ্গে হাত করে পুরুলিয়া জেলার ফাঁকা জায়গায় কয়লা সমেত ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হত । একেবারে ফিল্মি কায়দায় ট্রেনের উপর উঠে কয়লা রেল লাইনের ধারে ফেলে দিত লালার ছেলেপুলেরা । ট্রেন চলে যাওয়ার পর সেই কয়লা ট্রাকে করে জাতীয় সড়ক হয়ে চলে যেত পাচারের জন্য । এভাবেই ইসিএলের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয় । ফলে কয়লা পাচার এবার আরও সোজা হয়ে যায় তাঁর কাছে ।
সিবিআইয়ের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের সঙ্গে থাকার ফলে প্রশাসন থেকে কোনও ভয় পেতেন না লালা ৷ কয়লা পাচারের টাকা সরাসরি চলে যেত একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের কাছেও । ইডি সূত্রের খবর, কয়লা ও গরু পাচার মিলিয়ে মাসে লালার যে পরিমাণ আয় হত, তা জেনে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয়েছিল গোয়েন্দাদের । শুধুমাত্র একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের খুশি করতেই মাসে খরচ হত কয়েক কোটি টাকারও বেশি বলে অভিযোগ ।
আরও পড়ুন : সিবিআই দফতরে হাজিরা লালার
লালার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তাঁর ব্যাংক অ্যাক্যাউন্ট থেকেই টাকা চলে যেত বিকাশ মিশ্রের কাছে । পরে সেই টাকা দাদা বিনয় মিশ্রের কাছে পৌছে দিত ভাই বিকাশ মিশ্র । ইডি সূত্রের খবর, কয়লা পাচার করে অনুপ মাঝির মাসে লাভ হত প্রায় 250 কোটি টাকারও বেশি । এই ভাবেই প্রভাবশালীদের সঙ্গে কারবার করে পুরুলিয়ায় নিতুরিয়ার সাধারণ ছেলেটি হয়ে উঠল কয়লা মাফিয়া অনুপ মাজি ওরফে লালা ।